অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন।অগ্ন্যাশয়ের কাজ কি।


অগ্ন্যাশয় গ্রন্থির কাজ এবং প্রভাব সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হলো-

অগ্ন্যাশয়, যা ইংরেজিতে প্যানক্রিয়াস (Pancreas) হিসেবে পরিচিত, মানবদেহের একটি অত্যাবশ্যক গ্রন্থি। এটি পেটের পিছনে, লিভার এবং অগ্ন্যাশয়ের মধ্যে অবস্থিত। অগ্ন্যাশয় গ্রন্থিটি প্রধানত দুটি প্রধান কাজ সম্পাদন করে: এন্ডোক্রাইন ফাংশন (রক্তে হরমোন নিঃসরণ) এবং এক্সোক্রাইন ফাংশন (পাচনতন্ত্রে এনজাইম নিঃসরণ)।


অগ্ন্যাশয়ের গঠন:

অগ্ন্যাশয় হল একটি লম্বা ও ফ্ল্যাট টিউবের মতো গ্রন্থি। এর তিনটি প্রধান অংশ রয়েছে-

অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন।অগ্ন্যাশয়ের কাজ কি।


হেড (Head): অগ্ন্যাশয়ের বৃহত্তম অংশ, যা ডুোডেনামে (সিক্রেটরি এনজাইম এবং পিত্তের সংমিশ্রণে) প্রবাহিত হয়।

বডি (Body): মধ্যবর্তী অংশ, যা হরমোন উৎপাদনে সহায়ক।

টেইল (Tail): এটি অগ্ন্যাশয়ের শেষ অংশ, যা মলদ্বারের নিকটে অবস্থিত।


অগ্ন্যাশয়ের কাজ:

১. এন্ডোক্রাইন ফাংশন:

অগ্ন্যাশয় হরমোন উৎপাদন করে, যা রক্তের গ্লুকোজের স্তর নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান হরমোনগুলো হলো:

ইনসুলিন:ইনসুলিন হলো একটি হরমোন যা প্যানক্রিয়াসে উৎপন্ন হয়। এটি শরীরের কোষগুলোতে গ্লুকোজের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থিতিশীল থাকে। ইনসুলিনের অভাবে ডায়াবেটিস রোগ সৃষ্টি হয়, যেখানে রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে যায়। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, ফলে ইনসুলিনের টিকা নিতে হয়। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন ব্যবহার করতে অক্ষম হয়। ইনসুলিনের সঠিক নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্য, ব্যায়াম এবং চিকিৎসা ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।গ্লুকোজকে শরীরের কোষে প্রবাহিত করতে সাহায্য করে এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমায়।

গ্লুকাগন: গ্লুকাগন হলো একটি হরমোন যা প্যানক্রিয়াসের অ্যালফা কোষ থেকে উৎপন্ন হয়। এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। যখন রক্তে গ্লুকোজের স্তর কমে যায়, গ্লুকাগন লিভারকে নির্দেশ করে গ্লুকোজ মুক্ত করতে এবং গ্লাইকোজেনকে গ্লুকোজে রূপান্তরিত করতে। এটি ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে, যেখানে রক্তের গ্লুকোজের স্তর বিপজ্জনকভাবে কমতে পারে। গ্লুকাগনের কার্যকারিতা শরীরের শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক এবং এটি ইনসুলিনের বিপরীত কাজ করে, ফলে গ্লুকোজের নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সোম্যাটোস্ট্যাটিন: ইনসুলিন ও গ্লুকাগনের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে, যা রক্তে গ্লুকোজের স্তরকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।


২. এক্সোক্রাইন ফাংশন:

অগ্ন্যাশয় পাচনতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম উৎপাদন করে, যা খাবারকে হজম করতে সহায়ক। প্রধান এনজাইমগুলো হলো:

আমাইলোজ:কার্বোহাইড্রেট হজম করতে সাহায্য করে।

লিপেজ: চর্বি হজমের জন্য ব্যবহৃত হয়।

প্রোটেজ: প্রোটিন হজমের জন্য কার্যকর।

এই এনজাইমগুলো ডুোডেনামে প্রবাহিত হয়, যেখানে তারা খাবারের সাথে মিশে হজম প্রক্রিয়া শুরু করে।


