খেয়া
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সূচিপত্র:
ক। কবি পরিচিতি
খ) উৎস
গ) পূর্ব কথা
ঘ। বিষয় সংক্ষেপ
ঙ। নামকরণ
চ। সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখ(MCQ) প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
ছ। অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(SAQ)২০টি শব্দের মধ্যে প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
জ। ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ৬০টি শব্দের মধ্যে প্রতিটি প্রশ্নের মান-৩
ঝ। বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী বা বড়ো প্রশ্নোত্তর ১৫০টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও-পূর্ণমান- ৫
e-bookap পেজটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুখবর-1st- ইউনিট,2nd ইউনিট,3nd ইউনিট,টেস্ট
ফাইনাল পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্যগুরুত্বপূর্ণভাবে তোমাদের সাহায্য করবে।তাই এই সাফল্য
আমাদের কাছে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ক) কবি পরিচিতি:
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর:
জন্ম ও শিক্ষা:
৭মে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম
হয়। তাঁর বাবার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মা সারদা দেবী। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর
ছিলেন তাঁর পিতামহ। প্রথাগত পড়াশোনায় তাঁর আগ্রহ ছিল না। তথ্যপ্রমাণ থেকে বোঝা
যায় ক্যালকাটা ট্রেনিং অ্যাকাডেমি, ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্মাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি,
সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল প্রভৃতি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বল্পদিনের পড়ুয়া হিসেবে তিনি ফিফ্থ
ইয়ার ক্লাস পর্যন্ত পড়েছিলেন। এভাবে বিদ্যালয়ে পড়ার অনীহা লক্ষ করে পিতা দেবেন্দ্রনাথ
যোগ্য শিক্ষকদের কাছে বিভিন্ন বিষয় বাড়িতেই পড়ার বন্দোবস্ত করেছিলেন।
কাব্য চর্চা:
ছেলেবেলাতেই তাঁর কাব্যচর্চা শুরু হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের ভাগিনেয় অথচ বয়সে বড়ো
জ্যোতিপ্রকাশ গঙ্গোপাধ্যায়ের উৎসাহে তিনি কবিতা রচনায় হাত দিয়েছিলেন। তাঁর এই
কাব্যচর্চার কথা শ্রোতার কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন দাদা সোমেন্দ্রনাথ একাজে তাঁকে
সবচেয়ে বেশি প্রেরণা জুগিয়েছিলেন তাঁরই নতুন বউঠান জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী
কাদম্বরী দেবী এবং এ সময় মূলত তাঁরই উৎসাহে কাব্যগুরু হিসেবে তিনি মেনেনিয়েছিলেন
কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীকে।
কাব্য সম্ভার:
তাঁর লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সন্ধ্যাসঙ্গীত'। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে কাব্যটি প্রকাশিত হলে সেকালের
বিখ্যাত সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিজের গলার মালা খুলে রবীন্দ্রনাথের গলায়
পরিয়ে তাঁকে সাদরে বরণ করে নিয়েছিলেন বাংলার কাব্যজগতে।এরপরএকে একে
প্রকাশিত হয় ‘প্রভাতসঙ্গীত,ছবি বিবিধ কাব্যসম্ভার ও গান,কড়ি ও কোমল,মানসী,সোনার
তরী,চিত্রা,চৈতালী,কণিকা,কল্পনা,কথা ও কাহিনী,‘ক্ষণিকা,নৈবেদ্য,স্মরণ’ শিশু, খেয়া’।
‘গীতাঞ্জলি, ‘গীতিমাল্য,গীতালি’-র মধ্যে এক অপূর্বঅধ্যাত্মচেতনা অনুভব করা যায়। এই
পর্বে রচিত কবিতাগুলিকে স্বীকৃতি জানাতেই ১৯১৩খ্রিস্টাব্দে সুইডিশ অ্যাকাডেমি
