ফাঁকি গল্পের নামকরণের সার্থকতা। ফাঁকি প্রশ্ন উত্তর class 6। ফাঁকি রাজকিশোর পট্টনায়ক। ফাঁকি বিষয়বস্তু। ফাঁকি গল্প।

 


ফাঁকি গল্পের নামকরণের সার্থকতা। ফাঁকি প্রশ্ন উত্তর class 6। ফাঁকি রাজকিশোর পট্টনায়ক। ফাঁকি বিষয়বস্তু। ফাঁকি গল্প।



                                                                         ফাঁকি 

                                                       রাজকিশোর পট্টনায়ক


সূচিপত্র:

ক। কবি পরিচিতি

খ। বিষয়সংক্ষেপ

গ। নামকরণ

ঘ) হাতে কলমে সমাধান


e-bookap পেজটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুখবর-1st- ইউনিট,2nd ইউনিট,3nd ইউনিট,টেস্ট

ফাইনাল পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্যগুরুত্বপূর্ণভাবে তোমাদের সাহায্য করবে।তাই এই সাফল্য

আমাদের কাছে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।



ক) কবি পরিচিতি:

রাজকিশোর পট্টনায়ক জন্ম ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে। ওড়িয়া সাহিত্যের একজন বলিষ্ঠ লেখক ও

 গল্পকার। ঔপন্যাসিক হিসেবেও তিনি সমান জনপ্রিয়।পেশাতেও তিনি আইনজীবী।তাঁর

 রচনায় প্রকাশ পেয়েছে মূলত আধুনিক জীবনের নরনারীর মানসিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত। তাঁর

 লেখা উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থগুলি হল-‘পথুকি, ‘তুঠ পাথর,ভড়াঘর,নিশান খুন্ট,পথর ঢিমা’।

 আর উপন্যাসগুলির মধ্যে- ‘অসরম্ভি,সিন্দুর গার,স্মৃতির মশাণি,চলাবাট' প্রভৃতি।আলোচ্য

‘ফাঁকি’ গল্পটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন জ্যোতিরিন্দ্র মোহন জোয়ারদার।


খ) বিষয়সংক্ষেপ:

বাড়ির সামনে বাগান করা নিয়ে বাপ আর ছেলের মধ্যে ঝগড়া বাধে।ছেলে গোপালের ফুলের

 বাগানের শখকে নষ্ট করে বাবা আমচারা লাগায় বাগানে। বিশেষ যত্ন ছাড়াই  আমগাছটি

 আপন খেয়ালে বেড়ে উঠেছে।গাছটি দিনে দিনে গোপাল বাবুর বাড়ির নিশানা হয়ে উঠেছে।

 সে যেমন গোপাল বাবুকে তার বাড়ির ঠিকানা বলায় সহায়তা করেছে, তেমনই গাছটি যেন

 পাহারাদারের মতোই বাড়ি আগলে দাঁড়িয়ে আছে।শুধু তাই নয়, গ্রীষ্মের গরম বাতাস, নদীর

 দিক থেকে আসা গরম বালির ঝাপটা এ সবই আমগাছটি তার সবুজ বুকটা দিয়ে ঠেকিয়ে

 রাখে। গোপালের বন্ধুরা আমগাছতলায় বসে আরাম পায়, বই লেখার ইচ্ছার কথা জানায়।

 যেন পোষা আমগাছটির পাতাগুলি পর্যন্ত গোনা যায়। কেউ তা চাইলে দিতে খুব মায়া হয়

 গোপালের, তবু সামান্য দেয়। দেখতে দেখতে সকলের আশা পূরণ করে আমের বোল এল,

 গাছে আম হল। সঙ্গে সঙ্গে পাড়ার ছেলেদের ঢিল ছোঁড়া, নজরদারি, দিয়ে অতি সাবধানে

 আমপাড়া শুরু হয়ে গেল। শুধু মানুষই নয়, কাঠবেড়ালি, বাদুড় ঠুকরে খায় পাকা আম,

 পিঁপড়েও সেখানে পাত পাড়ে, কাক বাসা বাঁধে। কিছু আম বিলোনো হয়,কিছু আম ঘরে

 থাকে। গাছটিকে কেন্দ্র করেই পরিবারের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা আবর্তিত হয়। সকলেই

