মেঘ-চোর
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
মেঘ-চোর-গল্পের দ্বিতীয় Part প্রশ্ন ও উত্তর:
১)পুরন্দরের মতে আটলান্টিসের অবস্থান কোথায় ?
উত্তর: আটলান্টিসের অবস্থান: পুরন্দরের মতে, আটলান্টিসের অবস্থান আলাস্কার
লেকশ্রেভারের নীচে।তাই তিনি লেক শ্রেভারের জল শুকিয়ে ফেলে সেই সভ্যতার
অনুসন্ধানকরতে চেয়েছিলেন।
২১) সাইবেরিয়া কোথায় ?
উত্তর: উত্তর গোলার্ধের একেবারে উত্তর অংশে, এশিয়া মহাদেশেররাশিয়ায়
সাইবেরিয়াঅবস্থিত।এটি অত্যন্ত শীতল জায়গা, তাই সারা বছরই অঞ্চলটি বরফে ঢাকা
থাকে।
২২) অসীমা কেন পুরন্দরকে ফেরিওয়ালা বলে ব্যঙ্গ করেছে?
উত্তর:ফেরিওয়ালা বলে ব্যঙ্গ করার কারণ: ফেরিওয়ালা যেমন নানারকম সামগ্রী নিয়ে বিভিন্ন
জায়গায়ফেরি করে বেড়ায়, পুরন্দর চৌধুরিও তেমন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মেঘ ফেরি করে
বেড়াতেচেয়েছিলেন। আলাস্কার লেক শ্রেভাবের জল শুকিয়ে ফেলে তিনি পঁচানব্বই
হাজারকিউবিক মাইলআয়তনের এক বিশাল জলভরা মেঘ তৈরি করতে এবং তা বিভিন্ন
দেশেফেরি করতে চেয়েছিলেন। তাইঅসীমা তাঁকে 'ফেরিওয়ালা' বলে ব্যঙ্গ করেছেন।
২৩) অ্যালয় কী?
উত্তর: একটি ধাতুর সঙ্গে অন্য এক বা একাধিক ধাতু মিশিয়ে যে মিশ্র ধাতু তৈরি হয়, তাকে
বলা হয় ‘অ্যালয়' বা সংকর ধাতু। ‘মেঘ-চোর' গল্পে দেখা যায়, বিখ্যাত বিজ্ঞানী পুরন্দর
চৌধুরি পারদের সঙ্গে এগারোটি ধাতু মিশিয়ে একটি সংকর ধাতু বা অ্যালয়ের বল তৈরি
করেছেন। এই বলটি জলের ছোঁয়া পাওয়া মাত্রই গরম হতে শুরু করে।
২৪) পুরন্দরের তৈরি গোলকটিতে আছে এমন কোন্ ধাতুর নাম গল্পে পেলে?
উত্তর: ‘মেঘ-চোর' গল্পে পুরন্দরের তৈরি গোলকটিতে পারদ বা মার্কারি ধাতু থাকার কথা বলা
হয়েছে।
২৫) পুরন্দরের তৈরি গোলকটি এয়ারটাইট রাখতে হয় কেন?
উত্তর:এয়ারটাইট রাখার কারণ: বাতাসে উপস্থিত জলকণার ছোঁয়া পেলেই পুরন্দরের তৈরি
গোলকটি গরম হতে শুরু করে। গোলকটি খোলা রাখলে পৃথিবীর আবহমণ্ডলে বিপর্যয় ঘটে
যেতে পারে, তাই সেটিকে এয়ারটাইট করে রাখতে হয়।বলেছে?
২৬ )“প্রকৃতিকে ধ্বংস করা একটা অপরাধ।”–কে, কাকে, কখন বলেছেন?
