ক।কবি পরিচিত
খ) উৎস
গ। বিষয়সংক্ষেপ
ঘ। নামকরণ
ঙ) হাতে-কলমে সমাধান
e-bookap পেজটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুখবর-1st- ইউনিট,2nd ইউনিট,3nd ইউনিট,টেস্ট ফাইনাল পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্যগুরুত্বপূর্ণভাবে তোমাদের সাহায্য করবে।তাই এই সাফল্য আমাদের কাছে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ক) কবি পরিচিতি:
কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়। তাঁর পিতার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতার নাম সারদা দেবী। রবীন্দ্রনাথ বিদ্যালয়ের বাঁধাধরা শিক্ষার প্রতি কোনোদিনই আকর্ষণ বোধ করেননি। গৃহশিক্ষকদের কাছে ছোটোবেলা থেকেই তিনি বিচিত্র বিষয় চর্চা করেছেন। ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ভারতী ও বালক,পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন।তাঁর লেখা 'কথা ও কাহিনী,সহজপাঠ'রাজর্ষি,ছেলেবেলা,শিশু, ভোলানাথ, 'হাস্যকৌতুক,ডাকঘর' প্রভৃতি। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে 'গীতাঞ্জলি' কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ 'Song Offerings'-এর জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া 'নাইট' উপাধি ত্যাগ করেন। তিনি ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে 'বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত হয়। রবীন্দ্রনাথ বহু কাব্য, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, ব্যঙ্গকৌতুক, ডায়েরি, প্রবন্ধ, সংগীত, ভ্রমণকাহিনি রচনা করেন। রবীন্দ্রনাথের ছোটোগল্পগুলি 'গল্পগুচ্ছ' গ্রন্থের চারটি খণ্ডে সংকলিত হয়েছে। এ ছাড়াও 'লিপিকা,গল্পসল্প' প্রভৃতি গ্রন্থেও তাঁর লেখা অজস্র গল্পের সন্ধান পাওয়া যায়। তাঁর অসংখ্য ছোটোগল্পগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-বলাই,পোস্টমাস্টার,অতিথি,ছুটি, দেনাপাওনা,হৈমন্তী,একরাত্রি,শাস্তি' প্রভৃতি। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ পরলোকগমন করেন।
খ)উৎস:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'সুভা' ছোটোগল্পটি 'গল্পগুচ্ছ' গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
গ)বিষয়সংক্ষেপ:
চণ্ডীপুর গ্রামের বাসিন্দা বাণীকণ্ঠের বোবা মেয়ে সুভাষিণী। বড়ো দুই বোন সুকেশিনী আর সুহাসিনীর নামের সঙ্গে মিলিয়েই তার এমন নামকরণ। সকলে তাকে সুভা বলে ডাকে।
কথা বলতে না পারায় ছোটোবেলা থেকেই সুভাকে নিয়ে পরিবারের খুব চিন্তা হয়, সুভা তা বুঝতে পারত। তাই সবসময় নিজেকে গোপন রাখার চেষ্টা করত সে।সুভার মা তাকে নিজ গর্ভের কলঙ্ক হিসেবেই দেখতেন এবং লজ্জার কারণ বলে মনে করতেন। এজন্য তিনি সুভার প্রতি অত্যন্ত বিরক্তও ছিলেন। কিন্তু বাবা বাণীকণ্ঠ তাকে অন্য মেয়েদের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। সুভার বাকশক্তির জন্য গ্রামের অন্য ছেলেমেয়েরা তার মনের নাগাল পেত না। এমনকি গ্রামের ছেলেমেয়েরা সুভাকে ভয় পেত এবং তার সঙ্গে খেলত না।
