গাধার কান গল্পের প্রশ্ন উত্তর ও সারাংশ।class 7 গাধার কান গল্প।

 

গাধার কান গল্পের সারাংশ। গাধার কান শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। দাদার কান প্রশ্ন উত্তর class 7। গাধার কান গল্প। গাধার কান।



                           


সূচিপত্র:

ক।কবি পরিচিতি

খ) উৎস

গ। বিষয়সংক্ষেপ

ঘ। নামকরণ

ঙ) হাতে-কলমে সমাধান


ক) লেখক পরিচিতি:

 ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মার্চ বিহারের পূর্ণিয়া জেলায় শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম।তাঁর বাবার

 নাম তারাভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মা বিজ্ঞপ্রিভা দেবী। শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায় কলকাতার

 বিদ্যাসাগর কলেজে স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা করেন। 'গৌড় যান,'ভরার তীরো, তুমি

 সন্ধ্যার মেঘ' প্রভৃতি ঐতিহাসিক উপন্যাস এবং সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সীর ডিটেকটিভ

 কাহিনিগুলি শরদিন্দুর স্মরণীয় সৃষ্টি। তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত ছোটোগল্পের নাম হল

 'জাতিস্মর,'চুয়া চন্দন,'বিষকন্যা,'প্রতিদ্ব 'প্রেমিক,' 'রূপকথা' প্রভৃতি। রচনার পাশাপাশি শিশু-

কিশোরদের জন্যও তিনি লিখেছেন শিশু সাহিত্যে তাঁর রচিত একটি স্মরণীয় চরিত্র 'সদাশিব'।

 পরিণত বয়সে অনেকটা সময় মুম্বাই ও পুনেতে কাটানোয় শিবাজির প্রথম জীবনের নানা

 ধরনের কাহিনি ধরা দিয়েছে তাঁর ছোটোগল্পে। 'তুঙ্গভদ্রার তীরে' উপন্যাসটির জন্য ১৯৬৭

 খ্রিস্টাব্দে তিনি 'রবীন্দ্র পুরস্কার' লাভ করেন। ওই বছরই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে 'শরৎ

 স্মৃতি পুরস্কার'-এ সম্মানিত করে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ২২ সেপ্টেম্বর এই মহান সাহিত্যিকের

 মৃত্যু হয়।


বিষয়সংক্ষেপ: 

দুটো স্কুলের মধ্যে ফুটবলে ফাইনাল ম্যাচ। একদিকে টাউন স্কুল আর অন্যদিকে মিশন স্কুল।

 সেই ম্যাচকে ঘিরে শহরজুড়ে বেশ উত্তেজনা। টাউন স্কুলের ক্যাপটেন গিরীনের খুব চিন্তা।

 খেলা প্রায় শুরু হতে চলেছে অথচ এখনও দলের নির্ভরযোগ্য হাফ-ব্যাক সমরেশের দেখা

 নেই। এদিকে সমরেশ শহরজুড়ে বাচ্চা বা বড়ো যে-কোনো একটা গাধা খুঁজে বেড়াচ্ছে।

 টাউন স্কুলের খেলোয়াড়দের বিশ্বাস, ম্যাচ শুরুর আগে গাধার কান না মলতে পারলে

 জেতার কোনো সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে সমরেশ হতাশ হয়ে ফিরে জানায়, শহরে একটাও

 গাধার দেখা পাওয়া যায়নি। এমনকি বাচ্চা গাধাও না। ফলে সে ভাবে যে, এই বছর মিশন

 স্কুলকে তারা আর হারাতে পারবে না। এইসব কথাবার্তা শুনে নবাগত টুনু কিছুতেই হাসি

 থামাতে পারে না। সে এসব তুকতাকে বিশ্বাস করে না। এর জন্য সমরেশ রীতিমতো রেগে

 গিয়ে টুনুরই কান মলে দেয়। টুনু প্রতিবাদ করে বলে যে, গাধার কান না মললেও তার স্কুল

