ক। বিষয় সংক্ষেপ
খ। নামকরন
গ) সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন(Type-1) প্রশমান-২
ঘ) সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন (Type-2) প্রশ্নমান-৩
ঙ) রচনাধর্মী বা বর্ণনাধর্মী প্রশ্নোত্তর। প্রশ্নমান-৫
ক) বিষয়সংক্ষেপ:
বাঙালি আড্ডাপ্রিয় হলেও গোটা পৃথিবীতেই আড্ডার বিস্তার দেখা য়ায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেমন ইলিশ মাছের নাম পালটে যায়,সেরকমই আড্ডার চরিত্রও দেশভেদে পালটে যেতে পারে। কায়রো শহরের মানুষেরা অত্যন্ত আড্ডাপ্রিয়। তারা কখনও কারোর বাড়িতে আড্ডা দেন না। আড্ডার গণতন্ত্র এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য কায়রোর মানুষেরা কারোর বাড়িতে আড্ডা দিতে পছন্দ করেন না। এক্ষেত্রে গৃহিণীর অপছন্দ বা বিরক্তির কারণ না হওয়াটাও তাদের বিবেচনায় থাকে। আড্ডার জন্য কাফে তাদের প্রিয় পছন্দ খাবারের সহযোগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা সেখানে আড্ডা দিয়ে যান। তাদের অনেকেরই জীবন অর্ধেক সময় এই কাফেতে আড্ডা দিয়েই চলেছেন।বহু বিচিত্র মানুষের সেখানে সমাগম ঘটে। তারা আলাদা জাতির, তাদের সত্তার ধরন আলাদা এবং তাদের কাজের জগতের মধ্যেও পার্থক্য আছে।এরকম আড্ডার সঙ্গে লেখকের বন্ধুত্ব তৈরি হয়। কেবল আড্ডার সৌজন্যে অতিদ্রুত তিনি তাদের একজন হয়ে ওঠেন।সেখানেই হজে যাওয়া বাঙালিদের আড্ডাপ্রিয়তার খবর পেয়ে বাঙালি লেখক গর্ববোধ করেন।যে গর্ব তাঁর রবীন্দ্রনাথ,রামকৃষ্ণ,নজরুলের জন্যেও কখনও হয়নি। কৌতুক করে লেখক বলেছেন, শ্রীহট্ট, নোয়াখালি, চট্টগ্রাম, কাছাড়ের বাঙালি খালাসিরা খিদিরপুরে আড্ডা শিখে হেলায় মক্কা জয় করে ফেলেছে। এই আড্ডাতেই প্রাবন্ধিক পেয়েছিলেন টিকে তামাকের গন্ধ। বহু বছর পরেও যার খুশবু লেখকের নাকে লেগেছিল। ইজিপশিয়ান সিগারেটের সঙ্গেও তাঁর পরিচয় হয়েছিল এখানেই এবং তাঁর মনে হয়েছিল যে, এই তামাকের খুশবু এক রহস্য ঢাকা ইন্দ্রজালের মতোই।