স্বাধীনতার সংগ্রামে নারী
কমলা দাশগুপ্ত
সূচিপত্র:
ক।কবি পরিচিতি
খ) উৎস
গ। বিষয়সংক্ষেপ
ঘ। নামকরণ
ঙ) হাতে-কলমে সমাধান
e-bookap পেজটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুখবর-1st- ইউনিট,2nd ইউনিট,3nd ইউনিট,টেস্ট
ফাইনাল পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্যগুরুত্বপূর্ণভাবে তোমাদের সাহায্য করবে।তাই এই সাফল্য
আমাদের কাছে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ক) কবি পরিচিতি:
বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুর গ্রামে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে কমলা দাশগুপ্তের জন্ম
হয়। পরে তাঁর পরিবার কলকাতায় চলে আসেন। যুগান্তর গোষ্ঠীর সংস্পর্শে এসে তিনি সশস্ত্র
আন্দোলনে যোগ দেন। এরপর তিনি বহুবার কারাবরণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি
নোয়াখালি রিলিফ ক্যাম্পের তদারকির দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজি
নোয়াখালি পরিদর্শনে গেলে সেখানে গান্ধিজির সঙ্গে কমলাদেবীর দেখা হয়। ১৯৫৪
খ্রিস্টাব্দে তাঁর আত্মজীবনী 'রক্তের অক্ষরে' প্রকাশিত হয়। তিনি মন্দিরা' পত্রিকার সম্পাদনা
করেছিলেন। তাঁর 'স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী" গ্রন্থে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী,
নারীদের জীবন ও লড়াইয়ের ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে কমলা দাশগুপ্ত মারা
যান।
খ) উৎস:
'স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী' রচনাটি কমলা দাশগুপ্তর 'স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী' নামক
গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
গ) বিষয়সংক্ষেপ:
স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-ননীবালা দেবী। ১৮৮৮
খ্রিস্টাব্দে হাওড়া জেলার বালিতে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর পিতার নাম সূর্যকান্ত ব্যানার্জি, মায়ের
নাম গিরিবালা দেবী। এগারো বছর বয়সে ননীবালা দেবীর বিয়ে হয়। বিয়ের মাত্র পাঁচ বছর
পরেই তিনি বিধবা হন। একসময় তিনি রিষড়ায় নিজের বাড়িতে তাঁর বিপ্লবী ভাইপো
অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর সহযোগীদের আশ্রয় দেন। সেখানে পুলিশের নজর পড়লে
অমর চ্যাটার্জি পালিয়ে যান। কিন্তু ধরা পড়েন তাঁর সঙ্গী রামচন্দ্র মজুমদার। বিধবা ননীবালা
দেবী তাই রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী সেজে প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে রামচন্দ্রের ইনটারভিউ
নিয়ে জেনে নেন 'মসার' পিস্তলের গুপ্ত খবর। বিপ্লবীদের নামে তখন ব্রিটিশ সরকারের
হুলিয়া জারি ছিল। এরপর চন্দননগরেও পুলিশের তল্লাশি শুরু হলে ননীবালা দেবী তাঁর বন্ধুর
দাদা প্রবোধ মিত্রের সঙ্গে পালিয়ে যান পেশোয়ারে। সেখানে গিয়ে পুলিশ দেখে ননীবালা
দেবীর কলেরা হয়েছে। পরদিন তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয় কাশীতে। ননীবালা
দেবীর মুখ দিয়ে কোনো স্বীকারোক্তি আদায় করা সম্ভব হল না। তাই তাঁকে নিয়ে আসা হয়
কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে। সেখানে গিয়ে তিনি অনশন শুরু করেন। এরপর প্রেসিডেন্সি
জেলের আইবি পুলিশের স্পেশাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট গোল্ডি সাহেব তাঁকে অপমান করলে
ননীবালা দেবী গোল্ডি সাহেবের গালে এক চড় বসিয়ে দেন। এভাবে দুই বছর
বন্দিজীবন কাটিয়ে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি মুক্ত হন। শেষজীবনে আত্মীয়স্বজনের লাঞ্ছনা সহ্য
করে তাঁকে জীবন কাটাতে হয়েছিল।
এরপর লেখক কমলা দাশগুপ্ত উল্লেখ করেছেন দুকড়িবালা দেবীর আত্মত্যাগের কাহিনি।
১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে বীরভূম জেলার নলহাটি থানার ঝাউপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর পিতার
নাম নীলমণি চ্যাটার্জি ও মা কমলাকামিনী দেবী। বোনপো নিবারণ ঘটক ও তাঁর বিপ্লবী