 ভুলে যায় সেটি একটি গাছমাত্র। প্রকৃতপক্ষে সে বাড়ির অঙ্গ হয়ে ওঠে।

উড়োজাহাজ থেকে বোমা পড়ার ভয়ে সরকারের লোক যবে থেকে আমগাছের একেবারে

 গোড়া পর্যন্ত ট্রেঞ্চ খুঁড়ে রেখে গিয়েছিল-সেদিন থেকেই গাছটি দুর্বল হয়ে কমজোরি হয়ে

 পড়ল। গাছটিতে পিঁপড়ে, কাক, কাঠবেড়ালি খেলা করে। লোকে তার গায়ে ঠেসান দিয়ে

 সাইকেল রাখে, মায়ের বারণ সত্ত্বেও গোপাল গাছের ডাল কেটে দেয়, শিশুরা দোলনা টাঙায়।

 তবু গাছ কিছু বলে না, পাতা দিয়ে তার ক্ষত ঢেকে রাখে। গাছ মানুষের মতো অহংকার হয়

 না। সে সবসময় কৃতজ্ঞ, এবং শত ঝাপটাতেও নির্বিকার। এইভাবেই দিন যায়।

হঠাৎ একদিন সকলে দেখল সামান্য ঝড়ে গাছটি পড়ে গেছে ভেঙে। তাকে ঘিরে কাকের

 বাসা, দোলনা ভেঙে পড়েছে। গোপাল গাছে ওঠা পিঁপড়েদের ওষুধ দিয়ে মেরেছিল। ওরা

 থাকলে উই ধরে গাছটি এভাবে ফোপরা হয়ে গিয়ে পড়ে যেত না। বাড়ির লোক, পাড়ার

 লোক আমগাছটির জন্য শোকাহত। শুধু তাই নয়-খবরের কাগজেও গাছটির মৃত্যুসংবাদ

 বেরিয়েছিল। গোপালবাবু তার পরেও ভুল করছিলেন।পথচারীদের নিজের বাড়ির ঠিকানা

 দিতে গিয়ে বার বার নিশানাস্বরূপ আমগাছটির কথা বলে ফেলেছিলেন-কিন্তু সে আমগাছ

 আর নেই। পরিবারের অন্যতম এক সদস্য সকলকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল এক ঝড়ের রাতে

 নীরবে।


গ) নামকরণ: 

প্রধানত নামকরণের মাধ্যমেই রচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আগাম ধারণা করা যায়।

গোপালের বাবা বিরিবাটির বাগানে ভাগলপুর থেকে আনা ল্যাওড়া আমগাছের কলম

 করেছিলেন। সেই কলম তিনি নতুন বাড়িতে পাঁচিলের ধারে পুঁতেছিলেন। প্রথমে চারাটি

 রোপণ করা নিয়ে গোপাল ও তার মা ভয়ানক আপত্তি করলেও, চারাটি বড়ো হবার সঙ্গে

 সঙ্গে সকলেরই ভালোবাসা পেতে থাকে গাছটি। আবার আমগাছটি যখন ফল ধারণ করে,

 তখন তো সকলের মনই আনন্দে ভরে ওঠে। গাছটি গোপালবাবুর বাড়ির ঠিকানার নিশান

 শুধু ছিল না, সে ওই বাড়ির পাহারাদারের ভূমিকাও পালন করেছে। নদীর ধারে গ্রীষ্মের গরম

 বাতাস সে তার সবুজ বুক দিয়ে ঠেকিয়েছে। কাঠজোড়ি নদীর দিক থেকে ছুটে আসা গরম

 বালির ঝাপটা আপন দেহ দিয়ে আটকেছে।আম পাড়ার জন্য ছেলেরা গাছে ঢিল ছোঁড়ে,

 কাঠবিড়ালি বা বাদুড়ে আম খায়, পিঁপড়ে বা উঁই পোকায় গাছের ক্ষতি করে, যুদ্ধের

 প্রয়োজনে সরকারের লোকেরা গাছটির গোড়া অবধি ট্রেঞ্চ খুঁড়ে রাখে, তাতে গাছটি পূর্ব

 দিকে হেলে যায়-এই সব অত্যাচার সহ্য করেও আমগাছটি বহুদিন অবধি জীবিত ছিল এবং

 বন্ধুর মতো আচরণ করেছে গোপালবাবু ও তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে। প্রতিবেশীরাও নানা

