ক।কবি পরিচিত
খ। উৎস
গ। বিষয়সংক্ষেপ
ঘ। নামকরণ
ঙ) হাতে-কলমে সমাধান
ক)লেখক পরিচিতি:
বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক এবং ভ্রমণকাহিনি রচয়িতা প্রবোদ কুমার সান্যাল ভ্রমণকাহিনি লিখে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ পরিচিতি লাভ করে।তার জীবনের বড়োএকটা অংশ কেটেছে হিমালয়ের দুর্গম অঞ্চলে।তিনি কলকাতাহিমালয়ান অ্যাসোসিয়েশনে সভাপতি ছিলেন।এশিয়া, ইউরোপ,আমেরিকা ও রাশিয়ার বহু অঞ্চলে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। ভ্রমণের এইসব অভিজ্ঞতানিয়ে তিনিরাশিয়ার ডায়েরি,পরিব্রাজকের ডায়েরি,পর্যটকের পর,প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
খ)উৎস:
'দেবতাত্মা হিমালয়' গ্রন্থের 'কালিম্পঙ্ক' অধ্যায় থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।
গ)বিষয়সাক্ষেপ:
'দেবতাত্মা হিমালয়' মূলত একটি ভ্রমণকাহিনি। লেখক পাহাড়ি পথ ধরে কালিম্পং পৌঁছেছেন। অতিথি হয়ে এসেছেন ডা.দাশগুপ্তের বাড়িতে। যাত্রার পথে তিনি ইতিহাসকে স্মরণ করেছেন। লেখক জানিয়েছেন, কালিম্পং থেকে তিকাত সবচাইতে কাছাকাছি।রেনক রোড গিয়েছে গিরিপথে।তারপরেই তিব্বতের সীমানা। অতীতে এই পথ দিয়ে বেশ কয়েকজন বিখ্যাত বাঙালি যেমন, অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান, রাজা রামমোহন রায়, শরৎচন্দ্র দাস প্রমুখ গিয়েছিলেন তিব্বতে। শরৎচন্দ্র দাসের ভ্রমণবৃত্তান্ত থেকে আমরা তিব্বতের অনেক কথা জানতে পারি। বিশ শতকের প্রথমে ফ্রান্সিস ইয়াংহাসব্যান্ড বিকার জয় কররতে যান। তখন তিনি শরৎচন্দ্র নাম লিখিত এই ভ্রমণবৃত্তান্ত থেকেই সবচেয়ে বেশি তথ্য পেয়েছিলেন। অষ্টম শতাব্দীতে তিনি তিব্বতে যান। তিব্বতের লামারা তাকে রাজকীয় সম্মান জানায়। লেখকের বর্ণনা থেকে আরও জানা যায়,কালিম্পঙের পথে রয়েছে একাধিক পশমের ঘাঁটি।সেইসব ঘাঁটির আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য তিব্বতি আর মাড়োয়ারি। পশমের ব্যাবসা তিব্বতীয়দের প্রধান ব্যাবসা,যার মাধ্যমে বড়ো বড়ো অট্টালিকা আর কুঠিবাড়ি তৈরি করেছে। ভ্রমণকাহিনিতে লেখক একটি বড়ো গির্জার কথা উল্লেখ করেছেন। এই গির্জাটাই কালিম্পাকে চিহ্নিত করে,যার পাশ দিয়ে উঁচু নীচু পথ চলে গিয়েছে গ্রেহামস হোমের দিকে। সাহের মেমদের দায়িত্বে থাকা এই হোমে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান আর সাহেবি ছেলেমেয়েরা থাকে ও পড়াশোনা করে মানুষ হয়। ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যে লেখক এইসব অঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঘন্টা তিনেক ধরে ঘোরার পর লেখক ফিরে এলেন ডা. দাশগুপ্তের অভিজাত পাড়ায়, যেখানে তিনি অতিথি হিসেবে রয়েছেন। পাহাড়ি পথের একপাশে সংকীর্ণ গলির নীচে নেমে একটি মন্দির চত্বরে এসে দাঁড়াতেই লেখকের মনে পড়ে চোদ্দো বছর আগের স্মৃতি। ওই মন্দিরটি তখনও ঠাকুরবাড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল। সেদিনটা ছিল ২৫ বৈশাখ। লেখক এবং তাঁর সঙ্গী শশা চৌধুরী রাত কাটিয়েছিলেন এক নোংরা ঝুপসি ঘরে। স্বয়ং কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেদিন ছিলেন গৌরীবাড়িতে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন হীরেন দত্ত,কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ, পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী, অনিল চন্দ, মৈত্রেয়ী দেবী আর চিত্রিতা দেবী। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সেদিন দেখা করতে গিয়েছিলেন লেখক। লেখক তখন ছিলেন 'যুগান্তর' পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক। লেখকের অনুরোধে একসময় 'যুগান্তর' পত্রিকার একাধিক সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথও লেখা পাঠিয়েছিলেন। লেখকের হাতে সেদিন ছিল কয়েকখানি ‘যুগান্তর’ পত্রিকার ‘রবীন্দ্র জয়ন্তী সংখ্যা'।সেই বিশেষ দিনের ‘যুগান্তর' পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ছিল শিল্পীর হাতে আঁকা কবির একখানা রেখাচিত্র। লেখককে সেদিন রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছিলেন, মহাভারতের মতো বড়ো মহাকাব্য পৃথিবীর কোনো দেশের কোনো সাহিত্যেই নেই। সেই মহাকাব্যটি তিনি নিজের হাতে লিখতে চান, যে কাজটি খুব কঠিন এবং রীতিমতো সময়সাপেক্ষ। লেখক কালিম্পঙের এক ঠাকুরবাড়িতে উঠেছেন—এ কথা রবীন্দ্রনাথকে জানালে রবীন্দ্রনাথ রসিকতা করে বলেছিলেন, গৌরীবাড়িটাই তো এখন ঠাকুরবাড়ি। যেদিন কবি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি নবরচিত কবিতা রেডিয়োতে পাঠ করেন। এই পাঠের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কবি তাঁর ঘরের আসনে বসে টেলিফোনে কবিতা পাঠ করেন এবং রেডিয়ো কর্তৃপক্ষ কবির কণ্ঠস্বরটি ধরে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্রডকাস্ট করেন। সন্ধে সাড়ে সাতটা- আটটা নাগাদ কবি গিয়ে বসেন টেলিফোন যন্ত্রের সামনে। মিনিট পনেরো ধরে আবৃত্তি করেন,লেখক কবির ঘরের বাইরে রেডিয়ো নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। কবিকণ্ঠ কলকাতা ঘুরে সেই রেডিয়োতে এসে বাজল। রেডিয়োতে কবিকণ্ঠ শুনতে শুনতে লেখক যেন একটা মায়ায় ঘেরা স্বপ্নলোকের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলেন। ভুলে গিয়েছিলেন পাহাড়ি কালিম্পং শহরের অস্তিত্ব কবির এই টেলিফোনে আবৃত্তির মধ্য দিয়ে সেদিন কালিম্পঙে টেলিফোনের শুভ উদ্বোধনও ঘটে গিয়েছিল।
ঘ)নামকরণ:
