ক। কবি পরিচিতি
খ।উৎস
গ। সারসংক্ষেপ
ঘ। নামকরন
ঙ) রচনাধর্মী বা বর্ণনাধর্মী প্রশ্নোত্তর। প্রশ্নমান-৫
ক) কবি পরিচিতি:
নাট্যকার ও অভিনেতা বিজন ভট্টাচার্যর জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার খানখানাপুর গ্রামে।রাজনীতির জন্য তাঁর শিক্ষা সমাপ্ত হয়নি। তিনি আনন্দবাজার পত্রিকায় চাকরিতে যোগদান করেন। পরে চাকরি ছেড়ে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করলেন। তাঁর স্ত্রী ছিলেন প্রখ্যাত বাংলা সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী। তিনি চলচ্চিত্রে চিত্রনাট্য ও অভিনয়ের কাজও করেছিলেন। তিনি গণজীবনের সংগ্রাম ও দুঃখ- দুর্দশা, শোষণ-বঞ্চনা, চিন্তা ও সমাজবোধ নিয়ে নাটক রচনা করেন। তার প্রথম নাটক আগুন ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে রচিত হয়। তারপর রচনা করেন 'জবানবন্দী'-এটি কৃষক জীবন কে নিয়ে লেখা। তবে নবান্ন নাটকের জন্য তাঁর চারিদিকে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এই নাটক বাংলা নাট্যভিনয়ের জগতে বিপুল আলোড়ন তোলে। নাটক কি রচিত হয়েছিল ১৯৪২ এর আগস্ট আন্দোলন, বন্যা, মহামারি, ও ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে। এছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলি হলো জীবনকন্যা, মাস্টারমশাই, ধর্মগোলা,গর্ভবতী, জননী,প্রভৃতি নাটকে বিশেষ প্রশংসনীয়। বাংলা নাটক মঞ্চের ইতিহাসে নাট্যকার অভিনেতা বিজন ভট্টাচার্যের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি নাট্য জগতে কেন্দ্রীয় সংগীত নাটক একাডেমি এবং পশ্চিমবঙ্গ সংগীত নাটক একাডেমী পুরস্কার পেয়েছিলেন। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ১৯শে জানুয়ারি কলকাতায় তিনি প্রয়াত হন।
খ)উৎস:
‘আগুন’ নাটকটি ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২৩ এপ্রিল ‘অরণি' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে বিজন ভট্টাচার্যের রচনা সংগ্রহে সংকলিত হয়।
গ)বিষয় সংক্ষেপ:
প্রথম দৃশ্য:
নিম্নবিত্ত একটি পরিবারের প্রধান ‘পুরুষ' চরিত্রটি বাড়ির অন্যদের ঘুম থেকে উঠতে দেরি দেখে মনে মনে চিন্তা করে।সেদিন রেশনের দোকানে চালের লাইনে দাঁড়িয়ে চাল পাওয়া যাবে কি না তাই নিয়ে স্ত্রী এবং পুত্রকে ঘুম থেকে ওঠার জন্য সে তাড়া দেয়। কলমি শাক,দাঁতন কাঠি,কলা ইত্যাদি যা কিছু সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে,সেগুলি বাজারে বিক্রি করে তারপর রেশনের দোকানে লাইন দিয়ে চাল কিনতে হবে। তার স্ত্রী অর্থাৎ নেত্যর মা ঘুম থেকে জেগে ওঠে এবং নেত্যকে ডাকতে থাকে। নেত্য আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসে, প্রতিদিন সে এই রেশনের দোকানের লাইন দেওয়া নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে। বাজারের সওদাগুলি একটা ঝুড়িতে ভরে নেত্যর মা নেত্যকে নিয়ে দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে।
দ্বিতীয় দৃশ্য:
