অদল বদল গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর।অদল বদল গল্পের বিষয়বস্তু।



অদল বদল গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর।অদল বদল গল্পের বিষয়বস্তু।




সূচিপত্র:

ক।কবি পরিচিত 

খ। উৎস

গ। বিষয়সংক্ষেপ

ঘ। নামকরণ

ঙ। সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।MCQ-১

চ) অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর।SAQ-১

ছ) ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর-৩

জ)বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্নমান-৫



ক)লেখক পরিচিতি:

পান্নালাল প্যাটেল ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে রাজস্থানের দুঙ্গারপুরে জন্মগ্রহণ করেন।পান্নালাল গুজরাতি ভাষার একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ছিলেন। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার শ্রেষ্ঠ সাহিত্যসম্মান জ্ঞানপীঠ লাভ করেন। তিনি ৭০-টিরও বেশি বই লিখেছেন। তবে তাঁর সবথেকে গুজরাতি গদ্য-সাহিত্যিকদের মধ্যে প্যাটেলই একমাত্র যিনি জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর অসামান্য সৃষ্টিগুলি বর্তমান প্রজন্মের কাছে তৎকালীন গুজরাতের গ্রামজীবনের স্পষ্ট ছবি তুলে ধরেছেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি রঞ্জিতরাম সুবর্ণচন্দ্রক পুরস্কার পান। তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ—মালেলা জিব, মানবি নি ভাবই, রুনদোথি রক্ষয়িলো জলন্ধর, অনে পদছায়া, মহাভারত্ন, প্রথম প্রণয়ঃ ভীম-হিরিম, মানবদেহে কামেদের ইত্যাদি। তিনি বহু ছোটোগল্পও লিখেছেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল'সুখ দুখান ফে সাথি,জিন্দাগিনা খেল,কোই দেশি কোই পরদেশি' ইত্যাদি।


খ)উৎস:

'জাতীয় বই ট্রাস্ট'-কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ থেকে এই ‘অদল বদল' গল্পটি নেওয়া হয়েছে।


গ)বিষয়সংক্ষেপ:

পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল' গল্পটিতে অমৃত ও ইসাব নামে আমরা দুই বন্ধুকে পাই। এই দুই বন্ধুর সব কিছুই একরকম। তাদের বাড়িও মুখোমুখি। তাদের মধ্যে পার্থক্য শুধু একটাই—অমৃতের রয়েছে মা,বাবা আর তিন ভাই, সেখানে ইসাব থাকে শুধু তার বাবার সঙ্গে। এমনকি হোলির দিনে তাদের দুজনের পোশাকও একরকম হয়। দুজনের মধ্যে খুব বন্ধুত্ব। ইসাবের জামা ছিঁড়ে যাওয়ায় সে নতুন জামা পেয়েছিল। কিন্তু অমৃতের নতুন জামা থাকা সত্ত্বেও সে ইসাবের মতোই জামা কেনার জেদ ধরে। অবশেষে অমৃত নতুন জামা পেয়েও যায়। এরপর নতুন জামা পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে অমৃত। নতুন জামাটা নোংরা হয়ে যায়, এটা সে কোনোভাবেই চায়নি। অমৃতের অনিচ্ছা সত্ত্বেও কালিয়া নামে একটি ছেলে তাকে কুস্তি লড়ার জন্য বলে কিন্তু অমৃত লড়তে রাজি না হলে তাকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দেয় সে। সেই দৃশ্য দেখে অমৃতর বন্ধু ইসাব রেগে গিয়ে কালিয়াকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়। এই ঘটনার পর যখন তারা বাড়ির পথে এগোয় তখন অমৃত লক্ষ করে ইসাবের নতুন জামাটা ছিঁড়ে গেছে। ইসাব জানত তার বাবা ছেঁড়া জামা দেখলে তার কপালে দুর্ভোগ আছে, কারণ তার বাবা অনেক কষ্টে সুদখোরের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে জামাটা তৈরি করে দিয়েছেন। ইসাবকে ভয় পেতে দেখে অমৃত ইসাবকে জামা অদল-বদলের বুদ্ধি দেয়। তারা নিজেদের জামা বদলে নেয়। ইসাবের ছেঁড়া জামা অমৃত পরে নেয়। কারণ অমৃত জানত, বাবা তাকে বকলেও তার মা তাকে বাঁচিয়ে দেবেন। কিন্তু ইসাবের মা নেই বলে বাবার কাছে সে মার খেলে কেউ তাকে বাঁচাতে আসবে না। কুস্তির ঘটনা আর জামা অদল-বদলের ঘটনা থেকে বোঝা যায়, তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব কত গভীর ছিল।এই জামা অদলবদলের ঘটনা ইসাবের বাবা দেখলে তাঁর মন আনন্দে ভরে যায়। তিনি অমৃতের মা ও পাড়াপড়শির কাছে এই জামা অদলবদলের ঘটনা বলেন। ইসাব আর অমৃতের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার গল্প শুনে সকলে খুশি হয়। গ্রামের প্রধান এই ঘটনা শুনে ঘোষণা করেন যে, সেদিন থেকেই অমৃত আর ইসাবকে ‘অদল’ এবং বদল' বলেই সবাই ডাকবে। আর এই 'অদল বদল' ডাকে তারা দুজনও  খুশিই হয়।