 প্রয়োজনে গাছের পাতা ছিঁড়েছে, ডাল ভেঙেছে। সেই গাছটির কিন্তু মৃত্যু ঘটল আষাঢ়ের

 এক ঝড়ে। আগেই গাছের গোড়া ফোপড়া করে দিয়েছিল পিঁপড়ে আর উঁই পোকা । আবার

 গর্ত খোঁড়ায় গাছটি একদিকে হেলেই ছিল। তাই আষাঢ়ের ঝড়কে প্রতিহত করার ক্ষমতা সে

 হারিয়ে ফেলেছিল। গাছটির পতনে সকলেই দুঃখ পেয়েছে। কোনো আপনজন না বলে

 বিদায় নিলে যেমন সেই ঘটনাকে ফাঁকি দেওয়া বলি,তেমনই গাছটি কাউকে কিছু না বলেই

 ফাঁকি দিয়েছে সকলকে। গোপালবাবুর বাড়ির লোকদের ফাঁকি দিয়ে চলে গেল তাদের

 বহুদিনের বন্ধু গাছটি। খবরের কাগজেও বেরোল গাছটির মৃত্যুসংবাদ। গাছটির বিদায়ের

 কথা কেউ ভাবতেই পারেনি, তাই সত্যিই সে যখন বিদায় নিল,তখন তা সবাইকে ফাঁকি

 দেওয়ার মতো ঘটনাই হয়েছে। গাছটি যেন জীবিত মানুষের মতো অন্যদের ফাঁকি দিয়ে চলে

গেল।এভাবে ফাঁকি গল্পে দেখা যায়‘ফাঁকি' শব্দটি আলোচ্য গল্পটিতে বিশেষ ব্যঞ্জনা পেয়েছে।

তাই গল্পের নামকরণ‘ফাঁকি’ ব্যঞ্জনাধর্মী ও সার্থক হয়েছে। 


ঘ) হাতে কলমে সমাধান:

১)নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও:


১.১) রাজকিশোর পট্টনায়ক কোন ভাষায় লেখালেখি করেন?

 উত্তর:রাজকিশোর পট্টনায়ক ওড়িয়া ভাষায় লেখালেখি করেন।


 ১.২) তাঁর লেখা দুটি গল্পের বইয়ের নাম লেখো।

উত্তর:তাঁর লেখা দুটি গল্পের বইয়ের নাম– ভড়াঘর, এবং নিশান খুন্ট,।


৮) নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর লেখো:


৮.১)কটক কোন নদীর তীরে অবস্থিত? ওড়িশার আরও একটি নদীর নাম লেখো।

উত্তর:কটক ওড়িশার মহানদীর তীরে অবস্থিত।ওড়িশার আরও একটি নদীর নামকাঠজোড়ি।


৮.২)গোপালের বাবা প্রথমে কেন বাগানে ফুলগাছ লাগাতে চাননি?

উত্তর:যে জমিতে গোপালের বাবা বাড়ি করেন। তার মাটি ছিল বেলে মাটি, যার জলধারণের

 ক্ষমতা নেই বললেই চলে আর গোপালও সবসময় জল দিয়ে গাছের পরিচর্যা করতে পারবে

 না বলে গোপালের বাবা বুঝতে পেরেছিলেন। বাগানের ফুলের গাছে জল দেওয়ার সমস্যার

 কথা ভেবেই গোপালের বাবা প্রথমে বাগানে ফুলগাছ লাগাতে চাননি।


৮.৩)আমগাছে কেন ঠেকো দিতে হয়েছিল?

