ক।কবি পরিচিত
খ। উৎস
গ। বিষয়সংক্ষেপ
ঘ। নামকরণ
ঙ) বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর।প্রশ্নমান-৪
ক)লেখক পরিচিতি:
শৈশব ও শিক্ষাজীবন:
বাংলা নাটকের জনপ্রিয় নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে খুলনা জেলারজন্মগ্রহণ করেন।পিতা সত্যচরণ সেনগুপ্ত।তিনি পিতার কর্মস্থল রংপুরে শিক্ষালাভ করেন।সেখানে বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী ছিলেন তাঁর সহপাঠী।১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশি আন্দোলনে যোগ দিয়ে শচীন্দ্রনাথ বিদ্যালয় ত্যাগ করেন এবং অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত হন। কলকাতার জাতীয় বিদ্যালয় থেকে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ পরিচালিত কলেজে বিএ পর্যন্ত পড়েন।
কর্মজীবন:
কর্মজীবনের শুরুতে শচীন্দ্রনাথ কিছুদিন একটি কলেজে অধ্যাপনা করেন; পরে সাংবাদিকতার পেশা গ্রহণ করেন। তিনি সাপ্তাহিক হিতবাদী,বিজলী আত্মশক্তি প্রভৃতি পত্রিকাও সম্পাদনা করেন। বেসরকারি সাংস্কৃতিক দলের নেতা হিসেবে শচীন্দ্রনাথ রাশিয়া, নরওয়ে, পোল্যান্ড, চিন, সিংহল প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন।
সাহিত্যজীবন:
শচীন্দ্রনাথ তাঁর রচিত ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক নাটকের মূল বিষয়বস্তু হল দেশাত্মবোধ। সামাজিক নাটক রচনাতেও তাঁর সমান দক্ষতা ছিল। হিন্দু-মুসলমানের মিলনের বাণী তাঁর নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাঁর উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক নাটকগুলি হল-গৈরিক পতাকা,দেশের দাবি,রাষ্ট্রবিপ্লব,সিরাজদ্দৌলা (১৯৩৮), ধাত্রীপান্না, সবার উপরে মানুষ সত্য প্রভৃতি। তাঁর ঐতিহাসিক নাটক সিরাজদ্দৌলা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার রঙ্গমঞ্চে অভিনীত নাটকটিও বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। নাটককে হাতিয়ার করে মানুষকে সচেতন করতে চেয়েছেন তিনি। ফলে তাঁর সামাজিক নাটকগুলিতে উঠে এসেছে— কুমারীজীবনে মাতৃত্বের সমস্যা, দাম্পত্য জীবনে নারী-পুরুষের নিজস্ব
ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব, নারী স্বাধীনতার সুস্পষ্ট রূপ। এ ছাড়াও সমাজজীবনের নানান ভাঙন, ভণ্ড দেশপ্রেম, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সার্বিক অবস্থার ইত্যাদি দিকগুলিও তাঁর রচনায় স্থান পেয়েছে।শচীন্দ্রনাথের সামাজিক নাটকগুলি তৎকালীন সময়ের প্রতিনিধিত্ব করেছে-রক্তকমল,ঝড়ের রাতে,নার্সিংহোম,স্বামী-স্ত্রী (১৯৩৭), তটিনীর বিচার, কাঁটা ও কমল, প্রলয়, জননী প্রভৃতি তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য সামাজিক নাটক। এসব নাটকেই ব্যক্তিজীবন ও পারিবারিক জীবনের বিভিন্ন জটিলতা ও সমস্যা বর্ণনা করা হয়েছে।
জীবনাবসান:
১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ৫ মার্চ নাট্যকার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
খ)উৎস:
নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের রচিত পাঠ্য 'সিরাজদ্দৌলা নাটক'টি দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্য থেকে নাট্যাংশটি গৃহীত হয়েছে।
