ডাকাতের মা বিষয়বস্তু। ডাকাতের মা বড় প্রশ্ন উত্তর।

 

ডাকাতের মা বিষয়বস্তু। ডাকাতের মা বড় প্রশ্ন উত্তর।

                                              ডাকাতের মা

                                                                             সতীনাথ ভাদুড়ী

১। সূচিপত্র

ক। কবি পরিচিতি

খ। কবিতার উৎস

ঘ। কবিতার পূর্ব কথা

ঙ। সারসংক্ষেপ

চ। সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখ(MCQ) প্রতিটি প্রশ্নের মান-১

ছ। অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(SAQ)২০টি শব্দের মধ্যে প্রতিটি প্রশ্নের মান-১

জ। ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ৬০টি শব্দের মধ্যে প্রতিটি প্রশ্নের মান-৩

ঝ। বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী বা বড়োপ্রশ্নোত্তর ১৫০টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও।



e-bookap পেজটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুখবর-1st- ইউনিট,2nd ইউনিট,3nd ইউনিট,টেস্ট ফাইনাল পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্যগুরুত্বপূর্ণভাবে তোমাদের সাহায্য করবে।তাই এই সাফল্য আমাদের কাছে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।



ক। কবি পরিচিতি:

জন্ম ও শৈশব:

কথা সাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুড়ী ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে বিহারের পূর্ণিয়া জেলার ভট্র বাজারেজন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর পিতা ইন্দুভূষণ ভাদুরি জেলা আদালতের আইনজীবী ছিলেন। তাঁদেরআদি বাড়ি ছিল নদীয়া জেলার

কৃষ্ণনগরে।


ছাত্র জীবন:

সতীনাথ ভাদুড়ী ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে পূর্ণিয়া জেলা স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন এবং ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে

পার্টনার কলেজ থেকে অর্থনীতিতে এমএ পাস করেন এবং ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে আইন পাস করে।


কর্মজীবন:

সতীনাথ ভাদুড়ী ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পূর্ণিয়া আদালতের অকালতি কাজ

করেছেন। তারপর তিনি কংগ্রেসের যোগ দেন। এরপর তিনি বিহারের হাজারীবাগ জেলে দু'বছর এবং

ভাগলপুর জেলে দু'বছর রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে আটক ছিলেন।তারপর তিনি কংগ্রেস দল ত্যাগ করে

সমাজতন্ত্রী দলে যোগদান করেন। তিনি ফ্রান্স ছাড়াওইতালি সুইজারল্যান্ড এবং জার্মানি ভ্রমণ করেন।

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেশে ফিরে আসেনএবং নানা ভাষায় সুপন্ডিত ছিলেন।


 সাহিত্যকর্ম:

সতীনাথ ভাদুড়ীর ছদ্মনাম চিত্রগুপ্ত।তিনি ভাগলপুরের জেলে বসে রাজনৈতিকআন্দোলনের

পটভূমিতেই 'জাগরী,উপন্যাস রচনা করেন।এই জনপ্রিয় গ্রন্থটির জন্য পরবর্তীকালে তিনি রবীন্দ্র

পরস্কারে ভূষিত হন।তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলি হল-চিত্রগুপ্তের ফাইল, পাত্রলেখার বাবা,

চকাচকি, সংকট, আলোকদৃষ্টি, অপরিচিতা, দিগভ্রান্তপ্রভূতি।


জীবনাবসান:

১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে ৩০ শে মার্চ সতীনাথ ভাদুড়ীর মৃত্যু হয়।


খ। উৎস:

সতীনাথ ভাদুড়ীর রচিত'ডাকাতের মা,ছোটগল্পটি 'চকাচকি,গল্পসংকলন থেকে নেওয়া হয়েছে।


গ। বিষয়বস্তু:

