ক। কবি পরিচিতি
খ) উৎস
গ। সারসংক্ষেপ
ঘ। নামকরন
ঙ। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (TYPE-1) প্রশ্নমান-২
চ) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(TYPE-2) প্রশ্নমান-৩
ছ) রচনাধর্মী বা বর্ণনাধর্মী প্রশ্নোত্তর। প্রশ্নমান-৫
ক) কবি পরিচিতি:
আনুমানিক বিদ্যাপতি পঞ্চদশ শতকে দ্বারভাঙ্গা জেলার বিসফী গ্রামের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁকে মৈথিলি কবি বলা হয়।
সারাবাংলাতে তাঁর পদের প্রচলিত ভাষা ব্রজবুলি। শোনা যায়,মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য নাকি প্রতিদিন তাঁর রচিত পদ গাইতে ভালবাসতে। তিনি অবাঙালি হয়েও বাঙালিরা তাঁর পদের ভাষা ব্রজবুলিকে সহজে বুঝতে পারতেন। বিদ্যাপতিকে বাঙালিরা হৃদয়ে আসন করে নিয়েছে।তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল- কীর্তিলতা,পুরুষ পরীক্ষা, গঙ্গাবাক্যবলি, বিভাগ,দানবাক্যবলি,পুরুষপরীক্ষা, প্রভৃতি। তিনি প্রায় ৮০০ পথ রচনা করেন। বিদ্যাপতি রাধা কৃষ্ণের প্রেমলীলা থেকে শুরু করে রাধার বয়ঃসন্ধি অভিসার,প্রেমবৈচিত্র্য,আক্ষেপানুরাগ, বিরহ ও ভাবসম্মেলনের পথগুলি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কবি বিদ্যাপতি 'মৈথিল কোকিল' ও 'অভিনব জয়দেব'- নামে খ্যাত।কবি একধারে শিক্ষক,কাহিনী কার, ঐতিহাসিক, এবং আইনের গ্রন্থের লেখক ছিলেন।
খ)উৎস:
'বৈষ্ণব পদাবলী' -সংকলনে পাঠ্য পদ বা কবিতায় অনুসরণ করা হয়েছে।
গ) সারসংক্ষেপ:
ভাব সম্মিলন পদে শ্রী রাধিকা তাঁর সখীকে নিজের সীমাহীন আনন্দের কথা বলেছেন। সেই আনন্দের কারণ চিরকালের জন্য শ্রীকৃষ্ণকে তিনি তাঁর হৃদয়-মন্দিরে উপলব্ধি করেছেন। চাঁদের আলো তাঁকে যত কষ্ট দিয়েছে, প্রিয়তমের মুখদর্শনে তিনি ততটাই সুখ পেয়েছেন। সেই সুখানুভূতি থেকে রাধা বলেছেন, যদি কেউ আঁচল ভরে তাঁকে মহামূল্যবান রত্ন দেয়, তবু তাঁর প্রিয়তমকে তিনি দূরদেশে পাঠাবেন না। কারণ তাঁর প্রিয় তাঁর কাছে শীতের ওড়না, গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষার ছাতা, সমুদ্রের নৌকা। এই রাধিকাকে উদ্দেশ করে ভণিতায় বিদ্যাপতি বলেছেন, যে সুজন বা সৌভাগ্যবতী হয় তার দুঃখ চিরকালের নয়, বরং স্বল্পকালের।
ঘ)নামকরণ:
বিদ্যাপতির পঠিত পদটির নামকরণ হয়েছে বৈয়ব পদাবলীর রসপর্যায়কে ভিত্তি করে। রাধাকৃষ্ণের লীলা পর্যায়ের এই পদটি ভাব সম্মিলন পর্যায়ের অন্তর্গত।