যে-কোনো সাহিত্যসৃষ্টির ক্ষেত্রে নামকরণের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। আলোচ্য রচনাটির নাম 'দেবতাত্মা হিমালয়'। আলোচ্য অংশে তিব্বত ও কালিম্পঙের ইতিহাস বা ভৌগোলিক বিষয় কিছুটা আলোচনা করা হলেও পাঠ্য অংশটির মূলকেন্দ্রে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।একবার কালিম্পঙে কবির জন্মদিন পালিত হয়েছিল,সে কথাই এই রচনায় তুলে ধরেছেন লেখক। কবির নবরচিত কবিতা সরাসরি বেতারে সম্প্রচারের জন্য কলকাতা বেতারকেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ কালিম্পঙ ও কলকাতার মধ্যে টেলিফোন ব্যবস্থা চালু করেন। এরপর ওই জন্মদিনের সন্ধ্যাটি কবিকণ্ঠে মাধুর্যে স্মরণীয় হয়ে ওঠে। ওই দিনই ‘যুগান্তর' পত্রিকায় কবির একটি রেখাচিত্র প্রকাশিত হয়। সেই চিত্রে কবিকে হিমালয়ের থেকেও মহত্তর করে দেখানো হয়। তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করা হয় পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গরূপে।‘দেবতাত্মা’ হিমালয়ের বুকে দেবতুল্য রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎই যে লেখকের মূল বর্ণনার বিষয়,তা আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না। কবির জন্মদিনে কবির সঙ্গে কালিম্পঙে কাটানোর ব্যক্তিগত স্মৃতিটিও লেখক এখানে প্রকাশ করেছেন। মহাকবির ব্যক্তিত্ব ও তাঁর মহান উপস্থিতি যে কতখানি উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে সেই বিষয়টিকেই এই রচনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন লেখক। তাই ‘দেবতাত্মা হিমালয়' নামকরণটি সমস্ত দিক থেকেই সার্থক হয়ে উঠেছে।
ঙ)হাতে-কলমে সমাধান
১)বন্ধনীতে দেওয়া একাধিক উত্তরের মধ্যে ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে নীচের বাক্যগুলি আবার লেখো।
১.১) লামারা রাজকীয় সম্বর্ধনা জানিয়েছিলেন রাজপুত্র(তিষ্য রক্ষিত /শান্ত রক্ষিত /কুমার রক্ষিত)- কে।
উত্তর :লামারা রাজকীয় সম্বর্ধনা জানিয়েছিলেন রাজপুত্র শান্ত রক্ষিতকে।
১.২)তিব্বতিদের প্রধান ব্যাবসা (পশম/রেশম/তাঁতবস্ত্র)-এর।
উত্তর: তিব্বতিদের প্রধান ব্যাবসা পশম-এর।
১.৩)কালিম্পঙের ল্যান্ডমার্ক (বড়ো মন্দির/বড়ো মসজিদ/বড়োগির্জা)।
উত্তর: কালিম্পঙের ল্যান্ডমার্ক বড়ো গির্জা।
১.৪)রবীন্দ্রনাথের হাতে লেখক তুলে দিয়েছিলেন (অমৃতবাজার পত্রিকা/যুগান্তরপত্রিকা আনন্দবাজার পত্রিকা)-র 'রবীন্দ্র জয়ন্তী সংখ্যা'।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের হাতে লেখক তুলে দিয়েছিলেন যুগান্তর পত্রিকা-র 'রবীন্দ্র জয়ন্তী সংখ্যা'।
১.৫) নবরচিত একটি কবিতা রেডিয়োতে আবৃত্তি করতে রবীন্দ্রনাথের সময় লেগেছিল(আধ ঘণ্টা /পঁয়তাল্লিশ মিনিট /পনেরো মিনিট) ।
উত্তর: নবরচিত একটি কবিতা রেডিওতে আবৃত্তি করতে রবীন্দ্রনাথের সময় লেগেছিল ১৫ মিনিট।
২) একটি বাক্যে উত্তর দাও।
২.১)প্রাচীন পথ ধরে কোন্ তিনজন প্রসিদ্ধ বাঙালি অতীতে তিব্বতে গিয়েছিলেন?
উত্তর: প্রাচীন পথ ধরে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান, রাজা রামমোহন রায় এবং শরৎচন্দ্র দাস অতীতে
তিব্বতে গিয়েছিলেন।
২.২) কোন প্রাচীন পথের রেখা ধরে তাঁরা গিয়েছিলেন?