‘গীতাঞ্জলি' কাব্যের জন্য তাঁকে নোবেল পুরস্কারে পুরস্কৃতকরে। তারপর থেকে তাঁর
বিশ্বজোড়া খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা ও নাইট উপাধি ত্যাগ:
পৃথিবীর ছোটো-বড়ো বিভিন্ন দেশে তিনি ভ্রমণ করেছেন, বক্তৃতা দিয়েছেন। শুধু কাব্যচর্চাই
তিনি করেননি, একজন কর্মযোগীও ছিলেন। জীবনের সর্বস্বটুকু দিয়ে বিশ্বভারতী
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। সমবায় প্রথায় গ্রামের মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণের চেষ্টা
করেছেন। কৃষিক্ষেত্রে উন্নতির জন্য শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেছেন। আবার একইসঙ্গে
বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা ও 'নাইট' উপাধি ত্যাগদেশপ্রেমিক এই মানুষটির কণ্ঠ বিদেশি
অত্যাচারের বিরুদ্ধেও গর্জে উঠেছে।জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি
ব্রিটিশের দেওয়া নাইট উপাধি প্রত্যাখ্যানকরেছেন। আন্দামান, হিজলির বন্দিশিবিরে ব্রিটিশ
অত্যাচার চরমে উঠলে কবি তার বিরুদ্ধেকলম ধরেছেন। সময়ে তিনি সোভিয়েত রাশিয়ার
নেতৃত্বাধীন মিত্রশক্তিকে সমর্থনকরেছেন।‘প্রান্তিক' কাব্যগ্রন্থ রচনাকাল থেকেই কবি
পশ্চিমের আকাশে অনুভবকরছিলেন বাতাসে নাগিনিরনিশ্বাসতাইতিনিউগ্রআধুনিকতাসর্বস্ব
এই পশ্চিমি ঝঞ্ঝাকেধিক্কার জানিয়েছেন।তবে জীবনের শেষদিন পর্যন্তরবীন্দ্রনাথ আস্থা
রেখেছেন উপনিষদীয়ভাবনায়। তাইমানবসভ্যতার শোচনীয় পরিণামেব্যথিত হলেও
মানবেশ্বরের প্রতি আস্থায়অবিচল ছিলেনতিনি।
জীবনাবসান:
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট (১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ)জীবনাবসান বার্ধক্যজনিত শারীরিক
অসুস্থতায় তাঁর মৃত্যু হয়।
খ) উৎস:
‘খেয়া’ কবিতাটি ‘চৈতালি' কাব্যগ্রন্থের ১৩ সংখ্যক কবিতা। কবিতাটি ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে
প্রকাশিত হয়।
গ) পূর্বকথা:
জমিদারির কাজ দেখাশোনার জন্য মাঝে মাঝে বোটে করে নদীবক্ষে ঘুরে বেড়ানোর সময়
নদীতীরবর্তী গ্রামের মানুষের সহজসরল জীবনে ছাপ ফেলেছিল কবির অন্তরে। তারই
প্রেক্ষাপটে কবি ‘খেয়া’ কবিতাটি রচনা করেন।
ঘ)বিষয় সংক্ষেপ:
‘খেয়া’ কবিতাটি রূপক আশ্রিত কবিতা।নদীমাতৃক বাংলা দেশে খেয়া নৌকো দুটি গ্রামের
মধ্যে ক্রমাগত যোগসূত্র স্থাপন করে চলে। কবির কাছে এই খেয়া শুধুমাত্র পারাপারের
মাধ্যম নয়। এই খেয়া মানুষের জীবনের বহমানতার প্রতীকস্বরূপ হয়ে উঠেছে। পৃথিবীতে
নানান সভ্যতার উত্থানপতন ঘটে। রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে নতুন নতুন
ইতিহাস। কালের পর কাল এভাবেই পৃথিবীর বুকে জীবনপ্রবাহ বয়ে চলে। কিন্তু গ্রামীণ
জীবন, খেয়া পারাপার এবং শান্ত- জীবনযাপন চিরপ্রবাহমান নদীর স্রোতের মতোই
চিরকালীন চলতে থাকে।
ঙ) নামকরণ:
যে-কোনো সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্রেই নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামকরণের মাধ্যমেই
সাহিত্যের অন্তর্নিহিত বিষয় বা ভাবটি পাঠকের কাছে পরিস্ফুট হয়। রবীন্দ্রনাথ ‘চৈতালি'
কাব্যগ্রন্থের অন্তৰ্গত ‘খেয়া’ কবিতাটিতে একদিকে দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় রক্তাক্ত পৃথিবী আর
অন্যদিকে শান্ত-স্নিগ্ধ মানবিক সম্পর্ক-মাখা পল্লিজীবনের ছবি পাশাপাশি তুলে ধরেছেন।
‘খেয়া’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল জলযানের দ্বারা নদী বা খাল পারাপার। এর আর-একটি
অর্থ হল নদী পারাপারের নৌকা। কোনো এক নাম-না-জানা নদীর দুই পারের দুটি গ্রাম সারা
