গাছের কথা
জগদীশচন্দ্র বসু
সূচিপত্র:
ক।কবি পরিচিতি
খ) উৎস
গ। বিষয়সংক্ষেপ
ঘ। নামকরণ
ঙ) হাতে-কলমে সমাধান
e-bookap পেজটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুখবর-1st- ইউনিট,2nd ইউনিট,3nd ইউনিট,টেস্ট
ফাইনাল পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্যগুরুত্বপূর্ণভাবে তোমাদের সাহায্য করবে।তাই এই সাফল্য
আমাদের কাছে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ক) লেখক পরিচিতি:
জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর বাবার
নাম ভগবানচন্দ্র বসু। জীববিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র ছেলেবেলায় প্রথমে ফরিদপুর ও পরে
কলকাতায় পড়াশোনা করেন। তারপর কেম্ব্রিজ ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি
অর্জন করেন। দেশে ফিরে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যায়
অধ্যাপকে যোগ দেন। জগদীশচন্দ্র বিনা তারে বার্তা প্রেরণের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তিনি
আবিষ্কার করেন উদ্ভিদ প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উত্তেজনায় সাড়া দেয়। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি.এস.সি' উপাধি লাভ করেন। জগদীশচন্দ্র বসু ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে 'বসু
বিজ্ঞান মন্দির' প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর বাংলা প্রবন্ধগুলি ‘অব্যক্ত' গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে।
১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে এই মহান বিজ্ঞানসাধকের মৃত্যু হয়।
খ) উৎস:
'গাছের কথা' পাঠ্যাংশটি জগদীশচন্দ্র বসুর বাংলা প্রবন্ধ সংকলন গ্রন্থ ‘অব্যক্ত' থেকে নেওয়া
হয়েছে।
গ) বিষয়সংক্ষেপ:
‘গাছের কথা' রচনায় জগদীশচন্দ্র বসু গাছের জীবনকথা বর্ণনা করেছেন।এর মাধ্যমে তিনি
প্রকৃতি সম্পর্কে নিজের উপলব্ধিকে প্রকাশ করেছেন।এমন একটা সময় ছিল,যখন একা
মাঠে বা পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে লেখকের কাছে সব কিছুই কেমন খালি-খালি লাগত। কিন্তু
যত দিন গেছে,গাছ-পাখি-কীটপতঙ্গকে তিনি ভালোবাসতে শিখেছেন। তাদের কথা বুঝতে
শিখেছেন। গাছের মধ্যেও তিনি অনেক মানবিক গুণ লক্ষ করেছেন। মানুষের মতো অভাব,
দুঃখকষ্ট, জীবনধারণ করার তাগিদ, অভাবে পড়ে চুরি- ডাকাতির চেষ্টা, এমনকি বন্ধুত্ব বা
স্বার্থত্যাগের মতো সদ্গুণও গাছের মধ্যে রয়েছে। মা যেমন নিজের জীবন দিয়ে সন্তানের
জীবন রক্ষা করেন, উদ্ভিদজগতেও সেরকম অনেক দৃষ্টান্ত দেখা যায়। এই প্রবন্ধে লেখক
শুকনো গাছের ডাল আর সবুজ গাছের তুলনা করে জীবনের ধর্ম য গতি এবং বৃদ্ধি, তা
স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।উত্তাপ পেলে যেমন পাখির ডিম থেকে ছানা জন্মায়, তেমনই
মাটি,উত্তাপ এবং জল পেলে বীজরূপী ডিম থেকে বৃক্ষশিশুর জন্ম হয়। মানুষের চেষ্টা