সৌখির মা,আগে পরিচিত ছিল ডাকাতের বউ হিসেবে। সৌখীর বাবা মারা যাওয়ার পর,তারমায়ের

 পরিচয় হয় ডাকাতের মা। ডাকাতের মা যারা হয় তাদের ঘুম হালকা না হলে চলে ন কারণ রাত বিরেতে

 কখন যে তার দরজায় টোকা মারার শব্দ শোনা যাবে,তার কোন ঠিকনেই। সৌখীর মা জানে যে,দুটো

 টোকা দেওয়ার টক টক শব্দ থেমে থেমে তিনবার হলে তাসৌখীর ডাকার দলের লোকের টাকা দিতে

 আসার সংকেত। ঐরকমই শব্দ যদি থেমে থেমেচারবার হয়,তবে তা বুঝতে হবে সৌখি বাড়ি ফিরেছে।

 শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে দরজা না খোলার ব্যাপারে সৌখী তার মাকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। দশবার সাস

 ফেলতে যতক্ষণসময় লাগে ততক্ষণ অপেক্ষা করার পরেই যেন সৌখীর মা দরজা খোলে। এখন সময়টা

 আরআগের মতো নেই। একসময় সৌখির বাবার আমলে এক ডাকাত আহত হয়ে ধরা পড়লেনিজের

 হাতেই নিজের জিভ কেটে ফেলেছিল,যাতে পুলিশ তার কাছ থেকে তাদের দলেরগোপন কথা জানতে

 না পারে। পাঁচ বছর আগে সৌখী জেলে যাওয়ার পর তার অনুচরেরাপ্রথম দু'বছর ধরে প্রতিমাসে তার

 মাকে টাকা দিয়ে গেলেও,তারপর থেকে আর টাকা দেয় না। যখন সৌখীর বউ গর্ভবতী ছিল তখনই শেষ

 বার ধরা পড়েছিল সৌখী। সেই কারণে সৌখির চার-পাঁচ বছরের ছেলেটি কখনো বাবাকে দেখতে পায়নি।

 এদিকে সৌখীর মা খই ওমুড়ি বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করে আসে। সৌখীর মায়ের বিশ্বাস,বছর খানিক

 পর তার ছেল জেল থেকে ছাড়া পেলে তার বউকে নিয়ে এসে,তাকে রুপোর গহনায় ভরিয়ে দেবে।

 তখন পাড়ার লোকেরা বুঝতে পারবে তার নাতি পথের ভিখারী নয়। শুধু তাই নয় সৌখী এলে তার দলের

 খারাপ লোকগুলো কেউ ঠান্ডা করতে হবে।

বেশ কিছুদিন ধরে সৌখীর মায়ের রাত্রিবেলায় ঘুম আসতে চায়না। শীতের মাঝরাতেসৌকির মা মাথা

 থেকে পা পর্যন্ত কম্বলমুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছিল, এমন সময় হঠাৎ করে সৌখীরঅনেক ডাকাডাকির পর তার

 মা জেগে ওঠে এবং দরজা খুলে দেয়। প্রচন্ড রেগে গিয়ে সৌখীতখন মাকে খুব মারে।নোনা আতা গাছে

 তলায় একটা খড়খড় শব্দ শুনতে পেল সৌখিন মা। বয়স বেড়েছে বলে সৌখীর মায়ের শীতও বেড়েছে

। আগে শীতকালটা একটা কম্বলে  খুবভালোভাবেই চলে যেত তার।এখন আর তাতে হয় না।তাছাড়া তার

 গায়ের কম্বলটা অনেকপুরনো হয়ে গেছে। চারবারের জোড়া টোকাই অবাক হয়ে গেল সৌখির মা। সে

 বুঝতে পারলযে দলের লোক যদি টাকা দিতে বা অন্য কারণে আসে তাহলে তো তিনবার পোকা মারবে।