চালা ঘরের উঠোনে দাঁড়িয়ে কৃষাণ তার স্ত্রীকে বলে চৈতালির ফসল মাচায় তুলতে পারলে বেশ কিছুদিন নিশ্চিন্তে থাকা যাবে।আর কয়েকটা দিন কষ্ট করতে হবে। সে তার স্ত্রীকে কেষ্টর মার সঙ্গে সকাল সকাল রেশনের দোকানের লাইনে দাঁড়াতে না পারলে বাড়ি ফিরে আসতে হবে।
তৃতীয় দৃশ্য:
কারখানার দুই শ্রমিক সতীশ এবং জুড়োনের মধ্যে কথা হয়।সতীশ তার সমস্যার কথা বলে অর্থাৎ তার সংসার চালানো নিয়ে অসুবিধার কথা বলতে থাকে। রেশনের দোকানে লাইন দিয়ে আগের দিন তার স্ত্রী এবং মেয়েকে কীভাবে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছিল,সে কথাও সতীশ জুড়োনকে বলে। তারপর তার মেয়ে এবং স্ত্রীকে ডাকতে থাকে।কাজে যাওয়ার আগে কিছু খাওয়ার প্রয়োজন, সেজন্যই তার এই ডাকাডাকি। কিন্তু সতীশের স্ত্রী ক্ষিরি সতীশের উদ্দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। মূলত বাড়িতে খাবার না থাকার জন্য তার রাগের কারণ। সতীশ এবং ক্ষিরির মধ্যে তীব্র কথা কাটাকাটি হয়। সতীশ ক্ষিরিকে বকাবকি করে। বাড়ি থেকে মা মেয়ের খুব চিৎকার শোনা যায়। সতীশ বাড়ি থেকে দ্রুতগতিতে বেরিয়ে যায়।
চতুর্থ দৃশ্য:
হরেকৃষ্ণ-মনোরমা ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবার।কেরানি হরেকৃষ্ণ বাবু তাঁর স্ত্রী মনোরমার কথায় উঠে আসে সংসারের দৈনন্দিন সমস্যার কথা, চাল-চিনি-চা কোনো কিছু না থাকার কথা। চালের দোকানে লাইন দিলেও শেষপর্যন্ত চাল পাওয়া যাবে কি না সেই কথায় হরেকৃষ্ণবাবুকে বড় চিন্তায় ফেলেছে। হরেকৃষ্ণর কথাবার্তায় উঠে আসে কীভাবে তার অফিসে চাল-ডাল সস্তা দরে কর্মচারীদের দেওয়ার জন্য সেগুলি অফিসের কর্তারা চড়া দামে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে সে কথাও।শেষপর্যন্ত স্ত্রী মনোরমার কথায় ঠাকুরকে নমস্কার করে হরেকৃষ্ণ রেশনের দোকানের দিকে যাত্রা করেন।
পঞ্চম দৃশ্য:
রেশনের দোকানের সামনে চাল পাওয়ার আশায় অসংখ্য মানুষের লাইন।সেখানে হরেকৃষ্ণ উড়িষ্যা থেকে লক্ষ লক্ষ মন চাল আসার খবরের কথা শোনায়। এক ওড়িয়াকে দেখে সকলে সে কথার সত্যতা জানতে চায়।যদিও ওড়িয়ার পক্ষে এর উত্তর জানা সম্ভব ছিল না। সিভিক গার্ডের আগমন ঘটে। সে সকলকে চাল কেনার জন্য খুচরো পয়সা সঙ্গে রাখার কথা বলে। তাই নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। একাধিক জনকে লাইনে না থাকা বা পরে ঢোকার অভিযোগে সিভিক গার্ড বের করে দিতে চায়। তা নিয়ে তর্কাতর্কি চলে। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য ব্যক্তিরা সিভিক গার্ডের আচরণের প্রতিবাদ করে।লাইনে অপেক্ষা মানুষদের মধ্যে এভাবে একতাবোধ তৈরি হয়। এদিকে নানা জাতির মানুষের একত্রিত সমাবেশ দেখে দোকানির মনে চিন্তা হয়। চাল বেশি দামে বাজারে বিক্রি করে দেওয়ার সুযোগ তার আর থাকবে না বলে সে হতাশা প্রকাশ করে। ওড়িয়া ব্যক্তিটি মানুষের চালের প্রয়োজনের কথা নতুন করে শোনায় এবংশেষপর্যন্ত সমস্ত মানুষ এক সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয় যে,এই পরিস্থিতিতে বাঁচতে হলে সকলকেই মিলেমিশে একসঙ্গে থাকতে হবে।
ঘ) নামকরণ:
