নদীর বিদ্রোহ গল্পের প্রশ্ন উত্তর। নদীর বিদ্রোহ গল্পের বিষয়বস্তু


                             

                                               নদীর বিদ্রোহ

                                                               মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

১।সুচিপত্র:

ক।লেখক পরিচিতি

খ।নদীর বিদ্রোহ ছোটগল্পটির উৎস

গ। নদীর বিদ্রোহ ছোটগল্পটির আলোচনা বা বিষয়বস্তু

ঘ।সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখ।(MCQ) প্রতিটি প্রশ্নের মান-১

ঙ।অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।(SAQ)-২০টি শব্দের মধ্যে।প্রতিটি প্রশ্নের মান-১

চ।ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।৬০টি শব্দের মধ্যে।প্রতিটি প্রশ্নের মান-৩

ছ।বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী বা বড়ো প্রশ্নোত্তর১৫০টি শব্দের মধ্যে।প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫


e-bookপেজটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুখবর-1stইউনিট,2 ইউনি,টেস্ট,ফাইনাল পরীক্ষা

প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণভাবে তোমাদের সাহায্য করবে।তাইএই সাফল্য আমাদের কাছে

বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।


ক।লেখক পরিচিতি:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ঝাড়খন্ড রাজ্যের সাঁওতাল

পরগনার দুমকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়,ডাক

নাম মানিক।তাঁর পৈত্রিক বাড়ি ছিল ঢাকা বিক্রমপুরের অন্তর্গত মালবদিয়া গ্রামে।তাঁর পিতা

হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়,মা নীরদা সুন্দরী দেবী।কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে অংকে অনার্স

নিয়ে পড়ার সময় তাঁর প্রথম গল্প'অতসী মামী,'বিচিত্রা পত্রিকায়, প্রকাশিত হয় ১৯২৮

খ্রিস্টাব্দে।২১ বছর বয়সে তাঁর প্রথম উপন্যাস'দিবারাত্রির কাব্য,রচনা করেন।মানিক

বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস এবং ছোটগল্প দুই-ই রচনা করেছেন।দুই ক্ষেত্রেই তাঁর সমান

দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়।তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস গুলি হল-জননী পুতুল

নাচের,ইতিকথা,পদ্মানদীর মাঝি,দর্পণ,ইতিকথা,শোনাচ্ছে দামি,হলুদ নদী সবুজ বন ইত্যাদি

এছাড়াও তাঁর ছোটগল্প গুলি হল-প্রাগৈতিহাসিক,সরীসৃপ,ভেজাল,আজকাল পরশু

গল্প,ইত্যাদি।মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্য জীবন কেটেছে চরম দারিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম

করে।সংক্ষিপ্ত জীবনকালে বারবার নানা প্রকার অসুখে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি।

 ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যিকের জীবনাবসান ঘটে।


খ। নদীর বিদ্রোহ ছোট গল্পটির উৎস:

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত'সরীসৃপ,ছোটগল্প থেকে'নদীর বিদ্রোহ,গল্পটি নেওয়া হয়েছে।


গ) নদীর বিদ্রোহ ছোটগল্পটির আলোচনা বা বিষয়বস্তু:

কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত নদীর বিদ্রোহ গল্পের চরিত্র বলতে মাত্র দুটি-

 এক-নদের চাঁদ,দুই -তার সহকারী জীবন্ত বন্ধু নদী।নদের চাঁদের জন্ম নদীর ধারে।তার শৈশব

 থেকেই নদীর প্রতি তার গভীর ভালোবাসা।সে নদীর ধারেই মানুষ হয়েছে। অন্য জায়গায়

 স্টেশন মাস্টারের কাজ করেও নদীর প্রতি তার সেই ভালোবাসা একটুকুও কমেনি।বর্ষার

 জন্য পাঁচ দিন নদীকে দেখতে না পেয়ে ছেলেমানুষের মতো তার মন ছটফট করছে,পরম

 আত্মীয় নদীটিকে দেখার জন্য। তার মনে হয়েছে নদীকে দেখতে না পেলে সে হয়তো আর

 বাঁচবে না। তাই বৃষ্টি থামলেই সে ৪:৪৫ এ প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি রওনা করিয়ে দিয়ে সে সে ছুটে