ঘ)নামকরণ:

 নামকরণ সাধারণত বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক,চরিত্রকেন্দ্রিক, আবার কখনও বা ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে থাকে। পান্নালাল প্যাটেলের রচিত 'অদল বদল' গল্পটির নামকরণ করা হয়েছে মূলত গল্পের বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে। এই গল্পে আমরা দুই বন্ধুর কাহিনি পাই যাদের সব কিছুই প্রায় একরকম ছিল। এমনকি তারা জামাও পরত একরকম। একজনের বিপদে অন্যজন সবসময় এগিয়ে আসত। ইসাব আর অমৃত দুজনেই হোলি উপলক্ষ্যে পেয়েছিল নতুন জামা আর সেই জামা যাতে না ছেঁড়ে সে ব্যাপারে দুজনেই সচেতন ছিল। কারণ তারা জানত, জামা ছিঁড়লে আর সেটা বাড়ির লোকেরা জানতে পেলে তাদের কপালে খুব দুঃখ আছে। হোলির দিন বিকেলবেলায় কালিয়া অমৃতকে কুস্তি লড়ার নাম করে মাটিতে ফেলে দেয়, সেই ঘটনা দেখে ইসাবের মেজাজ চড়ে যায়।সে অমৃতের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে এবং তাকে হারিয়ে দেয়। কিন্তু কুস্তি লড়তে গিয়ে তার নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। ইসাব জানত, জামা ছেঁড়ার কথা তার বাবা জানতে পারলে তাকে বাড়ি ফিরে মার খেতে হবে। অমৃত ইসাবকে তার বাবার মারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নিজেদের জামা অদলবদল করার পরামর্শ দেয়। তাদের এই জামা অদলবদলের কাহিনি সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি গ্রামপ্রধানও তাদের নাম ‘অদল’ এবং ‘বদল' বলে ঘোষণা করেন। গ্রামবাসীদের তাদের সেই নামে ডাকতেও বলেন।অমৃত ও ইসাবের এই জামা অদল-বদল আর তাদের নতুন নামকরণ অদল আর বদল–এইসব বিষয়কে কেন্দ্র করেই গল্পের কাহিনি গড়ে হয়েছে।তাই গল্পটির নামকরণ সার্থক হয়েছে।


ঙ। সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।MCQ-১

১)অদল বদল' গল্পের লেখক পান্নালাল প্যাটেল যে ভাষার বিখ্যাত-

ক) হিন্দি

খ) গুজরাতি 

গ) কন্নড়

ঘ)মারাঠি 

উত্তর (খ) গুজরাতি


২) ইসাব ও অমৃত দুজনের বাবা পেশায় ছিলেন-

ক) চাষি 

খ) শিক্ষক 

গ জেলে 

ঘ) উকিল

উত্তর (ক) চাষি


৩)কোন গাছের নীচে দাঁড়িয়ে ছেলের ধুলো ছোড়াছুড়ি খেলছিল ?