১৩৫০ বঙ্গাব্দের ভয়াবহ মন্বন্তরকে প্রেক্ষাপট করে বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকটি রচিত। দুর্ভিক্ষের প্রভাবে যে খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছিল, তা প্রভাবিত করেছিল সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষকে। কৃষক, শ্রমিক, হতদরিদ্র মানুষ থেকে মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী সকলেই খাদ্যের সংকটে ভুগছিলেন।রেশনের দোকানে লাইন দিয়ে চাল-সংগ্রহ ছিল মানুষের প্রতিদিনের কাজ,এবং লাইন দিয়ে চাল না-পাওয়াও ছিল কারোর না কারোর অভিজ্ঞতা।এই নাটকের ৪টি দৃশ্যে সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন পেশার মানুষের জীবনের সমস্যাকে তুলে ধরা হয়েছে,যারা মিলে গেছে একটাই সূত্রে—তা হল অন্নের জন্য চিন্তা ভাবনা।পঞ্চম দৃশ্যে সরাসরি দেখানো হয়েছে রেশনের দোকানের লাইনে মানুষের উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা এবং সেখানে সিভিক গার্ডের জুলুম। ওই রেশনের দোকানের লাইনেই এক যুবক বলেছে, 'আগুন জ্বলছে আমাদের পেটে।' গোটা নাটকই সেই খিদের আগুন জ্বলার কাহিনি—যার প্রভাবে কিশোর ছেলে সকালে ঘুমোতে পারে না, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সংঘাত তৈরি হয়। সমস্ত মানুষ একসঙ্গে থেকে এই সংকটময় সময়কে অতিক্রম করে যেতে চেয়েছে। থেকে গিয়েছে খিদের যন্ত্রণা,পেটের আগুন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই নাটকের নামকরণ ‘আগুন’ অত্যন্ত সার্থক হয়ে উঠেছে।
ঙ) রচনাধর্মী বা বর্ণনাধর্মী প্রশ্নোত্তর। প্রশ্নমান-৫
১)' আয় শুয়ে থাকিস ওদিকি আবার সব গোলমাল হয়ে যাবেনে ।'- বক্তা কে ? তিনি কোন সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করেছেন ? গোলমাল যাতে না হয় সেজন্য তিনি কী করতে বলেছিলেন?
উত্তর:বিজন ভট্টাচার্যের রচিত 'আগুন' নাটকের প্রথম দৃশ্যের বক্তা হলেন ‘পুরুষ’ চরিত্রটি।
* মন্বন্তরের দিনগুলিতে খাদ্যের সংকট মানুষের জীবনে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছিল। ফলে রেশনের দোকানে লাইন দিয়ে চাল সংগ্রহ করা ছিল সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের কাজ।এখানে ‘পুরুষ' চরিত্রটি সেই সমস্যার দিকেই ইঙ্গিত করেছে।আগের দিন মণিচাঁদ নামে এক চরিত্রকে দেরিতে যাওয়ার জন্য লাইনের একেবারে পিছনে দাঁড়াতে হয়েছিল। বারোটার আগে চাল পাওয়া যায় না,তাও আবার সেই চাল পাওয়া যাবে কি না চিন্তা ভাবনা থাকে। মা আগের দিন চাল না পেয়ে খালি হাতে ফিরে এসেছিল।এই দৈনন্দিন সমস্যার দিকেই এখানে পুরুষ চরিত্রটি ইঙ্গিত করেছে।
*'পুরুষ' চরিত্রটি নেত্য এবং নেতার মাকে ঘুম থেকে ওঠার জন্য ডাকতে থাকে।সেদিন তারা আর চাল পাবে কি না তা নিয়ে তার মনে সংশয় তৈরি হয়। কলমি শাক,দাঁতনের কাঠি, কলা ইত্যাদি যা কিছু সংগ্রহ করে রাখা হয়েছিল সেগুলি বিক্রি করে, তারপরে লাইনে গিয়ে চাল কিনতে হবে।সেজন্যই তাড়াতাড়ি উঠে পড়ার জন্য সে স্ত্রী এবং ছেলেকে তাড়া দিতে থাকে।
২)' এই আর কড়া দিন বউ, বুঝলি। '– কে এ কথা বলেছে?এই 'আর কড়া দিন'-এর কী পরিচয় পাওয়া যায় ?এরপরে কী হবে বলে বক্তা প্রত্যাশা করেছে?