বাংলার পল্লিজীবনের প্রতিনিধিত্ব করছে এই কবিতায়। নদী পারাপারের নৌকাটিই যেন দু-
পাশের দুটি গ্রামের মানুষকে আত্মীয়তার বন্ধনে বেঁধেছে। নিত্যদিন খেয়ানৌকায় নদী
পারাপার করার সূত্রেই দু-পারের মানুষগুলির মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়।
অন্যদিকে, নাগরিক সমাজ সবসময়ই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত-রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে লিপ্ত
থাকে। সেখানে সব সময় চলে ক্ষমতা দখলের লড়াই— এক সাম্রাজ্যের পতনে আর-এক
সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে। তথাকথিত সভ্যতার অগ্রগতিতে মানুষের জীবনযাত্রার যেমন
উন্নতি হয় তেমনি তা ডেকে আনে সমাজ ও পরিবেশের ধ্বংসকেও। তাই কবি বলেছেন
সভ্যতার উন্নতিতে বিষ এবং অমৃত দুই ই উঠে আসে।
নাগরিক জীবনের এই উত্থান-পতনে পল্লিগ্রামের জীবন কিন্তু এতটুকুও আন্দোলিত হয় না।
আবহমান কাল ধরে তাদের জীবনযাত্রা একইভাবে বয়ে চলে। মানুষে-মানুষে নিবিড়
সম্পর্কই গ্রামের জীবনযাত্রার মূলভিত্তি। খেয়ানৌকা তাদের এই সম্পর্কের সূত্র। তাই
কবিতাটির ‘খেয়া’ নামকরণ প্রতীকী এবং সার্থক।
চ। সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখ(MCQ) প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
১)খেয়া' কবিতাটির কবির নাম-
ক)নজরুল ইসলাম
খ) বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর
গ) নবীনচন্দ্র সেন
ঘ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তর:(ঘ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২)‘খেয়া’ কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
ক) চিত্রা
খ )চৈতালী
গ) উৎসর্গ
ঘ) মানসী
উত্তর:(খ) চৈতালি
৩) ‘খেয়া’ কবিতায় যে-নদীর প্রসঙ্গ রয়েছে সেটি হল- ক) পদ্মা নদী
খ) নাগর নদী
গ)করতোয়া নদী
ঘ) ঝিলম নদী
উত্তর:(খ) নাগর নদী
৪)খেয়া নৌকা পারাপার করে-
ক)সমুদ্রে
খ)নদীতে
গ)ঝিলে
ঘ)বিলে
উত্তর:(খ) নদীতে
৫) 'খেয়ানৌকা'-র কাজ হল-
ক) মালপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়া
খ) যাত্রী পারাপার করা
গ) সীমান্তে পাহারা দেওয়া
ঘ) মাছ ধরা
উত্তর:(খ) যাত্রী পারাপার করা
৬) খেয়া নৌকায় মানুষ পারাপার করে-
ক) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত
খ) সকালে
গ) সন্ধ্যায়
ঘ)রাতে
উত্তর:(ক) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত
৭)নদীর দুই তীরে আছে-
ক)নগর
খ) দুটি গ্রাম
গ বাঁশবন
ঘ) আমবাগান
উত্তর:(খ) দুটি গ্রাম
৮) 'আনাগোনা' শব্দটির অর্থ-
ক)আসা
খ) যাওয়া
গ) আসা-যাওয়া
ঘ) ফেরা
উত্তর:(গ) আসা-যাওয়া
৯)পৃথিবীতে দেখা যায়-
ক) আনন্দ উৎসব
খ) দ্বন্দ্ব-সর্বনাশ
গ) উল্লাস-আয়োজন
উত্তর:(খ) দ্বন্দ্ব সর্বনাশ
১০) পৃথিবীতে বহু দ্বন্দ্ব ও সর্বনাশের মূল কারণ হল -
ক) নতুনের খোঁজ
খ) ধ্বংসের নেশা
গ) সৃষ্টির আনন্দ
ঘ) সোনার মুকুটসম ক্ষমতা ও পদমর্যাদার লোভ
উত্তর:(ঘ) সোনার মুকুটসম ক্ষমতা ও পদমর্যাদার লোভ
১১)সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে।'—টুটে' বলতে বোঝায়—
ক)মুক্ত হয়
খ) ছিঁড়ে যায়
গ)ভেঙে যায়
ঘ) সরে যায়
উত্তর:(গ) ভেঙে যায়
১২)সোনার মুকুটকে কবি ফুটে উঠতে দেখেছেন—
ক) নদীস্রোতে
খ)খেয়া নৌকায়
গ )রক্তপ্রবাহের মাঝে
ঘ) গ্রামীণ জীবনে
উত্তর:(গ) রক্ত প্রবাহের মাঝে
ছ। অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(SAQ)২০টি শব্দের মধ্যে প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
১)'খেয়া নৌকা' বলতে কী বোঝ?
