প্রলয়োল্লাস
কাজী নজরুল ইসলাম
১। সূচিপত্র:
ক।লেখক পরিচিতি:
খ।কবিতার উৎস
গ।প্রলয়োল্লাস কবিতার বিষয়বস্তু
ঘ।সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখ।(MCQ) প্রতিটি প্রশ্নের মান- ১
ঙ।অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।(SAQ)-২০টি শব্দের মধ্যে।প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
চ। ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।৬০টি শব্দের মধ্যে। প্রতিটি প্রশ্নের মান-৩
ছ।বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী বা বড়ো প্রশ্নোত্তর ১৫০টি শব্দের মধ্যে।প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫
e-book পেজটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুখবর-1stইউনিট,2ndইউনিট,3ndইউনিট,টেস্ট,ফাইনাল
পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণভাবে তোমাদের সাহায্য করবে।তাই এই সাফল্য আমাদের
কাছে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ক।কবি পরিচিতি:কাজী নজরুল ইসলাম
১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে কাজী নজরুল ইসলাম পশ্চিম বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ
করেন।তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ,মাতার নাম জাহেদা খাতুন।ছেলেবেলায়
তাঁকে ডাকা হতো' দুখুমিঞা,বলে।১৩২৬ বঙ্গাব্দে তাঁর প্রথম কবিতার'মুক্তি,প্রকাশিত হয়।
১৯২১ খ্রিস্টাব্দে 'বিজলী,পত্রিকায়'বিদ্রোহী,কবিতা প্রকাশিত হলে সমগ্র বাংলায় আলোড়ন
সৃষ্টি হয়।বিদ্রোহী কবি নজরুলের প্রতিবাদের হাতিয়ার ছিল তাঁর গান ও কবিতা।কবি তাঁর
লেখায় কেবল ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নয়,সমস্ত অন্যায় অবিচার ও কুসংস্কারের
বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন।নজরুলের কবিতা ও গান চিরকাল বাঙালিকে উদ্দীপিত করে।
তাঁরউল্লেখযোগ্যকাব্যগ্রন্থগুলিরমধ্যেরয়েছেঅগ্নিবীণা,বিষেরবাঁশি,সাম্যবাদী,সর্বহারা,ফনিমসা
প্রলয়শিখা,ছায়ানট,চক্রবাক,দোলনচাঁপাপ্রভৃতি।এছাড়াও তিনি ২৬৮১ ও বেশি সংগীত রচনা
করেছেন।১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ২৯শে আগস্ট বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের জীবনাবসান
ঘটে বাংলাদেশের ঢাকাতে।
খ।কবিতার উৎস:
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত'অগ্নিবীণা,কাব্যগ্রন্থ থেকে'প্রলয়োল্লাস,কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।
গ। প্রলয়োল্লাস কবিতার বিষয়বস্তু:
এই কবিতায় প্রলয় বা ধ্বংসকে স্বাগত জানানোর কথা বলা হয়েছে। প্রলয়ের আগমনকে
ঘিরে উল্লাস করা হয়েছে।প্রলয় বা ধ্বংসের মধ্যেই লুকিয়ে আছে সৃষ্টির বীজ।মহাকালের বা
শিবের আগমনে সমস্ত কিছু ধ্বংস হয়ে,জীর্ণতা,মলিনতা মুছে গিয়ে নতুনের সৃষ্টি হবে।শিব
হলেন প্রলয়ের দেবতা।একদিকে তিনি যেমন সৃষ্টিকর্তা,অন্যদিকে তেমনি ধ্বংসকর্তা।তাই
শিবের আগমনে কবি সবাইকে জয়ধ্বনি দিতে বলেছেন।তিনি আসছেন কালবৈশাখী ঝড়ের
