সূচিপত্র:
ক) সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন(Type-1) প্রশমান-২
খ) সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন (Type-2) প্রশ্নমান-৩
গ) রচনাধর্মী বা বর্ণনাধর্মী প্রশ্নোত্তর। প্রশ্নমান-৫
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারায়-লৌকিক সাহিত্যের নানা দিকের লোককথা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
ক) সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন(Type-1) প্রশমান-২
১)লোককথা বলতে কী বোঝ? লোককথার বিভিন্ন প্রকারগুলির উল্লেখ করো।
উত্তর: একটা জাতির আত্মানুসন্ধান,গৌরববোধ, স্বদেশচেতনা,স্বপ্নে ও স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস যখন অভিজ্ঞতা ও কল্পনা,স্মৃতি ও স্বপ্নের মধ্য দিয়ে কাহিনিভিত্তিক নির্মাণরূপ লাভ করে, তখন তাকে বলে লোককথা।
*লোককথার প্রকারগুলি হল - রূপকথা , উপকথা , নীতিকথা , ব্রতকথা , পশুকথা , লোকশ্রুতি, কিংবদন্তি , ইত্যাদি।।
২)রূপকথা কাকে বলে?
উত্তর:লোককথা একটি প্রাচীন শাখার অন্যতম শাখা হল-রূপকথা।যেখানে বিভিন্ন শাখা কাহিনির সমন্বয়ে এক জটিল অবাস্তব কাল্পনিক চরিত্র অবলম্বনে অবিশ্বাস্য সব কাহিনিকে ফুটিয়ে তোলা হয়। সেইসব কাহিনীগুলিকে বলা হয় রূপকথা।
৩)রূপকথাকে কেন লোকসাহিত্যের আদিম রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়?
উত্তর: সমস্ত লোকসাহিত্যের মধ্যে একমাত্র রূপকথাতেই নরবলি,রাক্ষস দ্বারা নরমাংস ভক্ষণ ইত্যাদি লক্ষ্য করা যায়। সেকারণে এক প্রাচীন যুগের আদিম সমাজের রসসৃষ্টির প্রয়াস বলে মনে করা হয়।
৪)ব্রতকথা বলতে কী বোঝ?
উত্তর: প্রবল অনিষ্টকারী দেবতাকে সন্তুষ্ট করে মানব কল্যাণের উদ্দেশ্যে লোককথাগুলি রচিত হয় ,সেই লোককথা গুলিকেই 'ব্রতকথা' নামে পরিচিত ।
৫) উপকথার সঙ্গে ব্রতকথার সাদৃশ্য কী? ব্রত কথাকে ভিত্তি করে পরবর্তী কালে কোন সাহিত্য শাখার সৃষ্টি হয়।
উত্তর : উপকথার সঙ্গে ব্রতকথার সাদৃশ্য হল — যেমন- পশুপাখির উপরে মানবতা আরোপ করা হয় , ব্রতকথাতেও সেরকম নানা দোষগুণের আধার হিসেবে দেবতাদের ভাবা হয়। ব্রতকথাকে ভিত্তি করে পরবর্তীকালে মঙ্গলকাব্য ধারার সৃষ্টি হয়।
খ) সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন (Type-2) প্রশ্নমান-৩
১)বিভিন্ন প্রকার লোককথার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর:লোককথার একটি ধারা পশুকথা। জীবজন্তুর সঙ্গে মানবপ্রকৃতিকে মেলানো হয়েছে এই সব গল্পে। রূপকথায় সম্পূর্ণ অবাস্তব পরিবেশে কল্পিত চরিত্রের সমাবেশে কাহিনিকে ফুটিয়ে তোলা হয়। লোককথার বিশিষ্ট শাখা ব্রতকথা। অনিষ্টকারী দেবতাকে খুশি করে তাঁর আশীর্বাদকে কেন্দ্র করেএই ব্রতকথা গুলির জন্ম হয়েছে। এখানে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের নানা অসম্ভব ঘটনার কাহিনীর সৃষ্টি হয়। যদিও এখানে মানুষের বিবর্তন,ধর্মের আবির্ভাব,লোকাচার ইত্যাদি সবকিছু যেন মূল বিষয় হয়ে উঠেছে লোককথায়। লোককথার আর-একটি ধারা স্থানিক কথা (sage)। কোনো একটি স্থানের উপর ভিত্তি করে রচিত এই জাতীয় কাহিনিতেও নানা অবাস্তব বিষয়ের মিশ্রণ ঘটে।
