পল্লীসমাজ
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সূচিপত্র:
ক। কবি পরিচিতি
খ) উৎস
গ। বিষয়সংক্ষেপ
ঘ। নামকরণ
ঙ) হাতে-কলমে সমাধান
e-bookap পেজটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুখবর-1st- ইউনিট,2nd ইউনিট,3nd ইউনিট,টেস্ট
ফাইনাল পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্যগুরুত্বপূর্ণভাবে তোমাদের সাহায্য করবে।তাই এই সাফল্য
আমাদের কাছে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ক) কবি পরিচিতি:
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার দেবানন্দপুরে
জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ও মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী।
তিনি পিতারকাছথেকেসাহিত্যেরপ্রতিঅনুরাগ লাভ করেছিলেন তাঁররামের সুমতি,পথনির্দেশ
,বিন্দুরছেলে' বিরাজ বৌ,পণ্ডিতমশাই,পল্লীসমাজ' ইত্যাদি রচনা‘যমুনা,ভারতবর্ষ' প্রভৃতি
পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রথম মুদ্রিত রচনা‘মন্দির' গল্পটি১৩০৯ বঙ্গাব্দে কুন্তলীন'
পুরস্কার লাভ করেন তাঁর লেখা গ্রন্থের মধ্যে----
উল্লেখযোগ্যহল-‘বড়দিদি,শ্রীকান্ত,চরিত্রহীন,গৃহদাহ,দত্তা,দেবদাস,শেষ
প্রশ্ন,'নববিধান,পথের দাবী' প্রভৃতি। তিনি ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক' এবং ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট উপাধি
লাভকরেন।'অনিলা দেবী' ছদ্মনামে লেখাতাঁর কয়েকটি প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে নারীর
লেখা,নারীর মূল্য,কানকাটা,গুরু-শিষ্য সংবাদ'প্রভৃতি। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে লিভার ক্যানসারে
আক্রান্ত হয়ে এই মহান সাহিত্যিকের মৃত্যু হয়।
খ) উৎস:
কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত 'পল্লীসমাজ' উপন্যাস থেকে পাঠ্য 'পল্লীসমাজ'
গল্পাংশটি নেওয়া হয়েছে নেওয়া।
গ) বিষয়সংক্ষেপ:
দু-দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে গ্রামের একশো বিঘের মাঠ ডুবে গিয়ে কৃষকদের সব ধান নষ্ট
হওয়ার উপক্রম।জমিদারের কাছে কান্নাকাটি করেও তাদের কোনো লাভ হয় না।
সুবিচার চেয়ে তারা রমেশের কাছে গিয়ে কেঁদে পড়ল।গোপাল সরকারের সাহায্য নিয়ে পুরো
বিষয়টা বুঝে রমেশ জমিদার বেণী ঘোষালের কাছে গেল ও স্পষ্ট ভাষায় জানাল, দক্ষিণ
ধারের বাঁধ কেটে দিতে হবে। কিন্তু বাঁধ কাটলে দু-তিনশো টাকার ক্ষতি হবে-এই যুক্তি
দেখিয়ে জমিদার বেণী ঘোষাল রমেশের কথায় রাজি হল না।জমিদারি শোষণ দেখে
লজ্জায়,ক্রোধে,ক্ষোভে উত্তপ্ত রমেশ আর তর্ক না করে জমিদারির আর-এক অংশীদার
রমার কাছে গেল।তার বিশ্বাস ছিল,রমা তাকে সাহায্য করবে। কিন্তু রমার কাছেও একই
উত্তর পেয়ে সে ধৈর্য হারিয়ে ফেলে।এই পরিস্থিতিতে রমেশ জানায়,সে নিজেই বাঁধ কাটতে
যাবে।সেই রাতেই বাঁধ পাহারা দিতে যাওয়া আকার আর তার ছেলেদের বাধা দিয়ে
রমেশ গ্রামের চাষিদের ধান রক্ষার জন্য বাঁধ কেটে দেয়। আহত আকবরকে দিয়ে জমিদার
বেণীঘোষাল থানায় রমেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করানোর চেষ্টা করে।কিন্তু
আকবরেরকণ্ঠে রমেশের প্রশংসা শোনা যায়। রমার প্রশ্নের উত্তরেও মাথা নেড়ে
আকবরবলে,না দিদিঠাকরান আর সব পারি, সদরে গিয়ে গায়ের চোট দেখাতে পারি না।'