উত্তর:কালিম্পঙের ওপর দিয়ে এগিয়ে চলা রেনক্ রোড ধরে তাঁরা তিব্বত গিয়েছিলেন ।
২.৩) এখনকার পর্যটকরা এই প্রাচীন পথটি পরিহার করেন কেন ?
উত্তর:এখনকার পর্যটকরা রেনক্ রোড এই প্রাচীন পথটি পরিহার করেন কারণ পথটিতে দুর্যোগ বেশি এবং চলাফেরা করা কষ্টসাধ্য।
২.৪) কোন্ দুই বিখ্যাত বাঙালি তিব্বতে গিয়ে বোধিসত্ত্ব উপাধি লাভ করেছিলেন?
উত্তর:যশোরের রাজপুত্র শান্ত রক্ষিত এবং অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান তিব্বতে গিয়ে বোধিসত্ত্ব উপাধি লাভ করেছিলেন।
২.৫) ছদ্মবেশে কে গিয়েছিলেন তিব্বতে?
উত্তর: উনিশ শতকের শেষে ছদ্মবেশে তিব্বতে গিয়েছিলেন শরৎচন্দ্র দাস।
২.৬)স্যার ফ্রান্সিস ইয়াংহাসব্যান্ডকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিল তিব্বত বিষয়ক কোন্ বইটি ?
উত্তর:শরৎচন্দ্র দাস তিব্বতের ভ্রমণবৃত্তান্ত লিখেছিলেন যে বইটিতে, সেটি স্যার ফ্রান্সিস ইয়াংহাসব্যান্ডকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিল।
২.৭) কালিম্পঙের কোথায় পড়াশোনা করে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ও ইংরেজ অনাথ ছেলেমেয়েরা?
উত্তর:অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ও ইংরেজ অনাথ ছেলেমেয়েরা কালিম্পঙের গ্রেহামস হোম-এ পড়াশোনা করে।
২.৮)গৌরীপুর প্রাসাদে কারা ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গী?
উত্তর:গৌরীপুর প্রাসাদে হীরেন দত্ত, রথীন্দ্রনাথ, প্রতিমা দেবী, অনিল চন্দ, মৈত্রেয়ী দেবী, চিত্রিতা দেবী প্রমুখ ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গী।
২.৯)লেখকের অনুরোধে কোন্ পত্রিকার জন্য অনেকবার লেখা দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
উত্তর:লেখকের অনুরোধে 'যুগান্তর' পত্রিকার জন্য অনেকবার লেখা দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
২.১০) ২৫ বৈশাখের সেই বিশেষ দিনটি যে ছিল শুক্লপক্ষ, লেখা থেকে সে কথা জানতে পার কেমন করে?
উত্তর:লেখক তাঁর স্মৃতিচারণে স্পষ্ট করে বলেছেন, “জ্যোৎস্না ছিল সেদিন বাইরে।'-এই উক্তি থেকেই জানতে পারি ২৫ বৈশাখের সেই বিশেষ দিনটি ছিল শুক্লপক্ষ।
৩) চার-পাঁচটি বাক্যে উত্তর দাও।
৩.১) কীভাবে গেলে পৌঁছোনো যায় কালিম্পঙের গ্রেহামস হোম-এ?এই হোমটির বিশিষ্টতা কী?