উত্তর: কারপভের মেয়ে অসীমা বিশ্বখ্যাত বৃষ্টিবিজ্ঞানী পুরন্দর চৌধুরির উদ্দেশে উদ্ধৃত
উক্তিটি করেছেন।পুরন্দর চৌধুরি তাঁর তৈরি ধাতব বলের সাহায্যে লেক শ্রেভারের জল
সম্পূর্ণ শুকিয়ে ফেলে কৃত্রিমভাবে পঁচানব্বই হাজার কিউবিক মাইল আয়তনের এক বিশাল
জলভরা মেঘ তৈরি করতে চাইলে অসীমা তাঁকে এ কথা বলেছিলেন।
২৭) অসীমার প্রকৃত পরিচয় কী?
উত্তর: প্রকৃত পরিচয়: পুরন্দর চৌধুরির ভাইঝি হিসেবে প্রথমে নিজের পরিচয় দিলেও অসীমা
আসলে ছিলেন বিজ্ঞানী কারপভের মেয়ে। তিনি আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস
নিয়ে গবেষণা করেন।
২৮) “তাহলে আমরা গুঁড়ো হয়ে যাব।”—কে, কাকে, কেন বলেছে?
উত্তর: অসীমা পুরন্দর চৌধুরির উদ্দেশে প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটি করেছিলেন।এ কথা বলার কারণ
বৃষ্টিবিজ্ঞানী পুরন্দর চৌধুরি তাঁর সৃষ্ট গোলাকৃতি ধাতব বলটির দ্বারা পাঁচ মিনিটে লেক
শ্রেভারের সমস্ত জল শুকিয়ে তা মেঘে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। অসীমার শত নিষেধ
এবং অনুরোধ সত্ত্বেও পুরন্দর নিজের এই কীর্তিকে অমর করে রাখার জন্য ধাতব বলটিকে
রকেট থেকে বাইরে ফেলতে উদ্যত হন। পুরন্দর রকেটের একটি অংশ খোলার চেষ্টা
করতেই উদ্বিগ্ন অসীমা তাঁকে উদ্দেশ্য করে এই কথাটি বলেছিলেন। এর কারণ, অসীমা
আশঙ্কা করেছিলেন, এমনটা ঘটলে চাপের তারতম্যের কারণে তাঁরা গুঁড়ো হয়ে যাবেন।
২৯)অসীমার বিশেষ আগ্রহ কোন্ বিষয়ে?
উত্তর: অসীমার বিশেষ আগ্রহ কম্পিউটার বিষয়ে।
৩০)'পৃথিবীর জল যেমন আছে তেমনই থাকুক”–কে কখন এই কথা বলেছে?
উত্তর: বায়ুমণ্ডলের অনেক ওপরে রকেট নিয়ে গিয়ে অসীমা পুরন্দরের হাত থেকে ধাতব
বলটি নিয়ে রকেটের সকেটে ফেলে দেয় যাতে সেটি মহাশূন্যে বেরিয়ে যায়। কারণ
বায়ুমণ্ডলের বাইরে ধাতব বলটি অকেজো হয়ে পড়ে। এভাবে পুরন্দরকে জব্দ করে অসীমা
উপরিউক্ত মন্তব্যটি করেন।
নিজের ভাষার উত্তর লেখো।
১ ) এই গল্পে কাকে কেন ‘মেঘ-চোর' বলা হয়েছে? তার মেঘ চুরির কৌশলটি সংক্ষেপে
লেখো।
উত্তর: 'মেঘ-চোর' গল্পে বিজ্ঞানী পুরন্দর চৌধুরিকে আর-একজন বিজ্ঞানী কারপভ‘মেঘ-
চোর' বলেছেন। পুরন্দর সাইবেরিয়া থেকে সাহারায় মেঘ সরিয়ে এনেছিলেন বলেই কারপভ
তাঁকে ‘মেঘ-চোর' বলেছেন।
মেঘ চুরির কৌশল:
বৈজ্ঞানিক পুরন্দর চৌধুরি বৃষ্টিবিজ্ঞানী রূপে খ্যাত। তিনি পারদের সঙ্গে এগারোটি ধাতু
মিশিয়ে একটি অ্যালয় বা সংকর ধাতুর গোলক তৈরি করেছেন। জলের সংস্পর্শে এলেই
সেই গোলাকার বস্তুটি গরম হতে শুরু করে। পুরন্দর চৌধুরি চেয়েছিলেন, সেই ধাতব