বন্ধুদের সহায়তায় দুকড়িবালাদেবী দেশের জন্য আত্মত্যাগে ব্রতী হন। নিবারণ ঘটক ও তাঁর
বন্ধুদের স্বদেশি বই বা বেআইনি বই পড়ার একমাত্র জায়গা ছিল দুকড়িবালা দেবীর বাড়ি।
একদিন বোনপো নিবারণ সাতটা চুরি করা মসার পিস্তল এনে তাঁর মাসির বাড়িতে লুকিয়ে
রাখেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে পুলিশ দুকড়িবালা দেবীর বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং
তল্লাশি চালিয়ে সেই চুরি যাওয়া সাতটি পিস্তল উদ্ধার করে। বিচারে দুকড়িবালা দেবীর দু-
বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ হয়। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে তিনি মুক্তি পান।
সম্ভবত ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়।
ঘ) নামকরণ:
নামকরণের মধ্য দিয়েই পাঠক রচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আগাম ধারণা লাভ করেন। বিপ্লবী
কমলা দাশগুপ্তের রচিত 'স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী' এখানে লেখিকা দু-জন সংগ্রামী নারীর
কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁরা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ
করেছিলেন এবং স্বদেশের মুক্তিলাভের আকাঙ্ক্ষায় উৎসর্গ করেছিলেন নিজেদের জীবন।
তাঁরা হলেন ননীবালা দেবী ও দুকড়িবালা দেবী। ননীবালা দেবী বিধবা হন মাত্র ষোলো বছর
বয়সে। এরপর তিনি বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষা নেন। তিনি বিপ্লবীদের সহায়তা করতেন। গ্রেফতার
হয়েও সহকর্মী বিপ্লবীদের নাম একবারের জন্যও প্রকাশ করেননি ননীবালা দেবী। লেখিকা
সুন্দরভাবে ননীবালা দেবীর আত্মত্যাগের কাহিনি এই রচনায় প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে,
দুকড়িবালা দেবী তাঁর কোলের সন্তানকে রেখে দু-বছরের কারাবাস ভোগ করেছিলেন।
ব্রিটিশ সরকার তাঁর মুখ থেকে বিপ্লবীদের সম্পর্কে কোনো তথ্য জানতে পারেনি। ননীবালা
দেবী ও দুকড়িবালা দেবী—এই দুই নারী সমস্ত দিক থেকে বিপ্লবীদের লড়াইতে সহায়তা
করতেন। নিজেদের সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়ে তাঁরা ব্রিটিশের অত্যাচার সহ্য করেছিলেন শুধু
দেশমাতার মুক্তির লক্ষ্যে। তাঁদের সেই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যেন ভারতীয় নারীদের
ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামই চিত্রিত হয়েছে। তাই বলা যায়, রচনাটির ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী'
নামকরণ যথাযথ এবং সার্থক হয়েছে।
উ) হাতে কলমে সমাধান:
১)ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখ:
১.১) ননীবালা দেবী বিপ্লবের দীক্ষা পেয়েছিলেন- অমরেন্দ্র চ্যাটার্জী/ গোপাল মুখার্জি
ভোলানাথ চ্যাটার্জি/এর কাছে।
উত্তর: অমরেন্দ্র চ্যাটার্জি এর কাছে।
১.২)ননীবালা দেবী-রিষড়াতে/ চুঁচুড়াতে/চন্দননগরে- অমর চ্যাটার্জি এ তাঁর কয়েকজন
সহকর্মীকে আশ্রয় দেন।
উত্তর: রিষড়াতে।
১.৩) চন্দননগর থেকে পালিয়ে ননীবালা দেবী যান- পেশোয়ারে/ কাশীতে/ রিষড়াতে
উত্তর: পেশোয়ারে।
১.৪)কাশীর ডেপুটি পুলিশ সুপার-জিতেন ব্যানার্জি/ হিতেন ব্যানার্জি/ যতীন ব্যানার্জি-
ননীবালা দেবীকে জেরা করতেন।
উত্তর:যতীন ব্যানার্জি।
১.৫)পুলিশ সুপার গোল্ডির কাছে ননীবালা দেবী- সারদামণি দেবী/ ভগিনী নিবেদিতা
দুকড়িবালা দেবী-র কাছে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
উত্তর: সারদামণি দেবী।
১.৬) দুকড়িবালা দেবী বিপ্লবের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন-বোনপো/ ভাইপো/ভাই) নিবারণ
ঘটকের কাছে।
উত্তর: বোনপো
১.৭) বিপ্লবী হরিদাস দত্ত-গাড়োয়ান / পুলিশ/খালাসি-র ছদ্মবেশে পিস্তল চুরি করেন।
উত্তর: গাড়োয়ান।
সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও:
২১)বিপ্লবী রামচন্দ্র মজুমদারের'মসার' (পিস্তল)-এর খোঁজ নেওয়ার জন্য ননীবালা দেবী কী
কৌশল অবলম্বন করেছিলেন?