এখানে রাধার মধ্যে ভাব সম্মিলন পর্যায়ের সমস্ত বিশেষত্ব লক্ষ করা গিয়েছে। এই অর্থে বলতে গেলে নামকরণ হয়েছে বিষয়ভিত্তিক। নিজের হৃদয়-মন্দিরে কৃষ্ণকে উপলব্ধি করে রাধার আনন্দ সীমাহীন হয়ে উঠেছে। চাঁদের আলোর সৌন্দর্যে কৃষ্ণকে খুঁজতে গিয়ে তিনি যেভাবে আশাহত হয়েছিলেন, সেখান থেকে তাঁকে মুক্তি দিয়েছে প্রিয়তমের মুখসৌন্দর্যের দর্শন। উচ্ছ্বসিত রাধা বলেছেন যে, কোনো রত্নসামগ্রীর বিনিময়ে তিনি তাঁর প্রিয়তমকে আর দূরদেশে পাঠাবেন না। কারণ, প্রিয়তম তাঁর একমাত্র আশ্রয় এবং সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যে একমাত্র অবলম্বন । ভাবময় জগতে কৃষ্ণের সঙ্গে মিলনে রাধার মধ্যে এই যে উচ্ছ্বাসের প্রকাশ ঘটেছে, তা বিদ্যাপতির পঠিত পদটিকে ভাব সম্মিলন পর্যায়ের এক অসামান্য সৃষ্টি হিসেবে গড়ে তুলেছে এবং সেই পর্যায়ের অন্তর্গত হিসেবেই সংকলন গ্রন্থে পদটির নামকরণ করা হয়েছে ভাব সম্মিলন।
ঙ। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (TYPE-1) প্রশ্নমান-২
১)'কি কহব রে সখি আনন্দ ওর।'-কে মন্তব্যটিকরেছেন? 'ওর' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: বিদ্যাপতি রচিত 'ভাব সম্মিলন' পদে শ্রীরাধা উপরিউক্ত মন্তব্যটি করেছেন।
* 'ওর' শব্দের অর্থ সীমা। অর্থাৎ রাধা চিরদিনের জন্য শ্রীকৃষ্ণকে তাঁর মনের মন্দিরে উপলব্ধি করেছেন এবং সেই কারণে বলেছেন যে, তাঁর আনন্দের কোন সীমা নেই।
২)'চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর।'- মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বিরহ পর্যায়ে রাধাকে বৃন্দাবনে রেখে কৃষ্ণ মথুরা গমন করেন।সেই বিচ্ছেদ-যন্ত্রণায় রাধা নিজের মনের মধ্যে কৃষ্ণের সঙ্গে মিলিত হন। শ্রীরাধার মনে হয় কৃষ্ণের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক চিরকালের।আলোচ্য অংশে রাধার সেই উচ্ছ্বসিত আবেগের প্রকাশ ঘটেছে।
৩)' পাপ সুধাকর যত দুখ দেল।' -বক্তা কীভাবে দুঃখ পেয়েছিলেন ?
উত্তর: ‘মাথুর’ পর্যায়ে কৃষ্ণ বিচ্ছেদের যন্ত্রণায় রাধা সুধাকর অর্থাৎ চাঁদের আলোর মধ্যে রাধা কৃষ্ণের মুখের সৌন্দর্যকে খোঁজার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার সন্ধান পায়নি। চাঁদের আলো শুধু তার কষ্টকে বাড়িয়ে দিয়েছিল।
৪)'আঁচর ভরিয়া যদি মহানিধি পাই।'- মন্তব্যটির প্রসঙ্গ আলোচনা করো।
উত্তর :বিদ্যাপতির 'ভাবসম্মিলন' পদে রাধা কল্পনার জগতে কৃষ্ণের সঙ্গে পুনর্মিলিত হয়েছেন এবং তাঁর মধ্যে অসীম উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেছেন আঁচল ভরে যদি তিনি মূল্যবান রত্নসামগ্রী পান, তবুও তাঁর প্রিয়তমকে তিনি দূরদেশে পাঠাবেন না।
৫) "শীতের ওড়নী পিয়া গীরিষির বা।'-কার সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে?মন্তব্যটির অর্থ কী?
উত্তর :বিদ্যাপতি রচিত 'ভাব সম্মিলন' পদে শ্রীরাধা কৃষ্ণ সম্পর্কে উপরিউক্ত মন্তব্যটি করেছেন।রাধা কৃষ্ণকে তাঁর সর্বস্ব এবং একমাত্র অবলম্বন বলে মনে করেছেন। সে কারণে কৃষ্ণকে তিনি বলেছেন, শীতের ওড়না, গ্রীষ্মের বাতাস।
৬)'উপয়ে বিদ্যাপতি'-ভণিতায় বিদ্যাপতি কী বলেছিলেন?