ছাড়াও গাছের বীজ পাখির সাহায্যে বা বাতাসে ভেসে অন্য জায়গায় পৌঁছোতে পারে।
এভাবে জন মানব শূন্য দ্বীপেও গাছের অস্তিত্ব ফুটে ওঠে।ছেলেবেলায় লেখক নিজেও
বাতাসে ভেসে বেড়ানো শিমুল তুলো আর তার বীজ ধরার জন্য ছুটে বেড়াতেন। বীজের
কঠিন আবরণের মধ্যে বৃক্ষশিশু নিরাপদে ঘুমিয়ে থাকে।বছরের নানা সময়ে বিভিন্ন গাছের
বীজ পাকে। আম-লিচুর বীজ বৈশাখ মাসে পাকে, ধান-যবের বীজ আশ্বিন কার্তিক মাসে
পাকে। বাতাসের বেগে বা আশ্বিনের ঝড়ে নানান গাছের বীজ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
এইভাবে মাটি, জল ও উত্তাপের ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকে বৃক্ষশিশু জন্ম লাভ করে।
ঘ) নামকরণ:
যে-কোনো সাহিত্যের ক্ষেত্রেই নামকরণের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। তাঁর রচনা সম্পর্কে
পাঠকের কাছে আগাম ধারণা দিয়ে থাকেন। সেদিক থেকে আলোচ্য 'গাছের কথা' রচনাটির
নামকরণ কতখানি সার্থক হয়েছে তা আলোচনা করা যায়। জীববিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু
রচিত 'গাছের কথা' রচনাংশে গাছ সম্পর্কে লেখকের নিজস্ব ভাবনাচিন্তার প্রতিফলন লক্ষ
করা যায়। প্রকৃতির ঘনিষ্ঠ আসার কারণেই তিনি গাছের মধ্যে জীবনের খোঁজ পেয়েছেন।
তাদের মধ্যে মানুষেরই মতো দুঃখ,কষ্ট,জীবনধারণের তাগিদ,অভাব-অনটন, পরস্পরকে
সাহায্যের প্রবণতা, বন্ধুত্ব, স্বার্থত্যাগ এমনকি হিংসা,চুরি,ডাকাতির প্রবণতাও তিনি লক্ষ
করেছেন। বীজ থেকে কীভাবে বিশাল গাছ হয়-সেই বৈজ্ঞানিক বিষয়কে তিনি সহজসরল
ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন। এইভাবেই ক্ষুদ্র বীজ থেকে বিরাট গাছে পরিণত হওয়ার কথা তাঁর
প্রবন্ধের আলোচিত হয়েছে। সুতরাং বলা যায়,আলোচ্য রচনাংশের 'গাছের কথা' নামটি
প্রাসঙ্গিক ও যথাযথ।
ঙ) হাতে-কলমে সমাধান:
১) নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১.১) জগদীশচন্দ্র বসুর লেখা একটি বইয়ের নাম লেখ।
উত্তর: জগদীশচন্দ্র বসুর লেখা একটি বই হল- 'অব্যক্ত'।
১.২) জগদীশ চন্দ্র বসু কি আবিস্কার করেছিলেন?
উত্তর: জগদীশ চন্দ্র বসু বহু আবিষ্কারের মধ্যে অন্যতম একটি হল-ক্রেসকোগ্রাফ।
২)নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর একটি বাক্যে লেখো।
২.১)লেখক কবে থেকে গাছদের অনেক কথা বুঝতে পারেন?
উত্তর:‘গাছের কথা' গদ্যাংশের লেখক জগদীশচন্দ্র বসু যখন তিনি গাছ,পাখি ও নানান
কীটপতঙ্গকে ভালোবাসতে শিখেছেন, তখন থেকেই তাদের অনেক কথা বুঝতে পারেন।
২.২) 'ইহাদের মধ্যেও তাহার কিছু কিছু দেখা যায়।'-কী দেখা যায়?
উত্তর:মানুষের মধ্যে যেমন ভালো কাজ করার সামর্থ্য রয়েছে,তেমনই গাছেদের মধ্যেও
দেখা যায় বলে লেখক মন্তব্য করেছেন।
২.৩)জীবিতের লক্ষণ কী তা লেখক অনুসরণে উল্লেখ করো।
উত্তর: যাদের প্রাণ আছে,তাদের দুটি বিশেষ লক্ষণের কথা লেখক ‘গাছের কথা’গদ্যাংশে
উল্লেখ করেছেন তা হল গতি, ও বৃদ্ধি,।
২.৪) 'বৃক্ষশিশু নিরাপদে নিদ্রা যায়।,-বৃক্ষশিশু কোথায় নিদ্রা যায়?