উত্তর:যুদ্ধের সময় উড়োজাহাজ থেকে বোমা পড়ার ভয়ে সরকারের লোক ওই আমগাছটির

একেবারে গোড়া পর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে রেখেছিল। সেইদিন থেকে পূর্ব দিকে হেলে পড়ার জন্য

কমজোরি এবং দুর্বল হয়ে পড়া আমগাছটিকে পেয়ারা গাছের দো-ফেঁকড়া শক্ত ডাল দিয়ে

ঠেকো দেওয়া হয়েছিল।


৮.৪)গাছটিকে উইয়ে খেয়ে ফেলল কীভাবে?

উত্তর:আমগাছে ফলন ধরার পরেই তাতে পিঁপড়ের আনাগোনা শুরু হয়, পিঁপড়ের হাত

 থেকে গাছটিকে রক্ষা করার জন্য তাতে ওষুধ স্প্রে করা হয় কিন্তু এতে পিঁপড়ে মরলেও ধীরে

 ধীরে তাতে উইপোকা বাসা বাঁধে। পিঁপড়ে থাকলে সেখানে উই থাকতে পারত না। গাছের

 একটা দিক উইপোকাতে ফোঁপরা করে দিয়েছে।


৮.৫) গল্প অনুসারে কটকের খবরের কাগজে আমগাছটিকে নিয়ে কী সংবাদ বেরিয়েছিল?

উত্তর:এক আষাঢ়ের ঝড়ের রাতে আমগাছটির পতন ঘটে। পরের দিন কটকের একটি

খবরের কাগজে সেই সম্পর্কে প্রকাশিত হয়, কটকে অর্ধরাতে ভীষণ ঝড়-বৃষ্টি হয়, তাতে

শহরের ভিতরের পুরীঘাটে আমগাছ উপড়ে পড়েছে।


নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো:


৯.১) ‘একটু জমি খালি রাখা যাক – প্রস্তাবটি কে দিয়েছিলেন? কেন তিনি এমন প্রস্তাব

দিয়েছিলেন?

উত্তর:লেখক রাজকিশোর পট্টনায়কের ‘ফাঁকি' গল্পে গোপালের বাবা উক্ত প্রস্তাবটি

 দিয়েছিলেন।গল্পের প্রথমেই দেখি আটশো টাকা গুণ্ঠ (কাঠা) দরে জমি কিনে বাড়ি করার

 সময়ে বাবা আর ছেলের মধ্যে সবসময় একটাই কথা— বাড়িটা হবে কোথায়? ছেলের ইচ্ছে,

 রাস্তার ধারে করলে রাস্তা থেকে নেমেই সোজা বাড়িতে ঢোকা যাবে। কিন্তু বাবার আপত্তি,

 কেন-না, অমন মরুভূমির মধ্যে কেউ বাড়ি করে না। চারদিকে তো কেবল পাথরের মতো

 শক্ত শুকনো মাটি-এর মধ্যে বাড়ি করার কোনো মানেই হয় না। তারপর ছেলে যখন উপায়

 জানতে চায়, তখন তার বাবা উপরোক্ত প্রস্তাব দেন।

 

৯.২) ‘গোপাল মুখ তুলে সন্দিগ্ধভাবে বাবার মুখের দিকে তাকাল।'-তার এই সন্দেহের কারণ

কী?

উত্তর:‘ফাঁকি’ গল্পে গোপালের বাবা তার বাগানে আমগাছ লাগাবেন। সেই প্রসঙ্গে তিনি তার

 ছেলের উদ্দেশে অতি উৎসাহের সঙ্গে বললেন, 'সেই যে ভাগলপুর থেকে ল্যাংড়া আম

 আনিয়েছিলাম—মনে নেই তোর?' গোপালের তখনই সন্দেহ হয়েছিল যে, তার বাবা কি

 সত্যই আমগাছের জন্য কলম করেছিলেন, আর করলেও তাতে গাছ কি ভালো হবে, কিংবা

 ফুলের বাগান করলে কি সুন্দর হত না? ইত্যাদি।


৯.৩) ‘তুই করবি বাগান!'— বাবা কেন এমন মন্তব্য করেন?