আকবরআর তার ছেলেরা ফিরে গেলে রমার বুক চিরে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
অকারণেই তার দু-চোখ জলে ভরে ওঠে। পরাজয়ের মুহূর্তেও তার মনে হয় বুকের
উপরথেকে যেন একটা বড়ো পাথর নেমে গেল। বাড়ি ফিরে সারারাত সে আর ঘুমোতে পারে
না,অতীতের কথা ভাবতে গিয়ে তার মনে পড়ে সুন্দর চেহারার রমেশের কথা। রমাভাবে,
রমেশের মধ্যে কীভাবে এত তেজ ও সাহস লুকিয়ে ছিল।এ কথা ভাবতে ভাবতে তারচোখ
জলে ভরে যায়।
নামকরণ:
যে-কোনো সাহিত্য সৃষ্টির ক্ষেত্রেই নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।নামকরণের মধ্য দিয়ে
রচনাটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি আগাম ধারণা পাওয়া যায়। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের
লেখা 'পল্লীসমাজ' উপন্যাসে তৎকালীন গ্রাম্যসমাজই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।বেণী,
রমা, রমার মাসিমা, রমেশ, আরও ছোটো-বড়ো নানা চরিত্র মিলিয়ে, নানা ঘটনার সমাহারে
উপন্যাসটি গড়ে উঠলেও পল্লিসমাজের প্রেক্ষাপটে সব কিছু পরিচালিত হয়েছে।কিন্তু
পল্লিসমাজের ক্ষেত্রে সমাজই সমস্ত ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করেছে।সেইজন্য শহরে দীর্ঘদিন
শিক্ষালাভ করার পর রমেশও গ্রামে এসে কোনোপ্রভাব বিস্তার করতে পারেননি, এখানেও
আমরা স্বল্প পরিসরের মধ্যে এইগ্রাম্য পরিবেশ,সেখানকার সমস্যা,জমিদারদের
আচরণ,রাজনীতি-সব কিছুরই প্রকাশদেখতেপাই।তাই,পল্লিসমাজনাম যথার্থ সার্থক হয়েছে।
ঙ) হাতে-কলমে সমাধান:
১) নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
১.১) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখ।
উত্তর:শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত দুটি উপন্যাস হল-শ্রীকান্ত ও গৃহদাহ।
১.২) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি ছোট গল্পের নাম লেখ।
উত্তর:শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি ছোট গল্প হল-অভাগীর স্বর্গ এবং মহেশ।
২) নীচের প্রশ্নগুলির দু-একটি বাক্যে উত্তর লেখো।
২.১) গোপাল সরকারের কাছে বসে রমেশ কী করছিল?
উত্তর: চণ্ডীমণ্ডপে গোপাল সরকারের কাছে বসে রমেশ জমিদারির হিসাবপত্র দেখছিল।
২.২) গ্রামের একমাত্র ভরসা কী ছিল?
উত্তর: ‘পল্লীসমাজ' গল্পে উল্লিখিত একশো বিঘার মাঠটিই ছিল গ্রামের একমাত্র ভরসা,কারণ
সমস্ত চাষিরই কিছু কিছু জমি সেখানে ছিল।
২.৩) 'বোধ করি এই কথাই হইতেছিল,-কোন্ কথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে?
উত্তর:দুদিন একনাগাড়ে বৃষ্টির ফলে গ্রামের একশো বিঘের চাষের মাঠ ডুবে যায়।তাই গ্রামের
চাষিরা বাঁধ কেটে জল বের করে দেওয়ার জন্য প্রথমে জমিদার বেণীবাবুর কাছে আবেদন
জানায়।বাঁধ কাটলে তাঁর প্রায় দুশো টাকার মাছ ভেসে যাবে বলে বেণী তাদের কথায় রাজি
হয় না।এরপর প্রায় কুড়িজন চাষি একই আবেদন নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আসে রমেশের
কাছে। দুঃখী অসহায় চাষিদের কথা শুনে রমেশ গ্রামের জমিদার বেণীবাবুর কাছে যখন
উপস্থিত হয়, তখন সেখানে সে হালদার মশাইকেও দেখতে পায়। রমেশের মনে হয়েছিল
বাঁধরক্ষা ও কৃষকদের আবেদনের বিষয়েই উল্লিখিত দুজনের কথাবার্তা চলছিল।
২.৪) রমা আকবরকে কোথায় পাহারা দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিল?