নির্জন দুপুরের মতো সুভা তার দৃষ্টির মধ্য দিয়েই নিজের অনুভূতিকে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারত। গোয়ালের গাভি সর্বশী ও পাঙ্গুলির সঙ্গে তার গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। দুঃখে সুভা তাদের কাছে সান্ত্বনা খুঁজে পেত। এ ছাড়াও একটি ছাগল ও বিড়ালছানা তার প্রতি যথেষ্ট ভালোবাসা প্রকাশ করত।গোঁসাই বাড়ির ছেলে প্রতাপ সুভাকে পছন্দ করত। প্রতাপ মাছ ধরতে ভালোবাসত। নিজের হাতে পান সেজে সুভা প্রতাপকে এনে দিত এবং তার নানা কাজে সাহায্য করতে চাইত। এজন্য সে ভগবানের কাছে অলৌকিক শক্তি প্রার্থনা করত। কিন্তু অপারগ সুভা শেষমেশ প্রতাপকে অবাক করে দেওয়ার মতো কোনো ভালো কাজ করতে পারেনি।
সুভার বয়স বাড়ছে। বাড়িতে অবিবাহিতা মেয়ে রাখার নিন্দা, অপমান, বঞ্চনা ও একঘরে হয়ে যাওয়ার চিন্তায় পড়লেন সুভার বাবা-মা। তাই কলকাতায় নিয়ে গিয়ে জোর করেই তার বিয়ে দেওয়া হল। নববধু যে বোবা তা সপ্তাহখানেকের মধ্যে শ্বশুরবাড়ির সবাই বুঝতে পারল। সুভার স্বামীও তার হৃদয়কে কোনোরকম মূল্য দিল না। তারপর খুব দেখেশুনে কথা বলতে পারে এবং শুনতে পারে এমন এক মেয়েকে বিয়ে করে আনল সে।
ঘ)নামকরণ:
নামকরণের দ্বারাই সাহিত্যিক তাঁর সৃষ্ট রচনা সম্পর্কে পাঠকদের এক আগাম পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত 'সুভা' ছোটোগল্পটিও এর ব্যতিক্রম নয় ।
‘সুভা' গল্পে চণ্ডীপুর গ্রাম নিবাসী বাণীকণ্ঠের মুক ও বধির কন্যা সুভার জীবনের পরিচয় পাওয়া যায়। গল্পে সুভাকে নিয়ে তার বাবা-মা ও
আত্মীয়-পরিজনদের দুশ্চিন্তার কথা প্রকাশ পেয়েছে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন ঘটনা ও পরিস্থিতি বর্ণনার মধ্য দিয়ে সুভার নিঃসঙ্গতা ফুটে উঠেছে। অন্যদিকে গোরু সর্বশী ও পাঙ্গুলির, ছাগল ও বিড়ালছানার ভালোবাসা,গোঁসাইদের ছোটো ছেলে প্রতাপের সান্নিধ্যলাভ ইত্যাদির কথাও গল্পে রয়েছে। এই গ্রাম্যপ্রকৃতি ও গ্রামজীবন থেকে সরিয়ে সুভাকে জোর করে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। তার বিয়ে দেওয়া হয়। তাকে এক অনিশ্চিত,বেদনাপূর্ণ জীবনে ঠেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার পরিবারের ভূমিকাই ছিল সর্বাধিক। সুভার জীবনের এই করুণ পরিণতি পাঠকের মনকে ব্যথিত করে তোলে। সুভার কথা না বলতে পারার কষ্ট, তার নিজেকে প্রকাশের ব্যাকুলতা, তাকে সকলের বুঝতে না পারা ও তার সঙ্গীহীনতাই গল্পটির মূল বিষয়। তাই বলা যায় গল্পটির নামকরণ সার্থক হয়েছে
ঙ) হাতে-কলমে সমাধান:
১।নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১.১) জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত কোন পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ নিয়মিত লিখতেন?
উত্তর:জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ভারতী,বালক পত্রিকা।এই পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখতেন।
১.২ ভারতের কোন প্রতিবেশী দেশে তাঁর লেখা গান জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয় ?
উত্তর: ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি 'গানটি জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়।
২।নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর একটি বাক্যে লেখো।
২.১) সুভার প্রকৃত নাম কী?
উত্তর: সুভার প্রকৃত নাম সুভাষিণী।
২.২ সুভার বাবা কে?
উত্তর: সুভার বাবা চণ্ডীপুর গ্রামের সম্পন্ন কৃষক বাণীকণ্ঠ।
২.৩)সুভা কোন গ্রামে বাস করত?
উত্তর: সুভা চণ্ডীপুর গ্রামে বাস করত।
২.৪) গল্পে সুভার কোন কোন বন্ধুর কথা রয়েছে ?
উত্তর: গল্পে সুভার বন্ধু গাভি সর্বশী ও পাঙ্গুলির কথা রয়েছে।
২.৫ কে সুভাকে 'সু' বলে ডাকত?