ক) আম 

খ) নিম 

গ)পেয়ারা 

ঘ) বট

উত্তর(খ) নিম


৪) হোলির দিন দুই বন্ধু বেরিয়ে বসেছিল- ফুটপাথে

ক) খাটিয়ায় 

খ) মাচার ওপর 

গ) বারান্দায় 

ঘ) শান-বাঁধানো ফুটপথে

উত্তর:(ঘ) শান বাঁধানো ফুটপথে


৫) হোলির দিন দলের ছেলেরা অমৃত আর ইসাবকে একরকম পোশাকে দেখে কী করতে বলেছিল?

ক) ছবি আঁকতে

খ) হোলি খেলতে

গ) কুস্তি লড়তে

 ঘ) ফুটবল খেলতে

উত্তর(গ) কুস্তি লড়তে 


৬) ইসাব আর অমৃতদের বাড়ি-

ক) মুখোমুখি

খ) পাশাপাশি 

গ) রাস্তার এপার-ওপার 

ঘ) এপাড়া-ওপাড়া

উত্তর:(ক) মুখোমুখি 


 ৭) হোলির দিন অমৃত ও ইসাবের কাছে নতুন কী জিনিস ছিল?

ক) নতুন জামা

খ)নতুন জুতো

গ) নতুন ব্যাগ

ঘ) নতুন পেন

উত্তর:(ক) নতুন জামা 


৮)ইসাব কার সঙ্গে থাকত?

 ক) দাদা 

খ) মা 

গ) বাবা 

ঘ) মা-বাবা

উত্তর:(গ) বাবা

৯)অমৃত তার মা-বাবাকে কী কিনে দেওয়ার কথা বলেছিল?

ক) ব্যাগ

খ) রং

ঘ) জামা

ঘ) জুতো 

উত্তর:(ঘ) জামা

১০)অমৃতের বাবাকে জামা কিনে দেওয়ার জন্য কে রাজি করিয়েছিল?

ক) অমৃতের মা

খ) ইসাবের বাবা

গ) অমৃতের ভাই

ঘ) অমৃতের দাদা

উত্তর:(ক) অমৃতের মা


১১)ইসাবের বাবা জামা সেলাইয়ের জন্য টাকা ধার নিয়েছিলেন-

ক) তাঁর দাদার থেকে

খ)অমৃতের বাবার থেকে 

গ) এক সুদখোরের থেকে

ঘ) এক সুদখোরের থেকে 

উত্তর:(ঘ) এক সুদখোরের থেকে


 ১২)অমৃত সত্যি তার বাবা-মাকে খুব জ্বালিয়েছিল-

ক) নতুন বল কিনে দেওয়ার জন্য 

খ) নতুন বই কিনে দেওয়ার জন্য 

গ) মেলা দেখতে নিয়ে যাওয়ার জন্য 

ঘ) ইসাবের মতো জামা কিনে দেওয়ার জন্য

উত্তর:(ঘ) এসবের মত জামা কিনে দেওয়ার জন্য


চ) অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর।SAQ-১

২.১) 'বলতে গেলে ছেলে দুটোর সবই একরকম, তফাত শুধু এই যে'-তফাতটা কী?

উত্তর:পান্নালাল প্যাটেলের রচিত ‘অদল বদল' গল্পে,  ইসাব আর অমৃত দুই বন্ধুর তফাতটা শুধু  অমৃতের বাবা-মা আর তিন ভাই ছিল, ইসাবের শুধু বাবা ছিল।


২.২) 'তোরা দুজনে কুস্তি কর তো,—এ কথা বলার কারণ কী?