উত্তর:সাধারণত যাত্রী পারাপারের কাজে নিযুক্ত নৌকাকে লো খেয়া নৌকা বলে।
২) খেয়া নৌকা কোথায় পারাপার করে?
উত্তর:খেয়া নৌকা নদীস্রোতে পারাপার করে।
৩)খেয়া যাত্রীরা কোথায় পারাপার করে?
উত্তর:খেয়া নৌকার যাত্রীরা কেউ ঘর থেকে আসে, আবার কেউ ঘরে ফিরে যায়।
৪) খেয়া নৌকার যাত্রীদের পারাপারের কারণ কী?
উত্তর:দুই গ্রামের মানুষদের মধ্যে জানাশোনা থাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা খেয়া
নৌকায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে আনাগোনা করে।
৫)খেয়া’ কবিতায় নদীর দুই তীরে কী আছে?
উত্তর:‘খেয়া' কবিতায় নদীর দুই তীরে দুটি গ্রামের উল্লেখ আছে।
৬)‘দুই তীরে দুই গ্রাম আছে জানাশোনা,' – এখানে ‘জানাশোনা’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: দুই তীরস্থ দুটি গ্রামের মধ্যে গড়ে ওঠা স্বাভাবিক মানবিক সম্পর্ককে ফুটিয়ে তুলতে
কবি 'জানাশোনা' শব্দটিকে ব্যবহার করেছেন।
৭) 'সকাল হইতে সন্ধ্যা করে আনাগোনা। কে আনাগোনা করে?
উত্তর: ‘খেয়া কবিতায় দুটি গ্রামের গ্রামবাসীরা সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত আনাগোনা করে।
৮) কে ইতিহাস গড়ে?
উত্তর:পৃথিবীর নানা দ্বন্দ্ব ও সর্বনাশ, রক্তপ্রবাহের ফেনিল স্রোতে নতুন নতুন ইতিহাসের জন্ম
দেয়।
৯) 'রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া উঠে- এখানে 'ফেনাইয়া' শব্দটি প্রয়োগের কারণ কী?
উত্তর:শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির সংঘর্ষে রক্তক্ষয়ের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় নতুন শক্তি। কিন্তু তা
বুদবুদের মতোই ক্ষণস্থায়ী। তাই কবি ‘ফেনাইয়া' শব্দটির উল্লেখ করেছেন।
১০)‘রক্তপ্রবাহের মাঝে' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর:'রক্তপ্রবাহের মাঝে' বলতে কবি হিংসা, বিদ্বেষ ও লোভের কারণে বিবদমান দুই
সভ্যতার রক্তক্ষয়ী ইতিহাসকে মা বুঝিয়েছেন।
১১) 'সোনার মুকুট' কীসের প্রতীক বলে তুমি মনে কর?