এখানেই গৃহিণীকে লুকিয়ে প্রিয়তমাকে চিঠি লেখা চলে। সেই তথ্যসূত্রে কাফের আলোচনার গতিপথ পালটে যায়। বিভিন্ন দেশের রমণীদের সৌন্দর্যের তারতম্য বিচার শুরু হয়। এখানেও নানা কারণে কায়রোকে এগিয়ে রাখেন লেখক। আড্ডাবাজ মিশরীয়রা একই কাফেতে জীবন কাটান না। কাফে আড্ডার ধরন, আড্ডার সদস্যদের চরিত্র, আলোচনার বিষয়—সব কিছুই পালটে যায়। এরকম কোনো কাফের আড্ডায় কিছু সবজান্তা মানুষদের দেখা যায়। এদেরকে কোনো বড়ো শহরের বড়ো কর্তা বানিয়ে দেওয়া হলে পৃথিবীর সব সমস্যার সমাধান এক মুহূর্তে হয়ে যাবে বলে লেখক কৌতুক প্রকাশ করেছেন। মাঝেমধ্যে কোনো কাফেতে গেলে সেখানে অভ্যর্থনার বহর বেড়ে যায়। গান্ধির দেশের লোক জানলে আড্ডায় গান্ধির সঙ্গে যোগাযোগ খোঁজার চেষ্টা করা হয়, অস্বীকার করলেও কোনো কাজ হয় না। আড্ডাবাজরা নিজেদের মেজাজেই থেকে যান।
খ)নামকরণ:
বাঙালিরা আড্ডা বিষয়ে নিজেদের একাধিপত্যের কথা বলে থাকে। একই দাবি করে কায়রোর আড্ডাবাজরাও। আসলে এক একটি দেশে ইলিশ মাছের মতোই আড্ডার চরিত্র পালটে যায়। তার স্বাদ আলাদা আলাদা হয়। লেখক কায়রোর আড্ডার বহুবিচিত্র ধরনের কথা এই প্রবন্ধে তুলে ধরেছেন। এখানে আড্ডা হয় মূলত কাফেতে। কিছুটা আড়াল করে তামাক ও অন্যান্য নেশার ব্যবস্থাও থাকে। বিভিন্ন জাতির অসংখ্য মানুষ এই সমস্ত আড্ডায় দেখা য়ায়।এইরকম আড্ডাই হয়ে যায় প্রেমিকার কাছে প্রেমিকের গুপ্ত ঠিকানায়। তামাকসজ্জা, আড্ডাবাজদের বিচিত্র এবং নিজস্ব স্বভাব, স্থানভেদে বিভিন্ন আড্ডার কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ রসসিদ্ধ বর্ণনা লেখক দিয়েছেন তাঁর ‘আড্ডা' প্রবন্ধে। মিশরের জনজীবনের খণ্ডচিত্র যেন খুঁজে পাওয়া যায় এই কাফেগুলিতে। প্রবন্ধের ভিত্তি থেকে নির্মাণ সব কিছুই আড্ডাকেন্দ্রিক। তাই প্রবন্ধের নামকরণও সঠিকভাবেই লেখক রেখেছেন ‘আড্ডা’।
গ) সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন(Type-1) প্রশমান-২
১)'অর্থাৎ আড্ডা বহু দেশেই আছে'-এ প্রাবন্ধিকের দৃষ্টিভঙ্গি কী ?
উত্তর:বাঙালি আড্ডাপ্রিয় এবং বাঙালি মনে করে আড্ডায় তার একক অধিকার।প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী দেখিয়েছেন যে,আড্ডা বহু দেশেই আছে তবে হয়তো বাঙালির মতো করে আড্ডায় রসসৃষ্টি সকলে করতে পারে না। তবে এই প্রসঙ্গেই তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, অন্য দেশের মানুষরা আবার বাঙালির রান্নার মতোই বাঙালির আড্ডা নিয়েও মনোভাব পোষণ করতে পারে।
২)'ঐ বস্তুটির প্রতি আমার মারাত্মক দুর্বলতা আছে।'- কীসের প্রতি প্রাবন্ধিক নিজের দুর্বলতার কথা বলেছেন? এই প্রসঙ্গে তিনি আর কী বলেছেন ?