গ)বিষয়সংক্ষেপ:
এই নাট্যাংশের শুরুতেই দেখা যায় মুর্শিদাবাদে সিরাজদ্দৌলার সভাকক্ষের দৃশ্য। নাটকের প্রথমে আমরা দেখি, সিরাজ তাঁর দরবারের সদস্য, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসকে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে বহিষ্কৃত করছেন। আলিনগরের সন্ধির শর্তরক্ষা না করেওয়াটসন যে কলকাতায় সৈন্যসমাবেশের উদ্যোগ নিচ্ছেন, তা ওয়াটসনের পাঠানো চিঠিতে জানতে পারেন বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলা। ফলে ওয়াটসকে বিতাড়িত হতে হয়। বাংলার ফরাসি বণিকদের পক্ষ থেকে মঁসিয়ে লা সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নবাবের সাহায্য চাইতে। তাদের অভিযোগ, নবাবের বিনা সম্মতিতেই তাঁর শাসনাধীন এলাকা চন্দননগরে ইংরেজরা ফরাসিদের হটিয়ে দিয়েছে এবং সমস্ত ফরাসি কুঠি যেন ইংরেজদের ছেড়ে দেওয়া হয়, এই দাবিও তারা জানিয়েছে। কিন্তু নবাব জানান,তিনি এক্ষেত্রে কোনো সাহায্য তিনি করতে পারবেন না।কারণ সদ্য কলকাতা জয়ের যুদ্ধে এবং শওকত জঙ্গের বিরুদ্ধে পূর্ণিয়ার যুদ্ধে তাঁর বহু অর্থক্ষয়, লোকক্ষয় এবং শক্তিক্ষয় হয়েছে। তাই অল্পসময়ের ব্যবধানে কোনো যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব। এ কথা শুনে মঁসিয়ে লা তাঁকে বলেন যে, ফরাসিদের বঙ্গভূমি হয়তো ছাড়তে হবে, কিন্তু সেইসঙ্গে ধ্বংস হবে বাংলার স্বাধীনতা। এরপর মসিয়ে লা রাজসভা ত্যাগ করেন। ইতিমধ্যে ওয়াটসকে বহিষ্কার করা নিয়ে সভায় শোরগোল পড়ে যায়। সে সময় সিরাজের তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।এই সমালোচকদের দলে ছিলেন রাজা রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ এবং মীরজাফর। এই সময় সিরাজের পক্ষে দাঁড়িয়ে কথা বলেন মোহনলাল এবং মীরমদন। ইতিমধ্যেই সিরাজ মীরজাফরকে লেখা ওয়াটসনের একটি চিঠিও প্রমাণ হিসেবে দাখিল করেন। স্বাভাবিকভাবেই, সভায় অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং সিরাজ যাঁদের ওপরে দোষারোপ করেন, তাঁরা সভা ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত হন। তখন সিরাজ আন্তরিকভাবে সকলের কাছে প্রার্থনা করেন এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য মরণপণ করে নিজেদের উৎসর্গ করতে বলেন। এরপরে দেখা যায়,সকলেই শপথ করেন যে, তাঁরা দেশের স্বার্থে প্রাণ বলি দিতেও রাজি। সকলে সভাস্থল ত্যাগ করার পর একা সিরাজ এবং গোলাম হোসেন পড়ে থাকেন। এসময়ে সেখানে প্রবেশ করেন ঘসেটি বেগম, সিরাজের মাসি। ঘসেটি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ায় সিরাজ তাঁর মতিঝিলের আবাসস্থল থেকে তাঁকে সরিয়ে নিজের প্রাসাদে এনে নজরবন্দি করে রাখেন। তাঁর পালিত পুত্র শওকত জঙ্গকে নবাবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার অপরাধে হত্যা করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই, ঘসেটি ছিলেন সিরাজবিরোধী এবং তাই তিনি যত শীঘ্র সম্ভব, সিরাজের পতন কামনা করেন। সিরাজকে হত্যা করে নিজের প্রতিহিংসা মেটানোই তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে। ফলে, সিরাজের দুঃসময়ে তিনি খুশি হয়ে ওঠেন। সিরাজকে ঘসেটি যখন মৃত্যুর অভিশাপও দিতে বসেছেন, তখন ছুটে আসেন লুৎফা, সিরাজের বেগম। তিনি ঘসেটি বেগমকে কোনোমতে এই কাজ থেকে বিরত করেন। কিন্তু সিরাজের সঙ্গে ঘসেটির উত্তপ্ত কথাবার্তা চলতেই থাকে। লুৎফার অনুরোধে সিরাজ শেষপর্যন্ত ঘসেটিকে অন্দরমহলে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিলেও ঘসেটির অভিশাপ আর আগামী পলাশির যুদ্ধের পরিপন্থি। ভেবে সিরাজের হাহাকার—এর মধ্য দিয়েই শেষ হয় নাটকটি।