উত্তর:রমা একশো বিঘা জমির দক্ষিণ ধারে অবস্থিত ঘোষাল ও মুখুজ্জেদের বাঁধ পাহারা
দেওয়ার জন্য আকবরকে পাঠিয়েছিল, যাতে রমেশ বাঁধ কেটে দিতে না পারে।
২.৫)'পারবি নে কেন?'-উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কোন কাজটি করতে পারবে না?
উত্তর:আলোচ্য অংশে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি হল রমাদের পিরপুরের প্রজা এবং লাঠিয়াল আকবর।
বাঁধ পাহারা দিতে গিয়ে রমেশের হাতে সে আহত হয়। সেই আঘাতের কথা সে থানায় গিয়ে
জানাতে পারবে না-বলে জোরের সঙ্গে জানিয়েছে।
৩) নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর লেখো।
৩.১)কুড়িজন কৃষক রমেশের কাছে এসে কেঁদে পড়ল কেন?
উত্তর:একশো বিঘার মাঠে সমস্ত চাষিদেরই কিছু কিছু জমি ছিল। এই মাঠ একটানা বৃষ্টির
ফলে জলে ডুবে য়ায়।চাষিদের আশঙ্কা ছিল,জমা জল বার করে না দিলে সমস্ত ধান নষ্ট হয়ে
যাবে। মাঠের দক্ষিণ ধারের ঘোষাল ও মুখুজ্জেদের বাঁধটা কাটিয়ে দিলে জমা জল বেরিয়ে
যেতে পারত।সারাদিন জমিদার বেণীবাবুর কাছে কাতর আবেদন জানালেও চাষিদের কোনো
লাভ হয়নি। তাই তারা দয়ালু রমেশের কাছে সাহায্য চাইতে এসেছিল।
৩.২)রমেশ বেণীর কাছে জল বার করে দেওয়ার হুকুম দেওয়ার জন্য অনুরোধ করল কেন?
উত্তর:একশো বিঘার মাঠের দক্ষিণ দিকে যে বাঁধ আছে তা ঘোষাল ও মুখুজ্জেদের। চাষিদের
বিপদের কথা চিন্তা করে রমেশ সেই বাঁধ কাটাতে রাজি থাকলেও, আর্থিক ক্ষতির কথা চিন্তা
করে বেণী রাজি ছিল না। তাই বেণীকে বাঁধ কাটার হুকুম দেওয়ার জন্য রমেশ অনুরোধ
করেছিল।
৩.৩) বেণী জল বের করতে চায়নি কেন?
উত্তর:ঘোষাল ও মুখুজ্জেদের বাঁধের পায়ে একটি জলা আছে। সেখানে প্রতি বছর যা মাছ
উৎপন্ন হয়, তাতে কমপক্ষে দুশো টাকা আয় হয়।চাষিদের দুঃখকষ্ট বোঝার মতো
মানসিকতা বা ইচ্ছা কোনোটাই তাঁর নেই।গরিব চাষিদের জন্য বছরে দুশো টাকা লোকসান
করতে সে রাজি ছিল না।তাই বেশী বাঁধের জল বার করে দিতে চায়নি।কারণ,বাঁধ কাটলে
জলের সঙ্গে সঙ্গে মাছও বেরিয়ে চলে যাবে।
৩.৪) 'ঘৃণায়, লজ্জায় ক্রোধে ক্ষোভে রমেশের চোখমুখ উত্তপ্ত হইয়া উঠিল,-রমেশের এমন
অবস্থা হয়েছিল কেন?
