শব্দ দূষণের উৎস। শব্দ দূষণের স্বাস্থ্যগত সমস্যা।

 

শব্দ দূষণ একটি পরিবেশগত সমস্যা যা মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। শব্দ দূষণ মূলত অতিরিক্ত শব্দ বা আওয়াজের কারণে ঘটে যা সাধারণ পরিবেশের স্বাভাবিক স্তরের বাইরে চলে যায়। এটি বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হতে পারে এবং এর ফলাফলও বেশ জটিল হতে পারে।


শব্দ দূষণের কারণ:

শহুরে অতি জনসংখ্যা: নগরী বা শহরের অতি জনসংখ্যার কারণে যানবাহন, শিল্প প্রতিষ্ঠান, এবং নির্মাণ কাজের শব্দ বৃদ্ধি পায়। এতে করে শব্দ দূষণ প্রকট হয়।


শব্দ দূষণের উৎস। শব্দ দূষণের স্বাস্থ্যগত সমস্যা।



১.যানবাহন:

 রাস্তার যানবাহন যেমন গাড়ি, ট্রাক, বাস, ও মোটরসাইকেল গুলির শব্দ দূষণের একটি প্রধান কারণ। এদের ইঞ্জিনের আওয়াজ এবং হর্নের ব্যবহার শব্দ দূষণ বাড়িয়ে তোলে। যানবাহন জনিত মাত্রা 65db নির্ধারণ করলেও বহু শহরে শব্দের মাত্রা অনেক বেশি।


২.শিল্প ও কারখানা:

 শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কারখানার মেশিন এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতির আওয়াজও একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ দূষণকারী উৎস। ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনের হট্টগোল, জাহাজ ও বিমান নির্মাণ, কাঠের মিল, খাদ্য উৎপাদন শিল্প, আসবাব নির্মাণ শিল্প ধাতব পণ্য উৎপাদন শিল্পে এই সহনমাত্রা থেকে অনেক বেশি প্রাবল্যের শব্দ উৎপন্ন হয়। এর ফলস্বরূপ মারাত্মক শব্দ দূষণ ঘটে। এছাড়াও বিল্ডিং নির্মাণ, রাস্তা উন্নয়ন, এবং অন্যান্য নির্মাণ কাজের আওয়াজ শব্দ দূষণের কারণ হিসেবে কাজ করে।


৩.বাণিজ্যিক কার্যক্রম: 

শপিংমল, রেস্টুরেন্ট, কনসার্ট এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক স্থান গুলির উচ্চ শব্দর ফলে মানুষের অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। লাইভ মিউজিক, স্পিকার সিস্টেম, এবং গ্রাহকদের আওয়াজ এই সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তোলে।


৪.বিমান চলাচল:

বিমান নীচ থেকে উপরে ওঠার সময় যে বিকট আওয়াজ সৃষ্টি করে, তাতে আশেপাশে পরিবেশের মানুষের অনেক সমস্যা বিঘ্নিত ঘটে। ফলে তারা এই সমস্যা দিনের দিন জর্জরিত হতে থাকে।


শব্দ দূষণের ফলাফল:

১.স্বাস্থ্য সমস্যা:

 দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ শব্দের প্রভাবে মানুষ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে। উচ্চ শব্দের কারণে শ্রবণশক্তির হানি, মাথাব্যথা, এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এছাড়াও, উচ্চ শব্দ হৃৎস্পন্দন এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।90db এর ঊর্ধ্বে শব্দ হলে রক্তচাপ যথেষ্ট বেড়ে যায়। ফলে হৃদপেশিতে আংশিকভাবে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গিয়ে পেশির কার্যকারিতা নষ্ট হয়।


২.মানসিক চাপ ও উদ্বেগ:

শব্দ দূষণ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়ে। যেমন- উদ্বেগ, মানসিক চাপ, এবং ঘুমের সমস্যার কারণ হতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ শব্দের প্রভাবে মানুষের মানসিক সুস্থতা বিঘ্নিত হয়।


৩.শ্রবণশক্তি হানি:

 ধীরে ধীরে উচ্চ শব্দের প্রভাবে শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। বিশেষ করে যে সমস্ত পেশার মানুষেরা অধিক পরিমাণে শব্দের মধ্যে কাজ করেন, তাদের শ্রবণশক্তির সমস্যার মধ্যে পড়ে। শ্রবণশক্তির মানুষের দুইভাবে ক্ষতি করে। যেমন-উচ্চ প্রাবল্যের শব্দ এককালীন হঠাৎ শুনলে অন্তঃকর্ণের অংশে স্থায়ীভাবে শ্রবণ ক্ষমতা নষ্ট হয়। যেমন-150db এর উর্ধ্বে বাজির শব্দ, বিস্ফোরণ প্রভৃতি। আবার সাধারণ শব্দ থেকে উচ্চ প্রাবল্যের কোন শব্দ শুনলে কানের দ্রুত সমস্যা ঘটতে পারে।


শব্দ দূষণের উৎস। শব্দ দূষণের স্বাস্থ্যগত সমস্যা।


৪.উন্নয়নমূলক সমস্যা: 

শিশুদের পড়াশোনার এবং মনোযোগের ক্ষেত্রে শব্দ দূষণ প্রভাবিত করতে পারে। উচ্চ শব্দের কারণে শিশুদের পাঠ এবং মনোযোগের সমস্যা হতে পারে, যা তাদের শিক্ষা জীবনকে প্রভাবিত করে।


৫.পরিবেশের ক্ষতি:

 শব্দ দূষণ কিছু প্রাণীর আচরণ এবং জীবনধারায় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদের জন্য শব্দ দূষণ একটি সমস্যা হতে পারে, কারণ 85db এর উপরে শব্দ হলে তা প্রাণীদের শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস করে। শব্দ দূষণের ফলে বহু প্রাণী এবং পাখি প্রজননে অংশ নিতে পারেনা। ফলে ওই প্রাণী ও পাখির মতন অপত্য সৃষ্টিতে বাধা পায়। ইঁদুরের ক্ষেত্রে দেখা গেছে উচ্চ শব্দের ভ্রুণের বৃদ্ধি হ্রাস পায়।তারা উচ্চ শব্দের কারণে তাদের স্বাভাবিক আচরণ ও জীবনযাত্রায় বাধা পেতে পারে।উচ্চ শব্দের কারণে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে অস্বস্তি এবং উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে।


সমাধান:

কম শব্দ যুক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার: 

গাড়ি, শিল্প প্রতিষ্ঠান,এবং নির্মাণ কাজের জন্য শব্দ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে, যা শব্দ কমাতে সাহায্য করে।


১.নিয়মিত পরিদর্শন ও নিয়ন্ত্রণ: 

সরকারী ও বেসরকারী ভাবে শব্দ নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর নিয়ম ও বিধি প্রয়োগ করা উচিত এবং নিয়মিত পরিদর্শন পরিচালনা করা উচিত।


২.সচেতনতা বৃদ্ধি:

 জনগণের মধ্যে শব্দ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং তাদের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা।


৩.যানবাহন ও শিল্প ব্যবস্থায় উন্নতি:

 যানবাহন ও শিল্প ব্যবস্থায় শব্দ কমানোর জন্য প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা।


উপসংহার:

শব্দ দূষণ একটি বহুবিধ সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে যা সরাসরি মানুষের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করে। তাই এটি মোকাবিলার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।


শসার স্বাস্থ্য উপকারিতা click Here 


Tea benefits for health click hair

চোখ click here

মধুর উপকারিতা click here

শব্দ দূষণ click here 





Post a Comment

0 Comments