সূচিপত্র:
ক। কবি পরিচিতি
খ) উৎস
গ। সারসংক্ষেপ
ঘ। নামকরন
ঙ) রচনাধর্মী বা বর্ণনাধর্মী প্রশ্নোত্তর। প্রশ্নমান-৫
ক) কবি পরিচিতি:
জন্ম ও শৈশব:
১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে কাশীতে প্রেমেন্দ্র মিত্রের জন্ম হয়। তাঁর বাবার নাম জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র, মা সুহাসিনী দেবী। প্রেমেন্দ্র মিত্রর বয়স যখন সাত- আট বছর,তখন তাঁর মা মারা যান।
ছাত্রজীবন:
প্রেমেন্দ্র মিত্রের দাদামশাই রাধারমণ ঘোষ ইস্ট ইন্ডিয়া রেলের মির্জাপুর ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত ডাক্তার ছিলেন। প্রেমেন্দ্র মিত্র সেখানেই বড়ো হতে থাকেন। দাদামশাইয়ের মৃত্যুর পর লেখককে আশ্রয় নিতে হয় নলহাটিতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। এরপরে নলহাটি ছেড়ে তিনি চলে আসেন কলকাতায়।সেখানে তিনি সাউথ সাব-আর্বান স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভরতি হন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করে। কিছুদিন বাদে কলেজের পড়া ছেড়ে দিয়ে কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য তিনি শ্রীনিকেতনে যান। সেখান থেকে আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। এরপর কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে তিনি জগন্নাথ কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভরতি হন। কিছুদিন পর ঢাকা থেকে কলকাতায় ফিরে তিনি চাকরির খোঁজ শুরু করেন।
কর্মজীবন:
তিনি স্কুলশিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ওষুধ কোম্পানির সেলম্যান ইত্যাদি নানা ধাপ পেরিয়ে শেষে সিটি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হন।
সাহিত্যকর্ম:
ঢাকা থেকে কলকাতায় ফেরার পর প্রবাসী পত্রিকায় তাঁর দুটি গল্প প্রকাশিত হয় এবং এখান থেকেই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়। তিনি চেয়েছিলেন ডাক্তার হতে,কিন্তু হলেন সাহিত্যিক।
প্রেমেন্দ্র মিত্র কালিকলম, নবশক্তি, পক্ষীরাজ ইত্যাদি নানা সাময়িকপত্র সম্পাদনা করেছেন।এ তাঁর সৃষ্ট একটি অবিস্মরণীয় চরিত্র 'ঘনাদা, গোয়েন্দা পরাশর,কে নিয়ে তিনি ১৫টিরও বেশি গল্প লিখেছেন। তাঁর ছদ্মনাম ছিল ‘কৃত্তিবাস ভদ্র’।
চলচ্চিত্র:
তিনি ৭০টি চলচ্চিত্রের কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন। এ ছাড়া চলচ্চিত্রের গান লিখেছেন ত্রিশটি। প্রেমেন্দ্র মিত্র পরিচালিত ছবিগুলি হল পথ বেঁধে দিল,রাজলক্ষ্মী (হিন্দি),নতুন খবর,কালোছায়া, কুয়াশা। উল্লেখযোগ্য রচনা।তাঁর উপন্যাসের সংখ্যা পঞ্চাশটি,ছোটোগল্প ত্রিশটি, শিশু ও কিশোরদের রচনা ত্রিশটি, ছড়া আটটি, নাটক চারটি, প্রবন্ধ ও স্মৃতিকথা আটটি এবং অনুবাদ গ্রন্থ ছ-টি।