তবে তো তারা কেউ আসেনি। একি পুলিশের লোক এলো? দু তাদের আসার তো কোনোকারণ নেই।

 সৌখী তো জেলে। সৌখীর মায়ের হঠাৎ মনে পড়ল, দরজা খুলবার আগে সৌখীতাকে দশবার শ্বাস

 ফেলতে বলেছিল। কোন রকমে তাড়াতাড়ি দশবার শ্বাস ফেলে ছেলেনির্দেশ পালন করে নিল সে। দরজা

 খুলে দেখলো তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সৌখী। সৌখীমাকে জানাই যে লাটসাহেব জেলখানা পরিদর্শনে

 গিয়েছিলেন। সৌখীর কাজকর্ম দেখেশুনে খুশি হয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার হুকুম দিয়েছেন তিনি। তার

 মা যখন কেরোসিনেরটুপিটা খুলেছিল, তখন সে দেশলাই জ্বেলে তুলে ধরে মাকে সাহায্য করত। সেই

 আলোতেই বৃদ্ধা মা তার ছেলের মুখ দেখতে পায়। সৌখীর মাথার চুল পেকে যাওয়ায় তার মুখে

 তার বাবার আদল দেখতে পায় সৌখীর মা।সৌখি মাকে উল্টে জিজ্ঞাসা করে যে,তার ছেলে বউ কাউকে

 সে দেখতে পাচ্ছে না কেন। সে ছেলেকে জানাই যে বউ ছেলেকে নিয়ে তার বাপের বাড়ি গেছে। ছেলে

 বউ নেই শুনে খুবই হতাশ হয় সৌখী। বাড়ি ফিরে আসার আনন্দ অর্ধেকহয়ে যায় তার। সে মনে মনে

 ঠিক করে ফেলে পরের দিনই সে শ্বশুর বাড়ি যাবে বউ ছেলেকে নিয়ে আসার জন্য। এরপর তার মায়ের

 ব্যবসার পুঁজি খই মুড়িগুলো খেয়ে ছেড়াকম্বলটা গায়ে জড়িয়ে মাকে নিজের নতুন কম্বলটা দিয়ে শুয়ে পড়ে।

○পরের দিন সকালে সে ছেলেকে কী খেতে দেবে-সেই চিন্তায় সৌখীর মা বিভোর। আলু চচ্চড়ি খেতে

 তার ছেলে খুবই ভালোবাসে। পরের দিনে তাকে চাল আলু তেল এসব কিছুই কিনতে হবে কিন্তু কেনার

 পয়সা কার কাছে নেই। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার মনে পড়ে যায় প্রেসকার সাহেবের বাড়িতে

 রাজমিস্ত্রির কাজ হচ্ছে।‌বুড়ি পা টিপে টিপে বের হয় ঘর থেকেতারপর বুড়ি দেখে যে দুই আড়াই হাত

 পর্যন্ত পাঁচের গাঁথা হয়েছে, সেই পাঁচিলের পাশে এইমাটি বিছানো থাকায় বুড়ি খুব সহজে পাঁচিল

 টোপকে প্রেসকার সাহেবের বাড়ি ঢোকে। জলভরা লোটাটি হাতের কাছে পেয়ে এসে চুপচাপ সেটি তুলে

 নেয় এবং পাঁচিল টোপকেবাইরে বেরিয়ে আসে।

○পেশকার সাহেব তার লোটাটি ভোরবেলায় উঠে সেটি দেখতে না পেয়ে বাড়িতে হট্টগোলবানিয়ে

 দিলেন। তার স্ত্রী কেঁদে জানালেন যে,বাড়ির লক্ষ্মীশ্রী ফিরিয়ে আনার জন্য তখনই আর একটা লোটা

 কিনে আনা অবশ্যই দরকার। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন যে চুরি হওয়ারখবর পুলিশকে না জানালে সে

 দোষে জেল পর্যন্ত হতে পারে,সে খবর তারা রাখেনা। তিনিতার স্ত্রীকে কটুকথা শোনাতে শোনাতে বাড়ি