উত্তর:ফসল রক্ষার জন্য একশো বিঘার মাঠের দক্ষিণ দিকের বাঁধটি কেটে দেওয়া প্রয়োজন।
কিন্তু বেশী নিজের স্বার্থের জন্য সে বাঁধ কাটাতে রাজি হয়নি।তার এই মনোভাব জেনে রমেশ
উত্তেজিত হয়ে উঠল।বেণী জানিয়েছিল,চাষিরা নিরুপায় হয়ে তাদের কাছেই জমি বন্ধক
রাখবে এবং সেই সুযোগে বেণীদের কিছু রোজগার হবে।বেণীর এই স্বার্থপর ও নীচ
মানসিকতার পরিচয় পেয়ে রমেশ বেণীর প্রতি ঘৃণায়,লজ্জায়,ক্রোধে ও ক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে
উঠেছিল।
৩.৫)'রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া গেল,- রমেশের বিস্ময়ের কারণ কী ছিল?
উত্তর:রমেশ ভেবেছিল,চাষিদের সমস্যার কথা শুনে রমাও তার মতোই বাঁধ কাটিয়ে দিতে
রাজি হবে।সে রমার প্রতি উচ্চ ধারণা পোষণ করত।কিন্তু তখন রমেশ বুঝতে পারে যে,দরিদ্র
চাষিদের আসন্ন সংকটের কথা জেনেও রমা নিজের ক্ষতি স্বীকার করতে রাজি নয়,বরং
নিজের লোকসানের বিষয় নিয়েই সে চিন্তিত।এই কথা বুঝতে পেরেই রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি
হয়ে গেছিল।
৩.৬) রমা রমেশের অনুরোধে রাজি হয়নি কেন?
উত্তর:রমার পিতা রমা ও তার ভাইয়ের নামে সম্পত্তি লিখে দিয়ে গেছিলেন। ভাইয়ের সম্পত্তি
অর্থাৎ জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল রমার উপরেই। তাই বাঁধ কেটে দিয়ে বছরে দুশো
টাকা লোকসান করে ভাইয়ের ক্ষতি করা উচিত বলে মনে হয়নি রমার। তাই রমা রমেশের
অনুরোধে রাজি হয়নি।
৩.৭)'মানুষ খাঁটি কি না,চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে'-কে,কার সম্পর্কে এ কথা বলেছিল?
সে কেন এ কথা বলেছিল?
উত্তর:‘পল্লীসমাজ' গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র রমেশ রমা সম্বন্ধে এ কথা বলেছিল।
রমেশের ধারণা ছিল,দরিদ্র চাষিদের সংকটের কথা চিন্তা করে রমা নিজের লোকসানের কথা
না ভেবেই বাঁধ কাটাতে রাজি হবে।কিন্তু রমা এই ক্ষতি স্বীকার করতে চায়নি। রমেশ
অনুরোধ করলে রমা তাঁর কাছে বাঁধ কাটানোর ক্ষতিপুরণ দাবি করে। রমার এই স্পর্ধা দেখে
রমেশ প্রচণ্ড রেগে যায়।তখন তার রমাকে অতি নীচ বলে মনে হয়।
৩.৮)'রমা বিহ্বল হতবুদ্ধির ন্যায় ফ্যালফ্যাল করিয়া চাহিয়া রহিল'-রমার এমন অবস্থাহয়েছিল
কেন?
উত্তর:রমা চাষিদের জন্য নিজের আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করতে চায়নি।সে চায়নি বাঁধ কাটিয়ে
দেওয়া হোক। রমার এই মানসিকতার পরিচয় পেয়ে রমেশ তাকে নীচ বলে অপমান করে।
রমার সম্পর্কে রমেশের এরুপ মনোভাব জানতে পেরে রমা বিহ্বল ও হতবুদ্ধি হয়ে যায়।
৩.১) রমা আকবর কে ডেকে এনেছিল কেন?
উত্তর:আকবর রমার পিরপুরের প্রজা।আগেকার দিনের মানুষ আকবর লাঠির জোরে
অনেক বিষয়সম্পত্তি জমিদারের হস্তগত করেছে। তাই সেদিন সন্ধেয় রমেশের সঙ্গে কথা
হওয়ার পর ক্রোধে ও অভিমানে ক্ষিপ্ত হয়ে রমা আকবরকে ডেকে আনে। সে বাঁধ পাহারা
দেওয়ার জন্য আকবরকে পাঠিয়েছিল, যাতে রমেশ গায়ের জোরে বাঁধ কেটে দিতে না পারে।
৩.১০)'মোরা নালিশ করতি পারব না'–কে এ কথা বলেছে? সে নালিশ করতে পারবে না কেন?
