বনভোজনের ব্যাপার
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
১। সূচিপত্র:
ক। কবি পরিচিতি
খ। কবিতার উৎস
গ। সারসংক্ষেপ
ঘ) নামকরণ
ঙ। সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখ(MCQ) প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
চ। অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(SAQ)২০টি শব্দের মধ্যে প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
e-bookap পেজটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুখবর-1st- ইউনিট,2nd ইউনিট,3nd ইউনিট,টেস্ট
ফাইনাল পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্যগুরুত্বপূর্ণভাবে তোমাদের সাহায্য করবে।তাই এই সাফল্য
আমাদের কাছে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ক। কবি পরিচিতি:
জন্ম ও শিক্ষা:১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রখ্যাত সাহিত্য নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় দিনাজপুরের
বালিয়াডাঙ্গীতে জন্মগ্রহণকরেন। তাঁর আসল নাম তারকনাথ। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাসাহিত্যে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এমএ পাস করেন। বাংলা
সাহিত্যে ছোটগল্প বিষয়েগবেষণার জন্য ডিলিট উপাধি পান।
কর্মজীবন:
কলকাতার সিটি কলেজে কিছুদিন অধ্যাপনার পর কলকাতায় অধ্যাপক অল্প দিনের মধ্যে
শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ছাত্র জীবনে কবিতা রচনা করলেও পরে গল্প
উপন্যাস নাটক প্রভৃতি রচনায় বিশিষ্ট তার পরিচয় দেন। সমালোচনা ও সাংবাদিকতায়
কৃতিত্ব দেখান।
সাহিত্য সৃষ্ট:
বসুমতি পত্রিকার পক্ষ থেকে সংবাদ সাহিত্যের জন্য প্রথম পুরস্কার পান। পরের দেশ
পত্রিকায় নিয়মিত সুনন্দ ছদ্মনামে মজাদার রচনায় পাঠক হৃদয় জয় করেন। তার
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলি হল-উপনিবেশ, বিতংস,সূর্যসারথি,তিমিরতীর্থ,শিলালিপি,ইতিহাস
প্রভৃতি। তার লেখা'ভাড়াটে চাই,ও আগন্তুক,-নাটক দুটি সাহিত্যজগতে আলোড়ন সৃষ্টি
করেছিল। তাঁর রচিত বহু গান চলচ্চিত্রে ও রেকর্ডে গৃহীত হয়েছে। ছোটদের জন্য নারায়ণ
গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিস্মরণীয় সৃষ্টি টেনিদা চরিত্র।
মৃত্যু:
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে পরলোকগমন করেন।
খ। উৎস:
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের রচিত'বনভোজনের ব্যাপার, গল্পটি প্রণব কুমার মুখোপাধ্যায়
সংকলিত ও সম্পাদিত'টেনিদা সমগ্র,গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
গ। বিষয়সংক্ষেপ:
টেনিদা,ক্যাবলা, হাবুল আর প্যালা-এই চারজন মিলে ঠিক করে বনভোজনে যাবে। প্রথমে
খাবার তালিকায় আসে বিরিয়ানি পোলাও কোরমা কোপ্তা কাবাব ইত্যাদি। এর জন্য বাবুর্চি
চাকর মোটরগাড়ি এবং ২০০ টাকা দরকার। সেই পরিমাণ চাঁদা না ওঠায় শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়
খিচুড়ি আলু ভাজা পোনা মাছেরকালিয়া,আমেরআচার,রসগোল্লা,লেডিকেনি দিয়েই
বনভোজন সারা হবে। এরই মধ্যে প্যালা রাজহাঁসের ডিমের কথা তোলে এবং তাকেই
রাজহাঁসের দিন জোগাড়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ডিমের জন্য পেলা পাড়ার ভণ্টাকে ধরে। দু
আনার পাঁঠার ঘুগনি আর ডজনখানেক ফুলুরি খেয়ে ভণ্টা তাদের পোষা রাজহাঁসের ডিম
দিতে রাজি হয়। প্যালা নিজের হাতে ডিম নিতে গিয়ে রাজহাঁসের কামড় খেয়ে পালিয়ে
আসে। শেষ পর্যন্ত পয়সা দিয়ে মাদ্রাজি ডিম নিয়ে সে বনভোজনে যায়।
ক্যাবলার মামার বাগানবাড়িতে বনভোজন হবে বলে স্থির হয়। শ্যামবাজার থেকে ট্রেনে উঠে
বাগুইআটি ছাড়িয়ে আরো চারটে স্টেশন পেরিয়ে সেখানে পৌঁছাতে হবে। এই সময়টা
