সূচিপত্র:
ক। কবি পরিচিতি
খ) উৎস
গ। সারসংক্ষেপ
ঘ। নামকরন
ঙ) রচনাধর্মী বা বর্ণনাধর্মী প্রশ্নোত্তর। প্রশ্নমান-৫
ক)লেখক পরিচিতি:
১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে কবির জন্ম হয়।পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র। শৈশব থেকেই রবীন্দ্রনাথ কবিতা লিখতে শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি বিশ্ববিখ্যাত কবি হন এবং ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে 'Song Offerings' গ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ' পান। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখাতেই তাঁর অবদান মনে রাখার মতো। বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস,ছোটোগল্প, নাটক, গান, প্রবন্ধ প্রভৃতি শাখায় তিনি প্রচুর অবদান রেখেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল -মানসী,সোনার তরী,চিত্রা,গীতাঞ্জলি,বলাকা'প্রভৃতি।তাঁর নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-ডাকঘর,বিসর্জন,রক্তকরবী প্রভৃতি। চোখের বালি,ঘরে বাইরে,গোরা, প্রভৃতি হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মরণীয় উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথের শেষজীবনে আঁকা ছবিগুলি চিত্রকলার জগতে খ্যাতি পায়।পড়াশোনা ও অন্যান্য শিক্ষাকে আনন্দময় করে তোলার জন্য তিনি ‘বিশ্বভারতী' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট এই মহান কবি মারা যান।
খ)উৎস:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত 'ছুটি' ছোটগল্পটি তাঁর 'গল্পগুচ্ছ' গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
গ) বিষয় সংক্ষেপ:
গ্রামের বালকদের সর্দার ছিল দুরন্ত ফটিক। ফটিকের নেতৃত্বেই গ্রামের ছেলেরা নতুন নতুন খেলা আমদানি করতো।এরকমই একদিন নদীর ধারে রাখা শালগাছের গুঁড়িকে নিয়ে খেলার সময় ফটিকের ছোটোভাই মাখনলাল তার ওপরে চেপে বসে। তখন শালকাঠে গুড়িতে বসে থাকা মাখনলালকে গড়িয়ে দেওয়া হয় এবং মাখন মাটিতে পড়ে যায়। মাখন কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে এসে মার কাছে ফটিকের নামে নালিশ করে,দাদা তাকে মেরেছে।ফটিকের মা-র নির্দেশে ফটিককে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ফটিক ভাইকে মারার কথা অস্বীকার করে,ক্রুদ্ধ ফটিক মিথ্যে কথা বলার জন্য এবার মাখনকে সত্যিই চড় মারে। এই পরিপ্রেক্ষিতে মা ফটিককে পালটা চড় মারলে ফটিক মাকে ঠেলে দেয়।এই নিয়ে যখন গোলযোগ চলছে, তখনই ফটিকদের বাড়িতে আগমন ঘটে তার মামা বিশ্বম্ভরবাবুর,যিনি পশ্চিমে কাজের জন্য বহুদিন বাইরে ছিলেন। তার আসার ফলে বাড়িতে বেশ আনন্দ হয়। বিদায় নেওয়ার কয়েকদিন আগে বিশ্বম্ভরবাবু তাঁর বোনের কাছে যখন ভাগিনাদের পড়াশোনার খবর নেন, তখন ফটিকের মা মাখনের প্রশংসা করলেও, ফটিকের ব্যাপারে নানা অভিযোগ জানান।বিশ্বম্ভরবাবু ফটিককে লেখাপড়া শেখানোর জন্য কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। ফটিকের মা তাতে অনুমতি দেন। ফটিকও যাবার জন্য আনন্দ হয়ে ওঠে।ফটিক যাওয়ার সময় তার সমস্ত খেলার জিনিসগুলি মাখনলালকে ভালোবেসে দিয়ে যায়।