পাঁক, মিছিল,পা বাড়ালে রাস্তা, প্রতিধ্বনি ফেরে,স্বপ্নতনু, হৃদয় দিয়ে গড়া, আগামীকাল, বিসর্পিল প্রভৃতি প্রেমেন্দ্র মিত্রের বিখ্যাত উপন্যাস। তাঁর গল্পগ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- বেনামী বন্দর,পুতুল ও প্রতিমা,মৃত্তিকা, অফুরন্ত, মহানগর নিশীথ-নগরী,কুড়িয়ে ছড়িয়ে,সামনে চড়াই এবং সপ্তপদী।তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল প্রথমা সম্রাট, ফেরারী ফৌজ,সাগর থেকে ফেরা প্রভৃতি।
সম্মান ও স্বীকৃতি:
'সাগর থেকে ফেরা' কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি আকাদেমি পুরস্কার এবং রবীন্দ্র পুরস্কার পেয়েছেন। এ ছাড়া, তিনি 'পদ্মশ্রী' ও ‘দেশিকোত্তম' উপাধি লাভ করেছেন।
জীবনাবসান:
১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ৩ মে প্রেমেন্দ্র মিত্রের জীবনাবসান হয়।
খ)উৎস:
‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পটি প্রেমেন্দ্র মিত্রের কুড়িয়ে ছড়িয়ে নামক গল্পগ্রন্থ থেকে সংকলিত।
গ)বিষয় সংক্ষেপ :
কাজেকর্মে ক্লান্তের পর যদি দু-একদিনের ছুটি পাওয়া যায় তাহলে তেলেনাপোতা হবে অবকাশের উপযুক্ত জায়গা। প্রায় দু-ঘণ্টার বাসযাত্রার শেষে জঙ্গলের বাইরে রাস্তায় বেশ কিছু অপেক্ষা এবং তারপর অন্ধকারের মধ্য দিয়ে ছোট রাস্তায় গোরুর গাড়ির আগমন।সেই গোরুর গাড়িতে খুব কষ্ট করে কথক এবং তার দুই বন্ধু জঙ্গলের পথ ধরে
তেলেনাপোতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।রাস্তার চারিপাশ অন্ধকার,অরণ্যপথে সমস্ত চেতনা যেন ডুবে যাবে। বাঘ তাড়ানোর জন্য গাড়োয়ানের ক্যানেস্তারা পেটানোর শব্দ কথকদের মধ্যে ভয়ের উদ্রেক করবে।গোরুর গাড়ি পেরিয়ে যাবে এক দীর্ঘ মাঠ। চাঁদের আলোয় দেখা যাবে দু-পাশের ভাঙা অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ, সব যেন মৌন প্রহরীর মতো সরে সরে যাবে। একসময় গাড়ি গিয়ে দাঁড়াবে এক ভগ্ন অট্টালিকার সামনে।পুকুরের পানা পচা কটু গন্ধ কথকদের অভ্যর্থনা করবে। আর সেই অট্টালিকার ঘরে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা হবে। গাড়োয়ান রেখে যাবে একটা ভাঙা লণ্ঠন, আর এক কলশি জল। কথকের দুই বন্ধুর একজন নিদ্রাকাতর এবং অন্যজন নেশাগ্রস্ত হওয়ার কারণে কিছু সময়ের মধ্যেই অচেতন হয়ে যাবেন। আর অসহ্য গরম থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য ভাঙা সিঁড়ি দিয়ে কথক উঠে যাবেন ছাদে। রাস্তার ওপাশের ভগ্নস্তূপের জানালায় হঠাৎই দেখা যাবে আলোর এক ক্ষীণ রেখা এবং তাকে আড়াল করে এসে দাঁড়াবে এক রহস্যময় ছায়ামূর্তি।কথক তা বোঝার চেষ্টা করার আগেই অদৃশ্য হয়ে যাবে সেই ছায়ামূর্তি। পরদিন সকালে আবার যেন চলমান জীবনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারবেন কথক। তিনি তেলেনাপোতার আশ্চর্য সরোবরে মাছ ধরতে উদ্যোগী হবেন। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও সেই চেষ্টায় তাঁর সাফল্য আসবে না। হঠাৎই জলের শব্দে দেখবেন একটি মেয়ে পুকুরের পানা সরিয়ে কলশিতে জল ভরছে।মেয়েটি কথকের দিকে তাকাবে অন্য ভঙ্গিতে। কথকও তার মুখের শান্ত করুণ পর্যবেক্ষণ করবেন কিন্তু তার বয়স বুঝতে পারবেন না। চলে যাওয়ার সময়ে মেয়েটি কথককে ছিপে টান দিতে বলবে। কথক সেই শান্ত মধুর কণ্ঠস্বর শুনে ছিপে টান দিতে ভুলে যাবেন। যখন ছিপ তুলবেন তখন মাছ টোপ খেয়ে চলে গিয়েছে। সেই মেয়েটিদের বাড়িতেই কথকদের দ্বিপ্রাহরিক আহারের ব্যবস্থা হবে। সেখানেই কথক জানতে পারবেন যে মেয়েটি- যার নাম যামিনী, তাঁর পানরসিক বন্ধু মণির আত্মীয়।মেয়েটিকে কাছ থেকে দেখে কথকের মনে হবে সেই জনহীন লোকালয়ের সমস্ত বেদনা যেন তার মুখে ছায়া ফেলেছে।খাওয়া শেষ করে কথকরা যখন বিশ্রাম নিচ্ছেন সেই মেয়েটি তখন তার আত্মীয় অর্থাৎ কথকের বন্ধু মণিকে ডাকবেন। বন্ধুকে অনুসরণ করবেন কথকও। প্রকাশ্যে আসবে নিরঞ্জনের কথা। যামিনীর মা তাঁর দুঃসম্পর্কের এক বোনপো নিরঞ্জনের সঙ্গে যামিনীর বিবাহের সম্পর্ক ঠিক করেছিলেন।শেষবার এসেও নিরঞ্জন প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিল যে বিদেশের চাকরি থেকে ফিরে এসে সে যামিনীকে বিয়ে করবে। সেই থেকে যামিনীর মা অপেক্ষায় থাকে নিরঞ্জনের ফিরে আসার আশায়। কথকদের গলার আওয়াজে তিনি সেই নিরঞ্জনের ফিরে আসার কথাই ভেবে নিয়েছিলেন। সকলকে বিস্মিত করে কথক নিরঞ্জনের ভূমিকা পালন করে এবং যামিনীর মাকে প্রতিশ্রুতি দেন যে, তিনি কখনও যামিনীকে ছেড়ে যাবেন না। এই ঘটনা সকলকে অবাক করে,স্বয়ং যামিনী অবাক হয়ে যায়।পরবর্তীতে ছুটি শেষে বিদায় নেওয়ার সময় চলে আসে, কিন্তু গোরুর গাড়িতে করে ফিরে যাওয়ার সময়ে প্রতিমুহূর্তে ফিরে আসার আকুতি যেন নিজের হৃদয় স্পন্দনে শুনতে পান কথক। তারপর কলকাতায় গিয়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তিনি। তিনি যখন সুস্থ হন তখন তেলেনাপোতার স্মৃতি ধীরে ধীরে তার কাছে ঝাপসা হয়ে গিয়েছে এবং যামিনীও তখন তাঁর কাছে হয়ে গেছে এক অবাস্তব কুয়াশার কল্পনামাত্র।
ঘ)নামকরণ:
কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' কাহিনিভিত্তিক নামকরণের ইঙ্গিত দেয়। এই গল্প, কথক এবং তাঁর দুই বন্ধুর তেলেনাপোতা ভ্রমণের কাহিনি। তাঁরা প্রথমে বাসে করে তেলেনাপোতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন, তারপরে জঙ্গলপথে তেলেনাপোতায় পৌঁছান এবং তেলেনাপোতায় তাদের ভগ্ন অন্ধকার অট্টালিকায় রাতবাস করতে হয়। পুকুরঘাটে যামিনীকে প্রথম দেখেন কথক।একসময় কথক নিরঞ্জনের ভূমিকায় যামিনীর মাকে, যামিনীকে ছেড়ে না যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।