অগ্ন্যাশয়ের প্রভাব:

অগ্ন্যাশয় গ্রন্থির কাজ শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং স্বাভাবিক কার্যক্রমে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব হলো:


১. গ্লুকোজের স্তরের নিয়ন্ত্রণ:

অগ্ন্যাশয়ের প্রধান কাজ হলো রক্তের গ্লুকোজের স্তর নিয়ন্ত্রণ করা। ইনসুলিন ও গ্লুকাগনের সঠিক ভারসাম্য বজায় না থাকলে ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে ইনসুলিন উৎপাদন কম হয়, আর টাইপ ২ ডায়াবেটিসে কোষের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।


২. পাচন প্রক্রিয়া

অগ্ন্যাশয়ের উৎপাদিত এনজাইমগুলি পাচন প্রক্রিয়ায় অপরিহার্য। খাবার হজম না হলে পুষ্টির শোষণ ব্যাহত হয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।


৩. শরীরের শক্তি স্তরের বজায় রাখা

রক্তের গ্লুকোজের সঠিক স্তর বজায় রাখা শরীরের শক্তি স্তর নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ইনসুলিনের মাধ্যমে গ্লুকোজ কোষে প্রবাহিত হলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়, যা দৈনন্দিন কাজ সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ।


অগ্ন্যাশয় সম্পর্কিত রোগসমূহ:

অগ্ন্যাশয় নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা এবং রোগ দেখা দিতে পারে:

১.ডায়াবেটিস: ইনসুলিনের উৎপাদন হ্রাস বা প্রতিরোধের কারণে রক্তে গ্লুকোজের স্তর বৃদ্ধি পায়।


২.প্যানক্রিয়াটাইটিস: অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ, যা তীব্র বা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। এটি খাদ্য হজমে ব্যাঘাত ঘটায় এবং তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।


৩.প্যানক্রিয়াস ক্যান্সার: অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার, যা সাধারণত দেরিতে ধরা পড়ে এবং এর জীবনকাল সংকেত দেয়।


প্রতিকার ও যত্ন:

অগ্ন্যাশয়কে সুস্থ রাখতে কিছু সাধারণ প্রতিকার এবং যত্ন নেওয়া যেতে পারে:


১.সুস্থ খাদ্যাভ্যাস: স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, যেমন ফল, সবজি এবং পুরো শস্য, অগ্ন্যাশয়কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।


২.ওজন নিয়ন্ত্রণ: স্থূলতা অগ্ন্যাশয়ের জন্য ক্ষতিকর, তাই নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।


৩.নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: স্বাভাবিক স্তর:

ফাস্টিং (প্রভাতের প্রথম গ্লুকোজ পরীক্ষা): 70-99 mg/dL

পরে (খাওয়ার 2 ঘণ্টা পর): 140 mg/dL এর নিচে

প্রিডায়াবেটিস:

ফাস্টিং: 100 -125 mg/dL

পরে: 140 -199 mg/dL

ডায়াবেটিস:

ফাস্টিং: 126 mg/dL বা তার বেশি

পরে: 200 mg/dL বা তার বেশি

হাই এবং লো গ্লুকোজ:

হাই (হাইপারগ্লাইসেমিয়া): 180 mg/dL এর উপরে

লো (হাইপোগ্লাইসেমিয়া): 70 mg/dL এর নিচে

এই স্তরের নির্দেশনাগুলি সাধারণত অনুসরণ করা হয়, তবে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যগত অবস্থার ভিত্তিতে ডাক্তার পরামর্শ নিতে পারেন।

অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন।অগ্ন্যাশয়ের কাজ কি।


উপসংহার:

অগ্ন্যাশয় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এর সঠিক কাজ এবং স্বাস্থ্য আমাদের স্বাভাবিক জীবনের জন্য অপরিহার্য। অগ্ন্যাশয়ের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত, যাতে আমরা একটি সুস্থ ও সক্রিয় জীবন যাপন করতে পারি।


মশা কয় প্রকার ও কী কী Click here 

চোখের প্রশ্ন উত্তর Click here 

অগ্ন্যাশয় এর প্রশ্ন উত্তর Click here 



Post a Comment

0 Comments