কিন্তু ফটিক মামার বাড়িতে গিয়ে মামির ঠিকমতো ভালোবাসা সে পায় না,তার মামি তাকে নিজের সংসারে অবাঞ্ছিত মনে করেন। ফটিকের যে বয়স অর্থাৎ কৈশোর এবং যৌবনের মধ্যবর্তী সময়কাল,নানা কারণে নানাভাবে তাকে একাধিকবার তিরস্কৃত হতে হয়। ধীরে ধীরে বাড়ির জন্য,গ্রামের জন্য মন খারাপের এক অনুভূতি ফটিকের সমস্ত মনকে অধিকার করে নেয়, সেইসঙ্গে তার অসহায় মন মার জন্য আকুল হয়ে ওঠে। স্কুলে পড়াশোনা অমনোযোগী ফটিককে প্রায় নিয়মিত শিক্ষকের মার খেতে হত। বই হারিয়ে ফেলার ঘটনায় তার সমস্যা আরও বেড়ে যায়। কারণ, স্কুলের পড়া তৈরি করে আসা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। তার মামাতো ভাইরা তার সঙ্গে সম্পর্কের কথা স্বীকার করতে লজ্জাবোধ করত,একদিন মামির কাছে বই হারানোর কথা বললে ফটিককে আবারও বকাবকি খেতে হয়। ফটিকের মনে হয় পরের পয়সা নষ্ট করা উচিৎ নয়।মায়ের প্রতি তার অভিমান বাড়ে।একদিন ফটিক স্কুল থেকে ফেরার পরে অসুস্থ অনুভব করে। তার জ্বর আসে।সে বুঝতে পারে যে এই অসুস্থতা তার মামির কাছে অসহ্য হয়ে উঠতে পারে,আর সে কারণেই পরদিন সকালে ফটিক নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। চারপাশে তার খোঁজ পাওয়া যায় না। বিশ্বম্ভরবাবু পুলিশে খবর দিতে বাধ্য হন। সন্ধ্যার সময় পুলিশের গাড়িতে ফটিককে ঘরে নিয়ে আসা হয়।তখন তার অসুস্থতা বেড়ে গিয়েছে।সমস্ত রাত্রি সে বিড়বিড় করে বকতে থাকে। মায়ের জন্য সে আকুল হয়ে ওঠে। বিশ্বম্ভরবাবু সে সময়ে ফটিকের পাশে থাকেন। ফটিকের মাকে খবর দেওয়া হয়। ফটিকের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। ডাক্তারবাবুও শঙ্কা প্রকাশ করেন। এরকম সময়ে ফটিকের মা আসেন। ফটিকের অসুস্থতায় তিনি আর্তনাদ করে ওঠেন। ফটিক কাউকে লক্ষ না করেই পাশ ফিরে মৃদুস্বরে মাকে উদ্দেশ করে বলে যে, তার ছুটি হয়েছে, সে বাড়ি যাচ্ছে।
ঘ)নামকরণ:
‘ছুটি' গল্পের নামকরণ তাৎপর্যকেন্দ্রিক।‘ছুটি' শব্দটি কাহিনির বিন্যাসে অসম্ভব তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গ্রামজীবনে সহজ-স্বচ্ছন্দ ফটিকের বিরুদ্ধে তার মার অভিযোগ ছিল পড়াশোনায় অমনোযোগি নিয়ে। আর সেজন্যই ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতায় নিজের কাছে, ভালো করে লেখাপড়া শেখানোর জন্য। প্রথমে ফটিক খুব আনন্দ হয়েছিল কলকাতা যাওয়ার জন্য। কিন্তু শহরজীবন,মামির ভালোবাসা না পাওয়া ইত্যাদি কারণে হাঁফিয়ে ওঠা ফটিক তার মায়ের কাছে ফিরে যেতে আকুল হয়ে উঠেছিল। তার ঘুড়ি ওড়ানোর নদীতীর,সাঁতার কাটার নদী,সমস্ত দুরন্ত সঙ্গীসাথিরা,অবাধ স্বাধীনতা যেন তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকত।প্রতিদিনের নাগরিক জীবন থেকে ছুটি চেয়েছিল ফটিক। আর তার মামা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, পুজোর ছুটিতেই সে তার প্রত্যাশিত অবকাশ পাবে। স্কুলে মাস্টারমশাইদের প্রহার ও লাঞ্ছনা,মামাবাড়িতে মামির ভর্ৎসনা ইত্যাদি থেকে মুক্তির জন্য ফটিক অসুস্থ শরীরে নিজের মতো করে ছুটির খোঁজ করেছিল বাড়ি থেকে পালিয়ে। কিন্তু পুলিশের গাড়ি তাকে ফিরিয়ে আনায় ছুটির সন্ধান তার পাওয়া হয়ে ওঠেনি। জ্বরের ঘোরে নৌকার খালাসিদের মতো জল মাপতে মাপতে ফটিক যেন তার ছুটির