 ম্যাচ জিতবে। খেলা শুরুর সময়ে যখন দলের খেলোয়াড়রা মাঠে দাঁড়িয়, তখন টুনু

 আবিষ্কার করল যে, ওই ম্যাচের রেফারি দিব্যেন্দুবাবু। দিব্যেন্দুবাবু জিলিপি খেতে

 ভালোবাসেন। ম্যাচের আগে যে দল তাঁকে পেট ভরে জিলিপি খাওয়ায়, তিনি সেই পক্ষকে

 জিতিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ কথা শোনার পর টাউন স্কুলের খেলোয়াড়দের মনোবল

 অনেকখানি কমে গেল। শেষপর্যন্ত খেলা শুরু হল।প্রথম মিনিট দশেক মিশন স্কুল চেপে

 রইল। গোলকিপার প্রশান্তকে অনেকগুলো গোল বাঁচাতে হল। অবশেষে বল টুনুর পায়ে

 পৌঁছোল। হরিণের মতো গতিতে বল নিয়ে বিপক্ষ দলের গোলের কাছে পৌঁছোল সে। কিন্তু

 শট নেওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে দুটো ব্যাক পেছন থেকে এসে টুনুর ঘাড়ের ওপর পড়ল।

 দিব্যেন্দুবাবু পেনাল্টি না দিয়ে টাউন স্কুলের বিরুদ্ধে অফসাইট দিলেন। তুমি বুঝা গেল এ

 সবই জিলিপির মাহাত্ম্য। এরই মধ্যে সে তার পায়ের আঙুলে চোটও পেল। প্রথম অর্ধে হঠাৎ

 করেই মিশন একটা গোল দিয়ে দিল। বিরতির সময় গিরীন টুনুর পাশে বসে তার গলা

 জড়িয়ে ধরে বলল,'তুই যদি চেষ্টা করিস তাহলে তিনটে গোল দিতে পারিস।' শিরীনের

 একটাই দাবি 'পায়ের ব্যথা ভুলে যা, শুধু মনে রাখ, আজ আমাদের জিততেই হবে।'গিরীনের

 এই আন্তরিক আবেদনে টুনুর মনে জন্ম নিল এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।

খেলার দ্বিতীয় অর্থে, দুজন হাফ-ব্যাককে পাশ কাটিয়ে, দুজন হুমদো ব্যাকের ওপর দিয়ে বল

 তুলে দিয়ে, গোলকিপারের সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা হল টুনুর। টুনুর পা থেকে বলটা গড়াতে

 গড়াতে গোলে ঢুকল। ধাক্কাধাক্কিতে তার পায়ের আঙুলও ঠিক হয়ে গেল। এরপর টুনু তার

 আশ্চর্য খেলা দেখাল। খেলা যখন শেষ হল তখন টাউন স্কুল দিয়েছে চার গোল, আর মিশন

 স্কুল দিয়েছে মাত্র এক গোল।

খেলা শেষের পর সমরেশ ঠাট্টা করে জানায় যে, খেলা শুরুর আগে সে টুনুর কান মলেছিল,

 তাই জিতেছে। ভবিষ্যতে তাই আর গাধার কান মলার দরকার নেই। টুনুর দক্ষতা ও

 আত্মবিশ্বাসের জন্যই সেই ম্যাচে টাউন স্কুল হারাতে সক্ষম হয়েছিল মিশন স্কুলকে। তাই

 টুনুই তো সত্যিকারের হিরো


নামকরণ: 

নামকরণের মধ্য দিয়েই রচিয়তা তাঁর রচনা সম্পর্কে পাঠকদের আগাম ধারণা দেন।

'গাধার কান' নামক গল্পটির মূল বিষয় টাউন স্কুল এবং মিশন স্কুলের মধ্যে ফুটবল ম্যাচ।