উত্তর: 'তুই করবি বাগান?-রাজকিশোর পট্টনায়কের ‘ফাঁকি’ গল্পে গোপালের বাবা এমন

 মন্তব্য করেন। কারণ, ছেলে আমগাছ না লাগিয়ে ফুলের বাগান করতে আগ্রহী দেখে বাবা

 বললেন, তাদের বাগানের মাটি বেলে মাটি, জল দেবারও সুবিধা নেই। এর উত্তরে গোপাল

 যখন বলল, সে নিজের হাতে জল দেবে ফুল গাছে, তখন তার বাবা রেগে গিয়ে বলেছেন-'যে

 নাকি নিজের হাতে জল তুলে স্নানটুকু পর্যন্ত করতে পারে না, সে দেবে গাছে জল ?'— এই

 কারণেই লেখক বলেছেন- ‘তুই করবি বাগান?


৯.৪) ‘গাছটাকে আর দু-হাত ভিতরে লাগালে কত ভালো হতো।'— কোন গাছ? কেন বক্তার

এমন মনে হয়েছে?

উত্তর: লেখক রাজকিশোর পট্টনায়কের ‘ফাঁকি' গল্পের আমগাছটির কথা বলা হয়েছে।

গোপাল তার মাকে চুপি চুপি এই কথা কটি বলেছিল। কারণ গাছটি দু-হাত ভেতরে অর্থাৎ

 বাড়ির মাঝখানে লাগালে এর ডালপালা পাঁচিল ডিঙিয়ে বাইরে যেতে পারবে না, রাস্তার

 ছেলেরা পাতার জন্য বা আমের জন্য উৎপাত করবে না । আমগাছটিকে কেন্দ্র করে

 কারণে-অকারণে ঝগড়া লাগবে না, আর সেই বাইরের ঝগড়া ঘরে এসে ঢুকতেও পারবে না।


৯.৫) আমগাছটি কীভাবে গোপালবাবুর বাড়ির নিশানা হয়ে উঠেছিল?

উত্তর:‘ফাঁকি’ গল্পের আমগাছটি বড়ো হওয়ার পর গোপালবাবুকে তার বাড়ির ঠিকানা কেউ

 জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাদের বেশ বুঝিয়ে বলতেন-কাঠজোড়ি নদীর ধার বরাবর পুরীঘাট

 পুলিশ ঠেকে ফাঁড়ির ঠিক পশ্চিম দিকে, যেখানে পাঁচিল দেওয়া একটা বাড়ির মধ্যে একটি

 বড়ো আমগাছ দেখা যাবে,সেটাই গোপালদের বাড়ি,-এইভাবে ওই আমগাছটিকে কেন্দ্র

 করে বারবার পথচারীদের নিজের বাড়ি যাওয়ার পথের বর্ণনা দেওয়াতে, খুব সহজেই

 আমগাছটি গোপালদের বাড়ির নিশানা হয়ে উঠেছিল।


৯.৬)গাছটি কীভাবে তাদের সাহায্য করেছিল বুঝিয়ে লেখো। 


উত্তর:আমগাছটি নানাভাবে গোপালবাবু ও প্রতিবেশীদের সাহায্য করত যেমন—

১) কাঠজোড়ি নদীর দিক থেকে ছুটে আসা গরম বাতাস ও বালির ঝাপটা সে নিজের পাতা

ডালপালা দিয়ে আটকাত । 

২)গাছটির শীতল ছায়ায় বসে অনেকে স্নিগ্ধ হত।

 ৩)গাছটি গোপালবাবুর বাড়ির নিশানা হয়ে উঠেছিল। 

৪) প্রতিবেশীরা আম গাছটির ডাল-পাতা নিয়ে যেত।

 ৫) নানা অত্যাচার সহ্য করেও সে ফলদান করত।

৬)নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে গাছটি গোপালবাবুর বাড়ির যেন পাহারাদারের ভূমিকা পালন করত।


৯.৭)আমগাছটিকে ঘিরে বাড়ির সকলের অনুভূতির প্রকাশ গল্পে কীভাবে লক্ষ করা যায়?