গন্তব্যের দূরত্বকে বুঝে নিতে চেয়েছে। তার অসুস্থতা তাকে যেন পৌঁছে দিতে চলেছে এক অনন্ত ছুটির দেশে। পুজোর ছুটির জন্য অপেক্ষা ছিল ফটিকের। অপেক্ষা ছিল বাড়ি যাওয়ার জন্য। জ্বরের ঘোরে মামার কাছে আবার সেই ছুটির খোঁজ করছিল সে। মা কাছে আসার পরে যেন জীবনের অনন্ত ছুটি নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে সে। সমস্ত আত্মগ্লানি আর রক্তক্ষরণ থেকে তাকে মুক্তি এনে দেবে এই ছুটি। এইভাবেই ‘ছুটি’ গল্পে ‘ছুটি’ নামকরণটি তাৎপর্যপূর্ণ স্বার্থক হয়ে উঠেছে।
ঙ) রচনাধর্মী বা বর্ণনাধর্মী প্রশ্নোত্তর। প্রশ্নমান-৫
১) নদীর ধারে বালকদলের খেলার দৃশ্যটি নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
উত্তর:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ছুটি' গল্পে নদীর ধারে বালকদলের খেলার দুটি দৃশ্য তৈরি হয়েছিল। ফটিক ছিল সেই দলের নেতা এবং দুটি ক্ষেত্রেই পরিকল্পনা ছিল তারই। দলের অন্য সদস্যরা সেই পরিকল্পনা অনুমোদন এবং কার্যকরী করেছিল মাত্র।
প্রথমত,নদীর ধারে পড়ে থাকা শালকাঠের গুঁড়িটি ফটিক পরিকল্পনা করে সেটিকে সকলে মিলে গড়িয়ে নিয়ে যাবে।কিন্তু ফটিকের ছোটোভাই মাখনলাল সেই গুঁড়ির ওপরে গিয়ে বসায় ছেলেদের গুড়িটি গড়াতে একটু অসুবিধা হলেও কয়েকজন এসে তাকে একটু ঠ্যালার চেষ্টা করে,কিন্তু তাতেও সে গুড়ি থেকে নামে না।ফটিক এসে ভাইকে সরতে বলে কিন্তু মাখনলাল নিজের অবস্থানে অনড় থাকে,বরং আসনটি যেন স্থায়ীভাবে দখল করে নেয়।
দ্বিতীয়ত,মাখনের মনোভাব দেখে ফটিকের মনে নতুন একটা পরিকল্পনা আসে।আগের থেকে আরও একটি ‘ভালো খেলা' হতে পারে,কারণ তাতে
আরেকটু বেশি মজা হবে।সে মাখনকে সুদ্ধ কাঠের গুঁড়িটি গড়িয়ে দিতে হবে। মাখন তার সমস্ত গাম্ভীর্য, গৌরব-সমেত মাটিতে গড়িয়ে পড়ে।খেলার শুরুতেই অন্যান্য বালকেরা অত্যন্ত আনন্দিত হলেও ফটিক বিপর্যয় হয়ে পড়ে।এদিকে মাখন মাটি থেকে উঠে দাদার প্রতি তীব্র রাগ প্রকাশ করে এবং তার নাকে-মুখে আঁচড় কেটে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে চলে যায়। বালকদের খেলাও ভেঙে যায়।
২)ফটিক চরিত্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
উত্তর:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ছুটি' গল্পে ফটিক কেন্দ্রীয় চরিত্র।তাকে কেন্দ্র করেই কাহিনির বিকাশ। কাহিনির শুরুতে বালকদের মধ্যে ফটিককে পাওয়া যায় নেতার ভূমিকায়। শালকাঠের গুঁড়ি গড়িয়ে খেলা কিংবা ছোটোভাই মাখন গুঁড়ির ওপরে বসলে সেই সুদ্ধ গড়িয়ে দেওয়া,এই সমস্ত পরিকল্পনাই ফটিক করে, বাকিরা শুধু তা অনুমোদন এবং কার্যকর করে। ফটিকের মা ফটিকের এই দুরন্তপনাকে উচ্ছৃঙ্খলতা' বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রাথমিকভাবে ফটিক তার মামার সঙ্গে কলকাতায় যাওয়ার বিষয়ে অতি উৎসাহী ছিল,কিন্তু সেখানকার বদ্ধজীবনে অতি দ্রুত সে তার আকর্ষণ হারায়। প্রকাণ্ড একটা ঘুড়ি নিয়ে ছুটে বেড়ানো গ্রামের সেই মাঠ, মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ানোর সেই নদীতীর, যখন-তখন ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটার ইচ্ছা, আর তার সঙ্গীসাথিদের নিয়ে স্বাধীনতার উদযাপন—এইসব পুরোনো স্মৃতি তার মনখারাপের জন্ম দেয়।