ঘ)নামকরণ
নামকরণের মধ্য দিয়েই লেখক তাঁর রচনাটি সম্পর্কে পাঠকের কাছে আগাম ধারণা দিয়ে থাকেন। পাঠ্য 'সিরাজদ্দৌলা' নাট্যাংশটি গৃহীত হয়েছে। মূল নাটকটি থেকে, তার নামও সিরাজদ্দৌলা।অর্থাৎ,পাঠ্যাংশটির এই নামকরণ মূল নাটকের নামেই।
আলোচ্য নাট্যাংশের সর্বপ্রথম সংলাপ উচ্চারিত হয়েছে সিরাজের মুখ থেকে। সমগ্র নাট্যাংশটিতে একটি কেন্দ্রীয় সমস্যাকে ক্রমশ নির্দেশ করেছেন সিরাজ,আবার সেই সমস্যার কোনো প্রতিকার খুঁজে না পেয়ে হাহাকারও করতে হয়েছে তাকে। তিনি নবাব-তাই তাকে ঘিরেই রাজসভার সামগ্রিক রাজনীতি-কূটনীতি আবর্তিত হয়েছে। আর সেই আবর্তনের মধ্যেই ঘুরপাক খেয়ে হাহাকার করে উঠেছেন স্বাধীন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লা।এই মধ্যে টলে উঠেছে তাঁর সিংহাসন। তাই এই নাট্যাংশের কেন্দ্রবিন্দু হলেন সিরাজ।সেই কারণেই এই নাট্যাংশের নামকরণ 'সিরাজদৌল্লা যথার্থ ও সার্থক হয়েছে।
ঙ)বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর।প্রশ্নমান-৪
১)'কিন্তু ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা!'-কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়েছে?এ কথা বলার কারণ কী?
উত্তর:শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের রচিত 'সিরাজদ্দৌলা'নাট্যাংশে বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলা তাঁর রাজসভায় উপস্থিত ইংরেজদের প্রতিনিধি ওয়াটসের উদ্দেশে কথাটি বলেছেন।
* ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং নবাব সিরাজের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘আলিনগরের সন্ধি' অনুযায়ী,ইংরেজরা কোনোমতেই নবাবের বিরুদ্ধে কোনোরকম যুদ্ধের আয়োজন করবে না।কিন্তু সিরাজের ওয়ার্টসনের একটি পত্র এসে পৌঁছোয়। এই পত্রের মাধ্যমে সিরাজ জানতে পারেন ওয়ার্টসনের নেতৃত্বে তাঁর বিরুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ইতিমধ্যেই সৈন্যবাহিনী পাঠিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং আরও সৈন্য ও নৌবহরের কথা ভাবছে।তিনি এও জানতে পারেন,বহুদিন আগে থেকেই স্বয়ং লর্ড ক্লাইভ নবাবের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধযাত্রার ছক কষেছিলেন এবং পরিকল্পনামাফিক আলিনগরের সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করতে তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন। সর্বোপরি, নবাবের রাজসভায় উপস্থিত কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়ার্টসও এই ষড়যন্ত্রের অংশীদার। তাই ক্ষুদ্ধ সিরাজ ওয়াটসকে প্রকাশ্য রাজসভায় এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন।
২)'তোমাদের কাছে আমি লজ্জিত।'-বক্তা কাদের কাছে কেন লজ্জিত?