উত্তর:প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির রচিত 'আড্ডা'প্রবন্ধে ইলিশ মাছের প্রতি তাঁর নিজের দুর্বলতার কথা বলেছেন।
* লেখক বলেছেন,বেহেস্তের বর্ণনাতে ইলিশের উল্লেখ নেই বলে-পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে সেখানে যাওয়ার বিন্দুমাত্র বাসনা তাঁর নেই।
৩)'অকারণে অকালে আড্ডার গলায় ছুরি চালাতে পারেন না।'- মন্তব্যটির প্রসঙ্গ আলোচনা করো।
উত্তর:প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির রচিত 'আড্ডা' প্রবন্ধে আড্ডাবাজ মিশরীয়রা কারোর বাড়ির আড্ডা দিতে পছন্দ করেন না।তারা কাফেতে আড্ডা দেওয়া পছন্দ করত। কারণ,এখান বাড়ির গিন্নি কখনও স্পষ্টভাবে, কখনও আভাসে ইঙ্গিতে আড্ডার সদস্যরা দীর্ঘ সময় পরেও কেন বাড়ি যাচ্ছে না তা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করতে পারে না। এই প্রসঙ্গেই মন্তব্যটি করা হয়েছে।
৪)'আমাদের আড্ডা বসত'- কোথায় লেখকদের আড্ডার জায়গা ছিল?এখানকার কী বর্ণনা লেখক দিয়েছেন?
উত্তর:প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির রচিত 'আড্ডা' প্রবন্ধে তিনি জানিয়েছেন যে কায়রো শহরে তাদের আড্ডা বসত ‘কাফে দ্য নীল' বা 'নীলনদ কাফেতে। সেখানে কফির দাম ছিল ছ-পয়সা এবং তা ছিল রাবড়ির মতো ঘন কিন্তু তাতে দুধের কোনো ব্যাপার ছিল না। সকলেই কালো কফি খেত এবং যাদের অভ্যাস ছিল না তারাও অল্প দিনে অভ্যস্ত হয়ে যেত।
৫)'সোজা বাংলায় বলে, জাতে উঠে গেলুম'- কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লেখক এ কথা বলেছিলেন তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর:প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির রচিত 'আড্ডা' প্রবন্ধে কাফে দ্য নীল'-এ নিয়মিত যাতায়াত করতে করতেই এক কোনায় লেখক লক্ষ করেছিলেন বেশ কিছু আড্ডাবাজদের।লেখক যখন তাদের বোঝার চেষ্টা করছিলেন, তারাও সেই সময়ে লেখকের দিকে তাকিয়েছিল। উভয় পক্ষের মধ্যে এই দৃষ্টিবিনিময় আড্ডাবাজদের মধ্যে লেখকের গ্রহণযোগ্যতাকে সুনিশ্চিত করেছিল।
৬)'তারই নাম ইজিপশিয়ন সিগারেট।'-এর কী পরিচয় প্রাবন্ধিক দিয়েছেন লেখো।
উত্তর: প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির রচিত'আড্ডা' প্রবন্ধে,পৃথিবীবিখ্যাত গ্রিক তামাক তুরস্কের মাধ্যমে মিশরে পৌঁছাত,কারণ তুর্কি তখন গ্রিসের উপর আধিপত্য কায়েম করেছিল এবং মিশরও ছিল তুর্কির কবজায়। মিশরে আসার পরে গ্রিক তামাকের নাম হয় ইজিপশিয়ন তামাক। এই তামাকের সঙ্গে মিশরের খাঁটি সুগন্ধি মিশিয়ে দক্ষ কারিগররা তৈরি করতেন ইজিপশিয়ন সিগারেট।
৭)'ভ্যাগাবন্ড হিসাবে আমর ঈষৎ বদনাম আছে।'-এই কারণে লেখককে কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল?
উত্তর:প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির রচিত 'আড্ডা'প্রবন্ধে দেশে বিদেশে ভ্রমণের বিপুল অভিজ্ঞতা থাকার কারণে ‘ভ্যাগাবন্ড’বা ভবঘুরে হিসেবে লেখকের কিছুটা পরিচিতি হয়ে গিয়েছিল। সেই কারণে তাঁকে কেউ কেউ প্রশ্ন করতেন কোন দেশের রান্না সবথেকে ভালো, কেউ প্রশ্ন করতেন কাব্যচর্চার জন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় উপযুক্ত, আর যে প্রশ্নটি সবথেকে বেশি আসত তা হল, কোন্ দেশের মেয়েরারা সবথেকে সুন্দরী হয়।
৮)'আর শীতকাল হলে তো পোয়া বারো।'- কেন লেখক এ কথা বলেছেন ?