 একই সঙ্গে এটি একটি কুসংস্কারবিরোধী গল্প। টাউন স্কুলের খেলোয়াড়দের ধারণা ছিল যে,

 গাধার কান মলে খেলতে নামলে তারা জিতবে। আগেও অনেকবার তারা এই কাণ্ডটি

 করেছে। তাই টাউন স্কুলের সমরেশ গাধা খুঁজতে যায়। কিন্তু গাধা খুঁজে না পেয়ে ফিরে আসে

 সে। এর ফলে তাদের ধারণা হয় এবারের ম্যাচ তারা হারছেই। টাউন স্কুলের টুনু গাধার

 কানমলার কথা শুনে হেসে ওঠে। এজন্য সে কানমলা খায় সমরেশের কাছে। ম্যাচ শেষে

 দেখা যায় জয়লাভ করেছে টাউন স্কুলই। সমরেশ এবার রসিকতা করে বলে যে, গাধার

 পরিবর্তে খেলতে নামার আগে সে টুনুর কান মলে দিয়েছিল বলেই তাদের দল জিতেছে।

 এইভাবে গল্পটি শেষ হয়, আর আমরা বুঝতে পারি এই গল্পের নামকরণটি ব্যঞ্জনাধর্মী এবং

 ব্যঙ্গাত্মক। হাসি, মজার মাধ্যমেই লেখক সামাজিক অন্ধবিশ্বাসকে আঘাত করেছেন এবং

 প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। গল্পকার আমাদের এই বার্তাই দিয়েছেন যে, অন্ধ কুসংস্কারের

 কাছে মাথা নত নয়, চেষ্টা আর মনের জোরই আমাদের পৌঁছে দিতে পারে সাফল্যের

 সিঁড়িতে। এসব দিক বিচার করে বলা যায়, গল্পটির নামকরণ 'গাধার কান' ব্যঞ্জনাধর্মী এবং

 সার্থক।


১)নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো।

১.১'শহরের মধ্যে বেশ একটু সাড়া পড়ে গেছে' – এই ‘সাড়া পড়ার' কারণ কী?

উত্তর: ‘সাড়া’ শব্দটির অর্থ হল- ‘শোরগোল’। শহরের দুটি স্কুল-টাউন স্কুল আর মিশন স্কুলের

 মধ্যে ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ। দুই দলের মধ্যে এত রেষারেষি যে আগে থেকে অনুমান করা

 যায় না, কোন্ দল কাপ জিতবে। সব মিলিয়ে এই দুই দলের খেলা শহরের মানুষের কাছে

 অত্যন্ত আকর্ষণের বিষয়। তাই এ বছরেও ওই দুই দলের মধ্যে ফুটবল ম্যাচ ঘিরে বেশ

 শোরগোল পড়ে গেছে।


১.২'এই দুই স্কুলের ছেলেদের মধ্যে চিরকালের রেষারেষি'- কোন্ দুই স্কুলের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: এই দুই স্কুল বলতে টাউন স্কুল আর মিশন স্কুলের কথা বলা হয়েছে।


১.৩ 'হিঃহিঃ-তুক্ করা হলো না!'-বক্তা কে? কাকে সে এ কথা? বলেছে? কখন বলেছে?

উত্তর:  শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘গাধার কান' শীর্ষক গল্প থেকে নেওয়া উদ্ধৃতিটির বক্তা

 হল টাউন স্কুলের রোগাপটকা ফুটবল খেলোয়াড় টুনু।

টাউন স্কুলের হাফ-ব্যাক খেলোয়াড় সমরেশকে সে এ কথা বলেছে।

যে সময় কথাটি বলেছে: মিশন স্কুল ও টাউন স্কুলের মধ্যে ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ শুরু

 হওয়ার সামান্য আগে সমরেশ গাধার কান মলতে না পারায় খেলার ফল নিয়ে চিন্তিত হয়ে

 পড়েছিল। সেই সময় টুনু হাসতে হাসতে এই মন্তব্যটি করেছিল।


১.৪ গল্পে ফুটবল খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু শব্দ রয়েছে, যেমন-হাফ-ব্যাক, রাইট-ইন,