উত্তর:বীজের উপরের কঠিন ঢাকনার আড়ালে বৃক্ষশিশু নিরাপদে নিদ্ৰা যায়।
২.৫)অঙ্কুর বের হওয়ার জন্য কী কী প্রয়োজন?
উত্তর:বীজ থেকে অঙ্কুর বের হওয়ার জন্য উত্তাপ,জল এবং মাটির প্রয়োজন।
৩)নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো।
৩.১)'আগে এসব কিছুই জানিতাম না।'- কোন্ বিষয়টি লেখকের কাছে অজানা ছিল?
উত্তর:গাছের জীবন আছে, গাছও মানুষের মতো আহার করে, দিনে দিনে বৃদ্ধি পায়-এসব
বিষয় লেখকের কাছে অজানা ছিল। কিন্তু তাদের ভালোবাসতে শিখে জগদীশচন্দ্র বসু যেন
সেই সত্য আবিষ্কার করেন। এর পাশাপাশি তাদের ভাষাও তিনি অনেকখানি বুঝতে
পেরেছেন।
৩.২)'ইহাদের মধ্যেও তাহার কিছু কিছু দেখা যায়।'-কাদের কথা বলা হয়েছে?তাদের মধ্যে কী
লক্ষ করা যায়?
উত্তর:জগদীশচন্দ্র বসু রচিত 'গাছের কথা' গদ্যাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে।ইহাদের' বলতে
গাছেদের কথা বলা হয়েছে। মানুষের মধ্যে যেমন ক্ষমা,দয়া-মায়া প্রভৃতি ভালো গুণ লক্ষ
করা যায়, তেমনই গাছেদের মধ্যেও লেখক এই গুণগুলি প্রত্যক্ষ করেছেন।
৩.৩) 'গাছের জীবন মানুষের ছায়ামাত্র।'– লেখকের এমন উক্তি অবতারণার কারণ বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:'গাছের কথা' গদ্যাংশে জগদীশচন্দ্র বসু মন্তব্যটি করেছেন।গাছের মধ্যে তিনি এমন
অনেক গুণ লক্ষ করেছেন, যা মানুষের স্বভাবের মতো। প্রকৃতির রাজ্যে তিনি গাছকে
মানুষের মতোই আহার করতে, দিনে দিনে বেড়ে উঠতে দেখেছেন।গাছেরও মানুষেরই
মতো অভাব এবং দুঃখকষ্টের অনুভূতি রয়েছে। জীবনধারণের জন্য মানুষেরই মতো
গাছকেও সবসময় ব্যস্ত থাকতে হয়। মানুষের মধ্যে যেমন পরস্পরকে সাহায্য করার তাগিদ
একের সঙ্গে অপরের বন্ধুত্ব দেখা যায়, তেমনই গাছেদের মধ্যেও একই জিনিস দেখা যায়।
লেখক উপলব্ধি করেছেন-মানুষ-মায়ের মতোই,গাছও প্রয়োজনে নিজের জীবন বিসর্জন
দিয়ে তার সন্তান গাছকে রক্ষা করে থাকে।
৩.৪) জীবনের ধর্ম কীভাবে রচনাংশটিতে আলোচিত ও ব্যাখ্যাত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:'গাছের কথা' গদ্যাংশে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু শুকনো ডাল আর জীবিত একটি
গাছের তুলনা করে লেখক জানিয়েছেন যে,জীবনের ধর্মই হল বিকাশ ও বৃদ্ধি।প্রাণের আর-
একটি লক্ষণ হল গতি। লতা গাছকে পাক দিয়ে জড়িয়ে ধরে- এই সহজ উদাহরণটির সাহয্যে
লেখক গাছের 'গতি' বুঝিয়েছেন। প্রাণের মধ্যে যে বিকাশ ও পরিণতির ধর্ম রয়েছে তার
উদাহরণ দিয়ে তিনি বীজ ও ডিমের কথা বলেছেন। উপযুক্ত পরিবেশে বীজ ও ডিমের
ভেতরে থাকা প্রাণ বিকশিত হয়, উত্তাপ পেলে ডিম থেকে পাখির ছানা জন্ম লাভ করে।
উত্তাপ, জল ও মাটির সাহায্যে বীজ অঙ্কুরিত হয়ে ওঠে। একইরকমভাবে মানুষের