উত্তর:পান্নালাল প্যাটেলএর রচিত 'অদল বদল' গল্পে' অমৃত ও ইসাবের একইরকম জামা দেখে একটি ছেলে তারা শক্তির দিক থেকেও এক কিনা তা দেখতে তাদের কুস্তি করতে বলে।


২.৩)তাহলে মা আমাকে ঠ্যাঙ্গাবে।-মা কেন ঠ্যাঙাবে বলে অমৃত মনে করেছিল?

উত্তর:পান্নালাল প্যাটেলের রচিত 'অদল বদল' গল্পে টাকাপয়সার অভাবের সত্ত্বেও অমৃতের জেদা-জেদিতে জামাটি কেনা হয়েছিল,তাই সেটি ছিঁড়লে বা ময়লা করলে তার মা তাকে মারবে সেটাই স্বাভাবিক মনে হয়েছে।


২.৪)'ওর মা সাবধান করে দিয়েছিলেন'-কার মা, কী থেকে সাবধান করে দিয়েছিলেন ?

উত্তর:পান্নালাল প্যাটেলের রচিত'অদল বদল'গল্পে অমৃতের জেদের কারণে তার মা তাকে নতুন জামা কিনে দিলেও সেটি ছিঁড়লে বা ময়লা করলে তার ভাগ্যে যে কষ্ট আছে সে বিষয়ে সাবধান করেছিলেন।


২.৫)‘অমৃত ফতোয়া জারি করে দিল,-অমৃত কী ফতোয়া জারি করেছিল?

উত্তর:পান্নালাল প্যাটেলের রচিত 'অদল বদল' গল্পে,নতুন জামার জন্য বাবা-মাকে রাজি করাতে না পেরে অমৃত ফতোয়া জারি করেছিল যে ঠিক ইসাবের মতো জামা না পেলে সে আর স্কুলে যাবে না।


২.৬ ) মা ওকে অনেক বুঝিয়েছিল,- মা অমৃতকে কী বুঝিয়েছিলেন?

উত্তর: পান্নালাল প্যাটেলের রচিত 'অদল- বদল' গল্পে,অমৃত ইসাবের মতো জামা চাওয়ায় মা তাকে বুঝিয়েছিলেন যে, ইসাব খেতে কাজ করায় তার জামা ছিঁড়ে গেছে; কিন্তু অমৃতের জামা প্রায় নতুনই আছে।


২.৭)'আমি কুস্তি লড়তে চাই না,-এ কথা বলার কারণ কী ছিল?

উত্তর: পান্নালাল প্যাটেলের রচিত 'আদল- বদল' গল্পে,কুস্তি লড়লে অমৃতের নতুন জামা নষ্ট হয়ে যেত। তা ছাড়া ইসাব ছিল তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই সে কুস্তি লড়তে চায়নি। 


২.৮)'ছেলের দল আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল,- আনন্দের কী কারণ ঘটেছিল?

উত্তর: পান্নালাল প্যাটেলের রচিত 'অদল- বদল' গল্পে, অমৃত ও ইসব নিজেদের মধ্যে কুস্তি লড়তে রাজি না হলে কালিয়া অমৃতকে ছুড়ে ফেলে দেয়। এতে কালিয়ার জিত হয়েছে ভেবে ছেলেদের আনন্দ হয়।


২.৯) ‘কুস্তি শুরু হয়ে গেল।'- কুস্তির ফলাফল কী হয়েছিল?

উত্তর: পান্নালাল প্যাটেলের রচিত 'অদল- বদল' গল্পে, কালিয়া অমৃতকে আছাড় মারায়, ইসাব রেগে গিয়ে কালিয়াকে কুস্তির আহ্বান জানায়। কুস্তি শুরু হতেই ইসাব কালিয়াকে ল্যাং মেরে মাটিতে ফেলে দেয়।


২.১০)‘ওরা ভয়ে কাঠ হয়ে গেল। -ওরা কেন ভয় পেল? 