 গোলকিপার, সেন্টার ফরোয়ার্ড, ব্যাক- এরিয়া ইত্যাদি। আরও কিছু শব্দ তুমি গল্প থেকে

 খুঁজে নিয়ে লেখো। এ ছাড়াও, নিজস্ব কিছু সংযোজনও করতে পার।


উত্তর:প্রশ্নে উদ্ধৃত শব্দগুলি ছাড়া আরও কিছু শব্দ হল-কর্নার, ফাউল,অফসাইড, পেনাল্টি

 কিক, হাফ-ভলি,বাইসাইকেল কিক, ইয়োলো কার্ড, রেড কার্ড, ট্রাইব্রেকার, লাইন্সম্যান,

 রেফারি,হ্যান্ডবল ইত্যাদি।


৮)গল্প অনুসরণে নিজের ভাষায় উত্তর দাও।

৮.১)'আজকের খেলাটা যে খুব জমবে তাতে সন্দেহ নেই।'-কোন্ বিশেষ দিনের কথা এখানে

 বলা হয়েছে? সেদিনের, সেই খেলার মাঠের দৃশ্যটি নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।


 উত্তর: যে বিশেষ দিনে টাউন স্কুল আর মিশন স্কুলের মধ্যে ফাইনাল ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত

 হয়, বলতে সেই বিশেষ দিনের কথা বলা হয়েছে।

খেলার মাঠের দৃশ্য:

 ফাইনাল ম্যাচের দিন চারটে বাজতে না বাজতেই মাঠে লোক জমতে শুরু করে। কারণ

 মানুষ জানে টাউন স্কুল আর মিশন স্কুলের ছেলেদের মধ্যে চিরকালের রেষারেষি। টাউন

 স্কুলে যেমন গিরীন, সমরেশ বা টুনুর মতো দক্ষ খেলোয়াড়রা আছে, তেমনই মিশন স্কুলের

 দলও বেশ মজবুত। তারা বেশিরভাগই বুট পরে খেলে, গায়ে জোরও বেশি। তাই মানুষের

 আগ্রহেরও শেষ নেই।খেলা শুরুর পর প্রথম মিনিট দশেক মিশন স্কুল তাদের আধিপত্য

 বজায় রাখে। এরই মধ্যে টুনুকে পেনাল্টি বক্সে ফাউল করা হলেও রেফারি পেনাল্টি না দিয়ে

 অফসাইড দেন। পরে একবার বল পেলেও টুনু খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি।

 হাফটাইমের মিনিট পাঁচেক আগে হঠাৎই মিশন স্কুল গোল দিয়ে দেয়।হাফ টাইমের পরে

 আবার খেলা শুরু হয়। টুনু আহত পা নিয়েও ব্যাকদের টপকে গোল করে দিয়ে যায়।

এরপর মিশন স্কুলের ছেলেরা মারামারি করে খেলতে শুরু করে দেয়। টুনু এরই মধ্যে হরিণের

 মতো তীব্র গতিতে বল নিয়ে সেন্টার ফরোয়ার্ড রণজিতের দিকে বলটা পাস করে দেয়।

 রণজিৎ গোল দেয়। দ্বিতীয় গোল খেয়ে যাওয়ার পর আর মিশন স্কুল ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

 টুনু অসম্ভব দক্ষতায় আরও দু-দুটো গোল বিপক্ষের জালে ঢুকিয়ে দেয়। ম্যাচ শেষের

 ফলাফল দাঁড়াল টাউন স্কুল চার আর মিশন স্কুল এক। ম্যান অব দ্য ম্যাচ টুনু। উচ্ছ্বাস আর

 চেপে রাখতে পারল না টাউন স্কুলের টুনু-সহখেলোয়াড়রাও। অধিনায়ক গিরীন টুনুকে দু-

হাতে ধরে কাঁধে তুলে নিয়ে বলতে লাগল,বল থ্রি চিয়ার্স ফর টুনু। হিপ হিপ হিপ হুররে।'


৮.২'সমরেশদা কোথায় গেছে?'-এই সমরেশদার পরিচয় দাও।সে কোথায়, কোন উদ্দেশ্যে

গিয়েছিল? তার উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল কি?