উত্তর:বড়ো গির্জাটা হল কালিম্পঙের ল্যান্ডমার্ক। তারই পাশ দিয়ে চলে যাওয়া পথ এদিক-ওদিক ঘুরে অনেকখানি উঁচুতে উঠে গেলে পৌঁছোনো যায় কালিম্পঙের গ্রেহামস হোমে।
* কালিম্পঙের গ্রেহামস হোম-এ অ্যাংলো- ইন্ডিয়ান এবং ইংরেজদের অভিভাবকহীন ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে মানুষ হয়। পরিচালনা ব্যবস্থা সমস্তই খাঁটি সাহেব-মেমদের হাতে। এই হোমের সীমানাটা এতই বিস্তৃত যে একটু-আধটু ঘুরে দেখতেই ঘণ্টাখানেক সময় লেগে যায়।
৩.২) ২৫ বৈশাখের যুগান্তর পত্রিকার প্রথম পাতায় শিল্পীর আঁকা যে বিশেষ রেখাচিত্রটি প্রকাশ পেয়েছিল, তার বিষয় কী ছিল?রবীন্দ্র জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে এই ছবির এই বিষয়টি তোমার যথার্থ মনে হয় কিনা লেখো।
উত্তর: ২৫ বৈশাখের 'যুগান্তর' পত্রিকার রবীন্দ্র জয়ন্তী প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছিল,শিল্পীর হাতে আঁকা যে রেখাচিত্র, তার বিষয় ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ।
* ২৫ বৈশাখ বাঙালিদের কাছে কেবল রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন হিসেবেই চিহ্নিত নয়, এই দিনটি বাঙালির উৎসবের দিনও।যুগান্তর পত্রিকায় জন্মদিনে ২৫ বৈশাখের রবীন্দ্র জয়ন্তী সংখ্যায় শিল্পীর আঁকা কবিগুরুর রেখাচিত্র কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশ করেছিল। ছবিটিতে দেখানো হয়েছিল, গ্রাম,নগর, দেশ-মহাদেশ এবং তিনি যেন পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ। রবীন্দ্রনাথের বিপুল সৃষ্টি এভাবেই বাঙালির জীবন ও সংস্কৃতিকে মাথা উঁচু করে রয়েছে।
২.৩) 'কাজটি দুরূহ, অনেকদিন সময় লাগবে।'-কোন কাজটি সম্পন্ন করবার ইচ্ছে লেখককে জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ? কেন সে কাজ করার ইচ্ছে হয়েছিল তাঁর?কার সাহায্য প্রত্যাশা করেছিলেন ওই কাজে ?
উত্তর:রবীন্দ্রনাথ সমগ্র মহাভারত মহাকাব্যটিকে নিজের হাতে লিখে সম্পন্ন করার ইচ্ছে লেখককে জানিয়েছিলেন।
* মহাভারতের মতো অত বড়ো মহাকাব্য পৃথিবীর কোনো কালের কোনো সাহিত্যেই নেই। সেই কারণেই ওই মহাকাব্যটিকে নিজের হাতে একবার লিখতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
* ওই কাজে রবীন্দ্রনাথ হীরেন দত্তর সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন।
২.৪) 'এ ছাড়া আর ঠাকুরবাড়ি কোথায় হে ?' -কোন প্রসঙ্গে এই পরিহাস রবীন্দ্রনাথের ?
উত্তর:প্রবোধকুমার সান্যাল এর রচিত,'দেবতাত্মা হিমালয়'রচনায় লেখক কালিম্পঙে ঠাকুরবাড়িতে উঠেছিলেন। সেই সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন গৌরীপুর প্রাসাদে।২৫ বৈশাখ লেখক যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে জন্মদিনের প্রণাম জানাতে গেলেন তখন বিশ্বকবি লেখকের কাছে জানতে চাইলেন তিনি কোথায় উঠেছেন। ঠাকুরবাড়িতে ওঠার কথা শুনে রবীন্দ্রনাথ রসিকতা করে লেখককে উদ্ধৃত কথাগুলি বলেছিলেন।
২.৫)'কৰিব সেদিন আমাকে ৰাগে পেয়েছিলেন।'- ৰাগে পেয়েছিলেন,-এই বিশিষ্ট ক্রিয়াপদটির অর্থ কী? তাঁকে কবির বাগে পাওয়ার কী পরিচয় রয়েছে লেখকের সেদিনের বিবরণে?
