কারক ও বিভক্তি নির্ণয়।কারক কাকে বলে ও কয় প্রকার।

 


কারক ও বিভক্তি নির্ণয়।কারক কাকে বলে ও কয় প্রকার।


কারক ও অ-কারক সম্পর্ক:


বাংলা ব্যাকরণে 'কারক' ও 'অকারক' সম্পর্ক দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা।এই দুটি ধারণা বাক্যের গঠন ও অর্থের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তবে, এই দুটি ধারণা একে অপর থেকে পৃথক হলেও একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

কারক শব্দটি ইংরেজি CASE (কেস) শব্দ,লাতিন CASUS (কাসুস) শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে।CASUS অর্থে-পতন।পতন-অর্থে কাজ বা ক্রিয়া বোঝায়। সুতরাং কারক নির্ণয় করতে হলে ক্রিয়াপদ সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার।


* ক্রিয়াপদ:

বাক্যের মধ্যে যে পদটির দ্বারা থাকা, করা,হওয়া ইত্যাদি কাজ বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে। তবে কারক নির্ণয় করতে হলে অবস্থানগত দু'রকম ক্রিয়াপদের (সমাপিকা ও অসমাপিকা)মধ্যে সমাপিকা ক্রিয়াপদটিকেই আগে নির্ণয় করতে হবে। কারণ সমাপিকা ক্রিয়াপদ হচ্ছে বাক্যের প্রাণ।সমাপিকা ক্রিয়াপদ ছাড়া বাক্যের অর্থ প্রকাশ পায় না। 


* কারক কাকে বলে? 

উত্তর:বাক্যের মধ্যে বিভিন্ন নামপদের সঙ্গে ক্রিয়া পদের যে সম্পর্ক তৈরি হয়,তাকে কারণ বলে।যেমন, আকাশে মেঘ গর্জন করছে- এখানে গর্জন করছে ক্রিয়ার সঙ্গে মেঘপদের যে সম্পর্ক তাই হল কারক আর এই সম্পর্কটি কেমন তার উপর নির্ভর করবে কারকের শ্রেণীর উপর।আবার এই সম্পর্কটি যে চিহ্নের সাহায্যে প্রকাশিত হয় তাকে বিভক্তি ও অনুসর্গ বলে। 

*এছাড়া বিভক্তি ও অনুসর্গ সম্বন্ধে স্পষ্ট জ্ঞান থাকা দরকার কারক ও অ-কারক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে।

* বিভক্তি: বিভক্তি-শব্দটির সাধারণ অর্থ বিভাগ বা ভাগ করা।

* বিভক্তি কাকে বলে? 

যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দ বা ধাতুকে পদে পরিণত করে,তাকে বিভক্তি বলে।

* বিভক্তি চিহ্ন: অ/শূন্য, এ, তে, এতে, য়, কে, রে,এরে, র, এর ইত্যাদি।

* শূন্য বিভক্তি: ‘শূন্য' বা‘অ’ বিভক্তির কোনো চিহ্ন নেই।‘অ’ বিভক্তি নামে অনেক বিতর্ক আছে। এই বিভক্তি সর্বসম্মত য়।যেহেতু ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী বিভক্তি ছাড়া পদ হয় না।তাই 'শূন্য' বিভক্তি আছে।


* শূন্য/অ বিভক্তি কাকে বলে? 

উত্তর:অ-বিভক্তি চিহ্নকে শূন্য বিভক্তি বলা হয়।যেমন- শিল্পা প্রসন্নময়ী হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে।

উপরের বাক্যে ‘শিল্পা’ ও ‘নবম’ পদ দুটি শূন্য' বিভক্তিযুক্ত এবং ‘প্রসন্নময়ী হাইস্কুলে' ও 'শ্রেণিতে’ পদ দুটিতে যথাক্রমে- এ, তে, বিভক্তি যুক্ত রয়েছে।


 * বিভক্তি দুই প্রকার-

ক) শব্দ বিভক্তি

খ)ক্রিয়া বিভক্তি/ধাতু বিভক্তি


ক)শব্দ বিভক্তি:

যে বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দটিকে পদে পরিণত করে তাকে শব্দ বিভক্তি বলে।যেমন- কে, এ, তে ইত্যাদি।

প্রয়োগ:

 বনে থাকে বাঘ। বন + এ (বিভক্তি) = বনে (পদ), বাঘ + অ (বিভক্তি)-বাঘ-(পদ)


খ) ধাতু বিভক্তি বা ক্রিয়া বিভক্তি কাকে বলে? 

উত্তর: ধাতুর সঙ্গে যে বিভক্তি যুক্ত হয়ে ধাতুকে ক্রিয়া পদে পরিণত করে তাকে বলে ধাতু বিভক্তি বলে।যেমন-ইতেছে, ইয়াছে প্রভৃতি।

প্রয়োগ: সে বই পড়ছে- √পড় (ধাতু) + ছে (বিভক্তি) - পড়ছে (ক্রিয়াপদ)।


* অনুসর্গ কাকে বলে?

