সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি।ক্লোরোফ্লোরোকার্বন।


ওজোন গ্যাস, যার রাসায়নিক সংকেত O₃, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি মূলত দুইটি প্রকারে উপস্থিত: স্ট্র্যাটোস্ফেরিক ওজোন এবং ট্রপোস্ফেরিক ওজোন। প্রতিটির প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন, এবং এদের প্রভাবের বিশ্লেষণ আমাদের পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলছে তা বোঝাতে সাহায্য করে।


স্ট্র্যাটোস্ফেরিক ওজোন:


স্ট্র্যাটোস্ফেরিক ওজোন, যা সাধারণত 'ওজোন স্তর' হিসেবে পরিচিত।স্ট্রোটোস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধিতে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। এই তরে বায়ু প্রবাহ, জলীয় বাষ্প, মেঘ না থাকায় একে শান্তমণ্ডল বলে। দ্রুতগামী জেট বিমান এই স্তরে চলাচল করে। এটি সূর্যের ক্ষতিকর UV বিকিরণ শোষণ করে, যা জীবজগতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

এই স্তরের প্রধান প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে-UV বিকিরণ শোষণ:



সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি।ক্লোরোফ্লোরোকার্বন।


 স্ট্র্যাটোস্ফেরিক ওজোন সূর্যের অতিবেগুনী (UV) বিকিরণ শোষণ করে, যা আমাদের ত্বক, চোখ এবং অন্যান্য জীবন্ত অঙ্গকে সুরক্ষিত রাখে। UV বিকিরণ বেশি হলে ত্বকের ক্যান্সার, চোখের সমস্যা,এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়তে পারে।


২.জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা:

 স্ট্র্যাটোস্ফেরিক ওজোনের উপস্থিতি জীববৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি উদ্ভিদ এবং সামুদ্রিক জীবনের বৃদ্ধির জন্য সাহায্য করে এবং পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র রক্ষা পায়।


৩.বায়ুপ্রবাহের নিয়ন্ত্রণ: 

ওজোন স্তরের উপস্থিতি বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে, যা বিশ্বব্যাপী বায়ুপ্রবাহের উপর প্রভাব ফেলে।


৪.স্ট্র্যাটোস্ফেরিক ওজোন স্তর:

এটি হ্রাসের কারণে অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। মানবসৃষ্ট রাসায়নিক যেমন ক্লোরোফ্লুওরোকার্বন (CFC) ওজোন স্তরকে ক্ষতি করছে, যা 'ওজোন হোল' তৈরি করছে। এর ফলস্বরূপ, UV বিকিরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য হুমকি।


৫.ট্রপোস্ফেরিক ওজোন:

ট্রপোস্ফেরিক ওজোন, যাকে 'গ্রাউন্ড লেভেল ওজোন' বলা হয়, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তরে (ট্রপোস্ফিয়ার) উপস্থিত থাকে। এটি সাধারণত বায়ু দূষণের একটি উপদ্রব হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর প্রভাবের মধ্যে রয়েছে-


>স্বাস্থ্য সমস্যা:

 ট্রপোস্ফেরিক ওজোন শ্বাসযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। এটি অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস এবং অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এটি শিশুদের ও বৃদ্ধদের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর। কিন্তু ওজোন স্তর বিভিন্ন রোগের হাত থেকে মানবসমাজকে রক্ষা করে।


১.উদ্ভিদের উপর প্রভাব: 

এই ধরনের ওজোন উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে, ফলন কমাতে পারে এবং শস্যের গুণমান হ্রাস করতে পারে। এটি কৃষির জন্য একটি গুরুতর সমস্যা।


২.বায়ু দূষণের অবদান:

 ট্রপোস্ফেরিক ওজোন প্রধানত শিল্প, যানবাহন এবং অন্যান্য উত্স থেকে নিঃসৃত দূষণকারী পদার্থের সাথে বিক্রিয়া করে তৈরি হয়। এটি বায়ু গুণমান হ্রাসের একটি বড় কারণ।


সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি।ক্লোরোফ্লোরোকার্বন।


>প্রতিকার এবং পদক্ষেপ:

ওজোন স্তরের সুরক্ষা ও উন্নত বায়ু গুণমান নিশ্চিত করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে-


১.ওজোন ক্ষতিকারক পদার্থ নিয়ন্ত্রণ: 

ওজোন স্তর মোট কজনের প্রায় চার শতাংশ ধ্বংস হয়েছে। উভয় মেরুর দিকে ধ্বংসের মাত্রা বেশি। ওজোন স্তর বিনাশের কারণগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয় যেমন প্রাকৃতিক কারণ,প্রাকৃতিক ঘটন-অগ্নুৎপাত, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনায় ওজোন স্তর কিছুটা নষ্ট হয়।মনুষ্য সৃষ্টিকারণ-ক্লোরোফুরোফ্লুওরোকার্বন (CFC) মিথাইল ক্লোরোফরম নাইট্রাস অক্সাইড সালফেট যৌগ প্রভৃতির কারণে ওজন স্তরের বিনাশ ঘটছে। এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার কমানো।


২.বায়ু দূষণ কমানো:

 যানবাহন এবং শিল্প থেকে নির্গত দূষণ কমানো। উন্নত প্রযুক্তি এবং শক্তি দক্ষ যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে এটি অর্জন করা সম্ভব।


>সমস্যার সমাধান:

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ওজোন স্তরের পুনরুদ্ধার:


১.মন্তব্যের সীমাবদ্ধতা: 

আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ওজোন স্তরের ক্ষতি কমানোর জন্য কিয়োটো প্রোটোকল এবং মন্ট্রিয়াল প্রটোকল গৃহীত হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে CFCs এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিকের ব্যবহার কমানো হয়েছে।


২.বিকল্প রাসায়নিকের ব্যবহার:

 অধিক টেকসই ও নিরাপদ রাসায়নিক বিকল্প ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অনেক শিল্প ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFCs) এর পরিবর্তে হ্যালোন্স ব্যবহার করছে।


৩.নিয়মিত পর্যবেক্ষণ:

 মহাকাশ থেকে ওজোন স্তরের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদান করা যেতে পারে।


>ট্রপোস্ফিয়ার ওজোন দূষণের মোকাবিলা:

১.দূষণ নিয়ন্ত্রণ: 

গ্যাসীয় দূষণের উৎস হিসেবে শিল্প, যানবাহন এবং অন্যান্য উত্সের নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। নতুন প্রযুক্তি এবং আরও পরিষ্কার জ্বালানির ব্যবহার এ ক্ষেত্রে সহায়ক।


২.পাদপ্রদীপ কার্বন কমানো: 

ফসফরাসের পরিমাণ কমানোর জন্য বিকল্প শক্তির উৎস ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, এবং অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তি উৎস।


৩.জনসচেতনতা:

 মানুষকে ট্রপোস্ফিয়ার ওজোন দূষণ এবং এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা জরুরি। এক্ষেত্রে শিক্ষা এবং গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।


উপসংহার:

ওজোন গ্যাসের প্রভাব সুদূরপ্রসারী এবং জটিল। স্ট্র্যাটোস্ফেরিক ওজোন আমাদেরকে UV বিকিরণ থেকে রক্ষা করে, যা পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে সহায়ক। অন্যদিকে, ট্রপোস্ফেরিক ওজোন বায়ু দূষণ এবং স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য দায়ী। উভয় প্রকারের ওজোনের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ পরিবেশ এবং মানুষের স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় অপরিহার্য। সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমরা একটি সুস্থ এবং সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারি।


Cucumber is beneficial for the body click

here

ডাবের জলে উপকারিতা click Here 

দুধের উপকারিতা click here

ওজোন গ্যাস click here 


Post a Comment

0 Comments