তেলেনাপোতার প্রতিটা ভগ্ন অট্টালিকা,ধ্বংসাবশেষ যেন বুঝিয়ে দেয় এক জনপদের কথা, ম্যালেরিয়ায় যে জনপদ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত জনপদের প্রতিনিধি হয়ে থাকে যামিনী,তার ভাঙাচোরা শরীরে যেন তেলেনাপোতার মতোই ধ্বংসের চিহ্ন। তেলেনাপোতায় গিয়ে কথক মাছ ধরেছেন, ভাঙা অট্টালিকার ছাদে গিয়ে রহস্যময় নারীমূর্তির সন্ধান পেয়েছেন। কিন্তু এই প্রত্যক্ষের পরেও যে জিনিস থেকে যায় তা হল যামিনী। যে মেয়েটিকে দেখে কথক পুকুরপাড়ে চমকে উঠেছিলেন সে যামিনী। যামিনী যেন এই প্রায় হারিয়ে যাওয়া জনপদে একমাত্র জীবনের অঙ্গীকার।আর সে নিজস্ব দুর্বল জীবনের কাছেই নিজেকে সমর্পণ করে ফেলেছিলেন। যামিনীর মাকে কথক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যামিনীকে ছেড়ে না যাওয়ার। তিনি যেন খুঁজে নিতে চেয়েছিলেন তেলেনাপোতার অন্তর্গত প্রাণের স্পন্দনকে, যা শুধু দেখার জিনিস নয়, যা আবিষ্কারও। এই অর্থে ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার' নামকরণ হিসেবে অত্যন্ত সার্থক হয়েছে।
ঙ) রচনাধর্মী বা বর্ণনাধর্মী প্রশ্নোত্তর। প্রশ্নমান-৫
১)'তাহলে হঠাৎ একদিন তেলেনাপোতা আপনিও আবিষ্কার করতে পারেন'-তেলেনাপোতা আবিষ্কার অভিযানের বাসযাত্রার বিবরণ দাও।
উত্তর:প্রমেন্দ্র মিত্রের রচিত‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পে গল্পকথক পাঠকদের উদ্দেশ বলেছেন যে,কোনো এক শনিবার বা মঙ্গলবার,সম্ভবত মঙ্গলবারই,যোগাযোগ হলে তেলেনাপোতা আবিষ্কার করে ফেলতে পারেন।প্রতিদিনের কাজকর্ম এবং কলকাতার ভিড়ভাট্টায় হাঁপিয়ে ওঠার পর হঠাৎ যদি দু-দিনের ছুটি পেয়ে যান পাঠক এবং তাঁর কোনো বন্ধু যদি তাঁকে লোভ দেখান তেলেনাপোতা আবিষ্কারের,যেখানকার দিঘিতে কেউ কখনও মাছ ধরেনি বলে সেখানকার মাছের দল বড়শিবিদ্ধ হওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে,তাহলে পাঠক হঠাৎ একদিন তেলেনাপোতা আবিষ্কার করতে পারবেন। আলোচ্য গল্পে, গল্পকথক তাঁর এক ঘুমকাতুরে বন্ধু ও এক পানরসিক বন্ধু মণির সঙ্গে,কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে,কলকাতা থেকে তিরিশ মাইল দূরের এক গ্রাম তেলেনাপোতার উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন।এ যাত্রায় তাদের বাস ছিল জিনিসে-মানুষে ঠাসাঠাসি। ভাদ্র মাসের পচা গরমে প্রায় দু-ঘণ্টা ধরে তাঁরা পথের ঝাঁকুনি ও মানুষের ঠেলা খেয়ে চলতে থাকেন। এরপর পথের ধুলো ও শরীরের ঘামে চটচটে হয়ে যাওয়া দেহ নিয়ে হঠাৎই তারা একসময় নেমে পড়েন তেলেনাপোতার সবচেয়ে কাছের বাসস্টপে, যার নাম আমরা পাঠ্যাংশে পাই না। এরপর সামনের নীচু একটা জলার মতো জায়গার ওপর দিয়ে লম্বা সাঁকো পেরিয়ে বিচিত্র ঘর্ঘর শব্দে বাসটি পথের বাঁকে অদৃশ্য হয়ে যায়।
২) তেলেনাপোতায় জীর্ণ প্রাসাদের অপেক্ষাকৃত বাসযোগ্য ঘরটিতে কীভাবে রাত কেটেছিল
গল্পকথকদের?
