ক) সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন(Type-1) প্রশমান-২
খ) সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন (Type-2) প্রশ্নমান-৩
গ) রচনাধর্মী বা বর্ণনাধর্মী প্রশ্নোত্তর। প্রশ্নমান-৫
বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসে গিরিশচন্দ্র ঘোষের কৃতিত্ব নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো: একাদশ শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার।
ক) সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন(Type-1) প্রশমান-২
১) বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের কোন নাট্যকারের নাম উল্লেখযোগ্য?
উত্তর:বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে নাট্যজগতে যাঁর নাম উল্লেখযোগ্য তিনি হলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষজন্ম-(১৮৪৪ খ্রি.) মৃত্যু,-(১৯১১ খ্রি.)। গিরিশচন্দ্র ছিলেন অভিনেতাদের গুরু,সাধারণ রঙ্গমঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা, সেযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেতা বাংলা নাটকের অতি বিখ্যাত রচনাকার।
২)গিরিশচন্দ্র কীভাবে নাটকের উন্নতি ঘটিয়েছিলেন ?
উত্তর:বাংলা নাট্যসাহিত্যে ও অভিনয়ের জগতে গিরিশচন্দ্র ছিলেন প্রবাদপ্রতিম পুরুষ। তাঁর চেষ্টাতেই বাংলা নাটক সর্বপ্রথম পেশাদারি ব্যাপারে পরিণত হয়, তিনিই প্রথম নাট্যাভিনয়কে সুচারু শিল্পরূপে প্রতিষ্ঠিত করেন, চরিত্রাভিনয়ে তিনি একটি বিশিষ্ট রীতির প্রবর্তন করেন। নাট্যাভিনয় শিক্ষকহিসেবে নতুন 'স্কুল' প্রতিষ্ঠিত করেন, সেইখানে অশিক্ষিতা পণ্যরমণীকেও অসামান্য অভিনেত্রীতে পরিণত করা সম্ভব হয়েছিল।
৩) কার নেতৃত্বে কত খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বুকে পেশাদারি রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল?
উত্তর:গিরিশ ঘোষের নেতৃত্বে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বর মাসে 'ন্যাশানাল থিয়েটার' নামে কলকাতার বুকে সর্বপ্রথম পেশাদারি রঙ্গমঞ্চের প্রতিষ্ঠা হয়।
৪)নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ রচিত নাটক ও প্রহসনগুলির সংখ্যা কত ছিল?
উঃ গিরিশচন্দ্রের পূর্ণাঙ্গ নাটকের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ, প্রহসন,পঞ্চরং, রূপক, গীতিনাট্য, প্রভৃতির সংখ্যাও অনুরূপ।অভিনয়, নাট্যালয়, অভিনয়-শিক্ষা প্রভৃতি নিয়ে অত্যন্ত ব্যস্তথেকেও তিনি যে কি করে শতাধিক নাটক লিখলেন তা ভাবলে অবাক হতে হয়।
৫) গিরিশচন্দ্র ঘোষ প্রথমদিকে কী নাটক লিখেছিলেন?
উত্তর:প্রথম দিকে গিরিশচন্দ্র কয়েকখানি গীতিকাব্য লেখেন যেমন-'আগমনী'১৮৭৭‘অকালবোধন '১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে,দোললীলা,মোহিনীপ্রতিমা রচনা করেন।এই নাটকগুলিতে অভিনয় করে তিনি দর্শকদের মনোরঞ্জন করেছিলেন। কিন্তু উপযুক্ত নাট্যগুণ ও সাহিত্যরসের অভাবের জন্য এগুলির কোনোটিই পরবর্তীকালে অভিনীত হয়নি।
৬)কোন ধরনের নাটক রচনায় গিরিশচন্দ্রের কৃতিত্ব প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর:গিরিশচন্দ্রের প্রধান কৃতিত্ব হচ্ছে ভক্তিরসের পৌরাণিক নাটক রচনায়।গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক নাটকগুলি অধিকতর উৎকৃষ্ট হয়েছিল বলে অন্য সকলের যশ আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল।
৭) গিরিশ ঘোষ রচিত পৌরাণিক নাটকগুলি কী কী ?
উত্তর:তিনি ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে ‘অভিমন্যু বধ',১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে 'জনা' এবং ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে‘পাণ্ডবগৌরব’ পৌরাণিক নাটকগুলি রচনা করেছিলেন। এই নাটকগুলি একদা অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে বাংলা ও বাংলার বাইরে অভিনীত হয়েছে। 'জনা' নাটকে জনার মাতৃহৃদয় ও বীরনারীর অদ্ভুত চরিত্রাঙ্কনে তিনি খুবই সাফল্য লাভ করেছিলেন।
৮) গিরিশ ঘোষ কীভাবে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কৃপা লাভ করেছিলেন?