 উত্তর:যেসব অব্যয় বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পরে আলাদাভাবে বসে শব্দবিভক্তির কাজ করে এবং ক্রিয়াপদের সঙ্গে বিশেষ্য বা সর্বনামের সম্পর্ক তৈরি করে, তাকে অনুসর্গ বলে।যেমন-দ্বারা,বিনা,কাছে, সাথে,হতে,চেয়ে প্রভৃতি।


বিভক্তি ও অনুসর্গের পার্থক্য:

বিভক্তি:

১। নিজস্ব অর্থ নেই।

২) পদকে আশ্রয় করে থাকে। যেমন- আকাশে চাঁদ উঠেছে।(আকাশ + এ বিভক্তি)

৩) সবসময় শব্দের শেষে যুক্ত হয়।

অনুসর্গ: 

১) নিজস্ব অর্থ আছে। 

২) পদ থেকে আলাদাভাবে বসে।যেমন- আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ছে।'থেকে' অনুসর্গটি আলাদাভাবে বসেছে।

৩) অনুসর্গ শব্দের পরে যুক্ত হওয়ায় আলাদা অস্তিত্ব আছে। 


* অনুসর্গকে অন্য কী নামে ডাকা যায়? কোন কোন কারকে অনুসর্গের ব্যবহার রয়েছে?

উত্তর:অনুসর্গকে-পরসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয় নামে ডাকা যায়।

* করণকারক, নিমিত্তকারক, অপাদান কারক ও অধিকরণকারকে অনুসর্গের ব্যবহার রয়েছে।


* কারকের শ্রেণীবিভাগ:

আমরা আগেই জেনেছি, কোনো বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে ওই বাক্যের বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের যে সম্বন্ধ, তাকেই কারক বলে।

কারককে প্রধানত ছয় ভাগে ভাগ করা হয়-

 ১)কর্তৃকারক

২) কর্মকারক

৩)করণকারক

৪) নিমিত্তকারক

৫) অপাদানকারক

৬)অধিকরণকারক।


কারক চেনার পদ্ধতি:

১)কর্তৃকারক:

কে বা কারা দিয়ে বাক্যের ক্রিয়াকে প্রশ্ন করবে।২)কর্মকারক:

কাকে দিয়ে বাক্যের ক্রিয়াকে প্রশ্ন করবে।

৩)করণ কারক:

কার দ্বারা,কীসে,কী দিয়ে ক্রিয়াকে প্রশ্ন করবে।

৪)অপাদান কারক:

কোথা থেকে, কার কাছ থেকে দিয়ে ক্রিয়াকে প্রশ্ন করবে।

৫)নিমিত্তকারক:

কীজন্য, কী নিমিত্ত, কী হেতু, কী উদ্দেশে দিয়ে ক্রিয়াকে প্রশ্ন করবে।

৬)অধিকরণকারক:

কখন,কোথায়,কোন বিষয়ে,কীসে দিয়ে ক্রিয়াকে

প্রশ্ন করবে।


১)কর্তৃকারক কাকে বলে?

বাক্যে যে পদের দ্বারা কোনো কাজ বা ক্রিয়া সম্পাদন হয় তাকে বলে কর্তা,আর কর্তার সঙ্গে ক্রিয়ার যে সম্পর্ক তাকে বলে কর্তৃকারক।

যেমন-রাম বল খেলে-এখানে রাম কর্তৃকারক,শূন্য বিভক্তি।


* কর্তার প্রকারভেদ:

 কর্তার প্রকারভেদ কর্তৃকারক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ক)কর্তৃবাচ্যের কর্তা:কর্তার মাধ্যমে ক্রিয়া যখন সরাসরি নিয়ন্ত্রিত হয় তখন তাকে বলে কর্তৃবাচ্যের কর্তা।যেমন-ছেলেটি বাড়িতে এল।


খ) প্রযোজক কর্তা ও প্রযোজ্য কর্তা:

যে কর্তা নিজে না কাজ করে অন্যকে দিয়ে কাজটি করিয়ে নেয়,তাকে বলে প্রযোজক কর্তা।যেমন-মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।এখানে 'মা' হলেন প্রযোজক কর্তা। প্রযোজক কর্তা যাকে দিয়ে কাজটি করায় সে হল প্রযোজ্য কর্তা।যেমন-মাস্টার সন্দীপকে অঙ্ক করাচ্ছেন।এখানে 'সন্দীপ হল প্রযোজ্য কর্তা।


গ)সমধাতুজ কর্তা:

যখন কোনো বাক্যের কর্তৃপদ বা কর্তা ও ক্রিয়াপদ একই ধাতু থেকে উৎপন্ন হয় তখন তাকে সমধাতুজ কর্তা বলে।যেমন-পড়ুয়ারা পড়ছে।


২)কর্মকারক কাকে বলে? 