উত্তর: ‘সোনার মুকুট' রাজশক্তি বা রাষ্ট্রনায়কের শিরস্ত্রাণ স্বরূপ ক ক্ষমতা, অহংকার ও
পদমর্যাদার প্রতীক বলে আমাদের মনে হয়।
১২) 'সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে!- এখানে ‘ফুটে আর টুটে' বলতে কবি কী
বুঝিয়েছেন?
উত্তর: রাষ্ট্রশক্তি বা রাজশক্তির জয়পরাজয় কিংবা উত্থানপতনের ক্ষণস্থায়িত্বকে ফুটিয়ে
তুলতেই কবি ‘ফুটে আর টুটে’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছেন।
জ। ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ৬০টি শব্দের মধ্যে প্রতিটি প্রশ্নের মান-৩
১)সকাল হইতে সন্ধ্যা করে আনাগোনা।“আনাগোনা শব্দের অর্থ কী? কারা, কীভাবে
আনাগোনা করে?
উত্তর: আনাগোনা' শব্দের অর্থ হল-যাওয়া-আসা।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খেয়া’ কবিতায়
নদী তীরবর্তী দুটি গ্রামের মানুষের কর্মব্যস্ততার ছবি প্রকাশিত হয়েছে।গ্রামীণ মানুষের
দৈনন্দিন জীবন আবর্তিত হয় খেয়া নৌকার মাধ্যমেই। গ্রামীণ মানুষনানা প্রয়োজনে এক
পার থেকে অন্যপারে শক্তি- যাওয়া-আসা করে খেয়া তরিতে করেই।মাধ্য সকাল থেকে সন্ধ্যা
অর্থাৎ সমগ্র জীবনব্যাপী } মধ্য দুই গ্রামের মানুষের আসা-যাওয়াতথা সংযোগ সাধিত হয়
খেয়া ঘটে নৌকাটির মাধ্যমে। এভাবেই দুই গ্রামের মানুষেরআনাগোনা চলতে থাকে।
২)নূতন নূতন কত গড়ে ইতিহাস- কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি? কীভাবে নতুন ইতিহাস গড়ে
ওঠে?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানব-ইতিহাসের সংঘাতময়তা তথা ধ্বংস ও সৃষ্টির চিরসত্যতা
প্রসঙ্গেই ‘খেয়া’ কবিতায় আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
দার্শনিক চেতনাসমৃদ্ধ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উপলদ্ধি করেছেন অহংবোধ, ক্ষমতার লোভ,
হিংসার বশবর্তী হয়ে শক্তিরাষ্ট্রগুলি পারস্পরিক দ্বন্দ্বসংঘাতে লিপ্ত হয় বারংবার। ফলে একটি
সাম্রাজ্য ধ্বংস হয় আবার সেই ধ্বংসস্তূপের ওপরেই স্থাপিত হয় নতুন সাম্রাজ্য।
আবহমানকাল ধরেই এভাবে সাম্রাজ্যের ভাঙাগড়া চলে আসছে। এই গড়ার মাধ্যমেই রচিত
হয় নতুন এক ইতিহাস।
৩)‘পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব, কত সর্বনাশ – এই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণ কী? এর পরিণাম লেখো।
উত্তর: আবহমানকাল ধরে পৃথিবীতে মানব-ইতিহাস কলঙ্কিত হচ্ছে দ্বন্দ্বসংঘাতের কারণে।
শক্তিশালী রাষ্ট্র দুর্বল রাষ্ট্রকে দখলকরার চেষ্টায় রত। ক্ষমতার লোভ, অহংবোধ,হিংসাই হল
দ্বন্দ্বসংঘাতের মূল কারণ।পাশবিক স্বার্থপরতার কারণেই রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে তথা মানুষে-মানুষে
দ্বন্দ্বসংঘাত সংঘঠিত হয়।দ্বন্দ্বসংঘাতের ফলেই রক্তাক্ত হয় মানব-ইতিহাস। দুর্বল ক্রমশ
পরিণাম শোষিত ও পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়। এইদ্বন্দ্বের ফলেই সৃষ্টি হয় যুদ্ধ, তাতে
ধ্বংস হয় এক সাম্রাজ্য, আবার গড়ে ওঠে নতুন এক সাম্রাজ্য।
৪)সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে !- কোথায়,কীভাবে এমন ঘটনা ঘটে?