উত্তর: গোঁসাইদের ছোটো ছেলে প্রতাপ সুভাকে ‘সু’ বলে ডাকত।
৩)নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।
৩.১)'সে নির্জন দ্বিপ্রহরের মতো শব্দহীন এবং সঙ্গীহীন'-সুভা সম্পর্কে এরকম উপমা লেখক ব্যবহার করেছেন কেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পের মূল চরিত্র মুক বালিকা সুভাষিণী সম্পর্কে উপমাটি ব্যবহার করেছেন।
জন্ম থেকেই সুভার ভাষা ছিল তার বড়ো বড়ো কালো চোখের দৃষ্টি। সেইসঙ্গে তার মুখে ফুটে উঠত নানান অনুভূতিতে। সুভার চোখের ভাষা ছিল অসীম, উদার এবং গভীর-অনেকটা পরিষ্কার আকাশের মতো। সুভার মধ্যে প্রকৃতির মতো নির্জনতা ও গভীরতা লক্ষ করেই বালক-বালিকারা তাকে ভয় করত এবং তার খেলার সাথি হতে চাইত না। তাই সে ছিল সঙ্গীহীন। নির্জন দুপুর যেমন নিঃস্বপ্ন, সুভাও ছিল সেরকমই শব্দহীন।আলোচ্য উপমাটিতে সুভার প্রকৃতিগত গভীরতা ও নিঃসঙ্গতার দিকটিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
৩.২ চণ্ডীপুর গ্রামের বর্ণনা দাও ৷
উত্তর:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত 'সুভা' গল্পে সুভার বাবা বাণীকণ্ঠের বাড়ি বাংলাদেশের চণ্ডীপুর গ্রামে। গ্রামটির একপাশে একটি ছোটো সরু নদী। নদীর দু-পাশে লোকালয় এবং গাছের ছায়ায় ঘেরা উঁচু তটভূমি। নদীর কলধ্বনি, মানুষের কোলাহল, মাঝির গান,পাখির ডাক,গাছের মর্মরধ্বনি—এই সবই গ্রামটিকে সারাক্ষণ ব্যস্ত করে রেখেছে।
৩.৩ সুভার সঙ্গে সর্বশী ও পাঙ্গুলির সম্পর্ক কীরকম ছিল?
উত্তর:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা' গল্পের বোবা মেয়ে সুভার সঙ্গে তার সমবয়সি ছেলেমেয়েরা খেলতে আসত না। তাই তার বাড়ির গোয়ালের দুটি গাভি সর্বশী ও পাঙ্গুলির সঙ্গে সুভার এক নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। মানুষের মুখের ভাষার চেয়ে তার কথাহীন করুণ সুর গাভি দুটির কাছে বেশি বোধগম্য ছিল। সুভা কখনও তাদের নাম ধরে ডাকতে পারেনি। তবু তার পায়ের শব্দ সর্বশী আর পাঙ্গুলির অত্যন্ত পরিচিত ছিল। সুভার বাক্যহীন দৃষ্টিতে গভীর ভাষা ফুটে উঠত। সেই ভাষা মানুষ তেমনভাবে না বুঝলেও তা সহজেই বুঝে নিত অবলা এই গাভি দুটি।
দিনের মধ্যে অন্তত তিনবার গোয়ালঘরে গিয়ে সুভা তাদের আদর করে আসত এবং তারাও সুভার ভালোবাসার উত্তর দিত। ঘরে কারোর কথা খারাপ লাগলে সান্ত্বনা লাভের জন্যও সুভা সময়ে অসময়ে তাদের কাছে গিয়ে উপস্থিত হত।
৩.৪ 'এইজন্য প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝিত'-প্রতাপের কাছে সুভা কীভাবে মর্যাদা পেত,তা গল্প অবলম্বনে লেখো।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত 'সুভা'গল্পে চণ্ডীপুর গ্রামের গোঁসাইদের ছোটো ছেলেটির নাম প্রতাপ। ছিপ ফেলে মাছ ধরা ছিল প্রতাপের প্রধান শখ । সময় কাটানোর জন্য প্রায়ই বিকেলে সে নদীতীরে মাছ ধরত। তখন সুভার সঙ্গে তার দেখা হত। প্রতাপ সব কাজেই সঙ্গী খুঁজত। তার মাছ ধরার সঙ্গী হিসেবে বোবা মেয়ে সুভাই শ্রেষ্ঠ ছিল। এজন্যই প্রতাপের কাছে সুভার মর্যাদা ছিল। আর তার সেই অনুভূতি বোঝানোর জন্য সে আদর করে সুভাকে 'সু' বলে ডাকত।
0 Comments