কাটাতে টেনিদা লেডি- কেনির হাড়ি একাই সাবাড় করে দেয়। স্টেশনে নেমে কাদামাখা
পিছন পথে চলতে গিয়ে পড়ে যায় হাবু। তার হাতে ডিমের পুঁটলি থাকায় সব ডিম নষ্ট হয়ে
যায়। এরপর প্যালাও পড়ে যায় এবং নষ্ট হয় আচার। শেষ পর্যন্ত টেনিদা নিজেই পড়ে যায়।
ভেঙে যায় রসগোল্লার হাঁড়ি।তখন স্থির হয় ,এবার শুধু খিচুড়ি মাছের কালিয়া আর আলু
ভাজা দিয়ে বনভোজন সারা হবে। প্যালা রাঁধতে গিয়ে কাঁচা তেলে মাছ দেওয়ায় মাছের
কালিয়া মাছের হালুয়ায় পরিণত হয়। টেনিদার মারের ভয়ে সে পালিয়ে যায়। টেনিদা নিজেই
খিচুড়ি রাঁধবে বলে হাবুল ও ক্যাবলাকে কাঠ আনতে পাঠালে তারাও প্যালার কাছে এসে
জোটে। এই সময় বাগানে জলপাই গাছ দেখে ওই তিনজন মনের সুখে জলপাই খেতে
থাকে। তারা কিছুক্ষণ পর দেখে টেনিদা গাছের হেলান দিয়ে শুয়ে আছে আর চারিদিক
থেকে অনেক বাঁদর তাকে ঘিরে আছে। বাঁদর তার পিঠ চুলকে দিচ্ছে আর কয়েকটা বাঁদর
রান্নার চাল,ডাল,আলু,খাচ্ছে। বন্ধুদের চিৎকারে টেনেদার ঘুম ভাঙে এবং বাঁদররাও তাদের
চিৎকার শুনে গাছে উঠে যায়।শেষ পর্যন্ত জলপাই খেয়েই তাদের পেট ভরাতে হয়, তাদের
বনভোজন পরিণত হয় ফলভোজনে।
ঘ। নামকরণ:
সাহিত্যের সমস্ত শাখায় নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামকরণে সাহিত্যকর্মের গভীর
বিষয়টি পাঠকের ভাবনায় এসে যায় এবং পাঠক বিষয়ের গভীরে সহজে প্রবেশ করতে
পারে।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের বনভোজনের ব্যাপার গল্পে দেখা যায় টেনিদা ও তার তিন সঙ্গী
বনভোজনের পরিকল্পনা করেছে। প্রথমে যে খাবারের তালিকা অস্থির হয় তা অত্যন্ত খরচ
সাপেক্ষ হওয়ায় নতুন করে আবার একটা তালিকা বানায় তারা। প্যালা সেই তালিকায়
রাজহাঁসের ডিম যোগ করে। প্যালার ওপরেই দায়িত্ব পড়ে সেই ডিম নিয়ে আসার। ডিম
আনতে গিয়ে বেলা রাজহাঁসের কামড় খেয়ে পালিয়ে আসে এবং মাদ্রিজ ডিম নিয়েই
বনভোজনে যেতে হবে। যাওয়ার পথেই টেনিদা সব লেডিকেনি সাবাড় করে দেয়। তারপর
পিছন রাস্তায় একে একে হাবুল প্যালা আর টেনিদা পড়ে যায় এবং ডিম আচার ও রসগোল্লার
নষ্ট হয়।শেষপর্যন্ত রান্না শুরু হলে প্যালার ভুলে নষ্ট হয়ে যায় মাছের কালিয়া। হাবুল ও
ক্যাবলা কাঠ আনতে গেলে টেনিদা ঘুমিয়ে পড়ে।বাঁদরের উৎপাতে নষ্ট হয়ে যায় রান্না
সরঞ্জাম।পর্যন্ত গাছের পাকা জলপাই খেয়ে পেট ভরাতে হয় তাদের। বনভোজন পরিণত
হয় ফলভোজনে। লেখক গল্পটির নামকরণ বনভোজন না করে'বনভোজনের ব্যাপার,
করায় তা যথার্থ এবং সার্থক হয়ে উঠেছে বলা যায়।
ঙ। সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখ(MCQ) প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
১। 'বনভোজনের ব্যাপার,-গল্পে দলপতির নাম হল-
ক) টেনিদা
খ)প্যালা
গ) আবুল
ঘ) ক্যাবলা
উত্তর:(ক) টেনিদা
২। প্যালা জ্বরে ভোগে আর বাসক পাতার রস খায়-
ক) হাবুল
খ) টেনিদা
গ) ক্যাবলা
ঘ) প্যালা
উত্তর:(ঘ)প্যালা
৩। আমরা পটলডাঙার ছেলে-কিছুতেই-
ক) ভয় পাই না
খ) রাগ করি না
গ) ঘাবড়াই না
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর:(গ) ঘাবড়াই না
৪। টেনিদাদের চারমুর্তির আড্ডা ছিল-
ক) নারকেলডাঙ্গা
খ) ভুবন ডাঙ্গায়
গ) উল্টোডাঙায়
ঘ) পটলডাঙ্গায়
উত্তর:(ঘ) পটলডাঙ্গা
৫। প্যালা কার বাড়িতে রাজহাঁসের ডিম আনতে গিয়েছিল?-
ক) ঘন্টার
খ) ক্যাবলার
গ) ভল্টার
ঘ) হাবুলের
উত্তর:(গ) ভল্টার
৬। বানরগুলো কোন গাছের মাথায় উঠেছিল?-
ক) কাঁঠাল গাছে
খ) জামগাছে
গ) আম গাছে
ঘ) জামরুল গাছে
উত্তর:(ক) কাঁঠাল গাছে
চ। অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(SAQ)২০টি শব্দের মধ্যে প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
১। বনভোজনের বা পিকনিকের উদ্যোগ কাদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল?