উত্তর:গিরিশচন্দ্র ঘোষ প্রথম জীবনে কিছু স্বেচ্ছাচারী ও উচ্ছৃঙ্খল হলেও ক্রমে ক্রমে শ্রীরামকৃষ্মদেবেরকৃপালাভ করেছিলেন,বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের বন্ধুত্ব পেয়েছিলেন,শ্রীরামকৃষ্ণ সংঘের মধ্যে ঠাঁই পেয়ে বেপরোয়া জীবনকে সংযত করলেন,ঠাকুরের প্রতি অচলা ভক্তি তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল।ভক্তভৈরব গিরিশের জীবনে শ্রীর মকৃষ্মদেবের প্রভাব এক বিচিত্র অধ্যায়,আর সেই মনোভাবের স্পর্শ পাওয়া যাবে তাঁর পৌরাণিক ও ভক্তিরসের নাটক নাটিকায়।
৯) গিরিশ ঘোষ রচিত তাঁর ভক্তিরসাশ্রিত নাটকগুলির নাম লেখো।
উত্তর:তাঁর রচিত ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে “চৈতন্যলীলা” ও ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে “বিল্বমঙ্গল”আদর্শ ভক্তিরসের নাটক। ভারতীয় পুরাণের প্রধান প্রধান নৈতিক আদর্শ ভক্তিনিষ্ঠা প্রভৃতি তত্ত্বগুলিকে তিনি অতি দক্ষতার সঙ্গে পৌরাণিক ও ভক্তিরসের নাটকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
১০) বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন নাটক ও নাট্যকারদের ওপর কী রকম প্রভাব ফেলেছিল?
উঃবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পটভূমিকায় গোটা বাংলাদেশে যে সাড়া পড়ে গিয়েছিল, নাট্যকারের দল তাতে যোগ না দিয়ে পারেননি। গিরিশচন্দ্র পৌরাণিক নাটকের কারবারি হলেও সমসাময়িক রাজনৈতিক ও স্বাদেশিক উত্তাপের আঁচ পেয়েছিলেন। সেই স্বাদেশিক অনুরাগ তাঁর কয়েকখানি ঐতিহাসিক নাটকে ফুটে উঠেছে।
খ) সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন (Type-2) প্রশ্নমান-৩
১) গিরিশ ঘোষ রচিত ঐতিহাসিক নাটকগুলির নাম উল্লেখ করো এবং আলোচনা করো।
উত্তর:১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে সৎনাম,১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে সিরাজদৌল্লা,১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে মীরকাশিম,অশোক, ছত্রপতি শিবাজি প্রভৃতি ঐতিহাসিক নাটকগুলি গিরিশচন্দ্র রচনা করেন। এই সমস্ত ঐতিহাসিক বা ছদ্ম ঐতিহাসিক নাটকে গিরিশচন্দ্রের স্বদেশপ্রেম ও ঐতিহাসিক বোধ লক্ষ করা যায়।অবশ্য তিনি ইতিহাসের একনিষ্ঠ পাঠক হয়েও ইতিহাসের ঘটনাকে নিপুণভাবে অনুসরণ করেননি।
২) গিরিশচন্দ্র ঘোষের রচিত বিখ্যাত সামাজিক নাটকটির নাম কী ?এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উ:গিরিশ ঘোষ কয়েকখানি সামাজিক নাটক রচনা করেছিলেন, তার মধ্যে “প্রফুল্ল” নাটকটি অন্যতম। “প্রফুল্ল” নাটকটি ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে রচিত হয়। তখন তিনি বাগবাজার অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন । ওই অঞ্চলের মধ্যবিত্ত পরিবারের নানা সমস্যা, দুঃখ-বেদনা, কারও কারও চারিত্রিক অধোগতি ও পানাসক্তি-যার ফলে অনেক পরিবার উচ্ছন্নে যেত, এসবই নাটকটিতে তুলে ধরা হয়েছিল । এই নাটকের কিছু কিছু উক্তি এখনও লোকমুখে শোনা যায়
৩) গিরিশচন্দ্রের সামাজিক নাটকগুলির নাম উল্লেখ করো।
উত্তর:তিনি অনেকগুলি সামাজিক নাটক রচনা করে ও অভিনয়ের মাধ্যমে যথেষ্ট প্রতিভার পরিচয়দিয়েছেন।জনসাধারণ তাঁর অভিনয় এখনও মনে রেখেছেন। সামাজিক নাটকগুলি যথাক্রমে ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে 'প্রফুল্ল',১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে 'হারানিধি',১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে 'বলিদান', (১৩১৫ বঃ ; ১৯০৮ খ্রিঃ)‘শাস্তি কি শাস্তি',১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে 'মায়াবসান'প্রভৃতি ।
৪)গিরিশচন্দ্রের সামাজিক নাটকগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উঃ গিরিশচন্দ্রের পারিবারিক ও সামাজিক নাটকগুলিতে বিধবা বিবাহ, পানাসক্তি প্রভৃতি সামাজিক সমস্যার চিত্র ফুটে উঠেছে। আধ্যাত্মিক তত্ত্বের ইংগিত রয়েছে মায়াবসান নাটকটিতে, পণপ্রথার চিরকালীন সমস্যা ফুটে উঠেছে 'বলিদান' নাটকটিতে।
৫ গিরিশচন্দ্রের প্রহসন ও রঙ্গব্যঙ্গ নাটিকা কী কী ?