উত্তর:আমগাছটি লাগানোকে কেন্দ্র করে প্রথম দিকে গোপাল ও তার মায়ের ইচ্ছা ছিল না

 কিন্তু গাছটি যতই বেড়ে উঠতে লাগল ততই তারাও গাছটিকে ভালোবেসে ফেলেছিল।

 গোপাল তার বন্ধুদের ওই গাছটির ছায়ায় বসাত। বন্ধুরা গাছটির প্রশংসা করত, তাতে

 গোপালদের আনন্দ ও গর্ববোধ হত। পুজোর জন্য যখন পাড়ার মানুষেরা ডাল বা পাতা নিতে

 আসত তখন গোপাল নিজে দাঁড়িয়ে সাবধানতার সঙ্গে ডাল-পাতা বিলোত, যেন গাছটির

 কোনো আঘাত না লাগে ।আম গাছটিতে যখন বোল ধরে তখন বাড়ির সকলের আনন্দের

 সীমা থাকে না। সেই সঙ্গে দুশ্চিন্তা কুয়াশায় সব বোল ঝরে যাবে না তো! পিঁপড়েতে ক্ষতি

 করে দেবে না তো! বাড়ির সকলে দিন গুনতে থাকে কবে বোল আমে পরিণত হবে। যখন

 সত্যিই আম দেখা দিল তখন সতর্ক থাকে-যেন পাড়ার ছেলেরা ঢিল মেরে বেশি ক্ষতি না

 করতে পারে। এরপর আম পাড়া, বন্ধু বা আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বিলোনো-এই নিয়ে

 আনন্দের শেষ থাকে না।


 ৯.৮)‘সেই দিন থেকে গাছ হেলে পড়েছে পুবদিকে।'-কোন দিনের কথা বলা হয়েছে? গাছটি

হেলে পড়ার কারণ কী?

উত্তর:যুদ্ধের সময় উড়োজাহাজ থেকে যদি বোমা পড়ে-সেই ভয়ে সরকারের লোক

 আমগাছটির একেবারে গোড়া পর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে রেখে গেছে-সেদিন থেকেই আমগাছটি হেলে

 পড়েছে পূর্বদিকে।গর্ত খোঁড়ার ফলে আমগাছটির গোড়া একেবারে কমজোরি হয়ে গেল।


৯.৯)'ঠিক বন্ধুর মতই গাছ সব কথা লুকিয়ে রেখেছে। গাছটি কীভাবে গোপালের বন্ধু হয়ে

উঠেছিল। কোন সব কথা সে লুকিয়ে রেখেছিল?

উত্তর:গাছটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নানাভাবে, যেমন – গাছের ডালপালা কাটা, পাতা ছেঁড়া,

 পাড়ার ছেলেদের গাছে ঢিল মারা, সরকারের লোকের গোড়া পর্যন্ত গর্ত খোঁড়া, উই পোকাতে

 গাছের একটা দিক ফোপড়া করে দেওয়া। গাছটি সমস্ত ক্ষতস্থান পাতার আড়ালে ঢেকে

 রেখে নীরবে সকল যন্ত্রণা সহ্য করেছে। কারণ সে গোপালদের পরিবারের আত্মীয় হয়ে

 উঠেছিল। গোপালও পরম মমতায় গাছের গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়েছে, তার শরীর থেকে

 পিঁপড়ে তাড়ানোর জন্য ওষুধ স্প্রে করেছ, হেলে পড়া গাছটিকে সোজা রাখার জন্য ঠেকো

 দিয়েছে।মায়ের নিষেধ সত্ত্বেও গোপাল চুপি চুপি গাছের কয়েকটি সরু ডাল কেটে ফেলেছে

 বাইরের রাস্তাটা সাফ করার জন্য। তাতে গাছের গায়ে ক্ষত তৈরি হয়েছে কিন্তু গাছটি নীরবে

 তা সহ্য করেছে এবং এই কথাটি গাছটি লুকিয়ে রেখেছে।


৯.১০) বিভিন্ন ঋতুতে আমগাছটির যে ছবি গল্পে ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো।