উত্তর:কর্তা যা করে বা যাকে আশ্রয় করে ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকেই বলে কর্মকার। যেমন-মা গীতা পাঠ করেন। এখানে কর্তা 'মা' কী করছেন? উত্তর হল- গীতা পাঠ। তাই গীতা হল কর্মকারকের উদাহরণ।


* কর্মের প্রকারভেদ:

ক)মুখ্য কর্ম:যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে তাকে বলে দ্বি- কর্ম ক্রিয়া। এই দুই প্রকার কর্মের মধ্যে একটি হয় বস্তুবাচক ও অন্যটি ব্যক্তিবাচক।বস্তুবাচক কর্মটিকে বলে মুখ্যকর্ম।মুখ্যকর্মের কোন বিভক্তি বসে না।যেমন- শিক্ষক ছাত্রকে অংঙ্ক শেখাচ্ছেন- এখানে ছাত্র ও অংক- দুটোই কর্ম। অংঙ্ক হল- বস্তু বাচক কর্ম অর্থাৎ মুখ্যকর্ম।

খ)গৌণ কর্ম: দ্বিকর্মক ক্রিয়ার ব্যক্তিবাচক কর্মকে গৌণ কর্ম বলে।যেমন- মা শিশুকে ভাত খাওয়াচ্ছেন। এখানে শিশু ব্যক্তিবাচক কর্ম অর্থাৎ গৌণকর্ম।


৩)করণ কারক কাকে বলে? 

উত্তর:কর্তা যে পদের দ্বারা ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে করণ কারক বলে।যেমন-আমরা চোখ দিয়ে দেখি- এখানে কর্তা আমরা,চোখের দ্বারা দেখা কাজ সম্পাদন করছে, তাই 'চোখ' করনকারক।


৪)অপাদান কারক কাকে বলে? 

উত্তর: যা থেকে কোন বস্তু বা ব্যক্তি, উৎপন্ন,পতিত, গৃহীত, ভীত, ইত্যাদি হয় তাকে বলে অপাদান কারক। যেমন-মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়।


৫)নিমিত্তকারক কাকে বলে? 

উত্তর:বাক্যে ক্রিয়া পদের সঙ্গে নিমিত সম্বন্ধ বোঝাতে যে কারক হয় তাকে বলে নিমিত্ত কারক। যেমন- আইন পড়ার জন্য কলকাতায় এসেছি।


*নিমিত্তকারকের প্রকারভেদ:

ক)'জন্য' বোঝাতে:পরের জন্য জীবন দানের চেয়ে বড় কিছু নেই।

খ)'উদ্দেশ্যে' অর্থে- তিনি পুজোর উদ্দেশ্যে বসেছেন।

গ)'উদ্দেশ্য' অর্থে-আপনি আমাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।


৬)অধিকরণকারক কাকে বলে?

উত্তর:ক্রিয়ার আধারকে অধিকরণ কারক বলে। অর্থাৎ যে স্থানে বা যে সময়ে ক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাকে অধিকরণ কারক বলে।যেমন- জলে মাছ থাকে।এখানে থাকা ক্রিয়াটি জলে সম্পন্ন হচ্ছে তাই এটি অধিকরণ কারক।


* অ-কারক কাকে বলে?

উত্তর:বাক্যের মধ্যে বিভিন্ন নামপদের সঙ্গে ক্রিয়া পদের কোন সম্পর্ক থাকে না,তাদের অ-কারক বলে।

* অ-কারক দুই প্রকার:

ক) সম্বন্ধ পদ 

খ) সম্বোধন পদ


ক) সম্বোধন পদ:

উত্তর:বাক্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের কোন সম্বন্ধ বা সম্পর্ক না থাকলেও অন্য নামপদের সঙ্গে সম্বন্ধ বা সম্পর্ক থাকে,তাকে সম্বন্ধ পদ বলে। যেমন-দশরথের কথায় রাম অযোধ্যা ত্যাগ করেন- এখানে দশরথের হল-সম্বন্ধ পদ


খ) সম্বোধন পদ:

উত্তর:কাউকে ডাকার জন্য বা আহ্বানের জন্য যে পদ ব্যবহার করা হয়, তাকে সম্বোধন পদ বলে। যেমন-মা খেতে দাও-এখানে মাকে ডাকা হচ্ছে।


মনে রাখতে হবে: 

বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে সম্বোধন পদের সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই,তাই সম্বোধনপদ অ-কারক।


বাংলা ব্যাকরণ কারক ও অকারক সম্পর্ক Click here 





Post a Comment

0 Comments