উত্তর: পান্নালাল প্যাটেলের রচিত 'অদল- বদল' গল্পে,কালিয়ার সাথে কুস্তি লড়তে গিয়ে ইসাবের নতুন জামার পকেট ছিঁড়ে গিয়েছিল। জামা ছেঁড়ার জন্য বাড়িতে বকুনি খাওয়ার ভয়ে অমৃত ও ইসাবের এই অবস্থা হয়।


২.১১)'হঠাৎ অমৃতের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল,-বুদ্ধিটি কী ছিল?

উত্তর: পান্নালাল প্যাটেলের রচিত 'অদল- বদল' গল্পে,ইসাবের জামা ছেঁড়ার ব্যাপারটা যাতে কেউ বুঝতে না পারে সেজন্য নিজের অক্ষত জামাটা ইসাবের সঙ্গে বদলে নেওয়ার বুদ্ধি খেলে যায় অমৃতের মাথায়।


ছ) ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর-৩

১) 'বলতে গেলে ছেলে দুটোর সবই একরকম,-ছেলে দুটো কোন কোন দিক থেকে একই রকম তা বর্ণনা করো।

উত্তর:পান্নালাল প্যাটেলের রচিত 'অদল বদল' গল্পের দুই কেন্দ্রীয় চরিত্র অমৃত আর ইসাব। বছর দশেকের এই দুই বালকের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল।দুজনের বাবার জমিও ছিল প্রায় সমান সমান। এদের পড়াশোনা একই স্কুলে,বেশভূষাও প্রায় একইরকম। উভয় পরিবারেরই লড়াই ছিল দারিদ্র্যর সঙ্গে। তাই বিপদে-আপদে তাদের মহাজনদের কাছে হাত পাততে হত। মোড়ের মাথায় তাদের বাড়ি দুটোও ছিল মুখোমুখি।


২)'ইসাবের বাবা ছেঁড়া শার্ট দেখামাত্র ওর চামড়া তুলে নেবে,-ভাবনাটি কাদের?এমন ভাবনার কারণ আলোচনা করো।

উত্তর:পান্নালাল প্যাটেলের রচিত অদল বদল গল্পে, দুই কেন্দ্রীয় চরিত্র অমৃত ও ইসাব দুই বন্ধু। অমৃত আর ইসাবের একইরকমের জামা দেখে হিংসায় পাড়ার ছেলেরা দুজনের শক্তি পরীক্ষার জন্য কুস্তি লড়তে বলে। অমৃত রাজি না হওয়ায় কালিয়া অমৃতকে মারে। প্রতিবাদে ইসাব কালিয়ার সাথে মারপিটে জড়িয়ে পড়ে নতুন জামা ছিঁড়ে ফেলে। ইসাবের বাবা টাকা ধার করে ছেলেকে নতুন জামা তৈরি করে দিয়েছিলেন। জামা ছেঁড়ার অপরাধে ইসাবকে বাবা তাকে মারতে পারেন এমন আশঙ্কা থেকেই এই উক্তি।


৩)'কিন্তু আমাকে বাঁচানোর জন্য তো আমার মা আছে। -কার উক্তি। উক্তিটির মধ্য দিয়ে তার চরিত্রের কোন দিকটি প্রকাশিত।

উত্তর:পান্নালাল প্যাটেল রচিত 'অদল বদল' গল্পে অমৃতের মুখে শোনা যায়।

*উক্তিটি থেকে অমৃত তার মায়ের প্রতি অগাধ বিশ্বাস,ভালোবাসা প্রকাশ পায়।সে জানে,নতুন জামা ছিঁড়ে ফেলা তাদের মতো দরিদ্র পরিবারে যতই অপরাধের হোক না কেন, মায়ের কাছে ছেলের মূল্য অনেক বেশি। বাবার মারের থেকে বাঁচানোর জন্য মা সবসময়েই তার পাশে থাকেন। কিন্তু মাহারা ইসাবের সেই উপায় ছিল না। তাই তাকে বাঁচাতে চেয়েছিল অমৃত।


৪)‘পাড়া-পড়শি মায়ের দল পাঠানের গল্প শোনার জন্য ঘিরে দাঁড়াল।-গল্পটি কী ছিল?