উত্তর:প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির'রচিত' আড্ডা প্রবন্ধে,শীতকালে কায়রো শহর একটি মনোরম জায়গা। কায়রোতে বছরে অতি সামান্য বৃষ্টি হয়, সাহারার শুকনো বাতাস নাকি যক্ষ্মা রোগও সারিয়ে দেয়। পিরামিডের বাইরে বসে ফুর্তির ক্ষেত্রে কায়রো লাগামহীন। মসজিদ থেকে কবর পর্যন্ত কায়রো শহর সুন্দর। শীতকালে সেখানে না-গরম না-ঠান্ডা আবহাওয়া। সেই কারণে কায়রো শীতকালে ট্যুরিস্টদের ভূস্বর্গ।
৯) 'তদুপরি মার্কিন লক্ষ-পতিরা আসেন নানা ধান্দায়'-তাদের এই আশার ফলে কোন ঘটনা ঘটে?
উত্তর:প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির রচিত 'আড্ডা' প্রবন্ধে, মার্কিন ধনকুবেরদের কায়রোতে আসার ফলে তাদের সম্মানে আসেন,গোটা পৃথিবীর ডাকসাইটে সুন্দরীরা।সেই সুন্দরীদের সম্মানে এখানে আসেন হলিউডের পরিচালকরা এবং তারা সঙ্গে নিয়ে আসেন আরও অনেক সুন্দরীকে।
১০) 'কারণ আপনি এখানে আসেন কালেভদ্রে।'- কোন ঘটনার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর:প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির রচিত 'আড্ডা'প্রবন্ধে,আড্ডার শহর কায়রোতে নীলনদের ধারে কোনো এক কাফেতে ঠিক মাসে একদিন কিংবা দুদিন যান, শহর থেকে মাইল তিনেক দূরের, সেই কাফেতে গেলে তারা তাকে দুহাত তুলে অভ্যর্থনা করে। কারণ কালেভদ্রে সেখানে তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়।
ঘ) সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন (Type-2) প্রশ্নমান-৩
১)'একমাত্র তাঁরাই নাকি আড্ডা দিতে জানেন।'-কারা এই দাবি করেন? তাদের আড্ডার বিশেষত্ব কী?
উত্তর:প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির রচিত 'আড্ডা' প্রবন্ধে,মিশরের কায়রো শহরের যাঁরা আড্ডাবাজ তাঁরা দাবি করেন যে, তাঁরাই যথার্থ আড্ডা দিতে জানেন।কায়রোর আড্ডার বিশেষত্ব হল- তাঁদের আড্ডা কখনোই কারোর বাড়িতে বসে না। কারণ,আড্ডাবাজরা মনে করেন যে, এতে আড্ডার নিরপেক্ষতা কিংবা গণতন্ত্র লোপ পাবে। কারণ যাঁর বাড়িতে আড্ডা বসে তিনি সকলকে আপ্যায়ন করেন, তাই সকলেই তাঁকে একটু বেশি তোয়াজ করে।সেই কারণে মিশরীয়রা আড্ডার উপযুক্ত জায়গা হিসেবে কাফেকেই পছন্দ করে।
২)' হরেক জাতের চিড়িয়া সে আড্ডায় হরবক মৌজুদ থাকত ।'- কোন আড্ডার কথা বলা হয়েছে ? হরেক জাতের চিড়িয়া বলতে, লেখক কী বুঝিয়েছেন তা আলোচনা করো ।
উত্তর:প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির রচিত 'আড্ডা' প্রবন্ধ, কায়রো শহরে লেখকরা ‘কাফে দ্য নীল’ নামে যে কাফেতে আড্ডা দিতেন-এখানে সেই আড্ডার কথা বলা হয়েছে।
* ‘কাফে দ্য নীল'-এর আড্ডায় বহু বিচিত্র মানুষের সমাবেশ ঘটত। যেমন, রমজান বে আর সজ্জাদ এফেন্দি নামে দুজন ছিলেন খাঁটি মিশরীয় মুসলমান, ওয়াহহাব আতিয়া ছিলেন খ্রিস্টান মিশরীয়, জুর্নো ছিলেন ফরাসি, আর মার্কোস ছিলেন জাতিতে গ্রিক এবং আড়াই হাজার বছর ধরে মিশরের অধিবাসী। এই আড্ডাতেই বাংলাদেশের চণ্ডীমণ্ডপ এবং জমিদার হাভেলির আড্ডা হিসেবে হাজির ছিলেন লেখক সৈয়দ মুজতবা আলিও।
৩) 'অতি উত্তম আরবী কবিতা লেখে'- কার কথা বলা হয়েছে? কবিতায় তার কোন পরিচয় প্রাবন্ধিক দিয়েছেন?