উত্তর:মর্ত্য-পৃথিবী, যেখানে মানবসভ্যতার বিজয়রথ এগিয়ে চলেছে,সেখানেই ‘সোনার
মুকুট' ফুটে আরটুটে।সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনাময় পৃথিবী দ্বন্দ্বসংঘাতময়। এখানেই রচিত
হয় সভ্যতার ভাঙাগড়ার ইতিহাস। ক্ষমতার মদ মত্ততায় লিপ্ত হয়ে একরাষ্ট্র অপর দুর্বল
রাষ্ট্রে পেশিশক্তি প্রয়োগ করে নিজের ক্ষমতা বা প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করে। তখন বিজয়ী রাষ্ট্রের
মাথায় ওঠে স্বর্ণমুকুট আর পরাজিত শক্তির মাথা থেকে মুকুট খসে পড়ে। রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্ব,
হানাহানির। মাধ্যমেই শক্তিশালী রাষ্ট্রের উত্থান আর দুর্বল শক্তির পরাজয়ের মধ্য দিয়েই এই
মর্ত্য-পৃথিবীতে আবহমানকাল ধরেই এমন ঘটনা ঘটে চলেছে।
৫)রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া উঠে।-‘রক্তপ্রবাহ' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? এখানে
‘ফেনাইয়া,শব্দ ব্যবহারের গুরুত্ব কী ?
উত্তর: ‘রক্তপ্রবাহ’ বলতে রক্তস্রোতের কথাই বলাহয়েছে। সভ্যতার ইতিহাস হল রক্তাক্ত
ইতিহাস। অধিক শক্তিধর রাষ্ট্র পেশিশক্তির মাধ্যমে দুর্বল রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্তপ্রবাহ
হরণ করে। এর জন্য সংঘটিত হয় যুদ্ধ আর তাতে মানবরক্তে রঞ্জিত হয় মৃত্তিকা। পাশব
শক্তির এই বর্বর, নগ্ন রূপটিকে তুলে ধরতেই কবি ‘রক্তপ্রবাহ’ শব্দের প্রয়োগ করেছেন।
‘ফেনা' অস্থায়ী, সৃষ্টির ক্ষণকালের মধ্যেই বুদের মতো ফেনাইয়া উঠে তার বিনাশ ঘটে।
অশুভ শক্তির গর্বোদ্ধত আচরণও সভ্যতার ইতিহাসে ক্ষণকালের জন্যই। বুদের মতো অল্প
সময়েই তার বিনাশ ঘটে। এই সত্যটিকেই ‘ফেনাইয়া' শব্দে ব্যঞ্জিত করেছেন কবি।
ঝ। বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী বা বড়ো প্রশ্নোত্তর ১৫০টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও-পূর্ণমান- ৫
১)‘খেয়া' কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নগর ও গ্রামজীবনের- যে তুলনামূলক ছবিটি তুলে
ধরেছেন তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
উত্তর: খেয়া’ কবিতাটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একদিকে পৃথিবীর দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় রক্তাক্ত
নাগরিক জীবন আর অন্যদিকে শান্ত-স্নিগ্ধ মানবিক সম্পর্ক মাখা গ্রামজীবনের ছবি
পাশাপাশি তুলে ধরেছেন।
একটি নাম-না-জানা নদীর দু-পাশের দুটি গ্রাম, এখানে সারা বাংলার
পল্লিগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করেছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ সহজ সরল ভাবে তাদের
জীবন কাটায়। নাগরিক জীবনের সুখস্বাচ্ছন্দ্য তাদের জীবনে নেই কিন্তু মানুষের সঙ্গে
মানুষের নিবিড় ভালোবাসার সম্পর্ক আছে। নদী পারাপারের খেয়া নৌকাটিই দু-পাশের দুটি
গ্রামের মানুষকে আত্মীয়তার বন্ধনে বেঁধেছে।
অন্যদিকে, নগরজীবনে সুখস্বাচ্ছন্দ্য অনেক বেশি কিন্তু মানুষের সঙ্গে মানুষের হৃদয়ের
যোগ খুব কম। তাই ক্ষমতা বা সম্পদের লোভে তারা খুব সহজেই একে অন্যকে আঘাত
করতে পারে। রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এক সাম্রাজ্যের পতনে সূচিত হয় আর-এক
সাম্রাজ্যের উত্থান। সভ্যতার অগ্রগতি মানুষকে উন্নততর জীবন দিয়েছে। একইসঙ্গে তার
ক্ষতিকারক দিক মানুষের জীবনকে বিষাক্তও করেছে। নাগরিক মানুষ প্রকৃতির থেকে
অনেক দূরে সরে গেছে, অজস্র উন্নত মারণাস্ত্র তাদের পরস্পরের মধ্যেও ব্যবধান তৈরি
করেছে।
নগরজীবনের এই উত্থানপতন,দ্বন্দ্ব-সংঘাত থেকে অনেক দূরে পৃথিবীর এককোণে
পল্লিগ্রামের জীবন কিন্তু আবহমান কাল ধরে একই রকমভাবে বয়ে চলে। কবিতাটিতে
হৃদয়হীন নাগরিক জীবন থেকে সহজসরল মানবিক পল্লিজীবনের প্রতিই রবীন্দ্রনাথের
গভীর ভালোবাসা ব্যক্ত হয়েছে।
২)'কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে। 'কেহ' ঘর বলতে কাদের কথা বোঝানো হয়েছে?