 যায় নদীর কাছে। কিন্তু ব্রিজের কাছাকাছি এসে নদীকে দেখে সে হতভাগ হয়ে যায়। চার

 বছর ধরে চেনা নদীতে তার অচেনা মনে হয়। ব্রিজের একটি পিলারের উপরে বসে সেই

 উত্তাল নদীকে দেখে নদের চাঁদ এক ধরনের আমোদ বোধ করতে থাকে।সে নদীর সঙ্গে

 খেলা শুরু করে।খেলার আনন্দে সে স্ত্রীকে লেখা চিঠিও ছুঁড়ে দেয়।চোখের পলকে চিঠিটি

 অদৃশ্য হয়ে যায়।তার মনে হয় নদীর জলপ্রবাহ যেন তার সঙ্গে খেলা করছে।

এরপরে আবার প্রবল বৃষ্টি নামে।চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেলেও সে বসে ভিজতে থাকে। তার

 মনে হয়,রোষে,ক্ষোভে,উন্মত্ত নদী যেন বিদ্রোহ করছে।বাঁধের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার

 জন্য যেন নদী এইভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।ব্রিজ ভেঙে মানুষের তৈরি বাঁধ চুরমার করে

 দিয়ে নদী যেন নিজের স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে চাইছে। সে একইসঙ্গে এটাও অনুভব

 করে,নদী যদি সমস্ত বাধা চূর্ণ করে মুক্তি পায় তাহলেও তার নিস্তার নেই।মানুষ আবার

 নদীকে বন্দী করবে আবার নদীতে বাঁধ গড়ে তুলবে, তারপর হয়তো গভীর প্রশস্ত জল পূর্ণ

 নদীও নদের চাঁদের দেশে নদীটির মতোই ক্ষীণ স্রোতা হয়ে পড়বে।

নদের চাঁদ একসময় রং করা নতুন ব্রিজের জন্য তার খুব গর্ব হত।আজ সেই ব্রিজকে

 অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়।সে মনে মনে নদীর মুক্তি কামনা করতে থাকে।যখন সে এই

 কথা ভাবতে ভাবতে লাইন ধরে স্টেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল,তখনই সাত নম্বর ডাউন

 প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি পেছন দিক থেকে এসে তাকে পিষে দিয়ে চলে যায়।


ঘ।সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখ।(MCQ) প্রতিটি প্রশ্নের মান-১