 থেকে বের হলেন। প্রথমে তিনি থানায় গেলেনচুরির খবর জানাতে। ফেরার পথে তিনি গেলেন বাসনের

 দোকানে। দোকানদার প্রেসকারসাহেবকে নানা রকমের ঘটি দেখালো কিন্তু কোনটাই তার পছন্দ হলো

 না। তিনিচাইছিলেন,বড় মুখযুক্ত, বড় আকারের লোটা। দোকানদার হতাশ হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা

 করে যে,পুরোনো হলে তার চলবে কি না। সে জানাই যে কম দামে মাত্র আড়াই টাকায় পেসকার সাহেব

 সেটি পেয়ে যাবেন। দোকানদার পুরনো বাসন বিক্রি হয় শুনে প্রথমে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।

 তারপর সেটি দেখতে চান, খেয়েছিস লোটাটি দেখেই সন্দেহ হলো তার।পকেট থেকে চশমা বের করে

 পরে ভালো করে দেখলেন যে এটিও তার লোটার মতোই চারপা ওয়ালা এবং এরও পায়ার নিচে তারা

 আঁকা রয়েছে। তিনি নিশ্চিত হলেন যে সেটি তারিখলোটা। রাগে উত্তেজিত হয়ে দোকানদারের গলা

 টিপে ধরে পেশকার সাহেব তার কাছেজানতে চাইলেন যে সে ঘটিটি কোথা থেকে পেয়েছে। দোকানদার

 জানান যে সে সৌখীর মায়ের কাছ থেকে নগদচোদ্দ আনা পয়সায় লোটাটি কিনেছে। এরপর পেশকার

 সাহেব একটি ছেলেকে থানায় পাঠালেন দারোগা সাহেবকে ডেকে আনার জন্য।

○দারোগা সাহেব সেই মুহূর্তে সাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে হাজির হলেন। সেখানে সব কথা শোনার

 পর তিনি পুলিশের দলবল নিয়ে সৌখীর বাড়িতে এসে উপস্থিত হলেন। সৌখীর মা তখন সবেমাত্র আলুর

 তরকারি উনানে চাপিয়েছে। সৌখী তখনোও খুব ঘুমাচ্ছে। ঘরের উঠোনে অনেক লোকজন

 এবং পুলিশকে দেখতে পেয়ে বুক কেঁপে উঠে সৌখীর মায়ের।আসলে সৌখির মায়ের অনুমান ছিল যে

 দোকানদার পুরনো বাসনে রং করে তবে সেটিকে বিক্রি করে। পাঁচ সাত বছর আগে একবার ভোররাতে

 তাদের বাড়ি ঘিরে ফেলেছিল পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্রের খোঁজে, তখন কিন্তু বুড়ির সম্মানে ঘা লাগেনি। কারণ

 সে মনে করে ডাকাতিতার স্বামী পুত্রের ন্যায্য অধিকারের জীবিকা। দারোগা সাহেব যখন তাকে লোটাটি

 ভাষণেরদোকানে চোদ্দ আনায় বিক্রি করার কথা জিজ্ঞাসা করেন তখন কোন কথা বেরোয় না তারমুখ

 থেকে। একবার মাত্র সৌখীর দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নেয় সে। ঘুম থেকে জেগেওঠা সৌখির কাছে

 পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে মাত্র ১৪ আনাপয়সার জন্য তার মা শেষে একটা

 ঘটি চুরি করেছে। জেলে এতদিন জেলখানার গুদাম ঘরেঠিকাদারের অধীনে কাজ করে ৯০ টাকা সে

 রোজকার করেছে। সৌখী ভাবে, ঘর বাড়িরদিকে তাকিয়ে তার মায়ের অবস্থাটা বোঝা উচিত ছিল। যাই

 হোক শেষে মায়ের সম্মান রক্ষারতাগিদে সে নিজেই লোটাচুরির দায় মাথা পেতে নিয়েছে।


আড্ডা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর Click here 



Post a Comment

0 Comments