* ফটিককে 'নির্বোধ ও অমনোযোগী' হিসেবে ভাবা হলেও ফটিকের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধের যথেষ্ট প্রকাশ ঘটেছে। স্কুলে বই হারিয়ে ফেলার পরে যখন মামি তাকে তিরস্কার করেন, তখন পরের পয়সা নষ্ট করছে,এই অনুভবে ফটিকের মধ্যে তৈরি হয়েছে। বিবেকবোধ থেকেই অসুস্থ ফটিক মামির কাছে জ্বালাতন হতে চায় না বলে কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়।
* ফটিক মনের আনন্দে কলকাতায় মামার বাড়িতে এলেও তার মা তাকে বিদায় দিতে আপত্তি না করলেও কলকাতায় অবস্থানকালে মার সঙ্গে বিচ্ছেদে সে কাতর হয়ে পড়ে। অসুস্থ হওয়ার পরে মায়ের সেবাই ফটিকের কাছে একমাত্র আকাঙ্ক্ষিত মনে হয়। মার কাছে যাওয়ার জন্যই সে কাউকে না বলে মামার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
* শহরজীবনে একলা বিচ্ছিন্ন ফটিক তার মামার কাছে ছুটির সন্ধান করেছিল। কাহিনির শেষে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সে ছুটির দেশের সন্ধান পেয়েছে।
৩)'ছুটি' গল্পে মামাবাড়িতে গিয়ে ফটিকের যে দুরবস্থা হয়েছিল তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেররচিত ‘ছুটি' গল্পে ফটিককে তার মামা বিশ্বম্ভরবাবু যখন কলকাতায় তাঁর বাড়িতে নিয়ে যেতে চান,তখন ফটিক কলকাতা যাওয়ার আনন্দে রাজি হয়েছিল এবং কবে যাবে বলে মামাকে ব্যাস্থ করে তুলেছিল।কিন্তু কলকাতার মামার বাড়িতে ফটিক খুব কষ্টে ছিল, মামী ও তাকে আসতে দেখে অখুশি ছিল।কারণ নিজের তিনটি ছেলেকে নিয়ে তাঁর ঘর-সংসার সেখানে তেরো বছরের পাড়াগেঁয়ে ফটিককে তিনি মোটেই পছন্দ করছেন না। সে মামির মন পেতে- মামি তাকে কোনো কাজ করতে বললে তাকে খুশি করতে সে মনের আনন্দে বেশি কাজ করে ফেলত এবং তাতে মামি আরও বিরক্ত হতেন। শুধু তাই নয় মামি রেগে গিয়ে বলতেন পড়াশোনায় মন দিতে। স্কুলেও ফটিক ছিল সকলের চোখে বোকা এবং পড়ায় অমনোযোগী।মাস্টারমশাই ফটিককে মারধোর করতেন,তাতে তার মামাতো ভাইরা পর্যন্ত তার সঙ্গে কথা বলতো না। তারপর বই হারিয়ে যাওয়া তা মামি শুনে বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন,'আমি তোমাকে মাসের মধ্যে পাঁচবার করে বই কিনে দিতে পারিনে। তার জ্বর এলেও সে মনে করেছিল মামি এটাকে জ্বালাতন হিসেবে দেখবে। ঠিক এই কারণেই সে মামার বাড়ি ত্যাগ করে। কিন্তু পুলিশের সাহায্য নিয়ে যখন তাকে ফিরিয়ে আনা হয় তখন ফটিকের দুরবস্থা আরও বেড়ে যায়। অসুস্থ ফটিককে দেখে তার মামি পরের ছেলেকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে বলেন। এভাবেই মামার বাড়িতে দিনের পর দিন অপমান সহ্য করতে হয়েছিল ফটিককে,যেখান থেকে সে মুক্তি পেয়েছিল মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
৪) 'মা,এখন আমার ছুটি হয়েছে মা,এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।'-কে, কাকে উদ্দেশ করে কথাটি বলেছে ? ছুটির জন্য বক্তার এই আকুলতার কারণ কী ছিল? শেষপর্যন্ত বক্তা তার কাঙ্ক্ষিত ছুটি কীভাবেপেয়েছিল?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘ছুটি' গল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্র ফটিক তার মাকে উদ্দেশ করে বলেছে।
* ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু ফটিককে কলকাতায় পড়াশোনার জন্য নিয়ে গেলেও একদিকে মামার বাড়িতে মামির জ্বালা-যন্ত্রণা, অন্যদিকে শহরের বদ্ধ জীবন ফটিককে কখনোই পড়াশোনায় আকৃষ্ট করতে পারেনি। ফলে স্কুলে সে নির্বোধ এবং অমনোযোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়। মাস্টারমশাই তাকে পড়া না পারার জন্য মারতেন, এমনকি তার মামাতো ভাইরা পর্যন্ত তার সঙ্গ এড়িয়ে চলা পছন্দ করত। ঘরে এবং বাইরে জ্বালা যন্ত্রণার মধ্যে থাকতে থাকতে ফটিকের মার কথা মনে করতো এবং বাড়ি যাওয়ার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করতো। তার মামা বলেন, পুজোর ছুটির সময় সে বাড়ি যাবে।তখন থেকেই শুরু হয় ছুটির জন্য ফটিকের দিন গোনা।
* অসুস্থ হওয়ার পরে ফটিক নিজেই নিজের ছুটি করে নিতে চেয়েছিল,কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে। কিন্তু মামার উদ্যোগে পুলিশের গাড়ি তাকে ফিরিয়ে আনে। ছুটি ফটিক চেয়েছিল সে তা পায়নি, কিন্তু মৃত্যু তাকে সেই ছুটির সুযোগ করে দিয়েছে। ছুটিতে সে তার মার কাছে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু সফল হয়নি। সেই মাকে পাশে রেখেই ফটিক যাত্রা করেছে ছুটির দেশে।
৫)'এমন সময়ে সেই কাঁচাপাকা বাবুটি ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন'-কাঁচাপাকা বাবুটি কে ছিলেন ?সেই শব্দটি দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে ? তিনি কখন ঘরে ঢুকেছিলেন ?
উত্তর:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘ছুটি’ গল্পে ‘কাঁচাপাকা বাবুটি’ ছিলেন ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু।
* বিশ্বম্ভরবাবু যখন নৌকা থেকে নামেন তখন ফটিক তার আশেপাশেই দাঁড়িয়ে ছিল।এমন সময় তিনি ফটিকে চক্রবর্তীর বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে ফটিক তাকে এমনভাবে দিক্ নির্দেশ করেছিল তা কারও বোঝার সাধ্য ছিল না।
*ফটিকের ভাই মাখনলালকে বালকদল গুঁড়িসুদ্ধ গড়িয়ে দেওয়ার পরে সে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফিরে আসে এবং তার মার কাছে অভিযোগ করে যে ফটিক তাকে মেরেছে।তারপর ফটিকের মা বাড়িতে নিয়ে আসেন,কিন্তু ফটিক মাখনকে মারার কথা অস্বীকার করে। ফটিকের মা বুঝতে পারলেন ফটিক মিথ্যে কথা বলছে।কিন্তু ফটিক জোর সঙ্গে মারার কথা অস্বীকার করে এবং মাখনকে জিজ্ঞাসা করতে বলে। ক্ষুব্ধ হয়ে ফটিক মাখনকে একটা চড় মারে। ফটিকের মাও ছোট ছেলের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে তিনিও দু-তিনটি চড় ফটিককে মারে।ফলে ফটিক রেগে গিয়ে মাকে ঠেলে ফেলে দেয়। ফটিকের মা চিৎকার করে উঠে। এইরকম সময়ে তাদের ঘরে সেই 'কাঁচাপাকা বাবু' অর্থাৎ ফটিকের মামার আগমন ঘটে।
আরো পড়ুন:
একাদশ শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর click here
তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর click here
লালন শাহ ফকিরের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click here
ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click here
ছুটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click here
0 Comments