উত্তর: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের রচিত'বনভোজনের ব্যাপার,গল্পে,টেনিদা,প্যালা,ক্যাবলা,হাবুল
পিকনিকের উদ্যোগ নিয়েছিল।
২।টেনিদা চরিত্র কার সৃষ্টি?
উত্তর: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের রচিত বনভোজনের
ব্যাপার গল্পে,টেনিদা চরিত্রটি তারই সৃষ্টি।
৩। পিকনিকে কত টাকা চাঁদা উঠেছিল?
উত্তর: পিকনিকে মোট ১০ টাকা ৬ আনা চাঁদা উঠেছিল।
৪। রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব পেয়েছিল কে?
উত্তর: পিকনিক করার জন্য রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব পেয়েছিল প্যালা।
৫। আমরা পটলডাঙ্গার ছেলে, আমরা কারা?
উত্তর: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের রচিত বনভোজনের ব্যাপার গল্পে আমরা বলতে
টেনিদা,হাবুল,প্যালা, ক্যাবলা, কে বোঝানো হয়েছে।
হাতে-কলমে সমাধান:
১।নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
১.১। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের কোন বিখ্যাত চরিত্রের সৃষ্টিকর্তা ?
উত্তর: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত চরিত্র টেনিদার সৃষ্টিকর্তা।
১.২। তাঁর লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।
উত্তর: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা দুটি উপন্যাস হলো'লালমাটি,এবং'শিলালিপি,।
২। নিচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও।
২.১। বনভোজনের উদ্যোগ কাদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল?
উত্তর: বনভোজনের উদ্যোগ দেখা দিয়েছিল টেনিদা, হাবুল,হ্যাবলা আর ক্যাবলার মধ্যে।
২.২ বনভোজনের জায়গা কোথায় ঠিক হয়েছিল?
উত্তর: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের রচিত বনভোজনের ব্যাপার গল্পে শ্যামবাজার থেকে মার্টিনের
রেলে বাগুইআটি ছাড়িয়ে আরো চারটে স্টেশন পেরিয়ে ক্যাবলার মামার বাড়ি। তার মামার
বাড়ির বাগান বাড়িতে বনভোজনের জায়গা ঠিক করা হয়েছিল।
২.৩। বনভোজনের জায়গায় কীভাবে যাওয়া যাবে?
উত্তর: শ্যামবাজার থেকে মার্টিনের রিলে চেপে বাগুইহাটি ছাড়িয়ে আরো চারটে স্টেশন পর
নামতে হবে। তারপর পায়ে হেঁটে প্রায় মাইল খানিক গেলে পৌঁছানো যাবে ক্যাবলার মামার
বাগান বাড়িতে অর্থাৎ বনভোজনের জায়গায়।
২.৪। রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্বকে নিয়েছিল?
উত্তর: বনভোজনের ব্যাপার গল্পে প্যালা রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব নিয়েছিল।
২.৫। বনভোজনের বেশিরভাগ সামগ্রী কারা সাবাড় করেছিল?
উত্তর: বনভোজনের বেশিরভাগ সামগ্রী সাবাড় করেছিল পাঁচ-ছটা বানরের একটা দল।
২.৬। কোন খাবারের কারণে বনভোজন ফলভজনে পরিণত হল?
উত্তর: বনভোজনের খাবারগুলি কিছু কাদায় পড়ে আবার কিছু বানরের হামলায় নষ্ট
হলে,বাধ্য হয়ে পাকা জলপাই খেয়ে বনভোজন সারতে হয়েছিল। তাই বনভোজন
ফলভোজনের পরিণত হল।
CONTENTS:
আরো পড়ুন:
বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
চন্দ্রগুপ্ত নাট্যাংশের প্রশ্ন উত্তর Click Here
বনভোজনের ব্যাপার গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
the wind cap lesson 1 part 1 Click Here
the wind cap lesson 1 part 2 Click Here
the wind cap lesson 1 part 3 Click Here
একটি চড়ুই পাখির কবিতা প্রশ্ন উত্তর Click Here
0 Comments