উত্তর:বিদ্যাপতি রচিত 'ভাব সম্মিলন'পদে ভণিতায় বিদ্যাপতি ‘বরনারি' অর্থাৎ রাধাকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন যে, মানুষের দুঃখের দিন সাময়িক অর্থাৎ খুবই অল্প হয়।
৭)নিজের জীবনে কৃষ্ণের গুরুত্বকে রাধা কীভাবে স্বীকার করেছেন?
উত্তর: বিদ্যাপতি রচিত 'ভাব সম্মিলন' পদে রাধা, কৃষ্ণকে তাঁর পরম আশ্রয়,এবং নির্ভরতা বলে মনে করেছেন। তাই রাধার কাছে কৃষ্ণ হলেন শীতের ওড়না, গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষার ছাতা এবং সমুদ্রের নৌকা।
৮)'শুন বরনারি'- বরনারিদের উদ্দেশ করে কে, কী বলেছেন?
উত্তর: বিদ্যাপতি রচিত 'ভাব সম্মিলন' পদে বরনারিদের উদ্দেশ করে উপরিউক্ত মন্তব্যটি করেছেন বিদ্যাপতি। বিদ্যাপতি বলেছেন,কল্পনার জগতে কৃয়ের সঙ্গে মিলন যে আনন্দ রাধার মনে তৈরি করে দিয়েছে,তা অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল।কারণ সুজন অর্থাৎ ভালো-মানুষদের দুঃখের দিন বেশি দিন স্থায়ী হয় না।
চ) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(TYPE-2) প্রশ্নমান-৩
১)'কি কহব রে সখি আনন্দ ওর।'-এই আনন্দের কারণ নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: ‘মাথুর’ বা বিরহ পর্যায়ে কৃষ্ণ বিচ্ছেদের যন্ত্রণা রাধার মধ্যে তীব্রভাবে বেজেছিল,-এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর।' কিন্তু ভাব সম্মিলনের পদে এই বিচ্ছেদ যন্ত্রণাকে অতিক্রম করে রাধা ভাবময় জগতে তাঁর মনের মধ্যেই কৃয়কে উপলব্ধি করেছেন। শ্রীকৃষ্ণের মুখদর্শনে তিনি সমস্ত দুঃখকে অতিক্রম করে গিয়েছেন এবং বলেছেন যে,যদি কেউ তাঁকে বহু মূল্যবান রত্নসামগ্রীও দেয়, তবুও তিনি তাঁর প্রিয়তমকে দূরদেশে পাঠাবেন না।কৃষ্ণ-বিচ্ছেদের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হয়ে বিদ্যাপতি রাধার উত্তরণ ঘটেছে এক আনন্দময় জগতে।সেই সীমাহীন আনন্দের কথাই উল্লিখিত অংশে প্রকাশিত হয়েছে।
২)'পিয়া-মুখ-দরশনে তত সুখ ভেল।'-কে এ কথা বলেছেন?বক্তার মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর :বিদ্যাপতি রচিত'ভাব সম্মিলন 'পদে শ্রীরাধা উপরিউক্ত মন্তব্যটি করেছেন।
*'মাথুর’ পর্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ রাধাকে ছেড়ে মথুরায় গোপিনীদের কাছে চলে গিয়েছিলেন। কৃষ্ণ-বিচ্ছেদের তীব্র যন্ত্রণায় রাধা কাতর হয়ে পড়েন। চাঁদের দিকে তাকিয়ে তিনি কৃষ্ণের সৌন্দর্যকে উপলব্ধির চেষ্টা করেন। কিন্তু চাঁদের আলো তাঁর কষ্টকেই শুধু বাড়িয়ে দেয়। তার মধ্যে কৃষ্ণকে তিনি কোনোভাবেই খুঁজে পান না।এই বিচ্ছেদ- যন্ত্রণার অবসান হয়, যখন ভাবসম্মিলনের পদে ভাবলোকে রাধা কৃষ্ণের সান্নিধ্য পান। কল্পনা জগতে শ্রীকৃষ্ণের মুখদর্শন করে উচ্ছ্বসিত রাধিকা।