উত্তর:প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর রচিত 'আড্ডা' প্রবন্ধে, 'কাফে দ্য নীল' এ আড্ডায় আগত ফরাসি জুনোর কথা বলা হয়েছে।
* জুনো ছিলেন জাতিতে ফরাসি। কবিতা লিখতেন আরবিতে।তার কবিতার বক্তব্য হচ্ছে, তলোয়ার চালিয়ে আড়াই ডজন বেদুইনকে ঘায়েল করে প্রিয়তমাকে উটের ওপরে তুলে সে মরুভূমির দিক- দিগন্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।লেখক কৌতুক করে বলেছেন, আড্ডা সকলেই জানতেন—জুর্নো মরুভূমি দেখেছে শুধু পিরামিডে বেড়াতে গিয়ে এবং তাও জীবনে মাত্র একবার। উট কখনও সে চড়েনি, কারণ ট্রামের ঝাঁকুনিতেই তাঁর বমি হয়ে যায়। আর তলোয়ার সে জীবনে কখনও ধরেনি।
৪)'ভাবখানা ভুল লোককে বাছা হয়নি'- কারা,কেন এরকম ভেবেছিল ?
উত্তর:প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর রচিত 'আড্ডা' প্রবন্ধে কাফেতে আড্ডাবাজ যে মানুষেরা লেখককে দেখে নীরবে তাঁদের দলভুক্ত করেছিলেন, তাঁদের কথাই এখানে বলা হয়েছে।
* আড্ডার মানুষদের গ্রহণযোগ্যতা উপলব্ধি করে গর্বিত লেখক কফির অর্ডার দিয়েছিলেন এবং সেই সময় আড্ডার সদস্যরা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি হাসতে থাকেন।তাদের অভিব্যক্তি দেখে মনে হয়, তাঁরা ঠিক লোককেই তাদের দলভুক্ত করেছেন।
৫)'কাফের ছোকরাটা পর্যন্ত ব্যাপারটা বুঝে গিয়েছে।'- ছোকরা বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? সে কী বুঝে গিয়েছিল ?