২)লোককথার অন্যতম শাখা রূপকথা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: রূপকথা এমন একটি সাহিত্যধারা যা সাধারণত কাল্পনিক, অদ্ভুত বা অতিপ্রাকৃত ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়। এতে সাধারণত চরিত্রের মধ্যে প্রাকৃতিক শক্তির অধিকারী বা অতিমানবিক গুণসম্পন্ন প্রাণী, দৈত্য, পরী, জাদুকর, রাজকুমার-রাজকুমারী ইত্যাদি থাকে। রূপকথায় মোরাল বা নৈতিক শিক্ষা থাকে, যা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বা মূল্যবোধ তুলে ধরে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে রূপকথা ছড়িয়ে আছে। এ ধরনের গল্পগুলো সাধারণত মুখে মুখে বা বাচিক শিল্পের মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে দুষ্টের পরাজয়, সৎ ও ন্যায়ের জয়, ভালো কাজের পুরস্কার, খারাপ কাজের শাস্তি ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পায়।
বাংলা রূপকথার মধ্যে "হযরত আলী ও তার বুদ্ধি", "কথকচিত্র", "পিপঁড়ে ও ডানা" সহ বহু জনপ্রিয় গল্প রয়েছে, যা শিশুশিক্ষা ও আনন্দদায়ক বিনোদন সরবরাহ করে। রূপকথা মানব চরিত্র, নৈতিকতা, এবং মানবিক অনুভূতির এক গভীর চিত্র তুলে ধরে, যা ছোটদের পাশাপাশি বড়দেরও ভাবিত করে।
৩)লোককথার অন্যতম শাখা ব্রতকথা বিষয়ে আলোচনা করো।
উত্তর:বাংলার ব্রতকথাগুলি বাংলার লৌকিক দেবদেবীদের অবলম্বন করে লেখা হয়েছে। অনিষ্টকারী কোনো দেবতাকে সন্তুষ্ট করে তাঁর দ্বারা কল্যাণ সাধন করাই বাংলার ব্রতকথা গুলির উদ্দেশ্য।ব্রতকথায় দোষগুণ-সমন্বিত মানব রূপেই দেবতাদের আবির্ভাব ঘটে। ব্রতকথার দেবতাদের সঙ্গে মঙ্গলকাব্যের দেবতাদের ভাবগত অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। গার্হস্থ্য সুখ সমৃদ্ধির সন্ধানই ব্রতকথার লক্ষ্য। কখনো কখনো রূপকথাকে কিছুটা পরিবর্তিত করে ব্রতকথার আকার দেওয়ার চেষ্টাও করা যায়।যেমন-সঙ্কটার ব্রতকথা।ব্রতকথায় চরিত্র ভাবনায় অভিনবত্ব পাওয়া যায় না।সৌভাগ্যের প্রতীক হয়ে আসেন রাজা কিংবা সওদাগর।আর দুর্ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে আসেন বামুন,যিনি হয় দরিদ্র,না হয় ভিক্ষুক। স্বামীর সৌভাগ্য,সন্তানসুখ—নারীর এই কামনাই ব্রতকথার মধ্যে প্রকাশ পায়। বাংলার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্রত হল-'পুণ্যিপুকুর ব্রত,বসুধারা ব্রত, সেঁজুতি ব্রত,হরিচরণ ব্রত, সুবচনি ব্রত,ইত্যাদি।
গ) রচনাধর্মী বা বর্ণনাধর্মী প্রশ্নোত্তর। প্রশ্নমান-৫
১) লোককথা কাকে বলে? লোককথার যে-কোনো দুটি শাখার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর:জাতির অভিজ্ঞতা,আত্মসন্ধান,গৌরববোধ, স্বদেশচেতনা,স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের চেতনা যখন ব্যক্তিমানুষের প্রতিভা আর কল্পনার লোকোত্তর বিস্তারে স্মৃতিরূপ লাভ করে,তখন তাকেই লোককথা বলা হয়। মনে রাখা দরকার,লোককথা প্রধানত শ্রুতিনির্ভর।লোককথা সাধারণত গদ্যে রচিত, পদ্যে যখন তা রচিত হয়, তখন তাকে বলে গীতিকা।
১)কিংবদন্তি:
কিংবদন্তি হল একটি ঐতিহ্যবাহী গল্প বা কাহিনী যা সাধারণত প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসে এবং মানুষের বিশ্বাস, সংস্কৃতি, ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে। এই ধরনের গল্পে সাধারণত অতিপ্রাকৃত বা অবাস্তব উপাদান থাকে, যা বাস্তবতার সঙ্গে মিশে গিয়ে এক ধরনের রূপকথার আকার ধারণ করে। কিংবদন্তি সাধারণত ঐতিহাসিক বা সামাজিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় এবং তা ঐক্যবদ্ধতা, সাহস, প্রতিরোধ বা নৈতিক শিক্ষা প্রদান করে। বাংলাদেশের কিংবদন্তিগুলোর মধ্যে অনেকগুলি লোককথা এবং ধর্মীয় উপাখ্যান আছে, যেমন রাজা শশাঙ্ক, সীতার বনবাস, কিংবা বাঘের সঙ্গে মানুষের সংগ্রাম। এসব গল্পে মানুষের জীবনের সংগ্রাম, তাদের সাহস এবং আশা-নিরাশার চিত্র তুলে ধরা হয়। কিংবদন্তির মাধ্যমে সমাজের মূল্যবোধ ও বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করা হয়, যা সাধারণ মানুষের মনোজগতকে প্রভাবিত করে।