উত্তর: পান্নালাল প্যাটেলের রচিত 'অদল বদল' গল্পে, দুই বন্ধু অমৃত ও ইসাব হোলির দিনে একই রকম নতুন জামা পরে বেরোয়। হিংসায় পাড়ার ছেলেরা  তাদের কুস্তি লড়ার প্রস্তাব দেয়। তারা তাতে রাজি না হলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ফলে ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। নতুন জামা ছেঁড়ার জন্য ইসাবকে বাবার হাতে মার খেতে হবে, তাকে বাঁচানোর জন্য তার মা নেই। এ কথা ভেবে অমৃত তার ভালো জামাটি ইসাবকে দিয়ে দেয়।


৫)'অমৃতের জবাব আমাকে বদলে দিয়েছে।-অমৃতের কোন্ জবাবের কথা বলা হয়েছে?সেই জবাব বক্তাকে বদলে দেওয়ার কারণ কী?

উত্তর:পান্নালাল প্যাটেলের রচিত ‘অদল বদল' গল্পে ছোট্ট অমৃতের জামা ছিঁড়ে যাওয়ার জন্য বন্ধু ইসাবকে, বাবার হাতের মার খাওয়া থেকে বাঁচাতে অমৃতের নিজের জামা দেওয়া তারই প্রমাণ। অমৃত কীভাবে বাবার হাত থেকে রেহাই পাবে, ইসাব সে কথা জানতে চাইলে অমৃত জানায় তাকে বাঁচানোর জন্য তার মা আছেন কিন্তু ইসাবের তো মা নেই।

 *এ কথা শুনে ইসাবের বাবা উপলব্ধি করেন যে, মাহারা সন্তানের ক্ষেত্রে বাবাকে বাবা ও মা উভয়ের ভূমিকাই নিতে হয়।


৬)'বরঞ্চ অদল-বদল বলাতে তাদের ভালোই লাগল।-তাদের 'অদল-বদল' নামকরণ কীভাবে হল? এই নাম তাদের ভালো লাগার কারণ কী?

উত্তর: পান্নালাল প্যাটেলের রচিত 'অদল বদল' গল্পে অমৃত ইসাবকে বাবার মার খাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে,নিজের জামাটি তাকে দেয়। পরিবর্তে তাকে ছেঁড়া জামা অমৃত নিজের গায়ে পড়ে নেয়। এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ইসাবের বাবা। এ কথা গল্পাকারে গ্রামের মোড়লের কানে পৌঁছায়। মোড়ল সবদিক বিবেচনা করে অমৃতকে 'অদল' ও ইসাবকে 'বদল' নাম দেন।

* জামাবদলের জন্য বন্ধুরা অমৃত-ইসাবকে ক্ষেপিয়ে বেড়াত 'অদল-বদল' বলে। সেই নাম এখন বাবা-মা ও গ্রামের মোড়লের কাছেও বৈধতা পাওয়ায় তাদের ভালো লাগে।


৭)‘এই আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠল'-কোন্ আওয়াজের কথা বলা হয়েছে?এই আওয়াজে মুখরিত হয়ে ওঠার কারণ কী?

