পরিবেশ দূষণ বর্তমান যুগে একটি অন্যতম গুরুতর সমস্যা, যা বিশ্বের প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। মানুষের অতি উৎপাদন ও প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে পরিবেশের ওপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং এর ফলস্বরূপ প্রকৃতিতে বিপুল পরিমাণ দূষণ ঘটছে। দূষণের কারণে জনস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব, প্রাণীজগতের অভ্যন্তরীণ বৈচিত্র্য হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটছে। পরিবেশ দূষণ রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
পরিবেশ দূষণের প্রকারভেদ:
পরিবেশ দূষণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা নিম্নরূপ:
বায়ু দূষণ:
বায়ু দূষণ ঘটে যখন বাতাসে ক্ষতিকর গ্যাস, ধোঁয়া, বা ক্ষতিকর কণিকা প্রবাহিত হয়। এই দূষণের প্রধান কারণ হলো ফ্যাক্টরি, যানবাহন, শিল্প কলকারখানা, কৃষি কার্যক্রম এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির নির্গমন। বায়ু দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক, যা শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হৃদরোগসহ অন্যান্য রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
জল দূষণ:
জল দূষণ ঘটে যখন নদী, হ্রদ, সমুদ্র বা অন্যান্য জলাশয়ে ক্ষতিকর পদার্থ যেমন রাসায়নিক, মলমূত্র, প্লাস্টিক বর্জ্য ও শিল্পের তেল মিশে যায়। এটি জল সংক্রমণ, মৎস্যসম্পদ নষ্ট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জলবায়ুর ক্ষতি সৃষ্টি করে। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও এটি মারাত্মক হুমকি।
মাটি দূষণ:
মাটি দূষণ ঘটে যখন বিভিন্ন রাসায়নিক, ক্ষতিকর পদার্থ, বর্জ্য বা শিল্প বর্জ্য মাটিতে মিশে যায়। এই দূষণের কারণে মাটির উর্বরতা কমে যায়, যা কৃষির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মাটির দূষণ মাটির জীববৈচিত্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
আলো দূষণ:
আলো দূষণ ঘটে যখন অত্যধিক কৃত্রিম আলো পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে, যা জীববৈচিত্র্যকে বিঘ্নিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ,শহরগুলোর বেশি আলোর কারণে রাতের আকাশের তারাগুলি দেখা যায় না এবং এর ফলে প্রাণীজগতের জীবনযাত্রায় বিপর্যয় ঘটে।
ধ্বংসাত্মক শব্দ দূষণ:
ধ্বংসাত্মক শব্দ দূষণ এক ধরনের পরিবেশ দূষণ, যেখানে অতিরিক্ত শব্দ উৎপন্ন হয়, বিশেষত শহরাঞ্চলে যানবাহন, নির্মাণকাজ,কারখানা ও অন্যান্য কারণে। এটি মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস, মানসিক চাপ ও অন্যান্য শারীরিক অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে।
পরিবেশ দূষণের প্রভাব:
পরিবেশ দূষণের প্রভাব অত্যন্ত বিস্তৃত এবং এটি মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য বিপজ্জনক। এর প্রধান কিছু প্রভাব হল:
জনস্বাস্থ্য:
পরিবেশ দূষণ মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনে। বায়ু দূষণ শ্বাসকষ্ট,হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগসহ নানা শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। জল দূষণের কারণে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ,যেমন ডায়রিয়া,টাইফয়েড ইত্যাদি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
পরিবেশ দূষণ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে,যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা বাড়াচ্ছে।বন্যা,খরা, ঘূর্ণিঝড়, তাপদাহ ইত্যাদি প্রকৃতি বিপর্যয়ের মূল কারণ হয়ে উঠেছে।
বৈচিত্র্যের হ্রাস:
পরিবেশ দূষণের ফলে প্রকৃতির প্রাণীজগতে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। বনভূমি ধ্বংস, জলাশয়ে দূষণ এবং জীববৈচিত্র্যের সংকট মানবজাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
অর্থনৈতিক ক্ষতি:
পরিবেশ দূষণ অর্থনীতির ওপরও ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পায়, যা দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি করে।
পরিবেশ দূষণের কারণ
অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি:
বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির ফলে মানুষের জীবিকার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিক সংখ্যক মানুষকে খাদ্য,বাসস্থান, শক্তি ইত্যাদির প্রয়োজন,যা পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
শিল্পায়ন এবং নগরায়ণ:
নগরায়ণ এবং শিল্পায়নের ফলে গাছপালা কাটা, বনভূমি ধ্বংস, সিটি পলিউশন ও জলবায়ু পরিবর্তন বাড়ছে। এর ফলে বায়ু, জল এবং মাটি দূষিত হচ্ছে।
যানবাহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন:
যানবাহনের বিকল্প শক্তির উৎসের অভাব, এবং কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা বায়ু দূষণের প্রধান কারণ। এছাড়াও, শক্তির জন্য গ্যাস ও তেলের ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
কৃষি কার্যক্রম:
কৃষিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার,কীটনাশক এবং অতিরিক্ত জল ব্যবহার পরিবেশ দূষণের কারণ। এতে মাটির উর্বরতা কমে এবং জলাশয়ে দূষণ সৃষ্টি হয়।
পরিবেশ দূষণ রোধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা
পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি:
মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে দূষণ কমানো সম্ভব। স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা প্রদান এবং জনসচেতনতা ক্যাম্পেইন চালানো গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাকৃতিক উৎস থেকে শক্তি উৎপাদন:
নবায়নযোগ্য শক্তি যেমন- সোলার, উইন্ড, জিও থারমাল শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে fossile fuels এর ওপর নির্ভরশীলতা কমে যায়। এতে বায়ু দূষণও কমবে।
অবৈধ বর্জ্য নিষ্কাশন বন্ধ:
শিল্প ও গৃহস্থালি বর্জ্য যাতে সঠিকভাবে নিষ্কাশন হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি বর্জ্য
পুনর্ব্যবহারের প্রক্রিয়াও উন্নত করতে হবে।
গাছপালা রক্ষা এবং বৃক্ষরোপণ:
গাছপালা পরিবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গাছপালা কেটে ফেলা বন্ধ করে এবং বেশি করে বৃক্ষরোপণ করা অত্যন্ত জরুরি। গাছপালা বায়ু বিশুদ্ধ করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে সহায়ক।
জলসংশ্লিষ্ট সমস্যার সমাধান:
পরিষ্কার জল সরবরাহ ও বর্জ্য পরিশোধনের উন্নত প্রযুক্তি প্রবর্তন করতে হবে। নদী, হ্রদ, সমুদ্র ইত্যাদির জল দূষণ কমানোর জন্য পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সরকারি ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ:
সরকারি নীতি ও আইন যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে, যাতে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশ রক্ষা করে কাজ করে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন চুক্তি ও প্রোটোকল যেমন- প্যারিস চুক্তি কার্যকরী হতে হবে।
উপসংহার:
পরিবেশ দূষণ আজকের পৃথিবীতে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে মানবজাতি ও প্রাণীজগতের জন্য গভীর বিপদ সৃষ্টি হচ্ছে। এই দূষণ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের সবাইকে একযোগভাবে কাজ করতে হবে। পরিবেশ সচেতনতা, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বৃক্ষরোপণ প্রভৃতি পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমরা পরিবেশ দূষণ কমাতে পারি। একমাত্র এসব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি সুস্থ, নিরাপদ ও সবুজ পৃথিবী গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।
Contents:
আরো পড়ুন:
জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
অসুখী একজন কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর Click Here
অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
পথের দাবী গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
সিন্ধুতীরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
নদীর বিদ্রোহ গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
অদল বদল গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click here
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার Click here
the passing away of bapu question answerUnit 1 Click Here
The passing away of bapu question answer unit 2 Click Here
The passing away of bapu question answer unit 3 Click Here
তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর click here
0 Comments