উত্তর: কমলা দাশগুপ্তের রচিত স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী গল্পে,বিপ্লবী রামচন্দ্র
মজুমদারের'মসার'(পিস্তল)-এর খোঁজ নেওয়ার জন্য বিধবা ননীবালা দেবী রামচন্দ্র
মজুমদারের স্ত্রী সেজে প্রেসিডেন্সিজেলে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি রামচন্দ্রমজুমদারের
ইন্টারভিউ নিয়ে পিস্তলের গুপ্ত খবর জেনেএসেছিলেন।
২.২) “এঁদের সকলেরই মাথায় অনেক হাজার টাকার হুলিয়া ছিল।”-'হুলিয়া' শব্দটির অর্থ কী?
এঁরা কারা? এঁদের আশ্রয়দাত্রী কে ছিলেন ? হুলিয়া থাকার জন্য এঁরা কীভাবে চলাফেরা
করতেন?
উত্তর:'হুলিয়া' শব্দটির অর্থ হল- পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করার জন্য তার চেহারার
বর্ণনা-সহ বিজ্ঞাপন।
** এঁরা হলেন পলাতক বিপ্লবী নেতা যাদুগোপাল মুখার্জি, অমর চ্যাটার্জি, অতুল ঘোষ,
ভোলানাথ চ্যাটার্জি, নলিনীকান্ত কর, বিনয়ভূষণ দত্ত ও বিজয় চক্রবর্তী।
**এঁদের আশ্রয়দাত্রী ছিলেন ননীবালা দেবী। ইনি ছিলেন সম্পর্কে বিপ্লবী অমরেন্দ্র চ্যাটার্জির
পিসি।
** হুলিয়া থাকার জন্য এঁরা ছিলেন নিশাচর। শুধুমাত্র রাতের বেলা সুবিধামতো বেরিয়ে
পড়তেন। দিনের বেলা দরজা-জানলা বন্ধ করে ঘরেই সময় কাটাতেন। নিষ্ঠুর শিকারির
মতন পুলিশ তাঁদের ধরতে এলেই তাঁরা নিমেষে অদৃশ্য হয়ে যেতেন। তাদের নামে হুলিয়া
ছিল বলেই কোনো একটি নির্দিষ্ট আস্তানায় বেশিদিন তাঁরা থাকতেন না। তাই কখনও তাঁরা
আশ্রয় নিতেন রিষড়ায়, আবার কখনও বা চন্দননগরে।
২৩ “ননীবালা দেবী পলাতক হলেন”— ননীবালা দেবী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন কেন?
তিনি পালিয়ে কোথায় গিয়েছিলেন? সেখানে তিনি কোন্ অসুখে আক্রান্ত হন ?
উত্তর: কমলা দাশগুপ্তের রচিত স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী গল্পে, চন্দননগরের বিভিন্ন বাড়িতে
যখন ইংরেজ পুলিশ আচমকা তল্লাশি শুরু করল, তখন ননীবালা দেবী চন্দননগরে লুকিয়ে
থাকাটা আরনিরাপদ বলে মনেকরলেন না।তাই তিনি চন্দননগর থেকে পালিয়ে যেতে
একরকম বাধ্য হয়েছিলেন।
* তিনি পেশোয়ারে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি কলেরায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
২.৪)“ননীবালা দেবী সবই অস্বীকার করতেন”-ননীবালা দেবী কোন কথা অস্বীকার করতেন?
তার ফলশ্রুতিই বা কী হত?