উত্তর:প্রতিবছর আমগাছটিতে কাক বাসা বেঁধেছে, বর্ষার সময় তার ডালে বেনেবৌ বসেছে,

 রাতে কাল পেঁচা তার শাখায় বসে ডেকেছে, প্রতিদিন কাঠবিড়ালি খেলা করেছে সেই গাছের

 শাখায় শাখায়। প্রতিবছর ছেলেপিলেরা তাতে দোলনা টাঙিয়েছে। তাদের কলরব কল্লোল,

 তাদের আনন্দ উৎসাহ গাছটিকে কেন্দ্র করে গাছের গোড়ায় লুটিয়ে পড়েছে। প্রতিবছর

 ঝড়ে আমগাছটি কেঁপেছে, তার ডালে-পাতায় পিঁপড়ে ঘুরে বেড়িয়েছে, গাছের গোড়ায়

 পিঁপড়ে শিকার করতে পিঁপড়ে-বাঘ বেলে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বসে থেকেছে বাতাস গাছকে

 জড়িয়ে ডালকে দুলিয়ে দিয়েছে। পতনের আগে পর্যন্ত আমগাছটির এমন ছবিই প্রকাশিত

 হয়েছে।


৯.১১)গাছটি কীভাবে পরিবারের সকলকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল ?

উত্তর:গোপালের বাবার একটি হাঁড়িতে করে বয়ে আনা একহাত মাপের ছোটো একটি

 আমগাছের কলম চারা একদিন পরিবারের সকলের ভালোবাসা ও মমতায় বেড়ে ওঠে বড়ো

 একটি আমগাছ। অনেক প্রতিকূলতা এসেছে, তবুও এই গাছটি যেন নিজস্ব প্রাণশক্তিতে

 ভরপুর হয়েই দাঁড়িয়ে ছিল। পিঁপড়ে এসে আমের বোল নষ্ট করে দিতে পারে বলে গোপাল

 গাছে ওষুধ স্প্রে করে পিঁপড়ে মেরেছিল, তাতে আবার ভিতরে ভিতরে বেড়ে উঠেছিল

 উইয়ের উপদ্রব। অন্যদিকে বিমান থেকে ছোঁড়া বোমার হাত থেকে বাঁচতে সরকারি

 লোকেরা যে গর্ত খোঁড়ে, তার জেরে আমগাছটি পূর্বদিকে কমজোরি হয়ে হেলে পড়েছিল।

 সকলের দৃষ্টির আড়ালে উইপোকা তাকে ভিতর থেকে ঝাঁজড়া করে দিয়েছিল। আমগাছটা

অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। আগের থেকে কিছুই বোঝা যায়নি। হঠাৎ করে ভেঙে পড়ে

 সে একেবারে ধূলিসাৎ হয়ে যায়। এভাবে আত্মীয় সমান আম গাছটি পরিবারের সকলকে

 ফাঁকি দিয়ে চলে গিয়েছিল।


Contents:

আরো পড়ুন:

ভরদুপুরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here

শংকর সেনাপতি গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here

পাইন দাঁড়িয়ে আকাশে নয়ন তুলি কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here

মন-ভালো-করা কবিতা প্রশ্ন উত্তর Click Here

পশু পাখির ভাষা গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here

ঘাসফড়িং কবিতা প্রশ্ন উত্তর Click Here

কুমোরে-পোকা বাসাবাড়ি গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here

চিঠি কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here


It all began with drip drip part 1 Click Here

It all began with drip drip part 2 Click Here

It all began with drip drip part3 Click Here

 

the adventurous clown part 1 Click Here

the adventurous clown Part 2 Click Here

the adventurous clown part 3 Click Here


The rainbow poem Lesson 3 part 1 Click Here


The Shop That Never Was Lesson 4 Part-1 Click Here



মরশুমের দিনে গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here

মাটির ঘরের দেওয়াল চিত্র প্রশ্ন উত্তর click Here 

পিঁপড়ে কবিতার প্রশ্ন উত্তর click Here 

ফাঁকি গল্পের প্রশ্ন উত্তর click Here 







Post a Comment

0 Comments