উত্তর:প্রেমেন্দ্র মিত্রের রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পে জীর্ণ প্রাসাদের বাসযোগ্য একটি ঘরে গোরুর গাড়ির চালক একটি ভাঙা লণ্ঠন নিয়ে এসে বসিয়ে দেয় এবং এক কলশি জল দিয়ে চলে যায়। এরপর যখন মেঝেতে শতরঞ্জি পাতা হয়, তখন গল্পকথকের ঘুমকাতুরে বন্ধুটি সেখানে শুয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পরই নাক ডাকতে শুরু করেন। অপর বন্ধু মণি নেশাতে নিজেকে পুরোপুরি ডুবিয়ে দেন।
ঘরে ঢুকেই সেখানকার ঝুল,জঞ্জাল,ধুলো এবং একপ্রকার ভ্যাপসা গন্ধে কথক বুঝতে পারেন যে, বহুকাল পরে তাঁরাই আবার সেই ঘরটিতে প্রবেশ করেছেন। তা ছাড়া ঘরটি এতটাই জীর্ণ ছিল যে, একটু-আধটু হাঁটাচলা করলেই ঘরটির ছাদ ও দেয়াল থেকে ভাঙা প্লাস্টার নীচে খসে পড়ছিল। ঘরটিতে বাসা-বাঁধা দু-তিনটে চামচিকে ওড়াউড়ি শুরু করে দেয়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কথকদের আক্রমণ করতে শুরু করে অ্যানোফিলিস মশা। এরপর ঘরের গরম থেকে মুক্তির জন্য প্রায় ভেঙে যাওয়া একটি সিঁড়ি বেয়ে টর্চ হাতে ছাদে ওঠেন গল্পকথক। বেশ কিছুক্ষণ ছাদে একা কাটিয়ে সাবধানে নীচে নেমে আসেন গল্পকথক। তারপর ঘুমন্ত দুই বন্ধুর পাশে একটু জায়গা করে নিয়ে শুয়ে পড়েন। এভাবেই সে ঘরে রাত কেটেছিল তাঁদের।
৩)'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পটি অবলম্বনে গল্পকথকের সঙ্গে যামিনীর প্রথম সাক্ষাৎ-দৃশ্যটি বর্ণনাকরো।
উত্তর:প্রেমেন্দ্র মিত্রের রচিত 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার'-গল্পে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে তেলেনাপোতায় পৌঁছে একটি পানাপুকুরে ছিপ ফেলে মাছ ধরার অপেক্ষায় বসে থাকেন গল্পকথক।সেই সময় ঘুঘু পাখির ডাকে গল্পকথক হঠাৎই জলের শব্দে চমকে গিয়ে দেখেন যে, পুকুরের স্থির সবুজ জলে ঢেউ উঠেছে এবং তাঁর বড়শির ফাতনা ধীরে ধীরে দুলছে। ঘাড় ঘুরিয়ে তিনি লক্ষ করেন, ঘাটে দাঁড়িয়ে একটি মেয়ে পুকুরের পানা সরিয়ে পিতলের একটি চকচকে কলশিতে জল ভরছে। মেয়েটির দুটি চোখ কৌতূহলী হলেও, তার চালচলনে লজ্জা কোনো ছাপ ছিল না। এরপর জল ভরে নিয়ে মেয়েটি সরাসরি গল্পকথকের দিকে তাকায়,তাঁর ফাতনার দিকে একবার তাকায় এবং মুখ ফিরিয়ে কলশিটা কাখে তুলে নেয়। মেয়েটির মুখের শান্ত ও গম্ভীর ভাব দেখে কথকের মনে হয় মেয়েটি নিষ্ঠুর জীবনপথ পার হয়ে এসেছে। ফিরে যাওয়ার সময় হঠাৎই পেছন ফিরে তাকিয়ে মেয়েটি গল্পকথককে হাত গুটিয়ে বসে থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করে এবং তাঁকে বড়শিতে টান দিতে বলে। গল্পকথক এরপর ফাতনাটি ভেসে ওঠার পরপরই বড়শিতে টান দিয়ে দেখেন তাতে মাছ নেই-এমনকি টোপও নেই। তারপর কথক মেয়েটিকে দেখেন, সে হাসি মুখে ধীর পদে ফিরে চলেছে।এই মেয়েটিই যামিনী এবং এটাই ছিল গল্পকথকের সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ।
৪)'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' ছোটোগল্প অবলম্বনে গল্পকথকের সঙ্গে যামিনীর শেষ সাক্ষাৎকারটি বর্ণনা করো।