'ঘর'কথাটির মাধ্যমে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: আলোচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খেয়া’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য
অংশে ‘কেহ’ বলতে খেয়া নৌকায় নদী পারাপারকারী তথা‘কেহ' কারা জীবনপ্রবাহে
চিরভাসমান মানুষকে বোঝানো হয়েছে।
এই কবিতায় খেয়া নৌকায় সওয়ার হয়ে কেউ কর্মের তাগিদে ঘর থেকে বাইরে যাচ্ছে, আবার
কেউ-বা বাইরের কাজ সমাপ্ত করে ঘরে ফিরে আসছে। তবে কবি ‘ঘর’ বলতে শুধু
বাসস্থানকেই বোঝান নি, আক্ষরিক অর্থকে অতিক্রম করে ‘ঘর’ ব্যঞ্জনার্থে প্রকাশিত
হয়েছে। ব্যাপক অর্থে নদীর দুই পার হল ইহকাল ও পরকাল অর্থাৎ জন্ম ও মৃত্যু। মানুষের
জীবন এই জন্মমৃত্যুতে গাঁথা। জন্মের মাধ্যমে মানুষ পরলোক থেকে ইহলোকে আসে,
আবার মৃত্যুর মাধ্যমে ইহলোক ত্যাগ করে পরলোকে গমন করে। এখানে পরলোক হল
আপন ঘর- চিরকালের আবাসভূমি। আর ইহলোক তথা মর্ত্য-পৃথিবী হল ক্ষণকালের
বাসস্থান। অনন্তকাল সমুদ্রের বিন্দুমাত্র মর্ত্যজীবন কাল।এভাবেই ঘর থেকে বাইরে যাওয়া
আবার বাইরে থেকে ঘরে ফেরা এই অবিরাম যাত্রা।মানবজীবনের এই যাওয়া-আসা পৃথিবীর
বুকে আবহমানকাল ধরেই চলে আসছে। কবি তাইবলেছেন-‘এই খেয়া চিরদিন চলে
নদীস্রোতে। কবি এভাবেই ‘ঘর' শব্দটিকে গভীর অর্থবহকরে তুলেছেন
CONTENTS:
আরো পড়ুন:
কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
ধীবর-বৃত্তান্ত নাট্যাংশের প্রশ্ন উত্তর Click Here
ইলিয়াস গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
দাম গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর Click Here
হিমালয় দর্শন গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
Teles of Bhola grandpa Lesson1 Unit 1 Click Here
Teles of Bhola grandpa Unit 2 Click Here
All about a Dog Lesson 2-Unit -1 -Click Here
All about a Dog Lesson 2 Unit 2 Click Here
Autumn poem Lesson 3 Part 1 Click Here
A Day in the zoo Lesson 4 Part 1 Click Here
A Day in the zoo Lesson 4 part 2 Click Here
All Summer in a Day Lesson 5 part 1 Click Here
আবহমান কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
আমরা কবিতা প্রশ্ন উত্তর click Here
খেয়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর click Here
0 Comments