উত্তর:গিরিশচন্দ্র সামাজিক,ঐতিহাসিক নাটক ছাড়াও কতকগুলি প্রহসন ও রঙ্গব্যঙ্গ নাটিকা রচনা করেছিলেন।রঙ্গব্যঙ্গ নাটিকাগুলি হল-‘সপ্তমীতে বিসর্জন, বেল্লিক বাজার, বড়দিনের বখশিশ,সভ্যতার পাণ্ডা,য্যায়সা কি ত্যায়সা' প্রভৃতি।তাঁর যুগে এই প্রহসন নাটিকাগুলির বেশ ভালো অভিনয়ও হয়েছিল।
৬) গিরিশচন্দ্রের পরই নাট্যকার হিসেবে কার নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়-আলোচনা করো।
উত্তর:গিরিশচন্দ্র ঘোষের পরই আমরা নাট্যকার,অভিনেতা হিসেবে 'রসরাজ' অমৃতলাল বসুর নামস্মরণ করতে পারি। তিনি নাট্যজগতে কমেডিয়ান অভিনেতারূপে বিশেষ পরিচিত ছিলেন তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ও মৃত্যু হয়েছিল ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে। গিরিশচন্দ্র ও অমৃতলাল বসু একসঙ্গে নাট্যকলা ও অভিনয়কে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।গিরিশচন্দ্র অমৃতলাল বসুর সহযোগিতায় দ্রুত বঙ্গভূমির যথেষ্ট উন্নতিসাধন করতে পেরেছিলেন। গিরিশচন্দ্রের পর অমৃতলাল বসু অনেকদিন জীবিত ছিলেন এবং নাটক ও অভিনয়ের সঙ্গে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জড়িত ছিলেন।
গ) রচনাধর্মী বা বর্ণনাধর্মী প্রশ্নোত্তর। প্রশ্নমান-৫
১)বাংলা নাটকের ইতিহাসে গিরিশচন্দ্র ঘোষের অবদান আলোচনা করো।
উত্তর:গিরিশচন্দ্রের নাটকগুলিকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে-ক)গীতিনাট্য ,অকালবোধন,আগমনী ,দোললীলা ,মায়াতরু,মোহিনী প্রতিমা ,আলাদিন ,আবু হোসেন প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গীতিনাট্য।
খ)ঐতিহাসিক নাটক:
গিরিশচন্দ্র রচিত ঐতিহাসিক নাটকগুলির মধ্যে অশোক, সিরাজদ্দৌলা (১৯০৬ খ্রি.), মীরকাশিম (১৯০৬ খ্রি.) এবং ছত্রপতি শিবাজী (১৯০৭ খ্রি.) বিশেষ উল্লেখযোগ্য।এই নাটকগুলিতে পরাধীন ভারতবাসীর সমকালীন রাজনৈতিক চেতনা ও স্বদেশপ্রেম প্রকাশিত হলেও অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস এবং অতিনাটকীয়তা এগুলির ত্রুটি।
গ) পৌরাণিক ও ভক্তিমূলক নাটক:
পৌরাণিক ও ভক্তিমূলক নাটক রচনার ক্ষেত্রে গিরিশচন্দ্র বিপুল সাফল্য অর্জন করেছিলেন। রাবণবধ, সীতার বনবাস, অভিমন্যু বধ, রামের বনবাস,পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস, ধ্রুবচরিত্র,জনা প্রভৃতি তাঁর বিখ্যাত পৌরাণিক নাটক।
ঘ) সামাজিক নাটক:
গিরিশচন্দ্রের কয়েকটি পরিবার আশ্রিত সামাজিক নাটক রচনা করেন-সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রফুল্ল,হারানিধি ,বলিদান,শাস্তি কি শান্তি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
ঙ) প্রহসন:
তাঁর প্রহসন গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল-ভোটমঙ্গল , হীরার ফুল,বেল্লিক বাজার,বড়দিনের বখশিস ,য্যায়সা-কো-ত্যায়সা প্রভৃতি।
আরো পড়ুন:
একাদশ শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর click here
তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর click here
লালন শাহ ফকিরের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click here
ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click here
ছুটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click here
আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তর click here
আজব শহর কলকেতা প্রবন্ধ প্রশ্ন উত্তর Click here
পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর Click here
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান আলোচনা করো। Click here
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো। Click here
বাংলা কাব্য সাহিত্য মাইকেল মধুসূদন দত্তের অবদান
চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা Click here
বাংলা কাব্য সাহিত্যে বিহারীলাল চক্রবর্তী অবদান click here
বাংলা নাট্য সাহিত্যে গিরিশচন্দ্র ঘোষের অবদান Click here
আড্ডা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর Click here
মানস- মানচিত্র অবলম্বনে ইন্টারনেট ও আধুনিক জীবন সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা Click here
0 Comments