উত্তর:'বাগে পেয়েছিলেন'—এই বিশিষ্ট ক্রিয়াপদটির অর্থ হল 'আয়ত্তের মধ্যে পেয়েছিলেন'।
* প্রবোধকুমার সান্যাল রচিত'দেবতাত্মা হিমালয়'রচনায় একটি মজার ঘটনা জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ কেমনভাবে তাঁকে বাগে পেয়েছিলেন। লেখক কালিম্পঙে ঠাকুরবাড়িতে উঠেছিলেন শুনে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন। আসলে মজা করে বলতে চেয়েছিলেন যে ওই সময় গৌরীপুর প্রাসাদে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রয়েছেন, তাই সেটাই তো আসল ঠাকুরবাড়ি।
২.৬)'কালিম্পঙে টেলিফোন ছিল না,এই উপলক্ষে তার প্রথম উদবোধন।'-কোন বিশেষ উপলক্ষ্যে, কীভাবে এই উদবোধন সম্পন্ন হল ?
উত্তর: উপলক্ষ্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে কালিম্পঙে টেলিফোনের উদ্বোধন হল।
* ২৫ ই বৈশাখ কবি রবীন্দ্রনাথ সন্ধে ৭টা থেকে৮টা নাগাদ গৌরীপুর প্রাসাদে তাঁর ঘরে টেলিফোন যন্ত্রের সামনে বসলেন। মিনিট পনেরো সময় ধরে কবি তাঁর কবিতা পাঠ করলেন। বেতার কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থায় সেই কণ্ঠস্বর কলকাতা ঘুরে কালিম্পঙের রেডিয়োতে বেজে উঠল। এইভাবে কালিম্পঙে টেলিফোনের উদবোধন সম্পন্ন হল।
২.৭) “কিন্তু নৃপেন্দ্রবাবুর ফরমাশ শুনতেই হলো।”—নৃপেন্দ্রবাবু কে?কী ছিল তাঁর ফরমাশ? কীভাবে তা শুনেছিলেন লেখক?
উত্তর:নৃপেন্দ্রবাবু হলেন একজন বেতার বিশেষজ্ঞ। তাঁর পুরো নাম নৃপেন্দ্র মজুমদার।
* নৃপেন্দ্রবাবু লেখক প্রবোধকুমার সান্যালকে রবীন্দ্রনাথের বসার চেয়ারে বসে সূক্ষ্ম যন্ত্রে মুখ রেখে কলকাতাকে একবার 'হ্যালো' বলে ডাকার জন্য ফরমাশ করেছিলেন।
* লেখক প্রথমে বিশ্বকবির মখমল বসানো চেয়ারে বসতে খানিকটা ভয় লাগলেও শেষপর্যন্ত নৃপেন্দ্রবাবুর ফরমাশ পালন করতে গিয়ে, তিনি ওই চেয়ারে বসেছিলেন এবং সূক্ষ্ম যন্ত্রের সামনে ডেকেছিলেন, 'হ্যালো, ক্যালকাটা .. হ্যালো..?'
২.৮) জন্মদিনে কবির স্বকণ্ঠে বেতার সম্প্রচারিত কবিতা শোনাবার মুহূর্তটি কীভাবে ধরা দিয়েছিল তাঁর শ্রোতাদের চেতনায় ?
উত্তর:প্রবোধকুমার সান্যাল এর রচিত 'দেবতাত্মা হিমালয়' রচনায় জন্মদিনে কালিম্পঙের গৌরীপুর প্রাসাদের ঘরে বসে টেলিফোনে রবীন্দ্রনাথ নিজ কণ্ঠে কবিতা পাঠ করবেন।সেই ঘরের কাঁচের দরজা বন্ধ করে বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন লেখকএবং আরও কয়েকজন। পাশেই বসানো ছিল রেডিয়ো যন্ত্র। বাইরে কবির স্বকণ্ঠে বেতার-সম্প্রচারিত কবিতা শুনতে শুনতে লেখক এবং তাঁর সঙ্গীদের কারোরই মনে থাকল না তাঁদের পায়ের নীচে কালিম্পং থরথর করে কাঁপছে কিনা।জ্যোৎস্নার আলোয় যেন একটা মায়াবী স্বপ্নের জগতে নিজেদের অস্তিত্ব ভুলে তাঁরা হারিয়ে গিয়েছিলেন।
0 Comments