রূপ ধরে।সামাজিক অসঙ্গতি পরাধীনতা এবং সর্বব্যাপী অন্যায় অবিচারের অবসান
ঘটাবেন নটরাজ শিব।তাঁর আগমনে কবি আকাশে নতুনের পতাকা উড়তে দেখেছেন।প্রলয়
নেশায় নৃত্য পাগল শিব বন্দি ভারতীয়দের মুক্তি দেবেন।তিনি ভয়ংকররূপে বজ্রশিখার
মশাল জেলে আসছেন। তাঁর রথের শব্দ শোনা যাচ্ছে,সেই রথের সারথীর হাতের চাবুক
বজ্রসম।সেই চাবুকের আঘাতে হ্রেষার কাঁদন যেন ঝড়-তুফানে ঘনিয়ে উঠেছে।তার খুরের
দাপটে উল্কা ছুটছে।প্রলয়রূপী শিবের জয়ধ্বনি দিয়ে তাঁর আগমনকে স্বাগত জানাতে হবে।
কবি জানিয়েছেন ধ্বংস দেখে ভয় পেলে চলবে না।কারণ এই ধ্বংসের মধ্যেই লুকিয়ে আছে
সৃষ্টির আনন্দ।এই ধ্বংসে,অসুন্দরের বিনাশ ঘটবে নতুনের সৃষ্টি হবে।শিব অর্থাৎ নবীন প্রাণ
আসছে অসুন্দরকে ধ্বংস করতে।এই ভাঙা গড়ার খেলায় ভয় পেলে চলবে না।কারণ
পুরাতন সব ধ্বংস হলে তবেই নতুন সৃষ্টি হবে।তাই কবি কাল-ভয়ংকরকে স্বাগত জানানোর
জন্য বধুদের প্রদীপ জ্বালিয়ে তাকে বরণ করতে হবে।আর সকলকে দিতে হবে জয়ধ্বনি।
কারণ কাল-ভয়ঙ্করএর বেশে আগমন ঘটবে নতুনের।পুরাতন সবকিছু ধ্বংস হয়ে সৃষ্টি হবে
নতুনের।
ঘ।সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখ।(MCQ) প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
১।প্রলয়োল্লাস শব্দের অর্থ হল-
ক) ধ্বংসের আনন্দ
খ) ভয়ংকরের কাঁদনূ
গ) প্রলয় নাচন
ঘ) সৃজন-বেদন
উত্তর: (ক) ধ্বংসের আনন্দ
২।"বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর"-ভয়ংকের রূপটি কার?
ক) দুর্গার
খ) শিবের
গ) ধুমকেতুর
ঘ) দিগম্বরের
উত্তর:(খ) শিবের
৩।'কৃপাণ,শব্দটির অর্থ হলো-
ক)ঢাল
খ)তরবারি
গ)কিপটে
ঘ) বদমাশ
উত্তর:(গ) কিপটে
৪।'মাভৈঃ মাভৈঃ,ধ্বনির তাৎপর্য হল-
ক) যুদ্ধে জয়ী হও
খ) মা-বাবাকে সর্বদা শ্রদ্ধা কর
গ) ভয় না পেয়ে এগিয়ে চল
ঘ) ভয়ের কথা ভেবো না
উত্তর:(গ) ভয় না পেয়ে এগিয়ে চলো
৫। 'রথঘরঘর,-শব্দটির অর্থ হল-
ক) রথ ভেঙে পড়ার শব্দ
খ) রথের চাকায় ঘর্ষণের শব্দ
গ) রথে চড়ে যুদ্ধের শব্দ
ঘ) বজ্রপাতের শব্দ
উত্তর:(খ) রথের চাকায় ঘর্ষণের শব্দ
৬।বধুদের যা তুলে ধরতে বলা হয়েছে, তা হল-
ক) চাবুক
খ) প্রদীপ
গ) মশাল
ঘ) কৃপণ
উত্তর:(খ) প্রদীপ
৭।সুন্দর যার বেশে আসছে,সে হল-
ক) কালবৈশাখীর ঝড়
খ) জ্বালামুখী ধূমকেতু
গ) কাল-ভয়ংকর
ঘ) মধ্যাহ্নের রবি
উত্তর:(গ) কাল- ভয়ংকর
৮।'তোরা সব জয়ধ্বনি কর,- বাক্যটি মোট কতবার ব্যবহৃত হয়েছে-
ক) ১৫ বার
খ) ১৭ বার
গ) ২১ বার
ঘ) ১৯ বার
উত্তর:(ঘ) ১৯ বার
৯।'প্রলয়, নিয়ে আসবে-
ক) নতুন সৃষ্টি
খ) ধ্বংস
গ) মরণ
ঘ) দুর্যোগ
উত্তর:(ক) নতুন সৃষ্টি
১০।কার হাসির কথা কবি বলেছেন?
ক)রুদ্রের
খ)কালের
গ)সুন্দরের
ঘ)ভয়ংকরের
উত্তর:(ঘ)ভয়ংকরের
ঙ।অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।(SAQ)-২০টি শব্দের মধ্যে।প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
১।'তোরা সব জয়ধ্বনি কর,-কবি কাদের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন?