উত্তর:রমার পিরপুরের প্রজা ও লাঠিয়াল আকবর এ কথা বলেছে।বেণী আকবরকে বলেছিল
ফাঁড়িতে গিয়ে রমেশের নামে মিথ্যে নালিশ করতে।কিন্তু আকবর একজন সৎ মুসলমান
প্রজা। সে গরিব হলেও তার আত্মসম্মান এবং ন্যায়-অন্যায় বোধ আছে। রমার আদেশে সে
রমেশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেও রমেশের সৎ প্রশংসা না করে পারেনি। এমন একজন
মানুষের নামে মিথ্যে কথা বলতে আকবরের রুচিতে বেধেছিল। তাই সে নালিশ করতে
পারবে না বলেছিল।
৪) নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো।
৪.১)'নইলে আর ব্যাটাদের ছোটোলোক বলেচে কেন?'বক্তা কে?এই উক্তির মধ্যে দিয়ে বক্তার
চরিত্রের কী পরিচয় পাও?
উত্তর:শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত 'পল্লীসমাজ' পাঠ্যাংশে আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হল-
জমিদার বেণী ঘোষাল। এক বর্ষায় একশো বিঘা জমির মাঠে জল জমে কৃষকদের সারা
বছরের দু-মুঠো অন্নের জোগান নষ্ট হতে চলেছিল।এই বিপদের হাত থেকে রক্ষার একমাত্র
উপায় ছিল মাঠের দক্ষিণধারে অবস্থিত মুখুজ্জে ও ঘোষালদের বাঁধটা কাটিয়ে ফেলা
নিষ্ঠুরতা কৃষকরা বেণী ঘোষালের কাছে সকাল থেকে সজল নয়নে অনুরোধ জানিয়েও
বিফল হয়। রমেশ এ বিষয়ে বেণীর মত নেওয়ার জন্য তাঁর কাছে যায়। স্বার্থপর।বেণী জানায়
যে, দরিদ্র কৃষকদের সারা বছরের সর্বনাশ হলেও তার পক্ষে ধার কাটিয়ে দুশো ক্ষতিগ্রস্ত
হলে কৃষকরা টাকা লোকসান করা সম্ভব নয়। আর দরিদ্র তার কাছেই জমি বন্ধক রেখে ধার
করে খাবে।এই সুযোগের সদ্ ব্যবহার করে বেণী নিজের জমিদারি আরও গুছিয়ে নিতে
পারবে। তবে দরিদ্র কৃষকদের ক্ষতি করে এবং নিজের আখের গোছানোর পথ পরিষ্কার
করেই বেণী ক্ষান্ত হয়নি। দরিদ্র কৃষকদের সে ‘ছোটোলোক' ও বলেছে। তাঁর কোনো
রুচিবোধ, ছিল না।
৪.২) বেণী, রমা ও রমেশ-চরিত্র তিনটির তুলনামূলক আলোচনা করো।সেইসঙ্গে এই তিনটি
চরিত্রের মধ্যে কোন চরিত্রটি তোমার সবথেকে ভালো লেগেছে এবং কেন তা জানাও।
উত্তর:শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা'পল্লীসমাজ' পাঠ্যাংশ থেকে আমরা বেণী,রমা ও
রমেশের চরিত্র সম্পর্কে জানতে পারি-
বেণীর চরিত্র:
বেণী ঘোষাল একজন জমিদার মাত্র। তাঁর লক্ষ্য সৎ বা অসৎ যে-কোনো উপায়ে,
জমিদারিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গুছিয়ে রেখে যাওয়া। দরিদ্র কৃষকরা তাঁর কাছে
‘ছোটোলোক’ '।তাদের সারা বছরের খাদ্য অর্থাৎ ফসল নষ্ট হলেও বেণীর তাতে কিছু এসে
যায় না। সে শুধু নিজের বছরের দুশো টাকা লোকসানের কথাই ভাবে।এমনকি বিপদে পড়া
দরিদ্র কৃষকদের সুযোগে সুদ ও বন্ধকি কারবার চালিয়ে নিজের আখের গুছিয়ে নেয় তারা।
একইসঙ্গে বেণী ঘোষাল কাপুরুষ, তিনি রমেশের শিক্ষাকে মূল্য দেওয়ার সামর্থ্য তার নেই।