উত্তর: নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের রচিত 'আগুন' নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে- মন্তব্যটি করেছে কৃষাণ।
*এখানে যে দিনগুলির কথা বলা হয়েছে তা আসলে কৃষাণ এবং তার মতো মানুষদের বেঁচে থাকার লড়াই। তীব্র খাদ্যসংকটে রেশনে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা অতি সামান্য।তাই লাইনে সকালের আগে না যেতে পারলে চাল পাওয়া যাবে না। কৃষাণও কৃষাণিকে বলেছে, মাঠ থেকে ফিরে এসে সে যে খিদেয় কাতর হয়ে পড়ে এবং সেই খিদে সহ্য করার ক্ষমতা তার থাকে না,সেকথাও কৃষাণ স্ত্রীকে বলে তাড়াতাড়ি লাইন দিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে এসে রান্না করতে হবে।এইভাবে তাদের খিদের যন্ত্রণা,অন্নের সংকটে দিনগুলি কাটে
*কৃষাণ প্রত্যাশা করেছিল যে,কষ্টের দিন পার হয়ে যাবে আর কিছুদিনের মধ্যেই। চৈতালির ফসল ঘরে তুলতে পারলে কিছুদিনের মতো নিশ্চিন্ত থাকা যাবে। যদিও সে মনে মনে জানে তার কৃষাণীকে সে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে বলে - ' আর কটা দিন একটু কষ্ট কর '।
৩)' কী আমার পুরুষ মানুষ রে।..'- কে,কাকে উদ্দেশ করে মন্তব্যটি করেছে ?মন্তব্যটির পরিপ্রেক্ষিত আলোচনা করো।
উত্তর:বিজন ভট্টাচার্যের রচিত ‘আগুন’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে, ক্ষিরি তার স্বামী সতীশকে উদ্দেশ করে
বলেছেন।
সতীশ তার মেয়ে ফুলকি এবং স্ত্রী ক্ষিরিকে ঘুম থেকে ওঠার জন্য ডাকাডাকি করছিল, কারণ তার কারখানায় বেরোনোর সময় হয়ে গিয়েছিল। সারাদিন সেখানে পরিশ্রম করতে হবে বলে কিছু খেয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে চাইছিল, সেজন্যই সে তাড়া দিচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে ক্ষিরি ফুঁসে ওঠে এবং মন্তব্য করে যে বাড়ির পরিস্থিতি কিছুই সতীশের অজানা নয়। আগের দিন রাতে সে নিজেই মিস্ত্রির কাছ থেকে দেড় পোয়া চাল ধার করে এনেছে এবং তার মধ্যে বেশিরভাগ সতীশ নিজেই খেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অসহায় ক্ষিরি তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে, 'এখন সকালবেলাই তোমার পিণ্ডি জোগাই কোত্থেকে বলতো।' ক্ষিরির এই তীক্ষ্ণ কণ্ঠ সতীশ সহ্য করতে পারে না।এতে ক্ষিরি আরও উত্তেজিত হয় এবং বলে যে পরনের কাপড়, পেটের ভাত দিতে পারে না, শুধু ‘লম্বা চওড়া কথা’। ‘সাজা’ দেওয়ার কথা বলে সতীশ যে পৌরুষের প্রকাশ ঘটাতে চায় তাকে ব্যঙ্গ করে ক্ষিরি বলে কেলোর বাবাকে দেখে আসার জন্য-'কেলোর মাকে কী হালে রেখেছে।
৪)'যে রক্ষক সেই হল গিয়ে তোমার তক্ষক।'-কে মন্তব্যটি করেছে? মন্তব্যটির প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।
উত্তর:বিজন ভট্টাচার্যের রচিত 'আগুন' নাটকের চতুর্থ দৃশ্যে আলোচ্য মন্তব্যটির বক্তা হলে- কেরানি হরেকৃষ্ণবাবু।