উত্তর:বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত'অগ্নিবীণা,কাব্যগ্রন্থ
থেকে'প্রলয়োল্লাস,কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য অংশে,পুরাতনকে ধ্বংস করে জীর্ণতাকে মুছে ফেলে নতুনকে প্রতিষ্ঠা করতে,প্রলয়
আসছে বলে কবি সবাইকে জয়ধ্বনি দিতে বলেছেন।
২। কালবৈশাখীর ঝড়কে নতুনের কেতন বলার কারণ কি?
উত্তর:বিদ্রোহীকবিকাজীনজরুলইসলামেররচিত'অগ্নিবীণা,কাব্যগ্রন্থথেকে'প্রলয়োল্লাস,কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য অংশটিতে,কালবৈশাখীর ঝড় পুরাতনকে মুছে ফেলে নতুনের সংকেত আনে বলে
কবি কালবৈশাখীকে 'নতুনের কেতন, বলেছেন।
৩।'ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর,- ভয়ংকর হাসছে কেন?
উত্তর:বিদ্রোহীকবিকাজীনজরুলইসলামেররচিত'অগ্নিবীণা,কাব্যগ্রন্থথেকে'প্রলয়োল্লাস,কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য অংশটিতে মহা-ভয়ংকর সকল অন্যায় অত্যাচারকে বিনাশ করে নতুন যুগেরসূচনা
করার তৃপ্তিতে হাসছেন।
৪।'আসছে নবীন, -নবীন কে?
উত্তর: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত 'অগ্নিবীণা,কাব্যগ্রন্থ থেকে
'প্রলয়োল্লাস,কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য অংশটিতে, কবি নবীন বলতে, নবযুগের নবীন বিপ্লবী
শক্তিকে বুঝিয়েছেন, যাদের হাত ধরে পৃথিবীতে আসবে নতুন যুগ।
৫। কোন শব্দ শুনে কবি সকলকে জয়ধ্বনি দিতে বলেছেন?
উত্তর: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত'অগ্নিবীণা,কাব্যগ্রন্থ থেকে
'প্রলয়োল্লাস,কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য অংশটিতে, মহাকালের রথের চাকার ঘরঘর ধ্বনি শোনা যাচ্ছে এবং এই ধ্বনি শুনে
কবি সকলকে 'জয়ধ্বনি,দিতে বলেছেন।
৬।"বধূরা প্রদীপ তুলে ধর" বধূরা কেন প্রদীপ তুলে ধরবে?
উত্তর: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত'অগ্নিবীণা,কাব্যগ্রন্থ থেকে
'প্রলয়োল্লাস,কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য অংশটিতে, কবি বধূদের প্রদীপ তুলে ধরার আহ্বান
জানিয়েছেন। প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ তুলে ধরে বধূরা কাল- ভয়ংকরের
রূপে আসা সুন্দরকে বরণ করে নেবে।
৭।'সপ্ত-মহাসিন্ধু দোলে/ কপোলতলে,-কার কপোলতলে সপ্ত-মহাসিন্দু দুলে ওঠে?
উত্তর: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত'অগ্নিবীণা,কাব্যগ্রন্থ থেকে
'প্রলয়োল্লাস,কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য অংশটিতে ভাঙা-গড়ার দেবতা শিবের একফোঁটা চোখের জলে, তাঁরই গালে সপ্ত-
মহাসিন্ধু দুলে ওঠার কথা বলা হয়েছে।
৮।'ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর,- ভয়ংকর হাসছে কেন?
উত্তর: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত 'অগ্নিবীণা, কাব্যগ্রন্থ থেকে
'প্রলয়োল্লাস,কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য অংশে মহাদেব শিব মহাকালের চন্ডরুপী ভয়ংকর,তিনি সকল অন্যায়-
অত্যাচারকে বিনাশ করে নতুন যুগের সূচনা করার আনন্দে হাসছেন।
চ। ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।(short question and answer) ৬০টি শব্দের মধ্যে। প্রতিটি প্রশ্নের মান-৩
১।'তোরা সব জয়ধ্বনি কর!'- তোরা কারা? তাদের জয়ধ্বনি করতে বলা হচ্ছে কেন?