উত্তর:শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের রচিত‘সিরাজদ্দৌলা' নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-কে জানিয়েছেন যে তিনি ফরাসিদের কাছে নিজের অক্ষমতার জন্য লজ্জিত।
* মঁসিয়ে-লা সিরাজের সভায় এসেছিলেন ইংরেজদের কাছ থেকে চন্দননগর রক্ষার জন্য নবাবের সাহায্য চেয়েছিলেন।নবাব ফরাসিদের সঙ্গে বাংলার দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা বলেছেন।নবাবের সঙ্গে তারা যে কখনও খারাপ ব্যবহার করেননি সে-কথাও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করেন। সিরাজ তাঁকে জানান ইংরেজরা তাঁর সম্মতি না নিয়ে চন্দননগর অধিকার করেছে,
ফরাসিদের সমস্ত বাণিজ্যকুঠি ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।কিন্তু কলকাতা জয় করতে গিয়ে এবং পূর্ণিয়ায় শওকত জঙ্গের সঙ্গে লড়াইয়ে তাঁর প্রচুর লোকক্ষয় এবং অর্থব্যয় হয়েছে। তাছাড়া নবাবের মন্ত্রীরা নতুন করে কোনো যুদ্ধে আগ্রহী নন। নবাব নতুন করে আর ইংরেজদের সাথে বিবাদে জড়াতে চাননি। নবাবের এই অক্ষমতার জন্য ফরাসিদের কাছে তিনি লজ্জিত।
৩ )''বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না।"- কাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলা হয়েছে? কোন দুর্দিনের জন্য তাঁর এই আবেদন ?
উত্তর: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত 'সিরাজদ্দৌলা' নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা সিপাহসালার মীরজাফর ও তাঁর অনুগামীদের উদ্দেশ্যে করেছেন।
* ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্রমশই তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে। তাদের সঙ্গে যুদ্ধে কলকাতা জয় করতে পারলেও নবাবের প্রচুর লোকবল ও অর্থবল উভয় শক্তির ক্ষয় হয়েছে। এরপরে ইংরেজরা কাশিমবাজার অভিমুখে সৈন্য পাঠিয়েছে,নবাবের মিত্রপক্ষ ফরাসিদের কাছ থেকে চন্দননগরের দখল নিয়েছে। ওয়াটস্-এর দুটি চিঠি নবাব সর্বসমক্ষে আনেন,তাতে এই ষড়যন্ত্রের স্পষ্ট প্রমাণ ছিল। সভাসদ ও দেশীয় অভিজাতরা যে নবাব-বিরোধী ছিলেন এবং তাদের সঙ্গেও ইংরেজরা সমঝোতা করেছিল, সেকথা ওই চিঠিদুটিতে ছিল।এভাবে ভিতরে ও বাইরে নবাব বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। এই সংকটজনক পরিস্থিতিকেই নবাব ‘দুর্দিন’ বলেছেন। তবে একে সিরাজ ব্যক্তিগত দুর্দিন না বলে বাংলার দুর্দিন বলেছেন। কারণ,তাঁর পরাজয়ের অর্থ বাংলার স্বাধীনতার অবসান। মীরজাফর-সহ রাজবল্লভ, জগৎ শেঠদের কাছে তিনি এই আশঙ্কা থেকে তাঁর পাশে থাকার আবেদন রেখেছেন।
৪)'বাংলা শুধু হিন্দুর নয়,বাংলা শুধু মুসলমানের না- মিলিত হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি এই গুলবাগ বাংলা।'- কাদের উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা হয়েছে? বক্তার য়ে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো।
উত্তর:শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের রচিত 'সিরাজদ্দৌলা' নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ প্রমুখের উদ্দেশে আলোচ্য উক্তিটি
করেছেন।
* নবাব সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসনে বসার পর থেকেই নবাবের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। রাজসভার মধ্যেই মীরজাফরের নেতৃত্বে আলাদা একটা দল গড়ে ওঠে। এসব জানতে পেরেই সিরাজ রাজা রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ প্রমুখকে হিন্দু-মুসলমান বিভেদ না করতে আহ্বান জানান।