১।মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম-

ক)প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

খ) প্রবোধ চন্দ্র বন্দোপাধ্যায়

গ) প্রবোধকুমার মুখোপাধ্যায় 

ঘ)শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়

উত্তর:(ক) প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়


২।নদের চাঁদের বয়স- 

ক)পঁচিশ বছর 

খ)পঞ্চাশ বছর

গ। তিরিশ বছর 

ঘ)চল্লিশ বছর

উত্তর:(গ) তিরিশ বছর


৩।নদের চাঁদ পেশায় ছিলেন-

ক)একজন স্কুলমাস্টার 

খ)স্টেশন মাস্টার

গ) উকিল

ঘ) পোস্টমাস্টার

উত্তর:(খ)স্টেশন মাস্টার


৪।নদের চাঁদ নদীতে দেখেনি-

ক)তিনদিন

খ)সাতদিন 

গ)পাঁচদিন 

ঘ) দুদিন

উত্তর:(গ) পাঁচদিন


৫।যখন বৃষ্টি থামল,তখন-

ক) দুপুরে

খ)রাত্রি

গ)সকাল

ঘ)বিকেল

উত্তর:(ঘ)বিকেল


৬।নদের চাঁদ স্টেশন মাস্টারের চাকরি করেছে-

ক)চার বছর

খ)এক বছর

গ)পাঁচ বছর

ঘ)দুই বছর

উত্তর:(ক)চার বছর


৭।বৃষ্টি কতদিন ধরে হয়েছিল-

ক)তিন দিন

খ)চার দিন

গ)পাঁচ দিন

ঘ)সাত দিন

উত্তর:(গ) পাঁচ দিন


৮। নদীর বিদ্রোহের কারণ কি?-

ক) অতিবৃষ্টি

খ) নদীতে বাঁধ দেওয়া

গ) না পাওয়ার বেদনা

ঘ) উপর দিয়ে ট্রেন চলা

উত্তর:(খ) নদীতে বাঁধ দেওয়া


৯।'বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদের চাঁদের,-ভয়ের কারণ ছিল-

ক) অন্ধকার

খ) বৃষ্টি

গ) নদীর প্রতিহিংসা

ঘ) নদীর স্ফীতি

উত্তর:(গ) নদীর প্রতিহিংসা


১০।নদের চাঁদের মৃত্যু হয়েছিল-

ক) জলে ডুবে

খ) ট্রেনের তলায়

গ) ব্রিজ ভেঙে

ঘ) মোটর দুর্ঘটনায়

উত্তর:(খ) ট্রেনের তলায়


ঙ।অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।(SAQ)-২০টি শব্দের মধ্যে।প্রতিটি প্রশ্নের মান-১


১।'নদেরচাঁদ নতুন সহকারীকে ডাকিয়া বলিল,আমি চললাম হে!,নদের চাঁদ কখন তার নতুন

 সহকারীকে ডেকে একথা বলেছিলেন?

উত্তর:কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত'সরীসৃপ,ছোটগল্প থেকে'নদীর

বিদ্রোহ,গল্পটি নেওয়া হয়েছে।

আলোচ্য অংশে,বিকেল চারটে চারটে পঁয়তাল্লিশের প্যাসেঞ্জার ট্রেনটিকে রওনা করিয়ে দিয়ে

নদেরচাঁদ তার নতুন সহকারীকে ডেকে একথা বলেছিলেন যে,সে চলে যাচ্ছে।


২।'পাঁচ দিন নদীকে দেখা হয় নাই,-নদেরচাঁদ পাঁচ দিন নদীকে দেখতে পায়নি কেন?

উত্তর:কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত'সরীসৃপ,ছোটগল্প থেকে'নদীর

বিদ্রোহ,গল্পটি নেওয়া হয়েছে।

আলোচ্য অংশে,গত পাঁচদিন একটানা বৃষ্টি চলায় নদের চাঁদ নদীতে দেখতে যেতে পারেনি।


৩।নদের চাঁদের দেশের নদীটির কীরূপ পরিচয় গল্পে ফুটে উঠেছে?

উত্তর:কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত'সরীসৃপ,ছোটগল্প থেকে'নদীর

বিদ্রোহ,গল্পটি নেওয়া হয়েছে।

আলোচ্য অংশে নদের চাঁদের দেশের নদীটি তার কর্মস্থলের নদীটির মতো বড় ছিল না।কিন্তু

সেই ক্ষীণস্রোত নির্জীব নদীটি অসুস্থ দুর্বল আত্মীয়র মতো নদেরচাঁদ মমতা পেয়েছিল।


৪।'সে প্রতিদিন নদীকে দেখে,-সে কে?সে কোন নদীকে কেন দেখে?

উত্তর:কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত'সরীসৃপ,ছোটগল্প থেকে'নদীর

বিদ্রোহ,গল্পটি নেওয়া হয়েছে।

আলোচ্য অংশটিতে,সে,-বলতে নদের চাঁদকে বোঝানো হয়েছে।নদেরচাঁদ তার

 কর্মক্ষেত্র থেকে মাইল খানেক দূরের নদীটিকে প্রতিদিন দেখত।

কারণ এমনই এক নদীর ধারে তার ছোটবেলা কেটেছিল।

৫।'নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হইয়া গেল,-নদের চাঁদ কেন স্তম্ভিত হয়ে গেল?