বলটিকে আলাস্কার লেক শ্রেভারে ফেলে দিতে। প্রায় বরফে ঢাকা হ্রদে ধাতব বলটি পড়ার
সঙ্গে সঙ্গেই জলের ছোঁয়া পেয়ে গরম হতে শুরু করবে। এরপর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই হ্রদের
সব জল বাষ্প হয়ে গিয়ে পঁচানব্বই হাজার কিউবিক মাইল আয়তনের এক বিরাট জলভরা
মেঘ সৃষ্টি করবে। এটিই হল পুরন্দর চৌধুরির মেঘ চুরির কৌশল।
২ )“বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে অমিত বল, কিন্তু অযোগ্য মানুষের হাতে সেই ক্ষমতা হয়ে
উঠতে পারে বিপজ্জনক এবং প্রাণঘাতী।”- পঠিত গল্পটি অবলম্বনে উপরের উদ্ধৃতিটি
বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা 'মেঘ-চোর' গল্পে পুরন্দর চৌধুরি পারদের সঙ্গে আরও
এগারোটি ধাতু মিশিয়ে এক ধাতব বল তৈরি করেছেন। এই গোলকের পৃথিবীর যে-কোনো
বৃহৎ জলাশয়ের জলকে বাষ্পীভূত করে মেঘ তৈরির ক্ষমতা আছে। ফলে লেক শ্রেভারের
মতো প্রায় তুষারাবৃত জলাশয়টিকেও সেই ধাতব বলটি পাঁচ মিনিটের মধ্যেই শুকিয়ে
ফেলতে পারে। বিজ্ঞানী পুরন্দর চান, সেই জলাশয় থেকে সৃষ্ট পঁচানব্বই হাজার কিউবিক
মাইল আয়তনের মেঘটিকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে দেশ-দেশান্তরে। তিনি প্রয়োজনে যে-
কোনো দেশকে সেই মেঘ বিক্রিও করতে পারেন। এই প্রক্রিয়া যদি ব্যাপক হারে শুরু হয়,
তাহলে এক জায়গায় দেখা যাবে অতিবৃষ্টি, আবার অন্যত্র অনাবৃষ্টি। এই গল্পে দেখা যায়
বিজ্ঞানের আশীর্বাদপ্রাপ্ত পুরন্দর চৌধুরি ইন্দ্রের সমান ক্ষমতা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করতেন।
সেই লালসায় প্রকৃতির ধ্বংসসাধনে মেতে উঠেছিলেন। তাই বলা যায়, বিজ্ঞানের অমিত বল
সঠিক লোকের হাতে না পড়লে সেই ক্ষমতা হয়ে উঠতে পারে বিপজ্জনক এবং প্রাণঘাতী।
৩) পুরন্দর চৌধুরির চরিত্রটি তোমার কেমন বলে মনে হয়েছে বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত 'মেঘ-চোর' গল্পে পুরন্দর চৌধুরি চরিত্রের বিভিন্ন দিক লক্ষ
করা যায়। যেমন-
কৃতী বিজ্ঞানী:
মেঘ চুরির ব্যাপারটি অন্যায় হলেও, সাইবেরিয়া থেকে মেঘ চুরি করে এনে সাহারায় এক
মাসে একশো ইঞ্চি বৃষ্টিপাত ঘটানো কোনো সহজসাধ্য কাজ নয়। এ ছাড়া একটি ধাতব বল
সৃষ্টির মাধ্যমে লেক শ্রেভারের মতো জলাশয়ের জলকে পাঁচ মিনিটে বাষ্পে পরিণত করে,
পঁচানব্বই হাজার কিউবিক মাইল আয়তনের মেঘ তৈরি করার দাবি তাঁর বৈজ্ঞানিক
কৃতিত্বেরই পরিচায়ক।
প্রতিশোধ প্রবণ:
তিনি লেক শ্রেভারের প্রায় বরফে ঢাকা জলাশয়কে শুকিয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন। সেই মেঘ