উত্তর: কমলা দাশগুপ্তের রচিত স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী গল্পে,ননীবালা দেবীকে পেশোয়ার
থেকেগ্রেফতার করে কাশীতে আনার পর সেখানে তাকেজেভরা করতেন কাশীর ডেপুটি
পুলিশ-সুপারিন্টেন্ডেন্ট জিতেন ব্যানার্জি। জেরার মুখেননীবালা দেবী পলাতক বিপ্লবী
নেতাদের সম্পর্কে যেকোনো তথ্য জানাতেই অস্বীকারকরতেন। এই বিপ্লবী নেতাদের নামে
অনেক হাজার টাকার হুলিয়াজারি ছিল। ননীবালা দেবী বলতেন, তাঁদের কাউকেই তিনি
চেনেন না, কিছুই জানেন না।
** সত্য না বলার জন্য ননীবালা দেবীকে মাটির নীচে কুঠুরিতে আধঘণ্টা সময় ধরে প্রায়
তিনদিন তালাবদ্ধ করে আটকে রাখা হত। কবরের মতো সেই ‘পানিশমেন্ট সেল’-এ
আধঘণ্টা পর তাঁকে অর্ধমৃত অবস্থায় দেখা যেত। তবুও পুলিশ তাঁর মুখ থেকে কোনো
স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারেনি।
২.৫) কাশীর জেলের 'পানিশমেন্ট সেল'-টির অবস্থা কেমন ছিল? সেখানে ননীবালা দেবীর
ওপর কী ধরনের অত্যাচার করা হত?
উত্তর: কমলা দাশগুপ্তের রচিত স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী গল্পে, কাশীর জেলের 'পানিশমেন্ট
সেল'-টিমাটির তলায় অবস্থিত ছিল। সেখানে একটিমাত্রদরজা ছিল। কিন্তু আলো-বাতাস
প্রবেশ করার জন্য আর কোনো দরজা বা জানালা ছিল না।ফলে, জায়গাটি ছিল একেবারে
কবরের মতো।
** হুলিয়া জারি হওয়া বিপ্লবীদের সম্পর্কে তথ্য বার করার জন্য ননীবালা দেবীকে তিনদিন
প্রায় আধঘণ্টা সময় ধরে অন্ধকার সেলে তালাবন্ধ করে আটকে রাখা হত। তৃতীয় দিনে
তাঁকে ওই সেলে আধঘণ্টারও বেশি সময়, প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছিল।
ননীবালা দেবীর স্নায়ুর শক্তিকে চূর্ণ করে দেওয়ার এটাই ছিল ব্রিটিশদের প্রচেষ্টা। সেদিন তালা
খুলে দেখা গেল ননীবালা দেবী অজ্ঞান অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন। এর পরে তাঁকে
স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে।
২.৬)“ননীবালা দেবী তখুনি দরখাস্ত লিখে দিলেন।”- ননীবালা দেবী কাকে দরখাস্ত লিখে
দিয়েছিলেন? দরখাস্তের বিষয়বস্তু কী ছিল ? শেষপর্যন্ত সেই দরখাস্তের কী পরিণতি
হয়েছিল?
উত্তর: কমলা দাশগুপ্তের রচিত স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী গল্পে, ননীবালা দেবী কলকাতার
প্রেসিডেন্সি জেলের পুলিশের স্পেশাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট গোল্ডি সাহেবের উদ্দেশ্যে দরখাস্ত
লিখে দিয়েছিলেন।
** দরখাস্তের বিষয়বস্তু হিসেবে ননীবালা দেবী লিখেছিলেন, তিনি বাগবাজারে শ্রীরামকৃষ্ণ
পরমহংসদেবের স্ত্রী সারদামণি দেবীর কাছে থাকতে বিশেষ ইচ্ছুক। একমাত্র তা হলেই তিনি
তাঁর অনশন তুলে নেবেন।
**শেষপর্যন্ত ননীবালা দেবী ওই দরখাস্তের আবেদন মেনে নেওয়া হয়নি। গোল্ডি সাহেব সেই
দরখাস্তটি নিয়ে ছিঁড়ে, ফেলে দিয়েছিলেন।
২.৭) “এবার আমায় দলে নিয়ে নাও।”-কে, কাকে এই অনুরোধ জানিয়েছিলেন? তিনি কেন,
কোন দলে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন?