উত্তর:প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির রচিত 'আড্ডা' প্রবন্ধে, ‘কাফে দ্য নীল'-এর কফি পরিবেশক ছেলেটির কথা বলা হয়েছে।
* আড্ডাবাজ লোকেরা উপযুক্ত ব্যক্তিকেই মনোনীত করেছে সেটা সে বুঝতেপেরেছিলেন। সেই জন্য কফি পরিবেশনের সময় লেখক যে ভালো টিপস দেন, সে কথা বলে আড্ডার সকলে লেখকের পক্ষে বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা করেছিল।
৬) 'কাইরোতে তামাক!'- কোন প্রসঙ্গে বক্তা এই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ? কায়রোতে তামাকসজ্জার যে বর্ণনা লেখক দিয়েছেন ,তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির রচিত 'আড্ডা' প্রবন্ধে, কায়রোর কাফেতে আড্ডার গ্রিক সদস্য মার্কোস কফি পরিবেশনকারী ছেলেটিকে তামাক সাজার কথা বলেছিলেন। সেই কথা শুনেই লেখক বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
* সেখানে তামাক সাজা ছিল এক রাজকীয় আয়োজন। ফারসি হুঁকো, কিন্তু তাতে হনুমানের ল্যাজের মতো সাড়ে তিন কেজি দরবারি নল নেই, লেখকের মতে,সমস্ত জিনিসটার গঠন কেমন যেন ভোঁতা ভোঁতা, একটু গ্রাম্যপ্রকৃতির। তবে ছিলিমটা ছিল বেশ বড়ো আকৃতির। একপো পরিমাণ তামাক হেসেখেলে তার ভিতরে দেওয়া যেতে পারে।তবে সবথেকে যেটা উল্লেখযোগ্য ছিল, তা হল তামাকের খুশবু। বহুদিন পরেও তা লেখকের নাকে লেগেছিল।
৭)'মিশরীরাও ঠিক সেই রকম সুগন্ধ-তত্ত্ব সম্পূর্ণ ভুলে যায়নি।'-ঠিক সেই রকম বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? মিশরীয়দের এই ভুলে না যাওয়ার নিদর্শন কী?
উত্তর:প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির রচিত 'আড্ডা' প্রবন্ধ, রসায়নবিদ্যায় ভারতীয়দের যে দক্ষতা ছিল, পাঠান এবং মোঘল যুগে তার অবলুপ্তি ঘটলেও ভারতবাসী তা সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়নি। তা আজও ভারতীয়রা মকরধ্বজ, চ্যবনপ্রাশ বানাতে পারে।
*মিশরীয়রাও যে তাদের সুগন্ধ বা খুশবু ভুলে যায়নি, তার বড়ো প্রমাণ ইজিপশিয়ন সিগারেট, যেখানে তামাকের সঙ্গে খুশবু যোগ করেও তামাকের স্বাদটাকে ঠিক তারা বজায় রাখে।
৮)'রমজান বে আরো উদাস সুরে বলবে'- কী বলবে? তাতে শ্রোতার প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
উত্তর: প্রাবন্ধিক মুজতবা আলির রচিত 'আড্ডা' প্রবন্ধ, কাফের ওয়েটারের কাছে চিঠি আসার খবর না পেয়ে, কাফের আড্ডার কোনো ব্যক্তি চঞ্চল হয়ে যখন নিজেই চিঠি লিখতে বসে এবং ঘণ্টাখানেকের গভীর মনোযোগে একটি প্রেমপত্র লিখে সেটি ওয়েটারকে ডাকে ফেলতে বলে,জানতে চায় যে চিঠিটা কাকে লেখা, তাতে লেখক খুব্ধ হন এবং বলেন-'তোমার তাতে কি ?'- প্রত্যুত্তরে রমজান বলে যে, সকালে বিলকিসের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে এবং সে লেখককে বলে দিতে বলেছে যেন সাড়ে এগারোটায় ফামিনা সিনেমার গেটে তার সঙ্গে দেখা করবেন।
৯)'জানিনে, ভাই, তোমাদের দেশে প্রেমের রেওয়াজ কি।'- এ কথা কে বলেছিল ? সে বিষয়ে নিজের দেশের কোন অভিজ্ঞতার কথা সে জানায় ?
উত্তর: প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির রচিত 'আড্ডা' প্রবন্ধ, 'কাফে দ্য নীল'-এর অন্যতম চরিত্র রমজান বে মন্তব্যটি করেছিল।
রমজান জানিয়েছিল যে, সে দেশে প্রেমের রীতি হল প্রিয়া যখন পাশের ঘরে তখন অন্য ঘরে বসে প্রেমিক পাতার পর পাতা প্রেমপত্র লিখে যায়। তা মিশরীয়দের কাছে হৃদয় উৎসারিত একটি নিত্য অভ্যাস।
১০)এতক্ষণ একটা মুখরোচক আলোচনার বিষয়বস্তু উপস্থিত হল। '- কখন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল? মুখরোচক আলোচনা টি কী ছিল ?