সাইবেরিয়াতে অর্থাৎ কারপভের দেশ রাশিয়াতে পাঠিয়ে কারপভকে শব্দ করতে
চেয়েছিলেন।
অহংকারী ও ক্ষমতালোভী:
বিজ্ঞানী পুরন্দর চৌধুরি নিজের দক্ষতা নিয়ে বিশেষ গর্বিত ছিলেন। তিনি অঙ্ক কষে বলে
দিতে পারতেন, কোনো জলাশয় থেকে কত পরিমাণ জল বাষ্প হচ্ছে আর কত পরিমাণ জল
বৃষ্টি হয়ে ফিরে আসছে। এই প্রসঙ্গে তিনি অসীমাকে বলেছিলেন, “এই অঙ্ক আমার চেয়ে
ভালো আর কেউ জানে না।” পুরন্দর আসলে যেখানে যখন ইচ্ছা বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে আকাশের
দেবতা ইন্দ্রের মতো ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন।
ইতিকথা:
পুরন্দর চৌধুরির চরিত্রের মধ্যে এইরকম নানাবিধ গুণ ওদোষের সমন্বয় লক্ষ করা যায়।
৪) গল্পটি অবলম্বনে অসীমা চরিত্রটি সম্বন্ধে তোমার মতামত জানাও।
উত্তর:গল্পটি থেকে অসীমার চরিত্রের যে দিকগুলি পাঠকের সামনে উন্মোচিত হয়েছে তা
হল-
রহস্যময়ী:
নিজের উদ্দেশ্য পূরণের জন্যই অসীমা তার পরিচয় গোপন করেছিলেন।
জ্ঞানী:
আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অসীমা ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন। এ ছাড়া
কম্পিউটার এবং ভূগোলেও তাঁর দক্ষতা ছিল। তিনি পুরন্দরের রকেটটিতে এমন প্রোগ্রামিং
করে রেখেছিলেন যাতে সেটি বায়ুমণ্ডলের ওপরে উঠে যেতে পারে।
ন্যায়নিষ্ঠ:
নীতিবোধের কারণেই অসীমা পুরন্দরকে জানিয়েছিলেন, অন্য কোনো বিজ্ঞানীকে জব্দ করা
কখনোই একজন বিজ্ঞানীর কাজ হতে পারে না।
যুক্তিবোধ-সম্পন্না:
কারপভের মেয়ে অসীমা ভালোভাবেই জানতেন যে, লেক শ্রেভাবের জল শুকিয়ে ফেলে
বিশাল আয়তনের জলভরা মেঘ তৈরি করলে পৃথিবীর ভারসাম্য অনিবার্যভাবেই লঙ্ঘিত
হবে। তাই অসীমা লেক শ্রেভাবে ধাতব বলটি নিক্ষেপ করতে পুরন্দর চৌধুরিকে বারবার
বাধা দিচ্ছিলেন।
সাহসী ও দৃঢ়চেতা:
এই সাহস ও দৃঢ়তার কারণেই অসীমা অস্ত্র হাতে নিয়ে পুরন্দরকে তার ধাতব বল বায়ুমণ্ডলে
নিক্ষেপ থেকে নিরস্ত করে এবং পৃথিবীকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়।
CONTENTS:
আরো পড়ুন:
ছন্দে শুধু কান রাখো কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
পাগলা গনেশ গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
একুশের কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
আত্মকথার প্রশ্ন উত্তর Click Here
খোকনের প্রথম ছবি প্রশ্ন উত্তর Click Here
কুতুব মিনারের কথা প্রশ্ন উত্তর Click Here
মেঘ চোর গল্পের প্রশ্ন উত্তর প্রথম Part Click Here
মেঘ চোর গল্পের প্রশ্ন উত্তর দ্বিতীয় Part Click Here
0 Comments