উত্তর: কমলা দাশগুপ্তের রচিত 'স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী' গল্পে,পরাধীন ভারতবর্ষের মহিলা
স্বাধীনতা সংগ্রামী দুকড়িবালা দেবী তাঁর বোনপো নিবারণঘটকের কাছে এই অনুরোধ
জানিয়েছিলেন।
** দুকড়িবালা দেবীর বাড়ি ছিল, বিপ্লবী নিবারণ ঘটক ও তাঁর বিপ্লবী বন্ধুদের আড্ডার
জায়গা। নিবারণবাবু প্রায়ই সেই বাড়িতে বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসতেন এবং স্বদেশি বা বেআইনি
বই পড়তেন। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে মেলামেশার ফলে দুকড়িবালা দেবী ভারতবর্ষের
স্বাধীনতা আন্দোলনে নিজেকে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং বিপ্লবীদের দলে
যোগদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
২.৮)পুলিশ কোন্ অভিযোগে দুকড়িবালা দেবীকে গ্রেফতার করে?বিচারে তাঁর কী শাস্তি হয়?
উত্তর: দুকড়িবালা দেবী তাঁর বোনপো -নিবারণ ঘটকের চুরি করা সাতটা 'মসার' পিস্তল তাঁর
নিজের বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিলেন। বেআইনি অস্ত্র লুকিয়ে রাখার অভিযোগে পুলিশ
তাঁকে গ্রেফতার করে।
**বিচারে দুকড়িবালা দেবীর দু-বছরের কারাদণ্ড হয়।
৩) নিজের ভাষায় নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
৩.১)স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী স্বনামধন্য খ্যাতনামা বিপ্লবীদের তুলনায় ননীবালা
দেবী ও দুকড়িবালা দেবীর অবদান সামান্য নয়—এ বিষয়ে তোমার মতামত জানাও।
উত্তর: ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জনের পিছনে ননীবালা দেবী ও দুকড়িবালা দেবী এরকমই
দুটি অসামান্য চরিত্র।
ননীবালা দেবী:
ননীবালা দেবী ষোলো বছর বয়সে বিধবা হন। একজন বিধবা নারীর পক্ষে অপরের স্ত্রী সেজে
প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে প্রয়োজনীয় খবর জেনে নিয়ে আত্মগোপন করে থাকা খুব সহজ
কাজ ছিল না। বিপ্লবীদের বাড়ি ভাড়া পাওয়ার জন্য গৃহকর্ত্রীর বেশ ধারণ করা, কলেরায়
শরীর নিয়ে দীর্ঘসময় পানিশমেন্ট সেল- এ কাটানো, শত অত্যাচার ও জেরার মুখেও
বিপ্লবীদের তথ্য গোপন রাখা—এগুলি চরিত্রের দৃঢ়তা ছাড়া সম্ভব ছিল না। গোল্ডি সাহেবের
অপমান সহ্য না করে তাকে চড় মেরে দেখিয়েছেন সাহস।এসব কাজের কোনোটিই সহজ
ছিল না।
দুকড়িবালা দেবী:
দুকড়িবালা দেবীর ক্ষেত্রেও একই অভিমত প্রযোজ্য। কোলের শিশুকে ফেলে দু-বছরের
কারাদণ্ডলাভ এবং প্রতিদিন জেলের ভিতরে আধমন ডাল ভাঙা—দেশের জন্য। তিনি
এইসব কষ্ট সহ্য করেছিলেন। অনেক অত্যাচার ও কষ্ট সহ্য করেও তাঁরা দুজনেই ব্রিটিশ
শাসকের পুলিশের কাছে কোনো তথ্য ফাঁস করেননি। দেশের প্রতি ভালোবাসার ফলেই এই
আত্মত্যাগ সম্ভব হয়েছিল। ননীবালা দেবী এবং দুকড়িবালা দেবীর আত্মত্যাগ শ্রদ্ধার সঙ্গে
স্মরণীয়। ভবিষ্যতের বিপ্লবীে পথ মসৃণ করে দিয়েছিলেন এরাই।
৩.২)ননীবালা দেবী ও দুকড়িবালা দেবীর অনমনীয় বৈপ্লবিক মনোভা কীভাবে
পরবর্তীকালের বিপ্লবী নারীকে পথ দেখিয়েছে?পাঠা গদ্যাংশ অবলম্বনে তোমার মতামত
জানাও।
উত্তর:স্বাধীনতা সংগ্রামী ননীবালাদেবী ও দুকড়িবালা দেবীর আত্মত্যাগের কাহিনির উল্লেখ
রয়েছে 'স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী' শীর্ষক রচনায়।