 উত্তর: শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'গাধার কান' শীর্ষক গল্পের অন্যতম একটি চরিত্রের

 নাম সমরেশদা। টাউন স্কুলের ফুটবল দলে এই সমরেশদা হাফ-ব্যাক পোজিশানে খেলে। সে

 দলের অন্যতম ভরসাযোগ্য প্লেয়ার। তবে ছেলেটি খুবই কুসংস্কারাচ্ছন্ন।

দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের মতো তারও বিশ্বাস, খেলা শুরুর আগে যদি কোনো গাধার

 কান মলে দেওয়া যায় তা হলে জয় সুনিশ্চিত। তাই মিশন স্কুলের সঙ্গে ফাইনাল ম্যাচের দিন

 দুপুর একটা থেকে সমরেশ মাঠে, ঘাটে, এমনকি ধোপার বাড়িতেও গাধা খুঁজে বেড়িয়েছে।

 যাতে তার কানটা মলে ম্যাচের জয় নিশ্চিত করা যায়। সমরেশদের এই উদ্দেশ্য সফল

 হয়নি। মাঠে, ঘাটে, এমনকি ধোপার বাড়িতে কোথাও একটা গাধা তার চোখে পড়েনি।

 এমনকি একটা গাধার বাচ্চাকেও সেদিন কানমলার জন্য খুঁজে পায়নি।


৮.৩'এই সময় মাঠে রেফারির বাঁশি বেজে উঠল' রেফারি'টি কে? তাঁর সম্পর্কে ছেলেদের

 ধারণা কীরূপ ছিল? খেলার মাঠে তিনি কেমন ভূমিকা পালন করলেন?


উত্তর: শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'গাধার কান গল্পে উল্লিখিত-রেফারিটি হলেন দিব্যেন্দুবাবু।

তাঁর সম্পর্কে ছেলেদের ধারণা এই যে, দিব্যেন্দুবাবু একেবারেই নিরপেক্ষ রেফারি নন। তিনি

 জিলিপি খেতে ভালোবাসেন। তাই ম্যাচের আগে যে দল তাঁকে পেট ভরে জিলিপি খাওয়ায়,

 সেই দলকে তিনি ম্যাচে জিতিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।


মিশন স্কুলের সঙ্গে টাউন স্কুলের ফাইনাল ম্যাচের দিন দিব্যেন্দুবাবুকে মিশন স্কুলের

 ফুটবল দল জিলিপি খাইয়েছিল, এমন কোনো প্রমাণ নিশ্চিতভাবে অবশ্য পাওয়া যায়নি।

 তবে ম্যাচের প্রথম অর্ধে টাউন স্কুলের রাইট-ইন টুনুকে মিশন স্কুলের ব্যাক আঘাত করলেও

 দিব্যেন্দুবাবু পেনাল্টি দেননি। উপরন্তু, টাউন স্কুলের বিরুদ্ধে দিলেন অফসাইড। খেলার

 দ্বিতীয় অর্ধে টাউন স্কুলের খেলোয়াড়রা যেভাবে খেলল তাতে করে দিব্যেন্দুবাবুর বিশেষ কিছু

 করার ছিল না। খেলার নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে চলতে হয়েছে এবং টাউন স্কুলের দেওয়া চার

 গোলকে স্বীকৃতি জানাতে হয়েছে।


৮.৪ 'খেলায় যে ফলাফল হল, তাতে তুমি কি খুশি হলে? তোমার উত্তরের সমর্থনে যুক্তি দাও।

উত্তর: টাউন স্কুলের সঙ্গে মিশন স্কুলের ফাইনাল ফুটবল ম্যাচের ফলাফলে আমি খুব খুশি

 হয়েছি এবং এক অপরিসীম আনন্দ উপভোগ করেছি।

আমার মত:

 প্রথম অর্ধে রেফারি দিব্যেন্দুবাবু টাউন স্কুলের দলকে নিশ্চিত পেনাল্টি শট মারার সুযোগ

