* বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রবন্ধ রচনা:
* সূচিপত্র:
*ভূমিকা
* কারণ
* প্রভাব
* প্রতিরোধ
*উপসংহার
ভূমিকা:
বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং হলো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি, যা প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, মানুষের জীবনযাত্রা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এক গুরুতর হুমকি। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যার প্রভাব প্রতিটি দেশ ও অঞ্চলে অনুভূত হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, মানবসৃষ্ট গ্যাস নিঃসরণ যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), মিথেন (CH4), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) ইত্যাদি বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান কারণ। পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ানো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণসমূহ:
বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্যতম প্রধান কারণ হলো মানবসৃষ্ট গ্যাস নিঃসরণ। ১৮০০ শতকের শেষের দিকে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে পৃথিবীজুড়ে শিল্পায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কারখানায় উৎপাদন,গাড়ির ব্যবহার, বিদ্যুৎ উৎপাদন ইত্যাদি কার্যকলাপের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রীনহাউস গ্যাস পরিবেশে মুক্তি পাচ্ছে। গ্রীনহাউস গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলে অবস্থান করে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য দায়ী।
এছাড়া বনভূমি ধ্বংসও একটি বড় কারণ। বনাঞ্চল গ্রীনহাউস গ্যাস শোষণ করে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু অতিরিক্ত বনজসম্পদ সংগ্রহ এবং অব্যবস্থাপনা চাষাবাদ বনভূমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করছে,যার ফলে কার্বন শোষণের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে এবং উষ্ণায়ন বাড়ছে।
একইভাবে, কৃষি এবং খামার শিল্পের বর্জ্যও উষ্ণায়নের কারণ। পশুদের দ্বারা নিঃসৃত মিথেন গ্যাসের পরিমাণ অত্যন্ত বেড়ে গেছে।অধিকাংশ ক্ষেত্রে পশুদের খাবারের সাথে সম্পর্কিত পরিবেশগত সমস্যাগুলোও গ্রীনহাউস গ্যাসের নিঃসরণের অন্যতম উৎস।
বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব:
বিশ্ব উষ্ণায়ন যে শুধু তাপমাত্রার বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা নয়, এর আরো বহুবিধ প্রভাব রয়েছে যা আমাদের জীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে।
১. আবহাওয়া পরিবর্তন: উষ্ণায়নের ফলে বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটছে। তাপমাত্রার বৃদ্ধি শীতকালকে আরো হালকা এবং গরমকালকে আরো তীব্র করে তোলে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, বন্যা, খরা ইত্যাদি প্রকৃতিক বিপর্যয়ের বৃদ্ধি হচ্ছে।
২. জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি: বিশ্ব উষ্ণায়ন সাগরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে, যার ফলে প্রবাল দ্বীপ এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য বিপদে পড়ছে। প্রবাল প্রাচীরের মৃত্যু, সামুদ্রিক খাবারের উৎস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং মাছ ধরা শিল্পের ওপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
৩. বরফগলা: পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে নিম্নভূমি অঞ্চলে বন্যা, উপকূলীয় এলাকার ক্ষয় এবং মানুষের বসবাসের জন্য বিপদ সৃষ্টি হচ্ছে।
৪. খাদ্য নিরাপত্তা: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে। অধিক তাপমাত্রা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং খরা কৃষকের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যার ফলে খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হতে পারে।
৫. স্বাস্থ্যঝুঁকি: উষ্ণায়নের কারণে রোগবালাইও বেড়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রার বৃদ্ধি মশা, মাছি, অন্যান্য রোগবাহী কীটপতঙ্গের বিস্তার ঘটাচ্ছে, যা ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধের উপায়:
বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। নিম্নলিখিত কয়েকটি পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা বিশ্ব উষ্ণায়ন মোকাবিলা করতে পারি:
১. নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি: জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার যেমন সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ ইত্যাদি প্রচলন করতে হবে। এটি গ্রীনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমিয়ে দিতে সাহায্য করবে।
২. বনভূমি সংরক্ষণ: বনাঞ্চল রক্ষার জন্য সরকারী এবং বেসরকারি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। বন উজাড় না করে, নতুনভাবে বৃক্ষরোপণ করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত।
৩. জলবায়ু চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: পৃথিবীজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সমঝোতা এবং চুক্তি গ্রহণ করা জরুরি। যেমন ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি যা পৃথিবীকে উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যে কাজ করছে।
৪. দূষণ নিয়ন্ত্রণ: শিল্পাঞ্চল, যানবাহন এবং কৃষিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও কঠোর আইন প্রয়োগ করা উচিত। গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ কমাতে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন।
৫. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষকে বিশ্ব উষ্ণায়নের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। ছোটখাটো পরিবর্তন, যেমন প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো, পুনঃব্যবহারযোগ্য উপকরণ ব্যবহার করা, ইত্যাদি পরিবেশের প্রতি সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে।
উপসংহার:
বিশ্ব উষ্ণায়ন একটি বৈশ্বিক সমস্যা যা পরিবেশ, সমাজ, অর্থনীতি এবং মানব সভ্যতার জন্য বিপজ্জনক পরিণতির কারণ হতে পারে। এই সংকট মোকাবিলায় একক কোন দেশ বা সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। এটি একটি যৌথ বৈশ্বিক প্রচেষ্টা দাবি করে। পৃথিবীকে সুরক্ষিত রাখতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পরিবেশ বজায় রাখতে আমাদের সবার একযোগে কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুন:
একাদশ শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর click here
তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর click here
লালন শাহ ফকিরের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click here
ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click here
ছুটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click here
আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তর click here
আজব শহর কলকেতা প্রবন্ধ প্রশ্ন উত্তর Click here
পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর Click here
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান আলোচনা করো। Click here
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো। Click here
বাংলা কাব্য সাহিত্য মাইকেল মধুসূদন দত্তের অবদান
চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা Click here
বাংলা কাব্য সাহিত্যে বিহারীলাল চক্রবর্তী অবদান click here
বাংলা নাট্য সাহিত্যে গিরিশচন্দ্র ঘোষের অবদান Click here
আড্ডা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর Click here
মানস- মানচিত্র অবলম্বনে ইন্টারনেট ও আধুনিক জীবন সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা Click here
বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রবন্ধ রচনা Click here
0 Comments