ননীবালা দেবী:
ননীবালা দেবী বিধবা হন মাত্র ষোলো বছর বয়সে। এরপর তিনি তাঁর ভাইবো বিপ্লবী অমরেন্দ্র
চট্টোপাধ্যায়ের কাছে বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত হন । সশস্ত্র বিপ্লবীদের সমস্ত দিক থেকে
সহায়তা করতেন ননীবালা। তাঁর বাড়িতেই আশ্রয় দিতেন বিপ্লবীদের। মসার পিস্তলের
গোপন খবর সংগ্রহের জন্য রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী সেজে ননীবালা দেবী জেলে প্রবেশ
করেন। একজন বিধবা নারীর পক্ষে অন্য পুরুষের স্ত্রী সেজে জেলে গিয়ে পুলিশকে বোকা
বানানো বিস্ময়কর। কাশীর জেলের 'পানিশমেন্ট সেলে অন্ধকার কুঠুরিতে তাকে আটকে
রাখা হলেও তিনি পুলিশের কাছে মুখ খোলেননি। দরখাস্ত ছিঁড়ে ফেলার জন্য চড়ও
মেরেছিলেন সুপারিন্টেন্ডেন্ট গোল্ডিকে।
দুকড়িবালা দেবী:
দুকড়িবালা দেবী বিপ্লবীদের চুরি করা রঙা কোম্পানির অস্ত্র নিজের কাছে লুকিয়ে রাখেন।
পুলিশ তাকে ধরে ফেললেও এগুলি তাঁকে কে দিয়েছিল তার নাম প্রকাশ করেননি। দু-
বছরের সন্তানকে রেখে কারাবরণ করেছিলেন স্বদেশের মুক্তি লাভের আকাঙ্ক্ষায়। ভোগ
করেছিলেন দু-বছরের সশ্রম কারাদন্ড। অশ্বব্যাপী সংগ্ৰামী: দেশবাসী উদবুদ্ধ হয়েছিল যে
স্বাধীনতার স্বপ্নে সেই স্বপ্নের কারিগর এই ননীবালা দেবী বা দুকড়িবালা দেবীর মতন
আত্মত্যাগী সংগ্রামী মানুষরা। শুধুমাত্র পুরুষেরাই নয়, সশস্ত্র আন্দোলনে যে নারীরাও
সুযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে তা পরবর্তীতে আমরা দেখি প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মাতা নি
হাজরা প্রমুখ বিপ্লবীদের আত্মহুতির মধ্যে।
আমার মতামত:
ননীবালা দেবী,দুকড়িবালা দেবী, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার,মাতঙ্গিনি হাজরা,সরলাদেবী চৌধুরী,
কল্পনা দত্ত এবং আরও অনেক বীর নারীর সংগ্রাম বাংলা তথা ভারতের নারীদের উদবুদ্ধ
করেছিল। এঁদের কাছ থেকেই গ্রামবালার সাধারণ গৃহবধূরাও দেশকে স্বাধীন করার জন্য
মনের ভেতরে আন্তরিক অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। আর এখানেই ননীবালা দেবী বা দুকড়িবালা
দেবীর মতো মহীয়সী নারীদের দেশসেবায় নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করেছিলেন।
CONTENTS:
আরো পড়ুন:
ছন্দে শুধু কান রাখো কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
পাগলা গনেশ গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
একুশের কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
আত্মকথার প্রশ্ন উত্তর Click Here
খোকনের প্রথম ছবি প্রশ্ন উত্তর Click Here
কুতুব মিনারের কথা প্রশ্ন উত্তর Click Here
মেঘ চোর গল্পের প্রশ্ন উত্তর প্রথম Part Click Here
মেঘ চোর গল্পের প্রশ্ন উত্তর দ্বিতীয় Part Click Here
স্মৃতিচিহ্ন কবিতার প্রশ্ন উত্তর click Here
নোট বই কবিতার প্রশ্ন উত্তর click Here
চিরদিনের কবিতার প্রশ্ন উত্তর click Here
ভানুসিংহের পত্রাবলী প্রশ্ন উত্তর click Here
রাস্তায় ক্রিকেট খেলা প্রশ্ন উত্তর click Here
গাধার কান গল্পের প্রশ্ন উত্তর click Here
ভারত তীর্থ কবিতার প্রশ্ন উত্তর click Here
স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী গল্পের প্রশ্ন উত্তর click Here
0 Comments