উত্তর:কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত'সরীসৃপ,ছোটগল্প থেকে'নদীর

 বিদ্রোহ,গল্পটি নেওয়া হয়েছে।

আলোচ্য অংশে,পাঁচদিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পরে নদীর ধারে গিয়ে আপাতশান্ত নদীর উন্মত্ত

রূপ দেখে নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল।


৬।'বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদের চাঁদের,-নদের চাঁদ ভয় পেল কেন?

উত্তর:কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত'সরীসৃপ,ছোটগল্প থেকে'নদীর

 বিদ্রোহ,গল্পটি নেওয়া হয়েছে।

আলোচ্য অংশে,ট্রেনের শব্দে দিশেহারা নদের চাঁদের ভয় হয় নদীর আতনাদি জলরাশি যদি

 গোটা ব্রিজটিকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।


চ।ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর। ৬০টি শব্দের মধ্যে।প্রতিটি প্রশ্নের মান-৩


১।“নদেরচাঁদ সব বোঝে, নিজেকে কেবল বুঝাইতে পারে না।”—নদেরচাদ কী বোঝে? সে

 নিজেকে বোঝাতে পারেনা কেন?

উত্তর:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত'সরীসৃপ,গল্প থেকে'নদীর বিদ্রোহ,গল্পটি নেওয়া হয়েছে।

আলোচ্য অংশে,নদীর প্রতি নদেরচাদের এত বেশি মায়া যে একটু অস্বাভাবিক—এই কথাটি

 সে নিজেই বোঝে।

নদেরচাঁদ জানে নদীর প্রতি তার এরূপ ভালোবাসা সবার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তা ছাড়া সে

যে কাজে নিযুক্ত তাতে নদী সম্পর্কে এত চিন্তা করাও নিতান্ত অস্বাভাবিক।কারণ সেএকজন

স্টেশনমাস্টার। তবুও নদেরচাঁদ তার মনকে বোঝাতে পারে না এই দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতাকে।

তাই তার চঞ্চল মন বারে বারে নদীর কাছে ছুটে যায়।


২।"বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদেরচাঁদের”-কী কারণে নদেরচাদের ভয় করতে লাগল?

উত্তর:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত'সরীসৃপ,গল্প থেকে'নদীর বিদ্রোহ,গল্পটি নেওয়া হয়েছে।

আলোচ্য অংশে,নদেরচাঁদ মুশলধারে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই নদীর পরিপূর্ণ রূপ দেখছিল।

 এরমধ্যেই চারিদিকে নেমে এল ঘন অন্ধকার। বৃষ্টি একটু থেমে আবার প্রবল বেগে শুরু হল।

 নদীর কলতান আর বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ মিলে সংগীতের ঐকতান সৃষ্টি করল। নদেরচাঁদের

 মন থেকে ছেলেমানুষি আমোদ মিলিয়ে গেল। এরকম পরিবেশে তার সর্বাঙ্গ যেন অবশ,

 অবসন্ন হয়ে এল। নদীর রহস্যময়তা দেখে নদেরচাঁদের ভয় করতে লাগল।


৩।"নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে।”-কার কথা বলা হয়েছে? নদীর বিদ্রোহের

 কারণ কী?