কিংবদন্তি শুধুমাত্র একটি গল্প নয়, বরং সমাজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছে দেওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
২)পশুকথা:
পশুকথা হলো এমন একটি সাহিত্যধারা যেখানে পশুদের কথা বলার মাধ্যমে মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিক, যেমন নৈতিকতা, সমাজ, ও মনোভাবকে উপস্থাপন করা হয়। এই ধরনের রচনা পশুদের চরিত্রের মাধ্যমে মানুষের আচরণ, চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। পশুকথার মাধ্যমে লেখকরা সাধারণত মানবিক দুর্বলতা, সাহসিকতা, অধিকার, ও সমাজের সমস্যাগুলি তুলে ধরেন।
পশুকথা মূলত একটি প্রাচীন সাহিত্য রীতি। এটি বিভিন্ন সংস্কৃতিতে প্রচলিত, তবে বিশেষত ফরাসি, ইংরেজি, ও বাংলা সাহিত্যে এর গুরুত্ব অনেক। বাংলায় পশুকথার প্রভাব সর্বাধিক দেখা যায় বৈষ্ণব পদাবলীতে এবং মধ্যযুগীয় কবিদের রচনায়। বাংলায় কাব্যিক পশুকথার উদাহরণ হিসেবে শিবনারায়ণ রায়ের "পশু-কথা" উল্লেখযোগ্য।
পশুকথা সাধারণত ছোট গল্পের আকারে হয়, যেখানে পশুর চরিত্রগুলো মানবিক গুণাবলী এবং দোষের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই কাহিনীগুলো মূলত শিশুদের জন্য উপযোগী হলেও, বড়দের জন্যও তা গভীর দার্শনিক এবং নৈতিক শিক্ষার উৎস হতে পারে।
আরো পড়ুন:
একাদশ শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর click here
তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর click here
লালন শাহ ফকিরের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click here
ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click here
ছুটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click here
আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তর click here
আজব শহর কলকেতা প্রবন্ধ প্রশ্ন উত্তর Click here
পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর Click here
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান আলোচনা করো। Click here
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো। Click here
বাংলা কাব্য সাহিত্য মাইকেল মধুসূদন দত্তের অবদান
চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা Click here
বাংলা কাব্য সাহিত্যে বিহারীলাল চক্রবর্তী অবদান click here
বাংলা নাট্য সাহিত্যে গিরিশচন্দ্র ঘোষের অবদান Click here
বাংলা নাট্য সাহিত্যে বিজন ভট্টাচার্যের অবদান Click here
বাংলা গদ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান Click here
আড্ডা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর Click here
মানস- মানচিত্র অবলম্বনে ইন্টারনেট ও আধুনিক জীবন সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা Click here
বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রবন্ধ রচনা Click here
লৌকিক সাহিত্যের বিভিন্ন দিকে- লোককথা Click here
0 Comments