উত্তর: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত 'অগ্নিবীণা, কাব্যগ্রন্থ
থেকে'প্রলয়োল্লাস,কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য অংশটিতে,কবি তোরা,বলতে পরাধীন দেশের স্বাধীনতার প্রত্যাশী জনসাধারণকে
বুঝিয়েছেন।
কবি মহাকাল শিব বা প্রলয়ের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন।এই প্রলয় ধ্বংসের রূপ নিয়ে
আসবে এবং পুরাতন জীর্ণতা,এই ধ্বংসে বিলীন হয়ে যাবে।এই ধ্বংসের মধ্যেই লুকিয়ে আছে
সৃষ্টির বীজ।তাই ধ্বংস বা প্রলয় দেখে ভয় না পেয়ে তাঁর আগমনকালে জয়ধ্বনি দিতে হবে।
কারণ সবকিছু ধ্বংস হলে তবেই নতুন আসবে।আবার নতুন ভাবে সবকিছু সৃষ্টি হবে।
২।'মাভৈঃ মাভৈঃ!জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে,-'মাভৈঃ'কথাটির অর্থ কি?প্রলয় ঘনিয়ে আসা সত্বেও কবি'মাভৈঃ মাভৈঃ,বলেছেন কেন?
উত্তর: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত 'অগ্নিবীণা, কাব্যগ্রন্থ থেকে
'প্রলয়োল্লাস,কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য অংশে,'মাভৈঃ,কথাটির অর্থ'ভয় করো না।
কবি বোঝাতে চেয়েছেন,ভাঙা-গড়ার খেলা না চললে নতুন সৃষ্টির পথ আটকে যাবে।কারণ
প্রলয়ে সমস্ত পুরনো,জরা,জীর্ণতা যদি ধ্বংস হয়, তবেই নতুন ভাবে আবার সবকিছু গড়ে
উঠবে।তাই এই ভাঙা-গড়ার খেলায় কবি কাউকে ভয় পেতে বারণ করেছেন।
৩।'বজ্রশিখার মশাল জেলে আসছে ভয়ংকর!'-ভয়ংকর বলতে কবি কি বোঝাতে চেয়েছেন?তার আসার তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত'অগ্নিবীণা, কাব্যগ্রন্থ
থেকে'প্রলয়োল্লাস,কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য অংশটিতে,কবি ভয়ংকর বলতে,নবযুগের প্রলয়রূপী বিপ্লব বা বিদ্রোহকে
বুঝিয়েছেন।রুদ্ররূপী শিবকে তিনি এর প্রতীক রূপে কল্পনা করেছেন।
মহাকালের মধ্যে ধংস ও সৃষ্টির দুটি রূপই লুকিয়ে আছে।এই মহাকাল অর্থাৎ এই ভয়ংকরের
আগমন ঘটবে,জীর্ণতাকে ধূলিসাৎ করে দেওয়ার জন্য।ভয়ংকর আসবে রথ সারথির সঙ্গে।
তাঁর সারথির বিদ্যুতের মত চাবুকের আঘাতে যেন রক্ত বেরিয়ে আসবে।ঝড় তুফানের মধ্যে
বেজে উঠবে রথের ঘোড়ার তীক্ষ্ণ চিৎকার।ঘোরার খুরের দাপট তারায় লেগে নীল আকাশের
উল্কা খসে পড়বে।মহাকাল প্রলয় নৃত্যে উন্মত্ত হয়ে তার আগমন ঘটবে।আর এই
ভয়ংকরের সঙ্গে থাকবে বজ্রশিখার জ্বলন্ত মশাল।
ছ।বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী বা বড়ো প্রশ্নোত্তর।(Descriptive question and answer)১৫০টি শব্দের মধ্যে।প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫
১।'কাল-ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে সুন্দর,-কাল ভয়ংকর এর পরিচয় দাও।কীভাবে
তিনি সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করবেন বলে কবির ধারণা?