উত্তর:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত'সরীসৃপ,গল্প থেকে'নদীর বিদ্রোহ,গল্পটি নেওয়া হয়েছে।

আলোচ্য অংশে,নদেরচাঁদের কথা বলা হয়েছে।

পাঁচ দিন টানা বৃষ্টির পর নদীর কাছে গিয়ে নদেরচাঁদ দেখল নদীর পঙ্কিল জলস্রোত যেন

 রোষে ক্ষোভে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে।নদীর জলস্রোত প্রায় ব্রিজের কাছাকাছি উঠে এসে ব্রিজ ও

 বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে যেতে চাইছে। তা দেখে নদেরচাঁদ নদীর বিদ্রোহের কারণ বুঝতে পারল।

 তার মনে হল,নদী যেন তার এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেতে চাইছে,ফিরে পেতে চাইছে তার

 স্বাভাবিক গতি।তাই সে এইভাবে বিদ্রোহ জানাচ্ছে।


ছ।বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী বড়ো প্রশ্নোত্তর (Descriptive question and answer)১৫০টি শব্দের মধ্যে।প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫


১।ত্রিশ বছর বয়সে নদীর জন্য নদেরচাদের এত বেশি মায়া একটু অস্বাভাবিক।”নদেরচাদের

নদীর প্রতি এত ভালোবাসার কারণ কী?সেই ভালোবাসার পরিচয় দাও।

উত্তর:মানিক বন্দোপাধ্যায়ের রচিত সরীসৃপ গল্প থেকে নদীর বিদ্রোহ গল্পটি নেওয়া হয়েছে।

আলোচ্য গল্পে নদেরপ্রতিছিলঅস্বাভাবিকমায়া তাই স্টেশনমাস্টারের গুরুদায়িত্ব সামলেও

 নদীকে দেখার জন্য সে আকুল হয়ে ওঠে। প্রবল বর্ষণে পাঁচদিন নদীকে না দেখতে পাওয়ায়

 বৃষ্টি থামলেই সে নদীকে দেখার জন্য ছুটে যায়। নদীর জন্য এমনভাবে পাগল হওয়া তার

 মানায় না বুঝেও সে নিজেকে বোঝাতে পারে না। বরং নিজের এই পাগলামিতে আনন্দই

 উপভোগ করে সে। এর একটা কারণও সে খুঁজে নেয়। নদীর ধারেই তার জন্ম এবং বড়ো

 হয়ে ওঠা—তাই ই চিরদিনই নদীর প্রতি তার এত ভালোবাসা।

প্রথম জীবনে দেশের ক্ষীণস্রোতা নদীটি অনাবৃষ্টির কারণে শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে

 নদেরচাঁদ কেঁদে ফেলেছিল। নদীর প্রতি আকুলতা একইভাবে কর্মক্ষেত্রে এসেও পাঁচ দিন

 প্রবল বৃষ্টির কারণে নদীকে দেখতে না পাওয়ায় আকুল হয়ে ওঠে সে। বৃষ্টি একটু থামতেই

 তার মনে হয়- “ব্রিজের একপাশে আজ চুপচাপ বসিয়া কিছুক্ষণ নদীকে না দেখিলে সে

 বাঁচিবে না।” বর্ষায় উন্মত্ত নদীর সঙ্গে সে খেলা করে। স্ত্রীকে লেখা চিঠিও সে নদীর জলে

 ভাসিয়ে দেয়।আবার ব্রিজ দিয়ে নদীকে বেঁধে রাখার চেষ্টাও মানতে পারে না সে। নদীর

 বিদ্রোহী চরিত্রকে সে মনে মনে সমর্থন করে।এভাবেই নদীর প্রতি তার ভালোবাসার প্রকাশ

 ঘটে।

নদীর এই চঞ্চলতা যেন তার আনন্দেরই প্রকাশ। দিবারাত্রি প্যাসেঞ্জার ও মালগাড়ির

 তীব্রবেগে ছোটাছুটি নিয়ন্ত্রণকরা যার কাজ,তার নদীর জন্য এমন পাগল হওয়া সাজে কি না

 সে প্রশ্ন। নদেরচাঁদের মধ্যে প্রায়ই জাগত। নদেরচাঁদ নিজেও এ কথা বোঝে, কিন্তু মনকে

 কিছুতেই বোঝাতে পারে না। আসলে মানসিকভাবে সে নদীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিল।

সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়ে থাকা, নদীর সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে পেরে সে নিজেকে ধন্য

 মনে করত।নদীপ্রীতির এই পাগলামিতে নদেরচাঁদ উপভোগ করত এক অদ্ভুত আনন্দ,যা

 ছিল একান্তই তার নিজস্ব।


২।নদের চাঁদের ছোটোবেলায় দেখা নদীর সঙ্গে কর্মজীবনে দেখা নদীর তুলনামূলক

 আলোচনা করো।

উত্তর:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত'সরীসৃপ, ছোটগল্প থেকে'নদীর বিদ্রোহ,গল্পংশটিতে

নদেরচাঁদের জন্ম হয়েছিল নদীর ধারে। নদীটি খুব বড় ছিল না কিন্তু তাঁর শৈশব কৈশোর

 যৌবন সেখানেই বড় হয়ে ওঠে। তাই দেশের সেই ক্ষীণকায়া অসুস্থ দুর্বল নদীটি আত্মীয়

 মতোই তার মমতা পেয়েছিল।কিন্তু বড়ো হওয়ার পরে এক অনাবৃষ্টির বছরে নদীর ক্ষীণ

 স্রোতটুকু শুকিয়ে যাচ্ছে দেখে নদেরচাঁদ কেঁদে ফেলেছিল।

নদেরচাঁদ যখন চাকরিজীবনে প্রবেশ করে, তখনও নদীর প্রতি তার ভালোবাসা বা নদীকে

 নিয়ে ‘পাগলামিএতটুকুও কমেনি।স্টেশনমাস্টারের চাকরি করার সময় তিনি প্রায় প্রতিদিনই

 নদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটতো।কর্মজীবনের চার বছর ধরে এই নদীর সঙ্গে তার গভীর

 ভালোবাসা জন্মে উঠেছিল। কর্মস্থলের কাছের নদীটি খুব দুর্বল ছিল না। কিন্তু তাকে বাঁধ

 দিয়ে তার গতানুগতিক জীবনকেকে বন্ধ করে দিয়েছে।ব্রিজ তৈরি করে তার গর্জনকে বশে

 আনতে হয়েছে।নদী বর্ষার জলে পরিপুষ্ট হলে কাদাময় জলস্রোতে দেখা যায় আনন্দের

 প্রকাশ। আর এই নদীর উপর বান দিলে নদীপ্রচণ্ড বাধায় ফুলেফেঁপে উঠে এবং রোষে উন্মত্ত

 চেহারা নেয়। জল উঁচুতে উঠে আসে। জল থেকে যে স্রোতের বিকট শব্দ ওঠে, তাতে নদী

 প্রেমিক নদেরচাঁদের মতো মানুষ ভীত হয়ে ওঠে। নদের চাঁদ এই নদীকে দেখে বিশ্বাস

 করতে পারছে না। নদেরচাঁদ মনে মনে ভাবে,- ব্রিজ ও বাঁধকে ভাঙারজন্য বানদী নিজের

 স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে যাবার জন্যই নদীর এই বিদ্রোহ। নদেরচাঁদের ছোটোবেলার সেই

 শীর্ণ নদীর সঙ্গে এই বিদ্রোহী নদীর কোনো মিল নেই।


৩।"পাঁচদিন নদীকে দেখা হয় নাই।”কার,কেন নদীকে দেখা হয়নি?নদীকে না দেখায় তার কী

 মনে হয়েছিল?এরপরে নদীকে সে কীভাবে দেখেছিল?