উত্তর:প্রেমেন্দ্র মিত্রের রচিত 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্পের গল্পকথকের সঙ্গে যামিনীর শেষ বার সাক্ষাৎকার ঘটে তেলেনাপোতা থেকে কথকদের মহানগরীতে ফিরে যাওয়ার মুহূর্তে। মণিবাবুদের পোড়োবাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গোরুর গাড়িতে গল্পকথকরা উঠে পড়ার পর যখন গাড়িটি ছাড়বার উপক্রম করছিল, তখন যামিনী গল্পকথকের দিকে করুণ চোখ মেলে বলেছিল,তাঁর ছিপটিপ সবকিছুই যে পড়ে রইল। শুনে গল্পকথক হেসে বলেন যে, সেসব সেখানেই থাকুক। তেলেনাপোতায় এসে প্রথমবার মাছ শিকারে ব্যর্থ হয়েছেন বটে, কিন্তু বারবার তেলেনাপোতার মাছ মোটেও তাঁকে ফাঁকি দিতে পারবে না। কথাগুলি শুনে যামিনী মুখ ফিরিয়ে নেয় না। যামিনীর মুখের দিকে তাকিয়ে কথকের মনে হল, তার দু-চোখের মধ্য থেকে মধুময় হাসি শরতের সাদা মেঘের মতো কথকের মনকে জুড়িয়ে দিয়েছে। শেষ সাক্ষাৎকারটির মধ্য দিয়ে কথকের প্রতি যামিনীর অনুরাগ এবং তার মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়।
৫) কে, নিরঞ্জন এলি ?' নিরঞ্জন কে ? কোন পরিস্থিতিতে গল্পকথক নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন ?
উত্তর :প্রেমেন্দ্র মিত্রের রচিত'তেলেনাপোতা আবিষ্কার 'গল্পে নিরঞ্জন হল-যামিনীর মায়ের দূর সম্পর্কিত বোনপো , যে যামিনীর মায়ের কথায় যামিনীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ।
* যামিনীদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় মণির বন্ধু গল্পকথক তেলেনাপোতায় আসেন।সেখানেই যামিনীর কাতর স্বর ইত্যাদিতে কৌতূহলী হয়ে কথক জানতে পারেন নিরঞ্জনের কথা।নিজের দূর সম্পর্কের বোনপোর সঙ্গে যামিনীর মা,যামিনীর ছেলেবেলাতেই বিয়ে ঠিক করেছিলেন। বছর চারেক আগেও সে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিল যে,বিদেশের চাকরি থেকে ফিরে যামিনীকে বিয়ে করবে। সেই থেকে যামিনীর বৃদ্ধা মায়ের অপেক্ষায় দিন গোনা চলছে। এই করুণ পরিস্থিতি কথককে দুর্বল করে তোলে এবং যখন মণি আর যামিনীর সঙ্গে তিনি বৃদ্ধার ঘরে যান।অন্ধ বৃদ্ধা তাকেই নিরঞ্জন ভেবে আনন্দ হয়ে ওঠেন। তিনি নিশ্চিত হয়ে যান যে, নিজের প্রতিশ্রুতি রাখতে নিরঞ্জনই ফিরে এসেছে। আকুলভাবে বলেন-'তুই আসবি বলে প্রাণটা যে আমার কণ্ঠায় এসে আটকে আছে।এই পরিস্থিতিতে কথক বৃদ্ধাকে নতুন করে কষ্ট দিতে চান না বলেই নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
আরো পড়ুন:
একাদশ শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর click here
তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর click here
লালন শাহ ফকিরের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click here
ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click here
আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তর click here
0 Comments