উত্তর:বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত'অগ্নিবীণা,কাব্যগ্রন্থ
থেকে'প্রলয়োল্লাস,কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য অংশটিতে,কবি বিপ্লবের পথে যে ভারতবাসীর মুক্তি হবে,সে কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস
করতেন এবং তাঁর লেখনীতে তা বেশ স্পষ্ট। কিন্তু প্রায় জীবন হারা অচল-অসার একটি
জাতিকে উজ্জীবিত করতে চায় একটা মহাপ্রলয়।সেই প্রলয় ঘটাতে পারে একমাত্র রুদ্ররূপী
কাল-ভয়ঙ্কর। যদিও এক্ষেত্রে কবি দেশের যুবশক্তিকে কাল ভয়ংকর রূপে আখ্যা দিয়েছেন।
কবি রুদ্ররূপী কাল ভয়ঙ্কর অর্থাৎ যুবশক্তির বিভিন্ন রূপের বর্ণনা করেছেন।কালবৈশাখীর
ঝড়ের মতো প্রলয় নেশায় নৃত্য পাগল মহাকালের চন্দ্ররূপে সামাজিক অসংগতিকে দূর
করতে তার আগমন ঘটে।কখনো তার ঝামর কেসের দোলায় গগন দুলে যায় এবং তাঁর
অট্রহাস্যের চরাচর স্তব্ধ হয়ে যায।দু-চোখে দ্বাদশ রহ্নিজ্বালা নিয়ে বিশ্বমায়ের আসনকে সে
আসে।কবি এই কাল-ভয়ংকরকে ভয় পেতে বারণ করেছেন কারন পুরাতন সবকিছু ধ্বংস
করার জন্য মহাকালের আগমন।কিন্তু সেই ভয়ংকর এর মধ্যে লুকিয়ে আছে সুন্দর।ধ্বংসের
মধ্যে লুকিয়ে আছে সৃষ্টি।অন্ধকার রাতে পরেই তো ভোর হয়। এই কাল-ভয়ংকরের দুটি
রূপ-একটি রূপ হল ধ্বংসাত্মক,অন্য রূপটি হল সৃষ্টি। সে সবকিছুকে ধ্বংস করেছে কারণ
সেই সব কিছু আবার নতুন ভাবে গড়বে।কেননা এই ধ্বংসের শেষে সৃষ্টির নতুন দিগন্ত
আমাদের সামনে খুলে যাবে। তাই কবি এই ভয়ংকরকে সুন্দর বলেছেন।
২।'তোরা সব জয়ধ্বনি কর,-কাদের উদ্দেশ্যে কবির এই আহ্বান?কবিতায় কেন এই আহ্বানটি পুনরাবৃত্ত হয়েছে?
উত্তর:বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত'অগ্নিবীণা, কাব্যগ্রন্থ
থেকে'প্রলয়োল্লাস,কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য অংশে,কবি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এই আহ্বান জানিয়েছেন অর্থাৎ মহাকালের
উদ্দেশ্যে জয়ধ্বনি দিতে বলেছেন। কবিতার বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কারণে জয়ধ্বনি শব্দটা
ফিরে ফিরে এসেছে।নতুনের কেতন উড়িয়ে প্রলয় নেশার নৃত্যে পাগল হয়ে চন্ডরূপে যখন
মহাকালের আগমন ঘটছে,তখন কবি সকলকে জয়ধ্বনি দিতে বলেছেন।
ভয়ংকর রূপে প্রলয়ের আগমন ঘটছে।তাঁর খোলা চুলের ঝাপটায় আকাশ দুলছে।রুদ্ররূপী
নটরাজ যেন তার বুকের মধ্যে ধ্বংসকে লালন করছেন।কারণ তিনি জানেন ধ্বংস হলে
তবেই নতুন সৃষ্টি হবে।প্রলয়ের এই আগমনে চরাচর স্তব্ধ।মহাকালের প্রবল রূপের তেজ
চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।এই ধ্বংসের মধ্যেই লুকিয়ে আছে সৃষ্টির বীজ।তাই তাই কবি
প্রলয় ভয়ংকরকে জয়ধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানাতে বলেছেন।এই মহাপ্রলয়ের লীলার ধ্বংসের
পর নতুন ভোর আসবে।অন্ধকার কেটে যাবে।মহাকালের আগমনের রথের ঘরঘরধ্বনি
শোনা যাচ্ছে।রথআরোহী মহাকালের আগমনের সময়ও জয়ধ্বনি দেওয়ার কথা কবি
বলেছেন। ধংশ দেখে ভয় না পেয়ে নতুন সৃষ্টির কথা ভেবেও তিনি জয়ধ্বনি দিতে বলেছেন।
বধুদের প্রদীপ তুলে ধরে মহাকালকে স্বাগত জানানোর কথা কবি বলেছেন।
৩।"ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর!তোরা সব জয়ধ্বনি কর।কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি? কবি কেন ভয়ংকরের জয়ধ্বনিকরতে বলেছেন?