*অনাবৃষ্টির ফলে যে ভয়াবহ খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছিল,সেই সময়ে অফিসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কর্মচারীদের চাল-ডাল দেওয়ার। হরেকৃষ্ণবাবু যখন বাড়িতে চাল, চিনি ইত্যাদির সংস্থান না থাকা নিয়ে উদবেগ প্রকাশ করছেন তখন তাঁর স্ত্রী মনোরমা তাঁকে সে-কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু হরেকৃষ্ণবাবু অত্যন্ত বিরক্তির সঙ্গে তাকে অফিসের কথা তুলতে বারণ করেন।কর্মচারীদের নাম করে সস্তা দরে চাল-ডাল এনে অফিসের কর্তারা সেগুলি বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছেন এবং অফিসের কর্মচারীরা সস্তা দরে চাল ডাল পাচ্ছে। আসলে সুবিধা ভোগ করছে ম্যানেজার আর তাদের মোসাহেবরা।এই প্রেক্ষাপটে হরেকৃষ্ণবাবু বলেছেন,'যে রক্ষক সেই হল গিয়ে তোমার ভক্ষক।'
৫)'আগুন জ্বলছে আমাদের পেটে।'-বক্তা কে ? মন্তব্যটির তাৎপর্য সমগ্র নাট্যকাহিনি অবলম্বনে আলোচনা করো।
উত্তর:বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন' নাটকের পঞ্চম দৃশ্যে রেশনের দোকানের লাইনে হঠাৎই আগন্তুক এক যুবক মন্তব্যটি করেছে।
* মন্বন্তরের ভয়াবহ দিনগুলোতে মানুষের খিদের যন্ত্রণা ও অসহায়তা ‘আগুন’ নাটকের মধ্য দিয়ে রূপ পেয়েছে। নাটকের পাঁচটি দৃশ্যে আলাদা আলাদা চরিত্র, তাদের পটভূমি ভিন্ন; কিন্তু এক জায়গায় সকলেই মিলে গেছে, তা হল খিদের যন্ত্রণা। প্রথম দৃশ্যে ছেলের ঘুম ভাঙিয়ে নেত্যর মা বাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে, কিছু আনাজ বিক্রি করে রেশনের চাল কিনতে যাবে বলে।আর নেত্যর বাবা সংশয়ী হয়ে বলে, দেরি হয়ে যাওয়ায় 'চাল আজ আর পাতি হবে নানে। দ্বিতীয় দৃশ্যে কৃষাণ তার স্ত্রীকে পরামর্শ দেয় কেষ্টর মার সঙ্গে আগে গিয়ে লাইনের একেবারে প্রথমে দাঁড়ানোর জন্য।অন্নের জন্য এই কাতরতা তীব্র হয়ে ওঠে তৃতীয় দৃশ্যে সতীশের বাড়িতে। সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে চাল না পাওয়ায় সেই রাতে চাল ধার করে আনতে হয় খাওয়ার জন্য এবং সকালে কারখানার কাজে যাওয়ার আগে সতীশের জন্য সামান্য খাবারও অবশিষ্ট থাকে না। চতুর্থ দৃশ্যে হরেকৃষ্ণবাবু আক্ষেপ করেন-'চা নেই, চিনি নেই, চাল নেই, খালি আছে চুলোটা।” আর পেটে খিদের এই আগুন নিয়েই পঞ্চম দৃশ্যে রেশনের দোকানে লাইন দেয় বহুস্তরীয় সমাজের ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন জাতির নানা মানুষ। খিদের তাড়না যেন তাদের সকলকে একসঙ্গে মিলিয়ে দেয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানো মানুষগুলি সিভিক গার্ডের জুলুমের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রুখে দাঁড়ায়। পেটের আগুন যেন প্রতিবাদের আগুন হয়ে ওঠে। যে আগুন এক কিশোরকে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে দেয় না, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে বিপর্যস্ত করে, সেই আগুনই যেন রেশনের দোকানের লাইনে পারস্পরিক সহমর্মিতার সূত্রে মনুষ্যত্বকে নিকষিত হিম করে তোলে।
আরো পড়ুন:
একাদশ শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর click here
তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর click here
লালন শাহ ফকিরের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click here
ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click here
ছুটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click here
আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তর click here
0 Comments