উত্তর: প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির রচিত 'আড্ডা'প্রবন্ধে, কোনো প্রেমিক দীর্ঘসময় ধরে কাফেতে তাঁর প্রেমিকাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন এবং রমজান বে সমস্তটা দেখার পরে তাঁকে জানিয়েছিলেন যে, বিলকিস নামের মেয়েটি তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য সাড়ে এগারোটার সময় ফামিনা সিনেমার সামনে অপেক্ষা করবে।সে কথা শুনে চিঠি লিখে সময় নষ্ট হওয়ার জন্য প্রেমিক মানুষটি ক্রুদ্ধ হন। কিন্তু রমজান বে জানায় যে, তাদের দেশে প্রেমের রীতি হল প্রেমিকা পাশের ঘরে থাকলেও বসে বসে অন্য ঘরে প্রেমের চিঠি লেখা হয়। এইসব আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতেই 'কাফে দ্য নীল- এর আড্ডায় আলোচনার মুখরোচক বিষয় চলে আসে। আড্ডায় উপস্থিত সকলেই প্রেমপত্র লেখার সময়, অসময়, কায়দা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা শুরু করে দেয়। সব বিষয়কে সরিয়ে দিয়ে আলোচনা হয় সেই চিরকালীন প্রশ্নে—তা হল কোন দেশের মেয়েরা সব থেকে সুন্দরী দেখতে হয়।
ঙ) রচনাধর্মী বা বর্ণনাধর্মী প্রশ্নোত্তর। প্রশ্নমান-৫
১)"তবে কসম খেয়ে বলতে পারি যে "- সে শহর 'কাইরো' লেখক কোন বিষয়ে এ কথা বলেছেন ? এমন কথা বলার কারণ কী?
উত্তর: প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির রচিত 'আড্ডা' প্রবন্ধে,পৃথিবীতে যদি কোনো শহরের নিয়ে আলোচনা করার ক্ষমতা থাকে তাহলে সে শহরের নাম কায়রো- এ কথাই জোরের সঙ্গে লেখক বলেতে চেয়েছেন।
লেখকের মতে, কায়রোতে আদি বাসিন্দা হিসেবে বহুযুগ ধরে রয়েছে গ্রিক, আরব, তুর্কি হাবশি, সুদানি, ইতালীয়, ফরাসি, ইহুদি এবং আরও অসংখ্য জাতির মানুষ। তাদের মধ্যে সকলেই খোলামেলা এমনটা নয়। কিন্তু কাফের আড্ডায় মানুষেরা অনায়াসে নিজের মুখে ঝাল খেয়ে নিতে পারে অর্থাৎ নিজের জ্ঞান ও বিবেচনার ওপরেই তারা ভরসা রাখে।
২)'এ আড্ডার সদস্যদের সবাই সবজান্তা।'-কোন্ আড্ডার কথা বলা হয়েছে ? লেখককে অনুসরণ করে সেই আড্ডার পরিচয় দাও।
উত্তর: প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর বাড়ির পাশের সেমিরামিস কাফের আড্ডার কথা বলেছেন।
* লেখকের মতে,সেমিরামিস কাফের সদস্যরা খুব চ্যাংড়া,কলেজ পড়ুয়া,কেরানি, অথবা বেকার কিংবা ইনশিওরেন্সের এজেন্ট, সেই আড্ডার সদস্য। তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু রাজনীতি হলেও আসলে পরচর্চা।যেমন-কোন পাশার স্ত্রী কোন্ মন্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া করেন বলে তার বোনপো ভালো চাকরি পেয়ে গেল ইত্যাদি। তাদের সাহিত্য-আলোচনা কোন প্রকাশক এক হাজারের নাম করে তিন হাজার ছাপিয়ে দু-পয়সা কমিয়ে নিয়েছে এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। এরা যেন মিশর এবং গোটা পৃথিবীর সমস্ত 'গুরু ও গরম' খবর রাখত।