বরং সে লাঠিয়াল আকবরকে বলে পুলিশের কাছে গিয়ে রমেশের নামে মিথ্যে নালিশ
জানাতে। এই ঘটনাগুলি থেকেই বেণীর অসৎ, ও ব্যক্তিত্বহীন চরিত্রের পরিচয় পাওয়া যায়।
রমার চরিত্র:
অভিভাবকহীন পরিবারে নাবালক ভাইয়ের একমাত্র অভিভাবক রমা একইসঙ্গে জমিদারি
এবং সংসারের দায়িত্ব সামলে চলেছে।নারী হলেও, তাকে একজন বৈষয়িক জমিদার
হিসেবেই আমরা দেখতে পাই। বেণীর মতো অত কঠোর প্রকৃতির না হলেও রমা তার
ভাইয়ের স্বার্থের কথা ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে,কৃষকদের জন্য বাঁধ কাটিয়ে দেওয়া হবে
না। কারণ ছোটো ভাইয়ের টাকা লোকসান হোক, তা সে চায়নি। এই সিদ্ধান্তের কথা
রমেশের বুঝতে অসুবিধা হয়নি। এমনকি রমেশের অনুরোধেও সে নিজের সিদ্ধান্ত থেকেও
সরে আসেনি, কিন্তু রমেশকেই ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে। এসব ঘটনা থেকে বোঝা যায়, রমা
একজন স্বার্থপর- হিসেবি জমিদার। রমা বাঁধ কাটাতে রাজি হয়নি ঠিকই,কিন্তু রমেশ বাঁধ
কেটেছে বলে সে মনে মনে খুশিই হয়েছে। আলোচ্য গল্পে রমেশের প্রতি তাঁর প্রশংসার
কথাও প্রকাশ পেয়েছে।
রমেশের চরিত্র:
গল্পে জমিদার বংশের আর একজন সদস্য হল রমেশ। সে বেণী ঘোষাল ও রমার থেকে
একেবারেই আলাদা। রমেশ জমিদার হিসেবে নয়, গ্রামের অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের পাশে
এসে দাঁড়িয়েছে। কৃষকদের মুখে তাদের বিপদে কথা শোনামাত্র সে তার গুরুত্ব উপলব্ধি
করেছে এবং নিজের লোকসানের কথা না ভেবেই বাঁধ কাটানোর ব্যবস্থা করার জন্য সচেষ্ট
হয়েছে। প্রথমেই সে গায়ের জোর প্রয়োগ করেনি, বেণী ও রমার সঙ্গে কথা বলে তাদের
সম্মতি আদায়ের চেষ্টা করেছে। কিন্তু দুজনেরই নীচ এবং খারাপ ব্যবহারে রমেশ ক্রুদ্ধ হয়ে
ওঠে। তখন সে জোর করে বাঁধ কেটে গ্রামের লোকেদের সারাবছরের ভাতের হাত থেকে
রক্ষা করে।এ ছাড়াও নিজের খরচে রমেশ গ্রামে পাকারাস্তা বানিয়ে দিয়েছে। মানুষের প্রতি
সহানুভূতি তাঁকে অনেক বেশি ব্যক্তিত্বের অধিকারী করে তুলেছে। তাই আমার রমেশ
চরিত্রটিকেই সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।
CONTENTS:
আরো পড়ুন:
বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
চন্দ্রগুপ্ত নাট্যাংশের প্রশ্ন উত্তর Click Here
বনভোজনের ব্যাপার গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
সবুজ জামা কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
the wind cap lesson 1 part 1 Click Here
the wind cap lesson 1 part 2 Click Here
the wind cap lesson 1 part 3 Click Here
Clouds Lesson 2 part 1 Click Here
একটি চড়ুই পাখির কবিতা প্রশ্ন উত্তর Click Here
কার দৌড় কতদূর গল্পের প্রশ্ন উত্তর click Here
পল্লীসমাজ উপন্যাসের প্রশ্ন উত্তর click Here
0 Comments