উত্তর:বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থ থেকে প্রলয়োল্লাস
কবিতায় ধ্বংসরূপী শিব আসছেন চণ্ডরূপে-ধূম্ররূপ। বাতাসে তাঁর হাসির গর্জন শোনা যায়।
হাতে তাঁর বজ্রশিখার, মশাল।ধ্বংসের নেশায় তিনি নিত্য পাগল। মহাকালের নয়ন জলে
সপ্তমহ সিন্ধু দুলছে।জগৎ জুড়ে প্রলয় ঘুমিয়ে আসছে।
তিনি পুরনোকে ধ্বংস করে নতুনকে সৃষ্টি করবেন। এই জরাজীর্ণ সমাজকে না পালটাতে
পারলে নতুন দিনের সূর্য উদিত হবে না।কবি শুনতে পেয়েছেন শিবের আগমনের পদধ্বনি।
তিনি দেখেছেন,প্রলয় নেশার নৃত্য পাগল। ধ্বংসের নেশায় পাগল এই শিবই হলেন
মহাকালের চণ্ডরূপ। তিনি ভয়ংকর অট্টহাসি করে চলেছেন। আর খোলা চুলের ঝাপটায়
সারা আকাশ দুলছে। ধুমকেতু তার চামোর দোলাচ্ছে।এই ধ্বংসের মধ্যে দিয়েই তিনি নতুন
সৃষ্টির উন্মোচন ঘটাবেন। পুরনো সবকিছু ধ্বংস হয়ে নতুনভাবে সব গড়ে উঠবে এই ভাঙ্গা
গড়ার খেলায় ভয় না পেয়ে প্রলয়ের আগমনের তালে জয়ের ধ্বনী দিয়ে তাকে স্বাগত
জানাতে বলা হয়েছে।কবি সেই নতুনেরই বিজয়কেতন দেখতে পেয়েছেন। তাই
মহাকালরূপী শিবের উদ্দেশে মানুষের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন।
৪।প্রলয়োল্লাস,কবিতার নামকরণটি যথার্থ হয়েছে কিনা বিচার করো।
উত্তর: সাধারণত নামকরণের মাধ্যমেই সাহিত্যকর্মের কোনো লক্ষণ পাঠকের কাছে আগাম
ধারণ দেওয়া হয়। নামকরণ বিভিন্ন রকমের হতেপারে,যেমন-বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, চরিত্রধর্মী
ভাব অনুযায়ী,কখনও বা ব্যঞ্জনাধর্মী।
আলোচ্য অংশে কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রলয় বা ধ্বংসকে স্বাগত জানানোর কথা বলা
হয়েছে। প্রলয়ের আগমনকে ঘিরে উল্লাস করা হয়েছে এই কবিতায়। প্রলয় বা ধ্বংসের
মধ্যেই লুকিয়ে আছে নতুন সৃষ্টি। মহাকালের আগমনে পুরাতন সবকিছু ধ্বংস হয়ে,নতুনের
সৃষ্টি হবে।তাই মহাকালের আগমনে কবি সবাইকে জয়ধ্বনি দিতে বলেছেন। মশাল জ্বেলে
ভয়ংকর এই প্রলয়ের আগমন ঘটবে। এই মহাকাল অর্থে নবীন প্রাণকেও বোঝানো হয়েছে।
এই মহাকাল বা এই নবীন প্রাণ পুরাতনকে ধ্বংস করে নতুন প্রাণের সৃষ্টি করবে। সমস্ত
অসুন্দরকে দূরে সরিয়ে নতুন প্রাণের প্রতিষ্ঠা করেবে। মহাকালেরএই ভাঙা গড়ার খেলায়
কাউকে ভয় বারণ করেছেন এবং সকলকে কবি জয়ধ্বনি দিতে বলেছেন।সকলকে
জয়ধ্বনি দিতে এবং বধূদের প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রলয়কে বরণ করে নিতে বলেছেন। প্রলয়কে
ঘিরে উল্লাস,আনন্দের কথা এখানে বলা হয়েছে। মহাকালই একদিকে ধ্বংস করবে
অন্যদিকে সৃষ্টি করবে।তাই বিষয়ের দিক থেকে বিচার করলে ‘প্রলয়োল্লাস, কবিতাটির
নামকরণ সার্থক হয়েছে।
Contents:
আরো পড়ুন:
জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
অসুখী একজন কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর Click Here
অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
পথের দাবী গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
সিন্ধুতীরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here
নদীর বিদ্রোহ গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here
the passing away of bapu question answer
Unit 1 Click Here
The passing away of bapu question answer
unit 2 Click Here
The passing away of bapu question answer unit 3 Click Here
My Own True family poem Lesson 4 Click Here
0 Comments