জীবনেও বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশের বিপুল ভূমিকা রয়েছে। এভাবেই তিনি
গদ্যটির মাধ্যমে জীবনের ধর্ম আলোচনা করেছেন।
৩.৫ )'নানা উপায়ে গাছের বীজ ছড়াইয়া যায়'-উপায়গুলি পাঠ্যাংশ অনুসরণে আলোচনা
করো।
উত্তর:জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর ‘গাছের কথা' প্রবন্ধে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন। নানা উপায়ে
গাছের বীজ ছড়িয়ে যায়। আমরা যত গাছপালা বা বনজঙ্গল দেখি তা সবই মানুষের ছড়ানো
বীজ থেকে সৃষ্টি হয়নি।মানুষ কৃষিকাজের স্বার্থে গাছের বীজ ছড়িয়ে থাকে। এ ছাড়া পাখিরা
ফল খেয়ে যেখানে-সেখানে বীজ ছড়িয়ে ফেলে, অনেকসময় দূরদেশেও বয়ে নিয়ে যায়।
মানুষ বাস করে না এমন দ্বীপেও এইভাবেই গাছ জন্মায়। আবার অনেক বীজ বাতাসে উড়
অনেকদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। যেমন, শিমুল ফল ফেটে বের হওয়া বীজ তুলোর সঙ্গে
হাওয়ায় উড়তে উড়তে ছড়িয়ে যায়। এভাবেই প্রতিদিন অনেক দূরত্ব পেরিয়ে দেশ দেশান্তরে
বীজ ছড়িয়ে পড়ছে।
৩.৬)লেখক তাঁর ছেলেবেলার কথা পাঠ্যাংশে কীভাবে স্মরণ করেছেন, তা আলোচনা করো।
উত্তর: 'গাছের কথা' প্রবন্ধে লেখক জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর অনুভূতির প্রকাশ করেছেন।গাছের
জীবন সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি নিজের ছেলেবেলার দিনগুলির কথা স্মরণ
করেছেন। লেখক ছেলেবেলায় একা একা মাঠে বা পাহাড়ে তিনি বেড়াতে যেতেন, তখন
তিনি গাছ, পাখি ও কীটপতঙ্গকে সেভাবে চিনতে অথবা ভালোবাসতে শেখেননি। তাই সব
তাঁর কেমন যেন খালি খালি লাগত। তিনি যতই প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন, ততই খুঁজে
পেয়েছেন অপার আনন্দের চাবিকাঠি। ধীরে ধীরে গাছের নানান অনুভূতিতে সাড়া দেওয়ার
বিষয়টি তাঁকে আলোড়িত করেছে। বীজ সংক্রান্ত আলোচনায় লেখক দ্বিতীয়বার তাঁর
ছেলেবেলার কথা মনে করেছেন। শিমুল ফল ফেটে হাওয়ায় তুলোর সঙ্গে বীজ উড়তে
থাকলে, ছোটোবেলায় লেখক তা ধরার জন্য ছোটাছুটি করতেন। সেই তুলো-সহ বীজটিকে
হাওয়া অনেক ওপরে নিয়ে যেত ফলে ধরা যেত না।
CONTENTS:
আরো পড়ুন:
বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
চন্দ্রগুপ্ত নাট্যাংশের প্রশ্ন উত্তর Click Here
বনভোজনের ব্যাপার গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
সবুজ জামা কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
the wind cap lesson 1 part 1 Click Here
the wind cap lesson 1 part 2 Click Here
the wind cap lesson 1 part 3 Click Here
Clouds Lesson 2 part 1 Click Here
একটি চড়ুই পাখির কবিতা প্রশ্ন উত্তর Click Here
কার দৌড় কতদূর গল্পের প্রশ্ন উত্তর click Here
গাছের কথা প্রশ্ন উত্তর click Here
0 Comments