পলিমার ব্যবহারের সুবিধা।পলিমার ব্যবহারের অসুবিধা।


পলিমারের ব্যবহার এবং তার প্রভাব সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হলো-


পলিমার হলো এক ধরনের বৃহৎ অণু, যা একাধিক ছোট অণু (মনোমার) মিলিয়ে গঠিত হয়। পলিমারগুলো বিভিন্ন প্রকারের এবং বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে, এবং এগুলোর ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রে লক্ষণীয়। পলিমারগুলি আমাদের জীবনে সুবিধা এনে দিলেও, তাদের কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে, যা পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।


পলিমারের শ্রেণীবিভাগ:

পলিমারগুলো সাধারণত- দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়-


১.প্রাকৃতিক পলিমার: যেমন প্রোটিন, সেলুলোজ, এবং রাবার।

২.কৃত্রিম পলিমার: যেমন প্লাস্টিক (পলিথিন, পলিপ্রোপিলিন), সিন্থেটিক রাবার, এবং নাইলন।


পলিমারের ব্যবহার:

১. শিল্পে

পলিমার শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন:


২.প্লাস্টিক প্যাকেজিং: খাদ্য এবং অন্যান্য পণ্যের সুরক্ষায় ব্যবহৃত হয়। পলিথিন, পলিপ্রোপিলিন এবং পলিস্টাইরিন সাধারণত ব্যবহৃত হয়।


৩.গ্যাস এবং জল পরিবহন: পলিমার পাইপস ব্যবহৃত হয় গ্যাস এবং পানির পরিবহনের জন্য, যা দীর্ঘস্থায়ী এবং সাশ্রয়ী।


৪.নির্মাণ: পলিমার বেসড উপকরণ যেমন পলিস্টাইরিন ফোম, ফাইবারগ্লাস, এবং কৃত্রিম ফাইবারগুলি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।


 স্বাস্থ্যসেবায়:

পলিমার স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব ঘটিয়েছে। এর ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত:


১.মেডিক্যাল ডিভাইস: যেমন সেলাইয়ের জন্য পলিমার সুতা, স্টেথোস্কোপ, এবং ইমপ্লান্টস।


২.ফার্মাসিউটিক্যালস: পলিমার বেসড কন্ট্রোলড রিলিজ ড্রাগ ব্যবস্থা।


৩.বায়োম্যাটেরিয়ালস: চিকিৎসা ও গবেষণায় ব্যবহৃত।


 টেক্সটাইল:

পলিমার ভিত্তিক ফাইবার যেমন পলিয়েস্টার, নাইলন, এবং অ্যাক্রিলিক টেক্সটাইল শিল্পে ব্যবহৃত হয়। এই ফাইবারগুলো টেকসই, জলরোধী এবং সহজে পরিষ্কারযোগ্য।


পরিবহন:

গাড়ি এবং বিমানে ব্যবহৃত পলিমারগুলি ওজন কমাতে এবং জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। প্লাস্টিক, কম্পোজিট এবং রাবার পণ্য এই ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।


পলিমারের সুবিধা:

১.প্রতিরোধী ক্ষমতা: পলিমারগুলি জলে, রসায়ন এবং আঘাতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী।


২.হালকা ওজন: তুলনায় অন্যান্য উপকরণের, পলিমারগুলি হালকা এবং সহজে পরিচালনাযোগ্য।



পলিমার ব্যবহারের সুবিধা।পলিমার ব্যবহারের অসুবিধা।


৩.নির্মাণের সহজতা: বিভিন্ন আকৃতি এবং আকারে পলিমার তৈরি করা সম্ভব, যা শিল্পে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়।


৪.দীর্ঘস্থায়িত্ব: পলিমার অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী হয়, যা তাদের অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক করে।


৫.পলিমারের নেতিবাচক প্রভাব:পলিমারগুলির নেতিবাচক প্রভাব বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষণীয়। প্রথমত, পলিমার তৈরি প্লাস্টিকগুলো দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি করে, কারণ তারা ভেঙে যাওয়ার জন্য হাজার হাজার বছর নেয়। এই প্লাস্টিক বর্জ্য জল এবং মাটিতে বিষাক্ত রাসায়নিক ছড়াতে পারে, যা জীববৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।


অন্যদিকে, কিছু পলিমার যেমন পিভিসি এবং পলিস্টায়ারিন মানব স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এগুলো থেকে মুক্ত হওয়া ক্ষতিকর পদার্থ শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, অ্যালার্জি এবং এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।


এছাড়া, খাদ্য প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত পলিমারগুলিতে BPA এবং অন্যান্য এন্ডোক্রাইন বিঘ্নকারী পদার্থ থাকে, যা হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত করে। সুতরাং, পলিমারের সঠিক ব্যবহার এবং পরিচালনা অত্যন্ত জরুরি।


৬. স্বাস্থ্যগত প্রভাব:পলিমারগুলি আধুনিক জীবনে ব্যাপক ব্যবহৃত হচ্ছে, কিন্তু তাদের স্বাস্থ্যগত প্রভাবগুলি গুরুতর হতে পারে। কিছু পলিমার, যেমন পিভিসি, ক্ষতিকর রাসায়নিকগুলি মুক্ত করতে পারে যা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, অ্যালার্জি এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। প্লাস্টিকের খাদ্যপাত্রে ব্যবহৃত পলিমারগুলিতে BPA এবং অন্যান্য এন্ডোক্রাইন বিঘ্নকারী পদার্থ থাকতে পারে, যা হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে। সঠিকভাবে পুনর্ব্যবহার বা নিষ্পত্তি না করা পলিমার পরিবেশে বিষাক্ত পদার্থ ছড়াতে পারে, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য বিপদস্বরূপ। সুতরাং, পলিমারের নিরাপদ ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


পলিমার ব্যবহারের সুবিধা।পলিমার ব্যবহারের অসুবিধা।


পলিমার ব্যবস্থাপনা:

পলিমার ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলায় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:


১.পুনর্ব্যবহার: পলিমারের পুনর্ব্যবহার বৃদ্ধি করা, যাতে তাদের নতুন পণ্যে রূপান্তর করা যায়।


২.বৈজ্ঞানিক গবেষণা: নতুন বিকল্প পলিমার তৈরি করার জন্য গবেষণা অব্যাহত রাখা, যা পরিবেশবান্ধব এবং জৈব নষ্ট হতে সক্ষম।


৩.সচেতনতা বৃদ্ধি: জনগণের মধ্যে পলিমারের সঠিক ব্যবহারের এবং পুনর্ব্যবহারের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।


৪.নিয়ম এবং আইন: সরকারের পক্ষ থেকে প্লাস্টিক ব্যবহারের উপর বিধি এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।


উপসংহার:

পলিমার আমাদের জীবনে বিপুল সুবিধা এনে দিয়েছে, তবে এর নেতিবাচক প্রভাবও অস্বীকার করা যায় না। আমাদের উচিত পলিমারের ব্যবহারকে সচেতনভাবে পরিচালনা করা এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাব কমানোর জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নতুন প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা এই ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে, যা আমাদের একটি নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

Post a Comment

0 Comments