৩)হায়, দুনিয়া, তুমি জানছো না তুমি কি হারাচ্ছো।'- কোন প্রসঙ্গে লেখক এ কথা বলেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর:প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির রচিত 'আড্ডা'প্রবন্ধে, বাড়ির পাশের সেমিরামিস কাফেতে লেখক দেখেছিলেন সবজান্তা আড্ডাবাজদের, যারা রাজনীতি অথবা সাহিত্য কোনো কিছুরই গভীর আলোচনায় না গিয়ে পরনিন্দা-পরচর্চায় ব্যস্ত থাকত এবং তাদেরকে দেখে মনে হত তারা সকলেই সবজান্তা। এদের কথাবার্তা এবং হাবভাব দেখলে মনে হত-এদের প্রত্যেকের চোখের সামনে এক অদৃশ্য টেলিপ্রিন্টার খবর জানিয়ে যাচ্ছে।যার উৎস হল - রাশিয়ার বেরিয়া,জার্মানির হিমলার আর কলকাতার টেগার্ট। তাদের সাহায্য ছাড়া গোটা পৃথিবীর সরকারগুলোর চলা সম্ভব কিনা সে বিষয়ে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এবং এরা যদি কোনো শহরের বড়োকর্তা হয় তাহলে পৃথিবীর সমস্ত সমস্যার সমাধান এক মুহূর্তে হয়ে যাবে। এদের প্রসঙ্গেই ব্যঙ্গ করে লেখক মন্তব্যটি করেছেন।
৪)'বাড়ির আড্ডায় 'মেল' মেলেনা'-এরূপ উক্তির কারণ কী?লেখক কোথায়, কাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন?
উত্তর: প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর রচিত আড্ডা প্রবন্ধ, লেখক বলেছেন, কায়রোর আড্ডা কখনও কোনো অবস্থাতেই কারোর বাড়িতে বসত না, কারণ কায়রোর আড্ডাবাজরা মনে করতেন যে, আড্ডার নিরপেক্ষতা বা গণতন্ত্র কোনোটাই বাড়ির আড্ডায় বজায় থাকত না। তার কারণ, যাঁর বাড়িতে আড্ডা বসত তিনি যেহেতু সকলকে আপ্যায়ন করতেন তাই তাঁর বাড়তি খাতির হত। একারণে আড্ডায় যাঁরা বিশেষভাবে পরীক্ষিত তাঁরা মনে করতেন যে, বাড়ির আড্ডায় মজা পাওয়া যায় না।
* লেখকদের আড্ডা বসত 'কাফে দ্য নীল' বা 'নীলনদ কাফে’তে। সেখানে নানাধরনের মানুষ আড্ডার সদস্য ছিলেন। যেমন, রমজান বে আর সাজ্জাদ এফেন্দি ছিলেন খাঁটি মিশরীয় মুসলমান, ওয়াহহাব আতিয়া ছিলেন ক্রিশ্চান এবং খাঁটি মিশরীয়, কারণ তিনি মনে করতেন তাঁর শরীরে আছে ফ্যারাওদের রক্ত। আড্ডায় ছিলেন ফরাসি জুনো,যিনি আরবি কবিতা লিখতেন। আড্ডার সদস্য ছিলেন জাতিতে গ্রিক মার্কোস, যিনি দাবি করতেন প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে তাঁরা মিশরে আছেন এবং মিশরের রানি ক্লিয়োপেট্রার সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তা আছে। তাঁদের সঙ্গেই বাংলার চণ্ডীমণ্ডপ এবং জমিদার হাভেলির আড্ডার একমাত্র প্রতিভূ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী।
আরো পড়ুন:
একাদশ শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর click here
তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর click here
লালন শাহ ফকিরের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click here
ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click here
ছুটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click here
আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তর click here
আজব শহর কলকেতা প্রবন্ধ প্রশ্ন উত্তর Click here
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান আলোচনা করো। Click here
আড্ডা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর Click here
0 Comments