উত্তর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত'সরীসৃপ,ছোটগল্প থেকে'নদীর বিদ্রোহ,গল্পে পাঁচদিন

 অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে গল্পের প্রাধান চরিত্র নদেরচাঁদের নদীকে দেখা হায়নি।

নদীকে দেখার জন্য নদেরচাঁদের মনে ছেলেমানুষীক জেদ জেগে উঠেছিল।পাঁচদিন প্রবল

 বৃষ্টিপাতের কারণে সে নদীকে দেখাতে না, সে মনে মনে ভাবে ব্রিজের একপাশে চুপচাপ

 বসে কিছুক্ষণ নদীকে না দেখলে সে বাঁচবে না।পাঁচদিনের অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে নদীর

 যে কী রূপ তৈরি হয়েছে? তা সে মনে মনে ভাবে। বর্ষার জলে পুষ্ট নদীর রূপ তার মনের

 মধ্যে ধরা পড়ে।নতুন সহকর্মীকে জানিয়ে নদেরচাঁদ রেলের উঁচু বাঁধ ধরে হাঁটতে থাকে

 নদীর দিকে।

সে রেল-ব্রিজের কাছাকাছি এসে নদীর দিকে তাকিয়ে খুব অবাক হয়ে যায়।পাঁচদিন আগে

 বর্ষার জলে পরিপুষ্ট নদীটি ছিল আনন্দেভরা। কিন্তু এখন সেই নদী যেন খেপে গিয়ে

 ফুলেফেঁপে উঠেছে। চার বছরের চেনা নদীকে নদেরচাঁদের অনেক বেশি ভয লাগে।সে

 ব্রিজের ধারকস্তম্ভের শেষপ্রান্তে গিয়ে বসে,সেখানে বাধা পেয়ে নদীর জল অনেক বেশি

 উঁচুতে এসে উঠছিল,যেন হাত বাড়ালেই তাকে ছোঁয়া যায়। সেই জলপ্রবাহ ছিল জীবন্ত।কিন্তু

 ঘনঘন নদীর জলের শব্দ আর বৃষ্টির শব্দের গর্জন তাকে পাগল করে দেয়।সে মনে মনে

 ভাবে নদীর রোষে- ক্ষোভে উন্মত্ত নদীর এত কাছাকাছি এসে বসা উচিত হয়নি তার।

 পাগলামি নদীকে সে আর বিশ্বাস করতে পারে না।সে মনে মনে ভাবছে,এ নদী বিদ্রোহ

করছে- মানুষের তৈরি সেতু ও বাঁধকে ভাঙারজন্য,নদী স্বাভাবিক গতিতে নিয়ে আসার জন্য।


৪। নদীর বিদ্রোহ গল্পে নদীর মুখোমুখি হয়ে নদেরচাদের মনে যেসব ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া তৈরি

 হয়,সেগুলি নিজের ভাষায় লেখ।

উত্তর:কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত 'সরীসৃপ,ছোটগল্প থেকে'নদীর

 বিদ্রোহ,গল্পটিতে দীর্ঘ পাঁচদিন অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে নদেরচাঁদ যখন নদীর কাছে

 গিয়েছিল তখন নদীকে দেখে তার নানারকম ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হয়েছিল।এগুলি হল—

১। স্তম্ভিত ভাব:রেল-ব্রিজের কাছাকাছি এসে প্রথমবার যখন নদেরচাঁদ নদীকে দেখে, সে

 স্তম্ভিত হয়ে যায়।কারণ পাঁচদিন আগে বর্ষার জলে পরিপুষ্ট নদীতে সে দেখেছিল ভরপুর

 আনন্দ,আর এখন নদীর পাগলামি রূপ।চার বছরের চেনা নদী তার কাছে অনেক বেশি

 ভয়ংকর এবং অপরিচিত বলে মনে হয়।

২। আনন্দমুখী : ব্রিজের ধারকস্তম্ভের শেষপ্রান্তে বসে নদীর জলের ভয়ংকর গর্জনে

 নদেরচাঁদের মনে আনন্দ সৃষ্টি হয়।নদীর সঙ্গে তার খেলা করার ইচ্ছে জেগে ওঠে। প্রথমে সে