চাঁদের আলো রাধার মনের মধ্যে কৃষ্ণের বিভ্রম তৈরি করে যে কষ্টের জন্ম দিয়েছিল, ভাবজগতে শ্রীকৃষ্ণের মুখদর্শন করে শ্রীরাধিকার ততটাই সুখানুভূতি হয়েছিল।
৩)'বরিষার ছত্র পিয়া দরিয়ার না।'-কার সম্পর্ক এ কথা বলা হয়েছে। এখানে বব্বার যে মনোভাবেরপ্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর:বিদ্যাপতির রচিত 'ভাব সম্মিলন' পদে শ্রীরাধা কৃষ্ণ সম্পর্কে উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন।
ভাবসম্মিলনের পদে কৃষ্ণের সঙ্গে রাধার কল্পনাজগতে মিলন ঘটেছে। 'মাথুর' পর্যায়ে কৃয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের যন্ত্রণায় কাতর।তিনিই ভাবসম্মিলনে এসে কৃষ্ণের সান্নিধ্যে মুগ্ধতার ভাষ্য তৈরি করেছেন। মনের মন্দিরে কৃষ্ণ রাধার কাছে শীতের ওড়না, গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষার ছাতা এবং সমুদ্রের নৌকা। অর্থাৎ যে-কোনো পরিস্থিতিতে কৃষ্ণই রাধার একমাত্র অবলম্বন।
৪)'সুজনক দুখ দিবস দুই-চারি।'-কে মন্তব্যটি করেছেন?মন্তব্যটির পরিপ্রেক্ষিত আলোচনা করো।
উত্তর: বিদ্যাপতি রচিত 'ভাব সম্মিলন' পদে ভণিতায় পদ কর্তা বিদ্যাপতি স্বয়ং উল্লিখিত মন্তবকর্তা করেছেন।
*মাথুর পর্যায়ে কৃষ্ণ রাধাকে একা রেখে মথুরায় চলে যান।রাধার মধ্যে সৃষ্টি হয় তীব্র বিরহ-যন্ত্রণা।কিন্তু শ্রীরাধার এই যন্ত্রণা একটু কমেছে ভাবসম্মিলনে। কল্পনায় বৃন্দাবনে তিনি কৃষ্ণের সঙ্গে পুনর্মিলিত হয়েছেন। আর তাতেই রাধার মনের মধ্যে সীমাহীন আনন্দের অনুভূতি তৈরি হয়েছে। রাধা বলেছেন, তাঁকে যদি কেউ আঁচল ভরে রত্ন দেয় তাহলেও তিনি প্রিয়তমকে দূরদেশে পাঠাবেন না। বিরহ-বেদনার সময়ে বিদ্যাপতি তাঁর রাধাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন—ধৈরয ধরহ চিতে মিলব মুরারি'। আর ভাবসম্মিলনের মুহূর্তে বিদ্যাপতি রাধাকে উদ্দেশ করে বলেছেন যে, সুজন মানুষের দুঃখ চিরস্থায়ী হয় না, তার স্থায়িত্ব খুব বেশি হলে দু-চার দিন।
ছ) রচনাধর্মী বা বর্ণনাধর্মী প্রশ্নোত্তর। প্রশ্নমান-৫
১)'ভাব সম্মিলন'-এর পদে রাধা চরিত্রকে যেভাবে পাওয়া যায় তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর:বিদ্যাপতির রচিত 'ভাব সম্মিলন'-এর পদে বিদ্যাপতি রাধার মধ্যে প্রেমের উচ্ছ্বাস যেমন আছে, সেরকমই রয়েছে ভাব গভীরতা।চিরকালের জন্য শ্রীকৃষ্ণকে তিনি তাঁর হৃদয়-মন্দিরে উপলব্ধি করেছেন। চাঁদের আলো তাঁকে যত কষ্ট দিয়েছে, প্রিয়তমের মুখদর্শনে তিনি ততটাই সুখ পেয়েছেন। সেই সুখানুভূতি থেকে রাধা বলেছেন, যদি কেউ আঁচল ভরে তাঁকে মহামূল্যবান রত্ন দেয়, তবু তাঁর প্রিয়তমকে তিনি দূরদেশে পাঠাবেন না। কারণ তাঁর প্রিয় তাঁর কাছে শীতের ওড়না, গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষার ছাতা, সমুদ্রের নৌকা।ভাবময় জগতে কৃষ্ণের সঙ্গে মিলনে রাধার মধ্যে এই যে উচ্ছ্বাসের প্রকাশ ঘটেছে, তা বিদ্যাপতির পঠিত পদটিকে ভাব সম্মিলন পর্যায়ের এক অসামান্য সৃষ্টি হিসেবে গড়ে তুলেছে।