উত্তর:পান্নালাল প্যাটেলের রচিত'অদল বদল' গল্পে দুই বন্ধু অমৃত ও ইসাবের জামাবদলের ঘটনায় ছেলেরা তাদের 'অদল-বদল' বলে ডাকতে শুরু করে। সেই ডাক গ্রামপ্রধানের কাছে বৈধতা পেলে সারা গ্রামে সে নাম অদল-বদল মুখরিত হয়ে ওঠে।

* অমৃত ও ইসাব জামাবদলের মাধ্যমে শুধুমাত্র ইসাবের বাবার নয়,সমগ্র সমাজের মানসিকতায় পরিবর্তন এনেছিল, ঘুণ-ধরা সমাজে এনেছিল প্রাণের জোয়ার। তাই 'অদল-বদল' শব্দে গ্রামের আকাশ-বাতাসকে মুখরিত করে তুলেছিল।


জ)বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্নমান-৫

১) 'ছেলের দল আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল,-ছেলের দলের আনন্দের কারণ ব্যাখ্যা করো। এই আনন্দ স্থায়ী হয়েছিল কি?

উত্তর:পান্নালাল প্যাটেলের রচিত 'অদল বদল' গল্পে হোলির দিন দুই বন্ধু অমৃত আর ইসাব একই রঙের, একই মাপের নতুন জামা পরে বেরোয়। গ্রামের দুষ্টু ছেলেরা মজা করে তাদের শারীরিক শক্তি একই রকম কিনা জানার জন্য অমৃতকে কুস্তি লড়াতে বলে।একদিকে বন্ধুত্ব আর অন্যদিকে জামা ময়লা না হওয়ার জন্য অমৃত কুস্তি লড়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়।কিন্তু ছেলের দল তাকে জোর করে মাঠে নিয়ে যায়।সেখানে কালিয়া তাকে জোর করে মাটিতে ফেলে দেয়। অমৃত যে কালিয়ার কাছে হেরে গেছে এই দেখে ছেলের দল আনন্দ করতে থাকে।

ছেলের দলের এই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কারণ প্রিয় বন্ধু অমৃতের দুর্দশা দেখে ইসাব চুপ থাকতে পারেনি। সে কালিয়াকে ল্যাং মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। কালিয়া কাঁদতে থাকে। মুহুর্তের মধ্যে ছেলের দল-সহ ইসাব, অমৃতও সে স্থান ত্যাগ করে কালিয়ার মা-বাবার ভয়ে। এভাবেই ব্যাপারটি ঘোরালো হয়ে ওঠে।


২)'ও আমাকে শিখিয়েছে, খাঁটি জিনিস কারে বলে।-'খাঁটি জিনিস' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?তা কে, কাকে,কীভাবে শিখিয়েছে?

উত্তর:পান্নালাল প্যাটেলের রচিত 'অদল বদল' গল্পে  বক্তা হলেন ইসাবের বাবা পাঠান।এক্ষেত্রে যে দুটি খাঁটি জিনিসের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে একটি হল মায়ের স্নেহ ও ভালোবাসা, যা পিতার কাছে সর্বদা মেলে না। আর অন্যটি হল নিখাদ বন্ধুত্ব যেটি  দুই বন্ধু অমৃত ও ইসাবের মধ্যে দেখা গিয়েছিল। আলোচ্য গল্পে দশ বছরের বালক অমৃত তার বন্ধু ইসাবের বাবা পাঠানকে এ কথা বুঝিয়েছিল যে খাঁটি জিনিস বলতে কী বোঝায়। অমৃত ও ইসাবের বন্ধুত্বের শিকড় যে কত গভীর তা বোঝা যায়। যখন অমৃত কালিয়ার হাতে মার খায় তখন ইসাব ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে এবং অমৃতকে বাঁচাতে গিয়ে মারপিটে জড়িয়ে পড়ে সে তার জামা ছিঁড়ে ফেলে। অমৃত ইসাবকে বাঁচাতে তার ভালো জামাটা ইসাবকে দিয়ে দেয়। ইসাব প্রশ্ন তোলে অমৃতকেও তোকে মার খেতে হতে পারে। অমৃত তখন জানায় তাকে রক্ষার জন্য তার মা আছেন কিন্তু ইসাবের তো মা নেই। আড়াল থেকে শোনা অমৃতের কথাগুলো ইসাবের বাবাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। তিনি বুঝেছিলেন মাহারা সন্তানের পিতাকে শুধু পিতা নয় মা'ও হয়ে উঠতে হবে। এ ছাড়া দুই বন্ধুর বন্ধুত্বের গভীরতা ইসাবের বাবার মনের বদল ঘটিয়েছিল।