 পকেট থেকে একটি চিঠি বের করে এবং স্ত্রীকে লেখা চিঠিটিও একটি একটি করেপাতা নদীর

 জলে ভাসিয়ে দিতে থাকে।

৩। অবসন্নতা। নদীর স্রোতের সঙ্গে বৃষ্টির আওয়াজ মিশে নদেরচাঁদকে হতভম্ভ। শরীর যেন

 অবশ হয়ে ওঠে।

৪।ভয়: কিছুটা ভয় কাটলে নদেরচাদের মনে মনে ভাবে যে, উত্তাল জলরাশির গর্জনের কাছে

 বসাতার উচিত হয়নি।নদী যে কোনো মুহূর্তে ব্রিজকে ভেঙে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে

 পারে।তার মনে হল এই নদীকে আর বিশ্বাস নেই।

৫।সহানুভূতি:নদের চাঁদের মধ্যে ভয়ের পাশাপাশি নদীর জন্য সহানুভূতিও দেখা গেছে।তার

মনে হয়েছে নিজের স্বাভাবিক গতি বজায় রাখার জন্যই নদীর বিদ্রোহ যদিও মানবসমাজের

সঙ্গে লড়াইয়ে নদী কতটা সফল হবে,তা নিয়ে তার মনে সন্দেহ রয়ে গেছে।


৫।নদীর বিদ্রোহ গল্পে নদীর সঙ্গে নদেরচাঁদের শেষ দেখার দৃশ্যটি নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত'সরীসৃপ,ছোট গল্প থেকে নদীর বিদ্রোহ গল্পে দেখা

যায়,নিজের কর্মস্থলে থেকে বেরিয়ে বাঁধের উপর দিয়ে রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে

নদেরচাঁদ যখন রেল-ব্রিজের কাছে চলে আসে, তখন নদীর দিকে প্রথম তাকিয়েই সে অবাক

হয়ে যায়।পাঁচদিন আগে নদীর জলে আনন্দভরা আর সেখানে নেই, নদী পাগলের মত

ফুলেফেঁপে ওঠা চেহারায় সে নদীকে দেখে। কিন্তু নদীর কাছাকাছি গিয়ে বসে নদীর গর্জনে

তার মনে আনন্দের সৃষ্টি করে।তার মনে হয়, ইচ্ছে করলেই যেন হাত বাড়িয়ে নদীকে স্পর্শ

করা যাবে। নদীর সঙ্গে খেলা করতে চাই নদেরচাঁদ। পকেট থেকে পুরোনো একটা চিঠি বের

করে নদীর স্রোতে ছুড়ে দেয় সে, চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে যায় সেই চিঠি। সেই স্রোতকে

জীবন্ত মনে হয় নদেরচাঁদের।খেলার আনন্দে বৃষ্টির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্ত্রীকে লেখা পাঁচ

পাতার চিঠিটির একটি একটি করে পাতা ছিঁড়ে সে নদীর জলে ভাসিয়ে দিতে থাকে। কিন্তু

নদীর স্রোতের শব্দের সঙ্গে বৃষ্টির শব্দ মিলে এমন এক অদ্ভুত ধ্বনি তৈরি হয়, যা

নদেরচাঁদকে পাগল করে তোলে।ট্রেনের শব্দে তার চেতনা ফেরে কিন্তু সে তখন দিশেহারা।

নদেরচাঁদ রেললাইন ধরে ফেরার পথে হাঁটতে থাকে।এ সময়ই পেছন থেকে একটা ট্রেন

এসে নদী প্রেমিক মানুষটির জীবনের অন্তিম লগ্নে ঘটিয়ে দিয়ে চলে যায়।


Contents:

আরো পড়ুন:


জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here

অসুখী একজন কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here

আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here

আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here

হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর Click Here

অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here

পথের দাবী গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here

প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here

সিন্ধুতীরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here

নদীর বিদ্রোহ গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here


the passing away of bapu question answer

Unit 1 Click Here

The passing away of bapu question answer

 unit 2 Click Here


My Own True family poem Lesson 4 Click Here





















Post a Comment

0 Comments