২)ভাব সম্মিলন'-এর পদে রাধার মধ্যে যে কৃয় তন্ময়তা প্রকাশ পেয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর:বিদ্যাপতির রচিত 'ভাব সম্মিলন' পদে রাধা যখন ভাবময় জগতে কৃষ্ণের সঙ্গে মিলিত হলেন, তখন তাঁর মধ্যে যে প্রবল উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছিল তার প্রকাশ ঘটেছে। কৃষ্ণকে চিরদিন মনের মধ্যে উপলদ্ধি করে রাধার আনন্দ সীমাহীন হয়ে উঠেছে। শ্রীকৃষ্ণের মুখদর্শনে সমস্ত দুঃখ কেটে গিয়ে,রাধার মধ্যে সুখানুভূতি তৈরি হয়েছে। কোনো মূল্যবান রত্নসামগ্রীর বিনিময়ে তিনি তাঁর প্রিয়তমকে দূরদেশে না পাঠানোর অঙ্গীকার করেছেন। কৃষ্ণ রাধার কাছে সংকট মুহূর্তের সমাধান।তিনি রাধার কাছে শীতের ওড়না, গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষার ছাতা এবং সমুদ্রের নৌকা। এভাবেই ভাবজগতে শ্রীরাধিকা কৃষ্ণপ্রেমে বিভোরতার প্রকাশ ঘটেছে।
৩, ভাব সম্মিলন কাকে বলে? আলোচ্য পদটিতে রাধার আনন্দের যে চিত্রটি ফুটে উঠেছে তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
উত্তর:বিদ্যাপতি রচিত 'ভাব সম্মিলন,পদটি-বৈষ্ণব রস সাহিত্যের শেষ পর্যায়। কল্পনায় কৃষ্ণের সঙ্গে রাধার মিলন হয়। এই ভাবনা থেকেই রাধা কল্পনার জগতে কৃষ্ণের সঙ্গে মিলিত হন। ‘মাথুর’ পর্যায়ের সাজানো কুঞ্জবন, ব্রজপুর আর রাধাকে পিছনে ফেলে কৃষ্ণ চলে গিয়েছেন মথুরায়। শ্রীরাধার এই বেদনাপূর্ণ অবস্থার অবসানে এল ভাব সম্মিলন। রাধা-কৃষ্ণের কল্পনার-মিলন। বৈয়ব তাত্ত্বিকরা এই মিলনকে বলেন নিত্যমিলন এবং সেই মিলনের আনন্দই ভাবসম্মিলনের পদের প্রধান উপজীব্য।
* ভাবসম্মিলনের পদে রাধার মনে ভাবোল্লাসের যে আনন্দময় উচ্ছ্বাস, তা বিদ্যাপতির পদটিতে লক্ষ করা যায়। রাধা বলেছেন-বিরহের দিনগুলিতে চাঁদের আলোয় প্রিয়তমের মুখ খুঁজে যত কষ্ট পেয়েছিলেন, এখন প্রিয়তমের মুখদর্শন করে শ্রীরাধিকা ততটাই সুখ লাভ করেছেন। রাধা বলেছেন আঁচল ভরে যদি কেউ তাঁকে মহারত্নসামগ্রী দেয়, তাহলেও নিজের প্রিয়তমকে তিনি আর দূরদেশে পাঠাবেন না। তাঁর কাছে কৃষ্ণ শীতের ওড়না,গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষার ছাতা, সমুদ্রের নৌকা। আরামে-বিরামে কৃষ্ণই একমাত্র অবলম্বন, রাধা যেন কৃষ্ণেরই বিকল্প সত্তা।
আরো পড়ুন:
একাদশ শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর click here
তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর click here
লালন শাহ ফকিরের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click here
ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click here
0 Comments