 থেকে বঞ্চিত করেছেন। কিন্তু এর পরেই প্রবল প্রচেষ্টা আর মানসিক দৃঢ়তায় টুনু দারুণ

 ফুটবল খেলেছে। গোলকিপারের সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কার পরেও সে প্রথম গোলটা শোধ

 দিয়েছে এবং তারপরে নিজের কৃতিত্বে সেন্টার ফরোয়ার্ড রণজিৎকে দিয়ে গোল করিয়েছে।

 শুধু তাই নয়, নিজে আরও দু-দুটো গোল দিয়ে জয়কে আরও মধুর করে তুলেছে। ম্যাচ হেরে

 যেতে বসেছে বুঝে, মিশন স্কুলের খেলোয়াড়রা অকারণে মারামারি করে খেলতে থাকে।

 টাউন স্কুলের খেলোয়াড়রা কিন্তু মারামারির পথে যায়নি, বরং নিজেদের দক্ষতার ওপরেই

 আস্থা রেখে মিশন স্কুলকে চার গোল দিয়েছে। তাই আমি টাউন স্কুলের এই জয়ে খুবই খুশি।


৮.৫ 'গল্পে যে ফলাফলের কথা বলা হয়েছে, তার বিপরীতটি যদি ঘটত, তাহলে গল্পের

 উপসংহারটি কেমন হত তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর: গল্পের ফাইনাল ম্যাচের ফলাফল যদি বিপরীত হত, অর্থাৎ মিশন স্কুল চার আর টাউন

 স্কুল এক—এইরকম ফল যদি হত, তাহলে গল্পের উপসংহার কেমন হত তার একটা ইঙ্গিত

 বর্তমান গল্পেই দিয়েছেন লেখক। ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে ক্যাপটেন গিরীন সমরেশকে

 বলেছে— 'ছেড়ে দে সমর, খেলার আগে আর কিছু বলিসনি। কিন্তু যদি হেরে যাই—।' এখান

 থেকে বোঝা যায় টাউন স্কুল হেরে গেলে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হত রোগাপটকা টুনুর।

 সমরেশ, শানু, প্রণব বা গিরীন কেউই ছেড়ে কথা বলত না টুনুকে।ভবিষ্যতে টুনু

 কোনোদিনও হয়তো বা টাউন স্কুলের টিমে সুযোগ পেত না। প্রবল প্রচেষ্টা আর মানসিক

 জোরকে হয়তো চিরকালের মতন হার মানতে হত। আর এর ফলে গাধার কান মলার মতো

 কুসংস্কারও চিরস্থায়ী হয়ে যেত। 


৮.৬ গল্পে বলা হয়েছে'-আজ টুনুই আমাদের হিরো!'-তোমার টুনু চরিত্রটিকে কেমন লাগল?

সত্যিই কি নায়কের সম্মান তার প্রাপ্য?

উত্তর: শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'গাধার কান' গল্পে বর্ণিত টুনু চরিত্রটিকে আমার খুব

 ভালো লেগেছে। টুনু সম্পর্কে লেখক মন্তব্য করেছেন,'টুনু ছেলেটি রোগা-পটকা, কিন্তু বল

 তার পায়ে পড়লে তাকে আটকানো শক্ত। দৌড়াতে পারে সে ঠিক হরিণের মতো!' স্কুল দলে

 প্রথম জায়গা পাওয়া টুনু অন্যদের মতো তুকতাকে বিশ্বাস করে না। খেলার প্রথম অর্ধে

 ধাক্কাধাক্কিতে টুনুর পায়ের বুড়ো আঙুলটা প্রায় ভেঙে যায়। ব্যথায়, যন্ত্রণায় কাতর টুনু

 এরপরও কিন্তু মনোবল হারায়নি।


খেলার দ্বিতীয় অর্থটা যেন টুনুর সাফল্যের জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। পায়ের ব্যথা ভুলে ব্যাকদের