* আলোচ্য উক্তিটির মধ্য দিয়ে হিন্দু-মুসলিম দুটি জাতির মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা তুলে ধরেছেন সিরাজ। তাঁর প্রজারা যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে, তারই চেষ্টা করেছিলেন এই তরুণ নবাব। সিরাজ বলেন বাংলা কোনো বিশেষ ধর্মগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য নয়। হিন্দু-মুসলমানের মিলিত বাসভূমি গুলবাগ এই বাংলা। ইংরেজরা বিদেশি জাতি। তাই তাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করতে চাওয়া মানে তা দেশদ্রোহ। নিজেরা পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে কোম্পানির কাছে বাংলা দখল করাটা সহজ হয়ে যাবে। সেই কারণেই ধর্মকে দূরে সরিয়ে রেখে সকলকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। বাংলার নবাব সিরাজ পলাশির প্রান্তরের রক্ত-পিপাসাকে দেখেছেন। সিরাজ আশঙ্কার সঙ্গে বলেছেন- একসময় হয়তো লাখে লাখে পলাশ ফুল ফুটে প্রান্তর রাঙা হয়ে থাকত,সেই কারণেই স্থানটির নাম হয় পলাশি। আর আজ সেই প্রান্তর যেন ব্রিটিশের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাংলার মানুষের বুকের রক্তে পলাশীর প্রান্তর রক্তিম হয়ে ওঠে।
* ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্রের শিকার হন সিরাজদ্দৌলা। একদিকে সেনাপতি মীরজাফর ও অন্য অভিজাতরা অন্যদিকে সিরাজের নিজের মাসি ঘসেটি বেগম সিরাজের পতনের জন্য চক্রান্তে লিপ্ত। বিচক্ষণ সিরাজ বুঝতে পেরেছেন ইংরেজ কোম্পানি আরও মরিয়া হয়ে উঠবে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে। তাই পলাশির যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী জেনে তিনি গভীরভাবে হতাশ হয়েছেন। কারণ এই যুদ্ধে জয়লাভের কোনো আশা তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। তাঁর মনে হয়েছে, একসময় পলাশ ফুলে চারিদিকে লাল হয়ে ভরে থাকত কিন্তু আজ যেন পলাশি রক্তের তৃয়ায় আকুল হয়ে আছে।
৫)'জানি না,আজ কার রক্ত সে চায়। পলাশি,রাক্ষসী পলাশি'- বক্তা কে? উক্তিটির মধ্য দিয়ে বক্তার চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা' নাট্যাংশে আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন স্বয়ং নবাব সিরাজদৌল্লা।
* কখনোই যুদ্ধের আগাম পরিণাম জানানো যায় না। পারিবারিক প্রতিহিংসা,রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের বাসনা ইত্যাদি নানাবিধ জটিলতা এরসঙ্গে মিশে ছিল।তাই লড়াইটা যে সিরাজ বনাম কোম্পানি ছিল না,সেটা নবাব নিজেও বুঝেছিলেন।তাঁর পক্ষে থাকা প্রতিশ্রুতি দিয়েও মীরজাফর,রাজবল্লভ যে যুদ্ধে তাঁর পাশে নাও থাকতে পারেন—এই সত্যটি বুঝতে সিরাজের কোনো অসুবিধেই হয়নি।
ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধসম্ভাবনায় সিরাজের মনে হয়েছে,পলাশির প্রান্তর রক্ত চায়। কিন্তু কার রক্ত সে চায়, সিরাজের না তাঁর শত্রুর, তা সিরাজের অজানা। রক্ত যারই ঝরুক না কেন, সেই রক্তক্ষয়ী 'শেষ যুদ্ধের মধ্যে দিয়েই রাক্ষসী পলাশির রক্তের তৃয়া মিটবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পলাশির যুদ্ধক্ষেত্রে ইংরেজদের হাতে নবাব সিরাজদ্দৌলার পরাজয় ঘটে এবং নবাবপক্ষের সৈন্যদের রক্তে পলাশির প্রান্তর রক্তিম হয়ে ওঠে।
জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
অসুখী একজন কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর Click Here
অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
পথের দাবী গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
সিন্ধুতীরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
নদীর বিদ্রোহ গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
সিরাজদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর Click here
0 Comments