৩)' গ্রামপ্রধানের অমৃত ও ইসাবের নাম 'অদল বদল' ঘোষণা করার পেছনে যে কারণ ছিল তা বর্ণনা করো।

উত্তর: পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল' গল্পে কালিয়া যখন অমৃতকে কুস্তিতে হারিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় তখন ইসাব বন্ধুর অপমানের প্রতিবাদ জানাতে কালিয়ার সঙ্গে আবার কুস্তি লড়ে। কুস্তিতে ইসাব কালিয়াকে হারিয়েও দেয়। আর এই কুস্তি লড়তে গিয়ে ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। বাবার মারের হাত থেকে ইসাবকে বাঁচাতে অমৃত জামা

অদল-বদলের বুদ্ধি দেয়।সে নিজের জামা ইসাবকে দিয়ে ইসাবের জামা নিজে পড়ে নেয়। তাদের এই জামা অদলবদলের দৃশ্য গ্রামের একটি ছেলে ছাড়া ইসাবের বাবাও দেখেন। এই দৃশ্য দেখে তিনি দুই বন্ধুর পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হন। ইসাবের বাবা অমৃতের বাড়ি এসে এই কাহিনি অমৃতের মাকে বলেন এবং পাড়াপড়শিরাও সেই কাহিনি শুনে মুগ্ধ হয়।এমনকি চারিদিকে ছেলেরা তাদের ‘অদল বদল’ বলেই ডাকতে শুরু করে।এই জামা অদল-বদলের কাহিনি গ্রামপ্রধানের কানে পৌঁছোয় এবং তাঁরও গল্পটা পছন্দ হয়। তখন তিনি ঘোষণা করেন, অমৃতকে অদল আর ইসাবকে বদল বলে ডাকার কথা। আর এরপর থেকে সারা গ্রামে তাদের এই ‘অদল বদল' নামটি প্রচলিত হয়ে যায়।


৪)'আজ থেকে আপনার ছেলে আমার'-বক্তা কে? কাকে কেন এ কথা বলেছেন?

উত্তর: পান্নালাল প্যাটেলের রচিত 'অদল বদল' গল্পে বক্তা হলেন- ইসাবের বাবা হাসান পাঠান।

*হোলির দিন কালিয়া নামের একটি ছেলে অমৃতকে জোর করে কুস্তি লড়তে বাধ্য করে এবং অমৃতকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠে। এতে ইসাব রেগে যায়। সে কালিয়াকে লড়তে ডাকে, আর তাকে হারিয়েও দেয়।কিন্তু বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। কিন্তু এর জন্য বাবার কাছে মার খেতে হবে ভেবে ইসাব ভয় পেলে,অমৃত তার জামাটা ইসাবের সাথে জামা অদল-বদলের কথা বলে।এতে ইসাব আপত্তি জানায়,তখনই ইসাবকে সে জানায়,অমৃতের বাবা তাকে মারতে এলেও বাঁচানোর জন্য অমৃতের মা আছে। ইসাবের বাবা আড়াল থেকে ঘটনাটি দেখেছিলেন।তাই বন্ধুরা ইসাবদের জামা অদল-বদলের কথা ফাঁস করে দিতে গেলে তিনি তাদের দুজনকে নিজের কাছে ডেকে নেন এবং দশ বছরের অমৃতকে জড়িয়ে ধরে প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেন। এত ছোটোছেলের মধ্যে যে অসামান্য বন্ধুত্ব প্রকাশ ইসাবের বাবা লক্ষ করেছিলেন তাই তাঁকে মুগ্ধ করেছিল।






Post a Comment

0 Comments