 টপকে সে গোল করে। গোলকিপারের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে টুনুর পায়ের ব্যথা যেন ভালো হয়ে

 গেল। এরপর টুনু সেন্টার ফরোয়ার্ড রণজিৎকে পাস দিয়ে গোল করাল এবং নিজে আরও দু-

 দুটো গোল করল। দ্বিতীয় অর্থটা টুনুই মাঠ জুড়ে রাজত্ব করল। নিজের দলকে সে শুধু

 জেতাল তা-ই নয়, অশ্বসংস্কারের শৃঙ্খল থেকে গিরীন, সমরেশ, প্রণব, শানুদের বার করে

 নিয়ে এসে সংকল্পের আলোয় আলোকিত করল। এইসব কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে

 করি টুনুই এদিনের সত্যিকারের নায়ক।


৮.৭' গিরীন কীভাবে খেলার মাঠে টুনুকে ক্রমাগত উৎসাহ আর সাহস জুগিয়েছিল তা

আলোচনা করো।

উত্তর: গিরীন হল টাউন স্কুলের ফুটবল দলের অধিনায়ক। খেলা শুরু হওয়ার আগে তাকে

 আত্মবিশ্বাসী মনে হয়নি। বরং সমরেশের দেরি করে ফেরার কারণে বেশ খানিকটা উদবিগ্নই

 লেগেছে তাকে। সে-ও সমরেশ বা প্রণবের মতো এই অন্ধসংস্কারে বিশ্বাস রেখেছে যে, গাধার

 কান না মলে খেলতে নামলে ম্যাচ হারতে হবে।

ম্যাচের রেফারি হিসেবে দিব্যেন্দুবাবু ক্রমাগত টুনুকেই সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে। নিশ্চিত

 পেনাল্টি পাওয়া থেকে টাউন স্কুলকে বঞ্চিত করে রেফারি যখন মিশন স্কুলের পক্ষে

 অফসাইড দেন, তখন টুনুকে উদ্‌বুদ্ধ করতে গিরীন তাকে বলেছে, 'দিব্যেন্দুবাবু যা খুশি

 করুন, আজ তোকে গোল দিতে হবে মনে থাকে যেন। হাফ টাইমে নিজের আঘাত টুনুকে

 দেখিয়ে তাকে নতুন উদ্যমে খেলতে উৎসাহ জুগিয়েছে গিরীন। সবথেকে বড়ো কথা, টুনুর

 পাশে বসে তার গলা জড়িয়ে ধরে সে টুনুকে বলেছে, 'আজ তুইই ভরসা।'তার উৎসাহেই টুনু

 নিজে তিনটে গোল করেছে, রণজিৎকে দিয়ে একটি গোল করাতে সাহায্য করেছে। টুনুর

 সাফল্যের পিছনে এইভাবে অধিনায়ক গিরীন আন্তরিক প্রেরণা জুগিয়েছে।


CONTENTS:

আরো পড়ুন:

ছন্দে শুধু কান রাখো কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here

পাগলা গনেশ গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here

বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here

একুশের কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here

আত্মকথার প্রশ্ন উত্তর Click Here

খোকনের প্রথম ছবি প্রশ্ন উত্তর Click Here

কুতুব মিনারের কথা প্রশ্ন উত্তর Click Here


মেঘ চোর গল্পের প্রশ্ন উত্তর প্রথম Part Click Here

মেঘ চোর গল্পের প্রশ্ন উত্তর দ্বিতীয় Part Click Here

স্মৃতিচিহ্ন কবিতার প্রশ্ন উত্তর click Here 

নোট বই কবিতার প্রশ্ন উত্তর click Here 

চিরদিনের কবিতার প্রশ্ন উত্তর click Here 

ভানুসিংহের পত্রাবলী প্রশ্ন উত্তর click Here 

রাস্তায় ক্রিকেট খেলা প্রশ্ন উত্তর click Here 

গাধার কান গল্পের প্রশ্ন উত্তর click Here 














Post a Comment

0 Comments